ভূমিকা
সন্ত্রাস**বাদের কোনো ধর্ম হয় না। কিন্তু যারা স*ন্ত্ৰাসবাদী তারা সব সময় একটি ধর্মকে ব্যবহার করে। অথচ, এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সেই ধর্ম সম্প্রদায়ের প্রবক্তা, নেতা, ধর্মগুরু, ধর্ম পালনকারী জনগন, হিউম্যান এক্টিভিস্ট, লেখক, অভিনেতা, বুদ্ধিজীবীরা মুখ খুলতে গেলেই বোবা হয়ে যায়। এদের মুখে তখনই শব্দ ফোটে, যখন কোনো ঘটনা এদের এজেন্ডা অনুসারে অনুসারে হয়। সমগ্র বিশ্বের সামনে যখন সেই শান্তির ধর্ম বদনাম হচ্ছে তখন এরা চুপ! লজ্জা নাকি ভয়?
১০ নভেম্বর, ২০২৫, সন্ধ্যা ৬:৫২ মিনিট। দিল্লির লাল কেল্লার ১ নম্বর গেটের কাছে, লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের সামনে একটি লাল সেডান গাড়ি (রেজিস্ট্রেশন: DL 10 CK 0458) হঠাৎ বীভৎস ভাবে বিস্ফোরণ হয়। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও অন্যান্য ইমপ্রোভাইজড বিস্ফোরকের শক্তিতে গাড়িটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, আগুন ছড়িয়ে পড়ে কাছাকাছি প্রায় এক ডজন গাড়ি ও রিকশায়। মুহূর্তে চারদিকে ধোঁয়া, চিৎকার আর রক্ত। ১৩ জন নিহত, ২০ জনের বেশি আহত। এই ঘটনা কেবল দিল্লির রাজপথে একটি বিস্ফোরণ নয়—এটি ‘হোয়াইট-কলার টেররিজম’-এর একটি ভয়ঙ্কর উদাহরণ ।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব: কী এই হোয়াইট-কলার টেররিজম? কীভাবে পেশাজীবীরা র্যাডিকালাইজড হয়? দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনের নেটওয়ার্ক, ইতিহাস, পরিসংখ্যান, লাল সংকেত ও প্রতিরোধের উপায়।
১. হোয়াইট-কলার টেররিজম কী?
হোয়াইট-কলার টেররিজম হলো এমন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ যা উচ্চশিক্ষিত, পেশায় সফল, সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিরা পরিকল্পনা করে, অর্থায়ন করে বা সরাসরি সম্পাদন করে। এরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক বা ব্যবসায়ী—যাদের কোনো অপরাধী রেকর্ড নেই, যারা সমাজের মূল স্রোতে মিশে থাকে।
দিল্লি বিস্ফোরণের অভিযুক্তরা: নাম, সম্পর্ক ও জালের জটিলতা
দিল্লির রেড ফোর্ট বিস্ফোরণের (১০ নভেম্বর, ২০২৫) মূল অভিযুক্ত ছিলেন ডা. উমর নাবি (উমর মোহাম্মদ নামেও পরিচিত), যিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ছিলেন এবং আত্মঘাতী বোমারু হিসেবে বিস্ফোরণ ঘটান। তাঁর DNA পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে যে, তিনিই মুখোশ পরে লাল সেডান গাড়ি চালিয়ে বিস্ফোরক সক্রিয় করেছিলেন। উমরের স্ত্রী আফিরা বিবি জেইশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখার অপারেটিভ এবং পাকিস্তানে অবস্থান করেন—তিনি উমরের রেডিক্যালাইজেশনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি।
এছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে প্রফেসর ডা. শাহিন সাঈদ, আরেক উদারপন্থী মহিলা চিকিৎসক, জেইশের মহিলা শাখায় নতুন সদস্য নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন। উমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডা. আদিল, অনন্তনাগ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত। এরা সবাই টেলিগ্রামের গোপন গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন। পাকিস্তানভিত্তিক জেইশের সিনিয়র হ্যান্ডলার ‘আবু হুরায়রা’ (কোডনেম) টেলিগ্রাম চ্যানেলে পরিকল্পনা সমন্বয় করতেন।
┌───────────────────┐
│ আবু হুরায়রা (পাকিস্তান) │
└──────── ▲ ─────────┘
│
┌────────────┼───────────┐
▼ ▼ ▼
ডা. উমর নাবি আফিরা বিবি ডা. শাহিন সাঈদ
(বোমারু) (স্ত্রী/অপারেটিভ) (নিয়োগকারী)
│ │ │
└──────► ডা. আদিল ◄──────────┘
(সহযোগী)
এছাড়া, আরও চারজন অজ্ঞাতনামা সহায়ক ফরিদাবাদ ও কানপুরের আস্তানায় বিস্ফোরক সরবরাহ, পরিবহন ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন—তারা সকলেই গ্রেপ্তার। এই নেটওয়ার্ক জেইশ-ই-মহম্মদ ও আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দ দ্বারা পরিচালিত হতো এবং ‘তিব্বে নববী’ ও ‘আবু হুরায়রা’ নামক এনক্রিপ্টেড টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগাযোগ করত।
| বৈশিষ্ট্য | বর্ণনা |
|---|---|
| পেশাগত পটভূমি | উন্নত ডিগ্রি, সম্মানজনক চাকরি |
| সাধারণত্বের আড়াল | কেউ সন্দেহ করে না |
| দক্ষতার অপব্যবহার | রসায়ন → বো=মা, IT → হ্যাকিং, চিকিৎসা → সন্ত্রাসীদের চিকিৎসা |
| এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ | টেলিগ্রাম, সিগন্যাল |
| আদর্শিক নিয়োগ | অনলাইন ফোরাম, মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় |
উদাহরণ: দিল্লি বিস্ফোরণের মূল চালক
ডা. উমর নাবি—ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক । ডা. উমর নাবি ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত, সম্মানিত চিকিৎসক—কিন্তু আদর্শের বিষে তিনি পরিণত হন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক হোয়াইট-কলার জঙ্গিতে ।
“সে রোগী বাঁচাত, আবার মানুষ মারত। এটাই হোয়াইট-কলার টেররিজমের ভয়াবহতা।”
— NIA অফিসার
আল ফালাহ মেডিক্যাল কলেজের ব্যাকগ্রাউন্ড :
মাত্র ৩০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছিল আল ফালাহ মেডিক্যাল কলেজ। পরে এটি ৭০ একরেরও বেশি জমি জুড়ে ছড়িয়ে কলেজ ক্যাম্পাস হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবথেকে আলোচিত উইং মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালটি চালু হয় ২০১৬ সালে। প্রথম এম.বি.বি.এস. ব্যাচ শুরু ২০১৯-এ। বর্তমানে, ২০০টি এমবিবিএস আসন এবং ৫০টি এমডি আসন রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। হরিয়ানার ডি.এম.ই.আরের মাধ্যমে এখানে পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হয়। আল ফালাহে ৬৫০ শয্যার একটি ছোট হাসপাতালও রয়েছে, যেখানে ডাক্তাররা বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা করেন।
সূত্রের খবর, বর্তমানে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি চালাচ্ছে NIA-সহ তদন্তকারী দল। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়েরকর্মী ও চিকিৎসকদের।
২. দিল্লি রেড ফোর্ট বিস্ফোরণ: মানবিক ক্ষয়ক্ষতি
| নিহত | আহত | প্রভাব |
|---|---|---|
| ১৩ জন | ২০+ জন | রাস্তার দোকানদার, বাস কন্ডাক্টর, পর্যটক |
- লোকেশ আগরওয়াল: উত্তরপ্রদেশের দোকানদার, হাসপাতালে আত্মীয় দেখতে এসেছিলেন।
- অশোক কুমার: ডিটিসি বাস কন্ডাক্টর, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন।
- অন্যান্য: রাস্তার ফেরিওয়ালা, অফিসযাত্রী।
৩. প্লটের পেছনের গল্প: হোয়াইট-কলার নেটওয়ার্ক
| তারিখ | ঘটনা |
|---|---|
| ১৯ অক্টোবর – ১০ নভেম্বর | ২,৯২১ কেজি বিস্ফোরক জব্দ, ৯ জন গ্রেপ্তার |
| ৯ নভেম্বর | ফরিদাবাদে রেইড, ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার |
| ১০ নভেম্বর | ডা. উমর নাবি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান |
মূল চরিত্র:
- ডা. উমর নাবি (ডিএনএ দিয়ে শনাক্ত): মুখোশ পরা চালক, বিস্ফোরক মিশ্রণে চিকিৎসা জ্ঞান ব্যবহার করেন।
- ডা. শাহিন সাঈদ: জেইশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখায় নিয়োগকারী।
- আফিরা বিবি: উমরের স্ত্রী, পাকিস্তানে জেইশ অপারেটিভ।
- যোগাযোগ: এনক্রিপ্টেড টেলিগ্রাম চ্যানেল, নাম—‘তিব্বে নববী’, ‘আবু হুরায়রা’।
১. পেশাজীবীদের র্যাডিকালাইজেশন: ধাপে ধাপে
| ধাপ | কী ঘটে | ট্রিগার |
|---|---|---|
| ১. পরিচয় সংকট | সাফল্য সত্ত্বেও বিচ্ছিন্নতা | ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, ইসলামোফোবিয়া |
| ২. অনলাইন এক্সপোজার | জিহাদি কন্টেন্ট | ইউটিউব, টেলিগ্রাম |
| ৩. ইকো চেম্বার | বন্ধ গ্রুপে যোগ | সিগন্যাল, বিদেশি হ্যান্ডলার |
| ৪. আদর্শিক যুক্তি | পেশাকে জিহাদ মনে করে | “উম্মাহর চিকিৎসা” |
| ৫. অপারেশনাল নিয়োগ | বাস্তব কাজ | বোমা তৈরি, হ্যাকিং |
| ৬. হামলা | আক্রমণ বা সহায়তা | দিল্লি ২০২৫ |
২. কেন পেশাজীবীরা? ইঞ্জিনিয়ারের প্যারাডক্স
| বিষয় | সন্ত্রাসী গ্রুপে % | সাধারণ জনসংখ্যায় % |
|---|---|---|
| ইঞ্জিনিয়ারিং | ~৪৫% | ~৫% |
| চিকিৎসা | ~১৫% | ~১% |
উৎস: Engineers of Jihad (Gambetta & Hertog, Oxford, 2016)
কারণ:
- কালো-সাদা চিন্তা → কঠোর আদর্শ আকর্ষণ করে
- জটিলতার হতাশা → “বিশুদ্ধ” ব্যবস্থার স্বপ্ন
- দক্ষতার ব্যবহার → বোমা, হ্যাকিং
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা → অনলাইনে বেশি সময়
- নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব → “আমিই সঠিক”
১. ঐতিহাসিক উদাহরণ
| ঘটনা | হোয়াইট-কলার সন্ত্রাসী | ভূমিকা |
|---|---|---|
| ৯/১১ | মোহাম্মদ আত্তা (নগর পরিকল্পনাকারী) | বিমান ছিনতাই |
| লন্ডন ৭/৭ | মোহাম্মদ সিদ্দিক খান (শিক্ষক সহকারী) | আত্মঘাতী বোমা |
| গ্লাসগো বিমানবন্দর (২০০৭) | ডা. বিলাল আবদুল্লাহ (এনএইচএস ডাক্তার) | গাড়ি বোমা |
২. লাল সংকেত: কীভাবে চিনবেন?
| আচরণগত | ডিজিটাল | সামাজিক |
|---|---|---|
| হঠাৎ ধর্মীয়তা | এনক্রিপ্টেড চ্যাট | অমুসলিম বন্ধু থেকে দূরে |
| সহিংসতার যুক্তি | ভিপিএন ব্যবহার | সন্দেহজনক দান |
| রাষ্ট্রবিরোধী কথা | চ্যাট ইতিহাস মুছে ফেলা | যুদ্ধক্ষেত্রে ভ্রমণ |
৩. প্রতিরোধের উপায়
| কৌশল | উদাহরণ |
|---|---|
| ক্যাম্পাস নজরদারি | ছাত্র সংগঠন মনিটরিং |
| ডিজিটাল টেকডাউন | দিল্লির পর ১৮টি টেলিগ্রাম চ্যানেল বন্ধ |
| সহকর্মী রিপোর্ট | ডা. নাবির আচরণে সতর্কতা |
| ডির্যাডিকালাইজেশন | কেরালার ‘অপারেশন পুনর্জনী’ |
| পরিবারের হস্তক্ষেপ | আকস্মিক পরিবর্তন রিপোর্ট |
উপসংহার
দিল্লির এই বিস্ফোরণ আমাদের সতর্ক করে:
যুদ্ধ এখন শুধু সীমান্তে নয়—হাসপাতালে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন