Headlines
Loading...

ধর্ম

[আব্রাহামিক ধর্ম][block1]

There is no evidence of Hindu gods. Is there evidence that they exist?হিন্দুদের দেবতাদের কোন প্রমাণ আছে। প্রমাণ আছে যে তারা আছে?

হিন্দুদের দেবতা কি? 

হিন্দুদের দেবতাদের অনেক প্রমাণ আছে এবং সেগুলো স্পষ্ট।  তার আগে বুঝতে হবে এই দেবতা আসলে কি ? বেদ অনুসারে দেবতারা হলেন এই সৃষ্টির বিভিন্ন সূক্ষ্ম উপাদান।  দেবতা মানে প্রকৃতির শক্তি বা চেতনার বিভিন্ন স্তর। যেমন — প্রতিটি তত্ত্বের একটি করে দেবতা আছে। আগুনের জন্য অগ্নিদেব, জলের জন্য বরুণ দেব, বায়ুর জন্য পবনদেব, পৃথিবীর জন্য ভূদেবী। এভাবে, সৃষ্টি স্থিতি এবং লয় এর জন্য ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। পুরাণের দেবী দেবতার কাহিনী, জ্যোতিষ শাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব মনে রাখার জন্য কৌশল। 

  • সূর্য জ্ঞান ও আত্মশক্তির প্রতীক।
  • চন্দ্র মনের প্রতীক।
  • বৃহস্পতি গুরুত্বের প্রতীক।
  • অগ্নি তপস্যা ও শুদ্ধতার প্রতীক।
  • বায়ু প্রাণশক্তির প্রতীক।
  • বরুণ ন্যায়বিচারের প্রতীক। 

গৌতম-অহল্যা-ইন্দ্র কাহিনীর ব্যাখ্যা:

গৌতম ঋষি ছিলেন এক মহাজ্ঞানী। একদিন তিনি যখন আশ্রমের বাইরে ছিলেন, তখন দেবরাজ ইন্দ্র এসে তার স্ত্রী অহল্যাকে প্রলুব্ধ করলেন। পরবর্তীতে গৌতম ঋষি বিষয়টি বুঝতে পেরে অহল্যাকে ত্যাগ করলেন এবং ইন্দ্রকে অভিশাপ দিলেন।

বিবেক যখন অসতর্ক থাকে। তখন  ইন্দ্রীয় মনের অধীন হয়ে কাজ করে, ইন্দ্রিয় বিষয় ভোগের লালসা রাখে।  দেবরাজ ইন্দ্র সেই ইন্দ্রিয়ের প্রতীক, চন্দ্র হলো মন , এবং অহল্যা হলেন বিষয়, গৌতম ঋষি হলেন বিবেক। 

বিষয়ের স্বামী গৌতম ঋষি (বিবেক) যখন মনের ছলনায় বিষয়কে ঘরে রেখে বাইরে যায়। চন্দ্রের পরামর্শে ইন্দ্র অর্থাৎ ইন্দ্রিয় লোলুপতা বিবেক অর্থাত ঋষি গৌতমের স্ত্রী  আর্থাৎ বিষয় ভোগে গমন করে। ভোগের পর বিবেক ফিরে এসে মন ও ইন্দ্রিয়কে ভৎসনা করে এবং বিবেক বিষয়কে ত্যাগ করে।

এই ঘটনা আমাদের অন্তরে  সব সময় হতে থাকে। কামুক দৃশ্য দেখে আমাদের বিবেক হারিয়ে যায়, আমরা তখন কামনা পূরণের জন্য মনের কথা শুনি। কিন্তু বিবেক বর্জিত কর্মের ফল আমাদের পতন করে।  দেবরাজ ইন্দ্র সেই ইন্দ্রিয়।  কিন্তু যিনি এই ইন্দ্রিয় দমন করতে পরে সে শ্রী রামের মতো পূজিত হন। শ্রী রাম অহল্যার  মুক্তি দাতা।

এখন প্রশ্ন হলো, যদি এই সকল কাহিনী তত্ত্ব হয়, তাহলে এদের আমরা পূজা করছি কেন? পূজা কথার অর্থই হলো পুনঃ পুনঃ জাগরণ। অর্থাৎ আমরা ওই জ্ঞানকে বার বার নিজেদের মধ্যে স্মরণ করিয়ে নিজেরই মঙ্গল করছি বা সেই শক্তির পালন করছি। 

যেমন বীজকে সেবা করলে সেটি বৃক্ষ হয়ে যায়। তেমনি পুনঃ পুনঃ জাগরণ করতে করতে আমরা তদ্রুপ হয়ে যাবো।

কৃষ্ণ লীলার তত্ত্বজ্ঞান

শ্রী কৃষ্ণ নামটি হিন্দু ধর্মে ও সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শ্রীকৃষ্ণ কে? তার পরিচয় কি? শ্রীকৃষ্ণের বাণী গীতা আজ প্রত্যেক হিন্দু ঘরে ঘরে পাঠ হয়। কিন্তু এই কিছু কিছু মূর্খ ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণকে নারীঘটিত কেলেঙ্কারির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে প্রকট করেন। ফলে আজকাল লোকে প্রায়শই বলে থাকে, “কৃষ্ণ করলে লীলা, আর আমরা করলে বিলাস?” আজ বিকেলে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের রাসলীলা, নামক একটি নাস্তিক লিখিত ব্লগ পড়ছিলাম। এটি তার ভস্য দিয়ে তৈরি প্রতুত্তর। আসা করি ভালো লাগবে। 


শ্রী কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে নিজের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে মাথার উপর তুলে রেখেছিলেন। সাত কি আট দিন ধরে। আপনি একটি পাঁচ কেজি বা তাঁরও কম ওজনের পাথর মাত্র দুই তিন ঘণ্টা তুলে রাখুন দেখি! 

আপনি যদি তাঁর লীলাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে চান? তবে দেখতে হবে শ্রী কৃষ্ণ কি তাঁর লীলাকে  ভক্তদের অনুকরণের শিক্ষা দিয়ে গেছেন? না জিনি ওই শাস্ত্র রচনা করেছেন তিনি বলেছেন। তাহলে আপত্তি কি? সবার প্রথমে জবাব দেওয়া দরকার এই শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধা কে?

রাধা ও কৃষ্ণ তত্ত্ব

পাণ্ডব গীতা গ্রন্থে বলা হয়েছে:— 

"ওঁ কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে। প্রণত-ক্লেশনাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।"

এখানে 'বাসু' শব্দের অর্থ 'যিনি সর্বত্র বিরাজমান' এবং 'দেব' শব্দের অর্থ 'দ্যোতনশীল' বা 'প্রকাশক'। 

সুতরাং, 'বাসুদেব' শব্দের অর্থ দাঁড়ায় 'যিনি সর্বত্র বিরাজমান এবং সমস্ত বস্তুকে প্রকাশ করেন'। "প্রণত-ক্লেশনাশায়" অর্থাৎ "যিনি শরণাগতদের সমস্ত দুঃখ ও কষ্ট নাশ করেন। সেই গোবিন্দকে প্রণাম করি। 

গোবিন্দ শব্দটির অর্থ ও বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় — গো + বিন্দ। গো অর্থাৎ গাভী (গরু)। এছাড়াও  গো শব্দ ইন্দ্রিয়, পৃথিবী, জ্ঞান ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিন্দ অর্থাৎ পালনক, রক্ষাক বা স্বামী। অর্থাৎ জিনি এই ইন্দ্রিয়, পৃথিবী, জ্ঞান ও গাভী (গরু) পালনক, রক্ষক বা স্বামী সেই শ্রী কৃষ্ণকে আমি প্রণাম করি। 

রাধা কে?

শ্রী শ্রী রাধা হলেন শ্রী কৃষ্ণের আলহ্যদিনী শক্তি। সকল ভক্তের একত্রিত ভক্তির মূর্তির স্বরুপা। তিনি ভক্তির আধার। 

কেউ তাঁকে কাল্পনিক বলেন, কেউ তাকেই শ্রী কৃষ্ণের মহিমার উৎস বলেন। এই শ্রীরাধা তত্ত্ব না থাকলে শ্রী কৃষ্ণের অস্তিত্বই থাকতো না। সাংখ তত্ত্বের  প্রকৃতি ও পুরুষ এখানে রাধা ও কৃষ্ণ। আসলে জিনি রাধা তিনিই কৃষ্ণ। দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোনো সত্ত্বা নেই। 

গোপীকারা কে? 

গোপ গোপিকারা হলেন রাধার বিভিন্ন গুণ ঐশ্বর্য। হতো দেব দেবী আছেন। সকলেই গোপ ও গোপী। বৈষ্ণব শাস্ত্র মতে, গোপ-গোপীদের মধ্যে অনেকেই পূর্বজন্মে দেবতা বা ঋষির রূপে ছিলেন, এবং কৃষ্ণলীলায় অংশগ্রহণের জন্য গোপ ও গোপী রূপে জন্ম নিয়েছেন। ব্রহ্ম, শিব, নানান ঋষি এবং দেবীরা কৃষ্ণলীলায় যোগ দিতে চেয়েছিলেন এবং তপস্যার মাধ্যমে সেই অধিকার অর্জন করেছিলেন। 

শ্রী রাধাকে নিয়ে কিছুই বলা যায় না। কারণ, ভাষায় তাঁর বর্ণনা করা মুশকিল। রাধাকে বুঝতে হলে ভক্তের মনকে বুঝতে হবে। নিচে রাধা রহস্য।বর্ননা করবো।

অপরদিকে এমন কিছু লোকও দেখা যায়, যারা মনে করেন কৃষ্ণ আমাদের মতো সাধারণ মানুষ।শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতায় এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন:

"অবিজানন্তি মা মুঢ়া মানুষীম্‌ তনুম্‌ আশ্রিতম্‌।
পরং ভাবমজানন্তো মম ভূত মহেশ্বরম্‌।।"
(ভগবদ্‌গীতা ৯.১১)

অর্থাৎ — “মূঢ় (অজ্ঞ) ব্যক্তিরা আমাকে মানবদেহে অবস্থানকারী একজন সাধারণ মানুষ বলে ভাবে। তারা আমার পরম, দিব্য ভাব এবং সমস্ত সৃষ্টি ও জীবের স্বামী মহেশ্বর রূপে আমাকে চেনে না।”

এমতাবস্থায় তাদের মনে শ্রী কৃষ্ণ লীলা নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা সত্য যে সত্যাসত্য কারো দাবীর উপর নির্ভর করেনা, নির্ভর করে তথ্য-প্রমাণের উপর। আর তথ্যপ্রমাণ যাচাই করলে দেখা যায়, সত্যই কৃষ্ণ হলেন পরব্রহ্ম ঈশ্বর। জগতের স্বামী বা নাথ। তিনি জগতপতি জগন্নাথ। 

তাই ওপরে একটি শ্লোক তথ্য-প্রমাণ হিসেবে দিয়েছি।  যেহেতু শাস্ত্রের ব্যাখ্যা শাস্ত্রের দ্বারাই সম্ভব তাই প্রমাণ হিসেবে শাস্ত্রীয় দর্শনকেই গ্রহণ করতে হবে। যাতে হিন্দু ধর্মের আদর্শ বা মতলব নিয়ে কারো সন্দেহ না হয়। 

সত্য যদি তিক্তই হয়, তবে জিনি সত্যান্বেষী তিনি সত্যকে বিকৃত করবেন না। সত্য যদি হজম না হয়, তবে অর্ধ সত্য বলা উচিত নয়। 

অতএব সত্য বলার নাম করে ভ্রান্তি বিচার প্রচার করা অনুচিত। কৃষ্ণের চরিত্র হনন করার চেষ্টা নিয়ে যারা দিনরাত পরিশ্রম করেন। আসুন দেখি  সেই শ্রী কৃষ্ণ আসলে কি এমন কাজ করছে।

তারা শ্রী কৃষ্ণের লীলাকে নারী ঘটিত প্রেম কাহিনী হিসেবে নিন্দা করে থাকেন। কৃষ্ণ করলে লীলা, এই লীলা কি সেটা না জেনেই ছি ছি করবেন না। দেখা গেল আপনি যে আয়না পরিষ্কার করছেন, সেই আয়নাতে কোনো দাগ নেই। বরং আপনার চোখেই সেই দাগ।

তাই প্রথমে আমরা বিরজার কথা দিয়ে শুরু করি। খুব সংক্ষেপে বলবো।

শ্রীকৃষ্ণ ও বিরজা

বিরজা হলেন এক দেবী, যিনি শ্রী রাধার অংশ এবং সেই অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরও শক্তিরূপা। গোলক ধামে তিনি শ্রী কৃষ্ণের লীলা সঙ্গিনী ছিলেন। শ্রী রাধার ভয়ে বিরজা দেহ ত্যাগ করে নদীতে পরিণত হয়। ওই নদী গোলোকধাম বর্তুলাকারে ব্যপ্ত হয়। ঐ নদী প্রস্থে দশযোজন বিস্তৃত ও অতি গভীর এবং দৈর্ঘ্যে তার চাইতে দশগুণ। ঐ নদী মনোহর ও বহুবিধ রত্নের আধার। সেই নদী যখন মর্তে আগমন করেন। তাই তাঁকে বিরজা নদী বলেও অভিহিত করা হয়।

সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে বিচার করলেই বুঝতে পারবেন যে এই কাহিনী আসলে একটি তত্ত্ব কথা। যাহা শ্রী কৃষ্ণ ও রাধিকার মাধুর্য দিয়ে রচিত হয়েছে। যেভাবে, বিজ্ঞানের তত্ত্ব গুলোকে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে এই ভাবেই দেবী দেবতাদের লীলা রূপে লেখা হয়। 

অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনী গুলোতেও এই ধরনের রূপক ও প্রতীকী ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে অতি গুহ্য আধ্যাত্মিক তত্ত্বও মনে রাখা সহজ হয়। শাস্ত্রীয় দর্শনকে কাহিনীর মাধ্যমে বোঝানোর জন্য এটিই সহজ পন্থা। কারণ,  আমাদের মনে কাহিনী গুলো খুব সহজেই দাগ কেটে থাকে। অজ্ঞ ও পাষণ্ড ব্যক্তিরা এই তত্ত্ব গুলোকে বাস্তব শ্রী কৃষ্ণের জীবনী মনে করে ভগবত তত্ত্বকে নিন্দা করে। 

এখানে বিরজা, রাধা ও শ্রীকৃষ্ণের এই কাহিনীও সেই ধরনের একটি আধ্যাত্মিক তত্ত্বকে উপস্থাপন করে, যা ভক্তি, বিশুদ্ধতা ও পরমাত্মার সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে। 

কাহিনীর প্রতীকীর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা:

শ্রীকৃষ্ণ ও বিরজার সম্পর্ক: এটি শ্রীরাধার ঐশ্বর্য (বিরজা) ও পরমাত্মা (শ্রীকৃষ্ণ) -র মধ্যে সম্পর্ক। 'বিরজা' শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, যেখানে এবং 'রজ' মানে 'ময়লা' বা 'অশুদ্ধি'। তার সঙ্গে ‘বি’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে— "রজ বিহীন", এই অর্থ প্রকাশ করে। 

সুতরাং, 'বিরজা' শব্দের অর্থ হলো 'বিশুদ্ধ' বা 'অশুদ্ধিহীন'। এটি আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতার প্রতীক। তাই নদীর জল রজ ধৌত করে। গোলক ধামে যেতে গেলে বিরজা নদীতে স্নান করে যেতে হয়।

রাধার ক্রোধ ও বিরজার নদীতে পরিণত হওয়া: রাধা এখানে ভক্তির প্রতীক। একদিকে ভক্তি (রাধা) এবং অন্যদিকে শুদ্ধতা বা শৌচতা (বিরজা)। উভয়ই ঈশ্বরের প্রিয়। 

যদি এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তবে ভক্তির প্রতাপে শৌচতা নিজের দেহ ত্যাগ করে নদীর মতো প্রবাহিত হয়। সেই বিরজা পৃথিবীতে কালিন্দী বা যমুনা নদী।

পৃথিবীর অন্যান্য নদীরাও তার অংশ এবং সপ্তসাগরও বিরজা থেকেই উৎপন্ন হয়েছে। অর্থাৎ জলের মধ্যেও ঈশ্বরের প্রেম আছে। তাই জল দিয়ে রজ বা ময়লা ধৌত হয়।

তুলসী ও শ্রী কৃষ্ণ

তুলসী একটি গুল্ম। কিন্তু এর মহিমাকে রচনা করা হয়েছে শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধা রানীর লীলা কাহিনী দিয়ে। এই তুলসী আসলে শ্রী শ্রী রাধারানীর অংশ। তাই, নিজের অংশের প্রতি রাধিকার মালিকানা অধিকার। রাধার সেবিকা হয়ে কৃষ্ণের প্রতি আকর্ষন রাধাকে ঈর্ষান্বিত করেছে। যদিও এই তুলসী স্বয়ং দেবী বৈষ্ণবী বা লক্ষ্মী। তত্ত্ব প্রসঙ্গে তিনি কৃষ্ণের দাসী। নাটকের নায়ক স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ জিনি লক্ষ্মি পতি শ্রী হরি বিষ্ণু।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে তুলসীদেবী নিজে বর্ণনা করছেন। তিনি বলেছেন, “আমি তুলসী, আমি পূর্বে গোলোকে গোপিকা ছিলাম, শ্রীকৃষ্ণের কিঙ্করী হয়ে সবসময় তার সেবা করতাম। আমি রাধার অংশসম্ভূতা এবং তার প্রিয়তম সখী ছিলাম। একসময়ে আমি রাসমণ্ডলে গোবিন্দের সাথে ক্রীড়া-কৌতুক ভোগ করে মূর্ছিত হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে রাসেশ্বরী রাধিকা হঠাৎ সেই স্থানে আগমন করে আমাকে সেই অবস্থায় দেখতে পান ।" 

এই কথাগুলি ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের (প্রকৃতি খণ্ড) তুলসী মহাত্ম্য অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে তুলসী দেবীর আদি পরিচয় ও তাঁর প্রতি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তির কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। 

"তুলসী" । নামের মধ্যেই তুলসী শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা আছে। "তুলস্ + ঈ" → তুলনা করা যায় না এমন, অতুলনীয়। "তুলস্" = তুলনা "ঈ" = নারীজাতক প্রত্যয় অর্থ: যার তুলনা নেই, যিনি অতুলনীয়। তাঁর আরেক নাম বৈষ্ণবী, কারণ তিনিই শ্রীবিষ্ণু বা কৃষ্ণের প্রিয়তমা।

রাসমণ্ডলে গোবিন্দের সাথে ক্রীড়া-কৌতুক ভোগ করতে করতে তিনি মূর্ছিত হয়ে পড়েন। সেই সময়ে রাসেশ্বরী রাধিকা হঠাৎ সেই স্থানে আগমন হয়। এবং ওই মূর্ছিত অবস্থায় তুলসীকে শ্রী কৃষ্ণের কোলে অনত অবস্থায় দেখতে পান। 

তিনি অত্যন্ত ক্রোধান্ধ হয়ে গোবিন্দকে অনেক ভর্ৎসনা করলেন এবং তুলসীকে এই বলে অভিশাপ দিলেন, “পাপিষ্ঠে! তুই মনুষ্য যোনিতে জন্মগ্রহণ কর।” (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ/ প্রকৃতিখণ্ড/ ১৫ অধ্যায়)

এরপর তিনি অসুর রাজ শঙ্খচূড়ের পত্নী রূপে জন্ম গ্রহন করেন। সেখানেও বিষ্ণু শঙ্খচূড়ের রূপ ধারণ করে তুলসীকে আলিঙ্গন করেন। এতে করে তুলসীর প্রতিব্রত নষ্ট হয়। ক্রোধ বশে তুলসী শঙ্খচূড় রুপী বিষ্ণুকে অভিশাপ দেন — "তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ, তাই তুমি পাথরে পরিণত হবে!" সেই পাথরের রূপ হলো শালিগ্রাম শিলা।

একই ঘটনা অন্য এক পুরাণে জলন্ধর নামক রাক্ষসের আছে। এখানে জলন্ধর ছিলেন শিবের ত্বেজ থেকে জন্মানো সমুদ্রের পুত্র। পুরাণ অনুসারে, জালন্ধর ও শঙ্খচূড় একই ব্যক্তি। 

তিনি পূর্ব জন্মে ছিলেন স্বর্গের গন্ধর্ব রাজা "সুধন্বা", যিনি একসময় দেবগণের মধ্যেও অন্যতম ছিলেন। একবার তিনি শ্রীকৃষ্ণের গুণগান শুনে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে অবজ্ঞা করেন। এই কারণে ব্রহ্মা তাঁকে রাক্ষস হয়ে জন্মানোর জন্য অভিশাপ দেন। যার ফলে তিনি শঙ্খচূড় বা জালন্ধর নামে এক অসুর হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডের ৫৫ অধ্যায়েও আছে। এখানে বলা হয়েছে, “ একদিন তুলসীবনে তুলসী গোপীর সাথে শ্রীকৃষ্ণ ক্রীড়াসক্ত হলে শ্রীরাধিকা মানিনী হয়ে প্রিয়তম শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে অন্তর্হিত হন। রাধা লীলাক্রমে তার নিজমূর্তি ও কলার বিনাশ করলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি দেবতাদের ঐশ্বর্য নষ্ট হয়, তাঁরা শ্রী শূণ্য ভার্যাহীন হয়ে পড়েন এবং রোগ প্রভৃতি দ্বারা পীড়িত হতে থাকেন।” তখন সকল দেবতারা কৃষ্ণের শরণাগত হন। এরপর শ্রী কৃষ্ণ রাধার স্তব করে রাধাকে শান্ত করেন।”

"বৃন্দা" শব্দের অর্থ হলো গুচ্ছ। তিনি শ্রীমতী রাধার অতুলনীয় রূপ তুলসী। তিনি রাধার, মহিমা ও গুণাবলীর গুচ্ছ। তাই তুলসী গুচ্ছকে বৃন্দাবন বলা হয়। যেখানে শ্রী কৃষ্ণ রাধারানীর সঙ্গে মিলিত হতেন। বৃন্দা হলেন রাধার প্রেমের এক গুচ্ছ বা বহিঃপ্রকাশ।

স্বধা - স্বাহা এবং শ্রী কৃষ্ণ

স্বধা এবং স্বাহা উভয়েই ব্রহ্মার কন্যা এবং অগ্নির স্ত্রী  বৈদিক ও পৌরাণিক শাস্ত্রে তাঁদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এদের সরাসরি গুরুত্ব যজ্ঞ ও শ্রাদ্ধ কর্মের সঙ্গে।

১. স্বধা দেবী

স্বধা হলেন পিতৃলোকের (পিতৃপুরুষদের) উদ্দেশ্যে নিবেদিত অর্ঘ্যের (উপহার বা তর্পণ) দেবী। পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ (পিণ্ডদান) করার সময় "স্বধা" উচ্চারণ করা হয়। তিনি পিতৃলোকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী এবং তাঁর আশীর্বাদে পিতৃপুরুষরা পরিতৃপ্ত হন। স্বধার বিবাহ হয় পিতৃলোকের সাথে।

স্বধার গুরুত্ব: গীতায় (৯.২৫) বলা হয়েছে, যারা পিতৃপুরুষদের পূজা করেন, তারা মৃত্যুর পরে পিতৃলোকে গমন করেন। তাই, স্বধা দেবীর আরাধনা করলে পিতৃপুরুষরা সন্তুষ্ট হন এবং পরিবার কল্যাণ লাভ করে।

২. স্বাহা দেবী

স্বাহা হলেন যজ্ঞের অগ্নিদেবের আরেক পত্নী এবং যজ্ঞের মাধ্যমে দেবতাদের আহুতি গ্রহণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। যেকোনো যজ্ঞে আহুতি দেওয়ার সময় "স্বাহা" উচ্চারণ করা হয়।

স্বাহার গুরুত্ব: যজ্ঞে যদি "স্বাহা" বলা না হয়, তবে দেবতারা আহুতি গ্রহণ করেন না। ঋগ্বেদ এবং অন্যান্য বৈদিক শাস্ত্রে স্বাহা দেবীকে অগ্নিদেবের শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি সমস্ত যজ্ঞের সফলতা ও দেবতাদের প্রসন্নতার কারণ। দেবতারা যেখানে বাস করেন তিনি সেই দেবলোক বা স্বর্গলোকের দেবী। 

স্বাহার অর্থ বিচার

এবার স্বধা - স্বাহার অর্থ ধরে বিচার করবো। 

স্বাধা কথার অর্থ হলো— জিনি বক্ষে ঈশ্বরকে ধারণ করেছেন। এবং স্বাহা কথার অর্থ হলো— জিনি নিজেকে ঈশ্বরের বুকে অর্পণ করেছেন। 

অর্থাৎ, আপনি ঈশ্বরকে গ্রহণ করুন বা ঈশ্বর আপনাকে গ্রহণ করুন। আপনি তো সেই ঈশ্বরের প্রেমকেই বিকশিত করছেন। দেবতারা স্বর্গে বাস করেন, আর পিতৃরা পিতৃলোকে।  এরা তো ঈশ্বরেরই রূপ। 

তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করতে হলে এখানে শ্রী কৃষ্ণকে ব্যাসদেব যজ্ঞ এবং অগ্নী রূপে অঙ্কলন করার চেষ্টা করেছেন। কারণ আদিতে নারায়ণ যজ্ঞ রূপেই আবির্ভূত হয়েছিলেন। 

যজ্ঞই ইন্দ্রের পদ গ্রহন করেছিলেন। তাই স্বধা - স্বাহা উভয়ই শ্রী রাধিকার শক্তি। তাই, তিনিই নিজের গুণের বিস্তার করেছেন। 

এভাবে, সকল পুরাণ গুলো পরস্পর পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। তত্ত্ব বিহীন তর্ক করে কোনো লাভ নেই। সত্য তিক্ত নয়। সঠিক ভাবে গ্রহন করা কঠিন। তাই এরকম গন্ড মূর্খের কাছে তিক্ত বা কষ্টা মনে হয়।  

সুধী পাঠক, এখন আমরা শ্রী শ্রী রাধিকা রানীর রহস্যের মহত্ত্ব জানবো।

রাধা রহস্য: 

শ্রীরাধা কে বলা হয় শ্রীকৃষ্ণের অ্যালহাদিনী শক্তি। আসলে তিনিই ভক্তের মনে যে প্রেম, বাৎসল্য, সখ্য, দাস্য যে পাঁচ প্রকার ভাব আছে, তাঁর উৎস। শাক্তদের দেবী মহামায়া, বৈষ্ণবদের বৈষ্ণবী, শৈবদের শিব। সকলের উৎস শ্রী শ্রী রাধিকা। ভক্তিরসের এই প্রবাহমান ধারাই হলেন রাধা। 

গোপিকা গন সেই ভক্তিরসের প্রবাহমান ধারার উপধারা। আগেও বলেছি আবার বলছি। ব্রহ্ম, শিব, নানান ঋষি এবং দেবীরা শ্রী শ্রী রাধারই বিভিন্ন ভাব। যদি আপনি শিবের ভক্ত হন। তবে তাকেই সব মনে করুন। কালীর ভক্ত হলে তাঁকেই সব মনে করুন। আপত্তি নেই, কিন্তু যদি আপনি ভেদাভেদ করতে শুরু করেন। তবে আপনি মূর্খ।

রাধা কৃষ্ণের প্রেমকে বলা হয় "কান্তা"। যেখানে ঈশ্বর আর ভক্তের কোনো ভেদ থাকে না। তথা, ঈশ্বর ভক্ত হয়ে যাক আর ভক্ত ঈশ্বর। কোনো পার্থক্য নেই। বামা ক্ষেপা মা তারাকে প্রসাদের থালা থেকে খাওয়ার তুলে নিজে খেতেন, তারপর এটো করে খাওয়াতেন। আর যখন মন্দিরের পান্ডারা তাঁকে পিটিয়ে মন্দির থেকে তাড়িয়ে দিলেন। মা তারাও মন্দিরের দরজা বন্ধ করে বসে পড়লেন। অর্থাৎ, ঈশ্বর আসলে আড়ম্বর পছন্দ করেন না। 

যখন আপনি রাধার মতো সরল হয়ে, আমিত্ব ত্যাগ না করে, কেবল পবিত্রতা, ভক্তি, বিধান নিয়ে পরে থাকবেন, বা ঈশ্বরের কৃপার উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের প্রেম আশা করবেন। তখন আপনি ভক্তির নামে গোড়ামিই করবেন। আজকাল এই গোঁড়ামি চোখে পড়ে।

বেশি কিছুই। ঈশ্বর প্রেমকে জাতি, সমাজ, আর সম্প্রদায় থেকে সামান্য উর্ধ্বে তুলতে হবে। একটু উদার ও সরল হতে হবে। যে যেমন খুশি তাঁকে সেভাবেই উৎসাহ দিতে হবে। আর হাতি, গো, ব্রাহ্মণ, ও কুকুরে সমান দৃষ্টি রাখতে হবে।

"বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি।শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ।।"

বাংলা অনুবাদ:

"যিনি প্রকৃত জ্ঞানী, তিনি সমদৃষ্টিসম্পন্ন হন। তিনি বিদ্বান ও বিনয়ী ব্রাহ্মণ, গরু, হাতি, কুকুর এবং চণ্ডাল (শ্বপাক) - সবার প্রতি সমানভাবে দৃষ্টি রাখেন।"

এই কাজ কঠিন তবে অসম্ভব নয়। 

তাই, সারাদিন কৃষ্ণ কৃষ্ণ করেও ঈশ্বরের শক্তি রাধা দ্বারা ভক্তরা রাধা রানীর ভৎসনা প্রাপ্ত হন। যেখানে রাধার অংশ বিমলা, কমলাকে শ্রী কৃষ্ণের কাছে দেখলে তিনি সহ্য করতেন না। আপনি কে হে?

শ্রী কৃষ্ণের নিকট তিনি নিজেকেই দেখতে চান। তাই, সকলের কৃষ্ণ প্রাপ্তি হয় না। তাঁর শক্তিতেই জীবকে জন্ম জন্মান্তরে ঘুর পাক খেতে হয়। কৃষ্ণকে রাধার মতোই  প্রেম ও জ্ঞান মিশ্রিত সুধা দিয়ে আপন করতে হবে। এটাই রাধা রহস্য। 

উপসংহার:

শেষে ব্লগার জানতে চেয়েছেন —

এমন স্বভাবের কৃষ্ণকে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের অনেক স্থানে পরমাত্মা বলা হয়েছে। কিন্তু পরমাত্মার চাইতে দুরাত্মার সাথেই তার বেশি মিল দেখা যায়। ধর্মগ্রন্থের এইসব চরিত্র থেকে মানুষ ঠিক কি শিক্ষা পাবে?

সমস্যা হলো, পরমাত্মা না ভেবে আপনি যদি দুরাত্মা ভেবেই তাঁর সম্পর্কে জানতে চান। সেখানে আপনি কোনো ভাবেই তাঁর চরিত্রের সঠিক বিচার করতে পারেন না। একে বলা হয় পূর্বপক্ষ দোষ। আপনি তো সমালোচনার দৃষ্টিতেই দেখছেন। তত্ত্বের দৃষ্টিতে নয়। তাই আপনি আপনার জায়গায় একদম ১০০% ঠিক আর আমি আমার জায়গায়।

এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি নিজের ভুল ধারনা ত্যাগ করে মূল ধারণা গ্রহন করবেন নাকি নিজের বক্তব্য পুষ্ট করতে শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত স্বীকার করে নিজের মতই চলবেন। 

যে ব্যক্তি শাস্ত্রকে ভক্তির দৃষ্টিতে পড়বে, সে কৃষ্ণের প্রেমময় রূপ উপলব্ধি করবে। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র যুক্তিবাদী বা সমালোচকের দৃষ্টিতে পড়বে, সে প্রকৃত সত্য বুঝতে পারবে না।

যো যো যাম্‌ তানু ভজতি, তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাম্।" (গীতা ৭.২১)

যে যে ভাব নিয়ে ভগবানকে স্মরণ করবে, সে সেই রূপেই তাঁকে দর্শন করবে।

কবির, মীরা বাই, চৈতন্য মহাপ্রভু—তাঁরা রাম ও কৃষ্ণকে প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন। তারা কি সমাজে এমন কিছু প্রচার করেছেন যেখানে নৈতিক অবনতি হয়েছে? কৃষ্ণ ভক্তদের মধ্যে কি সেইরকম বহু স্ত্রী সম্ভোগের চেষ্টা আছে? নাকি তারা অবৈধ সম্পর্ককে বৈধতা দেয়? 

শ্রদ্ধাময়ো'য়ং লোকঃ" (চান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.১)

 মানুষের অন্তরের বিশ্বাসই তার জ্ঞান ও উপলব্ধির মূল ভিত্তি।

বলার মতো অনেক কিছুই আছে কিন্তু আর কিছুই বলার নাই। কারণ এই আলোচনার উদ্দেশ্য রাধা কৃষ্ণের চরিত্রকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা। 

ধন্যবাদ!

হিন্দু আতঙ্কবাদের সংজ্ঞা এবং এর ধর্মীয় প্রভাব | Hindu Terrorism and its Religious Implications

ভূমিকা

"আতঙ্কবাদ" বা "সন্ত্রাসবাদ" শব্দটি সাধারণত সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভয় সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় লক্ষ্য অর্জনের কৌশলকে বোঝায়। তবে, "হিন্দু আতঙ্কবাদ" শব্দটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটি কি সত্যিই একটি বিদ্যমান বাস্তবতা, নাকি এটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক এজেন্ডার অংশ? এই লেখায় আমরা "হিন্দু আতঙ্কবাদ" ধারণার উৎপত্তি, রাজনৈতিক ব্যবহার, এবং বাস্তবতা বিশ্লেষণ করব।

আতঙ্কবাদের প্রকৃত সংজ্ঞা

আন্তর্জাতিকভাবে আতঙ্কবাদ বলতে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে সহিংসতা করা, এবং সরকার বা সমাজের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালানোকে বোঝানো হয়। আতঙ্কবাদ সবসময়ই ক্ষমতা দখলের একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং এটি সাধারণত রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে একটি চরম প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়।

একজন আতঙ্কবাদী এবং সংগ্রামীর মধ্যে মূল পার্থক্যআতঙ্কবাদী এবং সংগ্রামীর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো <u>আচরণ, লক্ষ্য এবং নৈতিক অবস্থান। আতঙ্কবাদী নিরীহ মানুষকে শিকার করে, সমাজে ভীতি ছড়ায় এবং সংঘর্ষকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকে দেয়। অপরদিকে, সংগ্রামী অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যেখানে নৈতিকতা এবং জনকল্যাণ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

ধর্মীয় পরিচয়ের সঙ্গে আতঙ্কবাদের সংযোগ

<p>সন্ত্রাসবাদ বা সহিংসতা সাধারণত রাজনৈতিক ও সামরিক কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও একে ধর্মীয় পরিচয়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। ইতিহাসে বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ ও আদর্শকে সহিংসতার জন্য দায়ী করা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ সহিংস আন্দোলন মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।</p>

যদি একজন মুসলিম মনে করে যে হিন্দুরা তাদের ওপর অত্যাচার করছে, তাই সে "জেহাদ" করে অধিকার দখল করতে চায় এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে এটি আতঙ্কবাদ বা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে গণ্য হবে।

কেন এটিকে আতঙ্কবাদ বলা হবে?

১. সহিংসতা এবং শক্তির ব্যবহার:

ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে জেহাদ ঘোষণা করে সহিংসতা চালানো হলে সেটি সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে অস্ত্র তুলে নেওয়া এবং অন্যদের হত্যা করা কখনোই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।

2. অন্য ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ:

যদি কেউ মনে করে যে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় অত্যাচার করছে, তবে এর বিচার করার উপায় আছে—আদালত, আইন ও সামাজিক প্রতিবাদ। কিন্তু "অধিকার দখল" বা "ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ" করা হলে, তা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা হয়ে যায়, যা আতঙ্কবাদ বা সন্ত্রাসবাদ।

3. শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধ করা একটি স্ববিরোধী ধারণা:

যদি সত্যিই ইসলাম বা কোনো ধর্ম শান্তির শিক্ষা দেয়, তবে সেটি জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠা করা যুক্তিসঙ্গত নয়।কোনো ধর্মই সহিংসতা বা হত্যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

এই ঘটনাকে কি সংগ্রাম বলা যাবে?না, এটি সংগ্রাম নয়। সংগ্রাম তখনই হয় যখন কোনো জাতি, সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী নিজেদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আইনসঙ্গত বা নৈতিক পথে লড়াই করে।

যদি একজন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপর সত্যিকারের অত্যাচার চলত এবং তারা নিজেদের রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলত, তাহলে সেটিকে আত্মরক্ষা বা সংগ্রাম বলা যেত।

কিন্তু যদি এই প্রতিরোধের নামে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়, ধর্মকে অস্ত্র বানিয়ে অন্যদের ওপর আক্রমণ করা হয়, তবে তা সংগ্রাম নয়, বরং সন্ত্রাসবাদ।

যে কোনো ধর্ম বা মতাদর্শের নামে সহিংসতা চালানো হলে, তা সন্ত্রাসবাদ। ইসলাম হোক, হিন্দুত্ববাদ হোক, বা অন্য কোনো ধর্ম—যদি কেউ অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিধন, আক্রমণ বা জোরপূর্বক ধর্ম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, তবে সেটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কবাদ।

দ্রষ্টব্য ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক অবিচারের সমাধান আইনের মাধ্যমে, যুক্তির মাধ্যমে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে হতে পারে, কিন্তু সশস্ত্র সহিংসতা ও হত্যার মাধ্যমে নয়।

"হিন্দু আতঙ্কবাদ" শব্দটির উৎপত্তি

পাশ্চাত্য প্রচার এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা

"হিন্দু আতঙ্কবাদ" শব্দটি মূলত পশ্চিমা মিডিয়া এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রচারণা থেকে এসেছে। ইতিহাসে হিন্দু সমাজ কখনোই ধর্মীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেনি। বরং হিন্দু দর্শনের ভিত্তি হলো সহিষ্ণুতা, সহযোগীতা এবং আত্ম-উন্নয়ন। তবুও, নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার পর হিন্দুদের মধ্যে সহিংস প্রতিক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা রাজনৈতিকভাবে "আতঙ্কবাদ" নামে অভিহিত করা হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট ঘটনার রাজনৈতিক ব্যবহার

কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা, যেমন মালেগাঁও বিস্ফোরণের  অন্যতম অভিযুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর সহ জন গ্রেফতার হন। এর আগেই মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয় এবং একটি LML Freedom বাইকে, যেখানে বিস্ফোরক রাখা ছিলো।

সেই বাইকটি ছিলো সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের। ওই সময় মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে তদন্তের দায়িত্বে ছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা NIA ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। প্রমাণের অভাবে মুক্ত হয় ৯ অভিযুক্ত

কিভাবে এই মামলা পরাস্ত হয়েছে?

১) অভিনব ভারত সংস্থাকে সন্ত্রাসবাদী সংস্থা বলা হয়েছিল। তবে, তদন্তে শ্রীকান্ত পুরোহিতের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে, এই অভিযোগটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।। ২) বিস্ফোরণের স্থান এবং প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়নি। ফলে, এই অভিযোগটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ৩) একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সন্ত্রাসবাদী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলে, সবার প্রথমে দেশের সুরক্ষা বাইরে ইনফিল্টেড হয়ে যেত। এরকম কোন তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ৪) তদন্তে হিন্দু সন্ত্রাসবাদের প্রেরণা বা উদ্দেশ্য প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে, এই অভিযোগটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

2018 সালে বেকুসুর খালাস হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত পুরোহিত। খালাস পেয়ে রিপাবলিক নিউসতাকে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে বা পক্ষে তার এই হয়রানির&nbsp; কিছু কথা জানতে চাইলে তিনি কিছুই বলতে চাননি। গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে বা পক্ষে বা বিপক্ষে তিনি কিছু বলেননি। এইভাবেই একজন দেশের সেনা জিনি নির্দোষ ছিলেন তিনি ন্যায় পেলেন এবং হিন্দু জাতির ওপর "হিন্দু আতঙ্কবাদ" তকমা মিথ্যা প্রমাণিত হলো।

গোধরা দাঙ্গা: গোধরা দাঙ্গা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে "হিন্দু আতঙ্কবাদ" শব্দটি চালু করার চেষ্টা করেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০২ সালে সবরমতি এক্সপ্রেসের এস-৬ কামরায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হন। গুজরাট সরকার ও পুলিশের তদন্তে বলা হয় এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা । ট্রেন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গুজরাটে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত ও বাস্তুচ্যুত হন।

গুজরাট সরকার ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই দাঙ্গা থামানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু একটি নিউজ কনফারেন্সে তিনি স্পষ্ট করেন যে, যখন তার রাজ্যে এই দাঙ্গা হচ্ছিল তিনি তিনি পাশের রাজ্যে দ্বিগবিজয় সিংকে FAX পাঠিয়ে পুলিশ ফোর্স পাঠানোর জন্য আবেদন করেন। তা সত্ত্বেও, কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিপরীতে মিডিয়া ও খবরের কাগজে নরেন্দ্র মোদীকে "কষাই" উপাধী দেওয়া হয়।&nbsp;</p>

হিন্দু ধর্ম এবং সহিংসতার প্রশ্ন

হিন্দু দর্শনের ভিত্তি: অহিংসা ও সহিষ্ণুতা

<p>হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তি হলো "অহিংসা পরম ধর্ম" অর্থাৎ, শান্তি ও সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করা। ভগবদ গীতা, উপনিষদ, এবং অন্যান্য হিন্দু শাস্ত্র অহিংসার আদর্শ প্রচার করে। ইতিহাসে দেখা যায়, হিন্দু সমাজ আক্রমণকারী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও, কখনোই প্রথমে আক্রমণ বা জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের পথে যায়নি।</p>

আত্মরক্ষা বনাম সন্ত্রাসবাদ

<p>কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সহিংসতা হলে আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। কিন্তু প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। যখন হিন্দু সমাজ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখন সেটিকে "হিন্দু আতঙ্কবাদ" বলা হলে তা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়।

রাজনৈতিক ও মিডিয়ার ভূমিকা

একপাক্ষিক মিডিয়া প্রচারণা

<p>আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মিডিয়ায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে একপাক্ষিক প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়। ইসলামিক জিহাদ, খ্রিস্টান ক্রুসেড, বা অন্যান্য ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে কথা কম বলা হয়, কিন্তু হিন্দু প্রতিরোধকে "আতঙ্কবাদ" বলে চিহ্নিত করার প্রবণতা রয়েছে।</p>

ধর্মীয় সহিংসতার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মের নামে সহিংসতা হয়েছে, যেখানে সংগঠিত ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের চিত্র স্পষ্ট। কিন্তু হিন্দুদের বিরুদ্ধে একইভাবে ধর্মীয় আধিপত্য বা সন্ত্রাসবাদ চালানোর অভিযোগ তোলা হলে সেটি প্রমাণের অভাবে পড়ে যায়।

উপসংহার: 

হিন্দু আতঙ্কবাদ" কি বাস্তব, নাকি রাজনৈতিক অস্ত্র?

হিন্দু সমাজের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি মূলত একটি সহিষ্ণু এবং বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সভ্যতা। "হিন্দু আতঙ্কবাদ" শব্দটি বাস্তবতা থেকে দূরে এবং এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আত্মরক্ষা ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, এবং এটি বুঝতে না পারলে একপাক্ষিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হবে।

সত্যিকার অর্থে, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত সংজ্ঞা এবং তার উৎস বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। "হিন্দু আতঙ্কবাদ" শব্দটি বাস্তবিকভাবেই একটি বিতর্কিত প্রচারণার অংশ, যা রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিভাজন তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

পাশ্চাত্য সভ্যতার শয়তান, ঈশ্বরের পরিকল্পনারই অংশ হলে, সেই ঈশ্বর নিজেই কি শয়তান নয়?

আমার এই প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ একটি নতুন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করবে, যা ইতিহাসে সম্ভবত বিরল। সাধারণত, নাস্তিক বা সংশয়বাদীরাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু একজন ধার্মিক ব্যক্তি ঈশ্বরের নৈতিক অবস্থান ও পরিকল্পনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করে না।

আমার দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষত্ব:

ধর্মের অস্তিত্বকে বজায় রেখে আমি, প্রকৃত ধর্ম ও "সৃষ্ট ধর্ম" (Constructed Religion) আলাদা করে তুলে ধরতে চাই। ধর্ম যদি নৈতিক হয়, তবে তা যেন রাজনীতি বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার না হয়। "ডিভাইন প্ল্যান প্যারাডক্স"-এর মাধ্যমে ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। 

পাশ্চাত্য ধর্ম গুলোকে আমি সৃষ্ট ধর্ম (Constructed Religion) বলে মনে করি। কারণ সেখানে ঈশ্বর নিজেকে একক সত্তা বললেও, তিনি ভিন্ন সত্তার পূজা করতে বারন করেছেন। একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। 

অক্ষয় পাত্র: জলের গ্লাসের উদাহরণ

 মনে করুন,  একটি বিশাল হল ঘরে টেবিলে একটি মাত্র জলের গ্লাস আছে এবং ওই গ্লাসটি অক্ষয় পাত্র। অর্থাৎ, ওই জলের গ্লাস থেকে কখনো জল শেষ হয় না। এবার ধরুন, কারো জল তেষ্টা লাগল। তাকে কি আমি বলব, ওই গ্লাস ছাড়া অন্য কোন গ্লাসের জল খাবে না ? ওই হলঘরে সেটি একমাত্র জলের গ্লাস। তৃষ্ণার্তকের জলের গ্লাস দেখানোই যথেষ্ট। বা না দেখালেও সে ওই জলের গ্লাস থেকেই জল খাবে। 

পাশ্চাত্য ঈশ্বর নিজেকে ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বরের পূজা না করার আদেশ এরকমই একটি ঘটনা। যেখানে তার অস্তিত্ব টিকে আছে, অন্যান্য ঈশ্বরের অনস্থিত্বের ওপর। এটাই ঐশ্বরিক পরিকল্পনার অন্তর্নিহিত অসঙ্গতি। ডিভাইন প্ল্যান প্যারাডক্স

ঐশ্বরিক পরিকল্পনা (Divine Plan) ধারণাটি আবার অন্য ভাবেও প্রমাণ করা যায়। ঈশ্বর সবকিছু জানেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন, এবং তাঁর প্রতিটি কাজই নির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনার অংশ। তাই, শয়তান ঈশ্বরের পরিকল্পনারই অংশ। তাহলে, সেই ঈশ্বর নিজেই কি শয়তান নয়?

 এখানেই এক গভীর প্যারাডক্স সৃষ্টি হয়—যদি ঈশ্বর সত্যিই সর্বজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান হন, তবে কেন তিনি শয়তানকে সৃষ্টি করলেন? সর্বজ্ঞ ঈশ্বর জানতেন শয়তান খারাপ হবে, তবে কেন ঈশ্বর তাকে ধ্বংস করছেন না? অথবা, শয়তান কি ঈশ্বরেরই একটি পরিকল্পিত সৃষ্টি, যার মাধ্যমে ঈশ্বর নিজেই "পক্ষ-বিপক্ষ" তৈরি করে রেখেছেন? নাকি এগুলো রাজনীতি বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার!

"ডিভাইন প্ল্যান প্যারাডক্স" (Divine Plan Paradox) এই অসংগতিগুলোর একটি সুসংহত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে। এটি দেখায়, শয়তান আসলে এক ধর্মের দ্বারা সৃষ্ট আরেক ধর্মের দেবতা বা শক্তি, যা ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তারের একটি কৌশল মাত্র। তাই শয়তান বাস্তবে কোনো স্বতন্ত্র সত্তা নয়, বরং একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক অস্ত্র, যার মাধ্যমে পুরনো বিশ্বাসকে ধ্বংস করে নতুন বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

ডিভাইন প্ল্যান প্যারাডক্স সংজ্ঞা:

  • একদিকে ঈশ্বর সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান, তাই তিনি সব কিছু জানেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
  • অন্যদিকে, তিনি মানুষের মুক্ত ইচ্ছাকে (Free Will) অনুমোদন করেন এবং শয়তানকে পরীক্ষার অংশ হিসেবে রাখেন।কিন্তু, যদি ঈশ্বর জানতেন শয়তান বিদ্রোহ করবে, তাহলে শয়তানকে সৃষ্টি করাই বা কেন?
  • যদি ঈশ্বর শয়তানকে ধ্বংস না করেন, তাহলে কি শয়তানও ঈশ্বরের পরিকল্পনারই অংশ 
  • যদি এই সব কিছু ঈশ্বরের পরিকল্পনার (Divine Plan) অংশ হয়, তাহলে দায়ভার কার?

ডিভাইন প্ল্যান প্যারাডক্স ব্যাখ্যা:

  • যদি ঈশ্বর সত্যিই মুক্ত ইচ্ছা দেন, তবে তাঁর পরিকল্পনা কি আসলে নির্ধারিত নয়?
  • যদি ঈশ্বর চান মানুষ তাঁকে মান্য করুক, তবে শয়তানের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা কী?
  • যদি শয়তান ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ, তবে শয়তান কি আসলে পরীক্ষক নাকি ঈশ্বরের ইচ্ছার বাস্তবায়নকারী?
  • যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হন, তবে তিনি কেন শয়তানকে ধ্বংস করেন না?
  • যদি শয়তান ধ্বংস হয়, তবে ঈশ্বরের পরীক্ষা কি শেষ হয়ে যাবে?

এই প্যারাডক্স ঐশ্বরিক পরিকল্পনা বনাম নৈতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে এবং ধর্মীয় দার্শনিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে।

১. প্রকৃত ধর্ম বনাম সৃষ্ট ধর্ম 

প্রকৃত ধর্ম কি:

প্রকৃত ধর্ম ন্যায়, সত্য, আধ্যাত্মিক মুক্তি এবং নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য। এটি মানুষের মুক্ত চিন্তার অধিকার দেয়, ভয়ভীতি বা বাধ্যতামূলক আনুগত্য চায় না।

প্রকৃত ধর্ম বিশ্বজনীন সত্যকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং ঈশ্বরকে কেবল একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সম্পত্তি মনে করে না।

সৃষ্ট ধর্ম (Constructed Religion):

এটি ঈশ্বরের নামে রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা ও সমাজ নিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি। এখানে ঈশ্বর শুধু একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য, এবং তাঁর বাইরে কেউ সত্য হতে পারে না। এখানে ঈশ্বর নিজের পূজা ছাড়া অন্য সব কিছু নিষিদ্ধ করেন, যা প্রকৃত ধর্মের বিপরীত।

মনে করুন, আপনি একজন ফুটবল কোচ হিসেবে উভয় পক্ষকেই শিক্ষা দিচ্ছেন—অর্থাৎ, পক্ষ (আপনার দল) এবং প্রতিপক্ষ (বিরোধী দল) দুজনকেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি নিজের দলের উন্নতিতে বেশি জোর দিচ্ছেন এবং চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে জয়লাভ

এখন প্রশ্ন: আপনার অবস্থান কী?

আপনার মূল অবস্থান (Standpoint) হলো—আপনি নিরপেক্ষ নন, কারণ আপনি নিজের দলকে জয়ী করতে চান

  • আপনি প্রতিপক্ষকেও শিক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু শেষমেশ তারা আপনার বিরুদ্ধে খেলবে
  • আপনি নিজের দলের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, কারণ আপনি চান তারা উন্নতি করুক, শক্তিশালী হোক, এবং শেষ পর্যন্ত জিতুক
  • যদি প্রতিপক্ষ আপনার শেখানো কৌশল ব্যবহার করে আপনাকেই হারিয়ে দেয়, তাহলে সেটি কি আপনার সফলতা, নাকি ব্যর্থতা?

এই যুক্তি ঈশ্বর ও শয়তান প্রসঙ্গে তুলনা করা যায়।

ঈশ্বর ও শয়তান সম্পর্কেও একই রকম প্রশ্ন —

  • ঈশ্বর শয়তানকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে জ্ঞান দিয়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি শয়তানকে পরাজিত করতে চান
  • শয়তান যদি ঈশ্বরেরই তৈরি, তবে ঈশ্বর কি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের প্রতিপক্ষ সৃষ্টি করেছেন?
  • যদি ঈশ্বর চান যে তাঁর অনুসারীরা জয়ী হোক, তবে তিনি কি সত্যিই সর্বশক্তিমান? কারণ, একজন সর্বশক্তিমান সত্তা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করেন না।
  • শেষ পর্যন্ত, শয়তান যদি হারতে বাধ্য হয়, তবে খেলাটা কি ন্যায়সঙ্গত?

মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার

আপনি যদি বলতেন: "আমি নিরপেক্ষ, আমি উভয় দলকেই সমানভাবে প্রশিক্ষণ দেই", তাহলে আপনার স্ট্যান্ড পরিষ্কার হতো।
কিন্তু আপনি বলছেন: "আমি নিজের দলের জয়ের জন্য সবকিছু করব, কিন্তু প্রতিপক্ষকেও শিক্ষা দেব"
এক্ষেত্রে আপনি একটি পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান নিচ্ছেন, যা বাস্তবিকভাবে যুক্তিসঙ্গত তো নয় ন্যায়সঙ্গতও নয়।

এখন প্রশ্ন করুন—ঈশ্বর কি শয়তানকে "উদ্ধার" করবেন, নাকি ধ্বংস করবেন?

  • যদি ঈশ্বর চান শয়তান ধ্বংস হোক, তাহলে তিনি তাকে সৃষ্টি করলেন কেন? 
  • যদি ঈশ্বর চান শয়তান সংশোধন হোক, তবে তিনি কেন তাঁকে শয়তান বানালেন?

এখানে কোচ তথা ঈশ্বরের অবস্থান আসলে দ্বিধাগ্রস্ত:

  • আপনি প্রতিপক্ষের উন্নতি চান না, কিন্তু তাদের শিখিয়ে যাচ্ছেন
  • আপনি নিজের দলকে উন্নত করতে চান, কিন্তু খেলায় প্রতিপক্ষ থাকবেই
  • আপনি কি সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন থাকতে পারবেন, নাকি আপনার দলের প্রতি পক্ষপাত দেখাবেন?

ঈশ্বরের অবস্থানও কি একই রকম দ্বিধাগ্রস্ত নয়? তিনি শয়তানকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে ক্ষমতা দিয়েছেন, কিন্তু আবার তাকে পরাস্ত করতে চান—এটি কি প্রকৃতপক্ষে এক সুসংগত অবস্থান?

পাশ্চাত্য ধর্ম (Abrahamic Religions) কেন সৃষ্ট ধর্ম?

আমি বলছি যে পাশ্চাত্য ধর্মগুলো (ইহুদি, খ্রিস্টান, ইসলাম) সৃষ্ট ধর্ম, কারণ:

এগুলো একচেটিয়া ঈশ্বর ধারণা প্রচার করে:

  • "আমিই সত্য ঈশ্বর, অন্য কিছু মানা যাবে না"—এই ধরনের বাণী সৃষ্ট ধর্মের বৈশিষ্ট্য।
  • প্রকৃত ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ হন, তবে কেন তিনি ভয় পাবেন যে মানুষ অন্য দেবতাকে মানবে?

এই ধর্মগুলোতে ঈশ্বর নিষেধাজ্ঞা দেন:

  • "আমাকে ছাড়া অন্য কারও পূজা করবে না।"
  • "অন্য দেবতাদের মানলে শাস্তি পাবে।"

✔ আমার ওই টেবিলের গ্লাসের উদাহরণ এখানেই প্রযোজ্য:

কেউ যদি জলের পিপাসায় কষ্ট পায়, তবে সে কেন শুধু একটি নির্দিষ্ট গ্লাসের জল পান করতে বাধ্য থাকবে? সব গ্লাসেই যদি জল থাকে, তাহলে সে যেকোনো গ্লাস থেকে জল পান করতে পারবে। আর যদি একটি গ্লাসই থেকে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে বিধি নিষেধের কারণ কি? সে সহজ ভবেই ওই ক্লাসটি উঠাবে। 

👉 তাহলে প্রশ্ন:

যদি সত্যিকারের ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হন, তবে কেন তিনি একটি নির্দিষ্ট নাম, ধর্ম বা সম্প্রদায় দ্বারা সীমাবদ্ধ হবেন? তাঁর সত্য কি কেবল একটি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য? তাহলে কি এটি আধ্যাত্মিক সত্য নয়, বরং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ?

প্রকৃত ঈশ্বর কেমন হওয়া উচিত?

প্রকৃত ঈশ্বরের উচিত সবাইকে সত্যের দিকে নিয়ে যাওয়া, কাউকে শাস্তির ভয় দেখানো নয়। প্রেমের দ্বারা বা সুযোগের দ্বারা উন্নতি বা মুক্তির পথে অগ্রসর করা। প্রকৃত ঈশ্বর যদি চান মানুষ তাঁকে চিনুক, তবে তা ভয় ও দাসত্বের মাধ্যমে নয়, বরং উপলব্ধির মাধ্যমে হওয়া উচিত। প্রকৃত ধর্ম সীমাবদ্ধ নয়, এটি সার্বজনীন এবং ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার জায়গা দেয়।

ঈশ্বর কি সত্যিই সর্বজ্ঞ বা সর্বদয়? নাকি তিনি স্বয়ং শয়তান?

উক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটি চূড়ান্ত ধারণা তৈরি হয়—

পাশ্চাত্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শয়তান শুধু তারই একটি অস্ত্র। অর্থাৎ, ঈশ্বর নিজেই শয়তানকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে পরিচালিত করছেন। তাহলে, ঈশ্বর কি স্বয়ং শয়তান?

হিন্দু ধর্মে শয়তানের ধারণা: এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি

১. হিন্দু ধর্মে শয়তান বলতে কোনো স্বতন্ত্র সত্তা নেই

পাশ্চাত্য ধর্মগুলোতে (ইহুদি, খ্রিস্টান, ইসলাম) শয়তানকে ঈশ্বরের বিরোধী ও দুষ্ট শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু হিন্দু ধর্মে "শয়তান" নামে কোনো নির্দিষ্ট সত্তা নেই। 

এখানে মন্দের ধারণা বিদ্যমান, তবে এটি কোনো একক শক্তি বা ব্যক্তিত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি তামসিক (অন্ধকারময়), অহংকারী, ও আত্মবিশ্বাসহীন মানসিকতার প্রতিফলন। হিন্দু ধর্ম বলে, ভালো-মন্দ একসাথে বিদ্যমান এবং এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই সত্ত্বার বিকাশ ঘটে।

২. অসুর ও রাক্ষস: শয়তানের প্রতীক নাকি মানসিক অবস্থা?

হিন্দু পুরাণে "অসুর" (Asura) এবং "রাক্ষস" (Rakshasa) শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়, যা প্রায়শই পাশ্চাত্য শয়তানের সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু হিন্দু ধর্মে অসুর বা রাক্ষসরা স্বতন্ত্র "খারাপ শক্তি" নয়; বরং তারা মানব প্রবৃত্তির প্রতীক। যেমন, রাবণ, হিরণ্যকশিপু, বা কংস—তারা শক্তিশালী এবং বিদ্বান হলেও তাদের অহংকার, ভোগলিপ্সা, ও ঈশ্বরের বিরোধিতার কারণে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আবার তারা কোনো না কোনো ঋষি বা দেবতার অংশ।

এটি বোঝায়, মন্দ প্রকৃতির অন্তর্নিহিত এবং এটি শুধুমাত্র বাহ্যিক কোনো শয়তান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, বরং মানসিক অবস্থার প্রতিফলন।

৩. কৃষ্ণ ও শিব: মন্দ নিয়ন্ত্রণের প্রতীক

হিন্দু ধর্মে শয়তান না থাকলেও, ভালো ও মন্দের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ রয়েছে। যেমন, ভগবান কৃষ্ণ "মায়া" ও "অজ্ঞানতার" বিরুদ্ধে লড়াই করতে গীতায় জ্ঞান দিচ্ছেন।

শিবের রুদ্ররূপ ধ্বংসাত্মক হলেও তিনি কোনো শয়তান নন; বরং তিনি তামসিক শক্তিকে ধ্বংস করতে আরো উগ্র হয়ে উঠছেন। এটি বোঝায়, মন্দ শক্তি স্বতন্ত্র নয়। 

৪. কর্মফল ও শয়তান ধারণার অনুপস্থিতি

পাশ্চাত্য ধর্মগুলোতে শয়তান মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে, কিন্তু হিন্দু ধর্মে "কর্মফল" (Karma) মন্দ বা দুষ্ট কাজের আসল কারণ। এখানে শয়তানের পরিবর্তে ব্যক্তির নিজস্ব কর্মই তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। কোনো শয়তান মানুষের ভাগ্য ঠিক করে না, বরং প্রতিটি ব্যক্তি তার কর্মের দ্বারা নিজের অবস্থান সৃষ্টি করে।

তাই, শয়তানের ধারণার পরিবর্তে হিন্দু ধর্ম "মায়া" (Maya) ও "অজ্ঞতা" (Avidya)-কে প্রকৃত বাধা বলে মনে করে।

উপসংহার: শয়তান নয়, আত্মোন্নতি প্রধান লক্ষ্য

হিন্দু ধর্মে শয়তানের অস্তিত্ব নেই, কারণ এখানে ভালো ও মন্দ একটি জটিল ভারসাম্যের অংশ। মানুষের আত্মার প্রকৃত মুক্তি (মোক্ষ) লাভ করতে হলে তাকে নিজের অন্তর্নিহিত মন্দ প্রবৃত্তিকে পরাজিত করতে হয়, বাইরের কোনো শয়তানকে নয়। এখানে প্রকৃত যুদ্ধ হয় আত্মার অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, বাহ্যিক দুষ্ট শক্তির বিরুদ্ধে নয়। 

এই দৃষ্টিভঙ্গি দেখায় যে, শয়তান একটি কৃত্রিম ধারণা যা মূলত ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, অথচ হিন্দু ধর্ম আত্ম-উন্নতির মাধ্যমে মুক্তির ওপর গুরুত্ব দেয়।

হিন্দুরা নিজেরা মূর্তি বানিয়ে আবার সেই নিজেদের বানানো মূর্তি পূজা করেন?

এই ধরনের আলোচনা প্রায়ই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে, কারণ ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের আত্মপরিচয়ের গভীর অংশ। যুক্তি ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিক আলোচনার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। আপনি যদি এটি যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে চান, তবে কিছু বিষয় আরো স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে:


হিন্দুধর্মে মূর্তি পূজার ধারণাটি প্রচলিত মূর্তি পূজা থেকে একেবারে ভিন্ন। পূজা করা হয় আদর্শের বা যোগ্যতার। এটি ঠিক ইবাদত বা ঈশ্বর সেবা নয়।

ভূমিকাঃ 

যদি মুসলমানরা বাজার থেকে কিনে আনা কোরআন পড়ে ইশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করতে পারেন। তবে হিন্দুদের মূর্তির পূজায় ভুল কোথায়? ঈশ্বর কি শুধু নিরাকারেই সীমিত? ইশ্বরের কি ক্ষমতা নেই সাকারে প্রকট হওয়ার? হিন্দুদের উপনিষদ ঈশ্বরকে সাকার এবং নিরাকার উভয়ই রূপেই সমর্থন করেছে।

ইসলাম ধর্ম যদি সত্যিই মূর্তি পূজার বিরোধী হয় তবে কুমিল্লায় কোরআন শরীফ হনুমানের কোলে রাখলে আল্লাহ কিভাবে অপমানিত হয়? আসলে মূর্তিতে অসুবিধা নেই। অসুবিধা হল অস্তিত্বে। 

প্রকাশ্যে মূর্তি ভেঙে একজন মুসলমান উন্মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ প্রকাশ্যে কোরআন জ্বালিয়ে অনেক নাস্তিক বা এক্স-মুসলিম আজ জীবিত নেই। কেন? এই একটা কাগজের বইয়ের মূল্য মুসলমানের কাছে এক মানুষের জীবনের থেকেও বড়, নাকি কাফের বলে তার জীবনের মূল্য কম? 

যদি কাগজের তৈরী কুরআনে আল্লার বাণী থাকতে পারে। মাটির মূর্তিতে দেবতা কেন থাকবে না।  

তা ছাড়া হিন্দুরা তো সেই মূর্তি বিসর্জন দিয়ে প্রমাণ করে, ওরা ওই মূর্তির পুজা করছে না। আপনি নিজের কোরআন জ্বালিয়ে প্রমাণ করুণ ওটা একটা কাগজের তৈরী বই মাত্র।

মূর্তি কি?

মূর্তি হলো একটা "প্রতীক" যার মাধ্যমে ভক্ত। ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। মূর্তিটি ঈশ্বর নয়, বরং ঈশ্বরের রূপের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়। এই পৃথিবীতে এমন কি আছে যা ঈশ্বরের সৃষ্ট নয়। ঈশ্বরের সৃষ্টি এই মাটি, পাথর আকাশকে ঈশ্বর মনে করে পূজা করা যদি অপরাধ হয়। তাহলে সেই অপরাধ আমরা বার বার করবো।

নিঃসঙ্গ উপাসক

তিনি আছেন বনে, পাহাড়ে মেঘের অণুতে,
আকাশে মেঘ হয়ে ঝরে ফুলের রেণুতে।
পাহাড়ের চূড়ায়, নদীর স্রোতে,
তাঁরই ছোঁয়া লেগে থাকে প্রতিটি ক্ষণে।
যদি পাথরে দেখি তাঁকে, দোষ কি করে হয় তাতে?
যদি বৃক্ষের ছায়ায় খুঁজি, 
যদি নিজের মতোই বুঝি?
যদি মাটির প্রতিমায় ঈশ্বর জাগে,
তবে কেন বিরোধ, মূর্তি পূজিতে?
যদিবা নাই দেখা দেয় সে,
যদি ধরা না দেয় হাতে।
হৃদয়ে লালন করে তাঁকে 
দেখব সম্মুখে।
যদি মূর্তি পূজিলে হয় অপরাধ, 
যদি নিজের মধ্যেই থাকে বিবাদ।
এই অপরাধ আমরা করবো বারবার,
সেই শ্রদ্ধা নিয়েই চলেছি পথে ঈশ্বর সেবার।
—হিমাদ্রী রায় সরকার 

এটি অনেকটা একজন মুসলমানের কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার মতো। কাবা ঘর তো মানুষ নিজেই বানিয়েছে। তাহলে নিজের সৃষ্ট ইমারতের দকে মুখ করে নামাজ পড়তে হবে কেন? এটা কোরআনের সুরা আল-বাকারা (২:১৪৪):

"আমরা তোমার মুখ আকাশের দিকে ঘুরতে দেখছি। সুতরাং অবশ্যই আমরা তোমাকে এমন ক্বিবলার দিকে ফেরাবো, যা তুমি পছন্দ কর। এখন তুমি তোমার মুখ মসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও। আর তোমরা যেখানে থাকো না কেন, তোমরা তোমাদের মুখ ওই দিকেই ফেরাও। নিশ্চয়ই যেসব লোককে কিতাব দেয়া হয়েছিল (বনি ইসরাইল), তারা জানে যে, এটি তাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য। আর আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত।"

তাদের মতে কাবা নিজে কোনো ঈশ্বর নয়, বরং এটি তাঁদের ঐক্যের প্রতীক।

আবার মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, মানুষ নির্মিত কাগজ কালির বই কোরআন কেবল কাগজ বা কালি নয়, বরং এতে আল্লাহর বাণী রয়েছে। সেই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে তারা ওই পুস্তককে মাথার উপর রাখেন 

সেই একই ভাবে হিন্দুরাও বিশ্বাস করেন, পূজিত মূর্তি কেবল মাটি বা পাথর নয়, বরং এতে ভক্তির মাধ্যমে চেতনাবান ঈশ্বরের প্রতিফলন। 

মুসলিম ব্যক্তির যুক্তি

হিন্দুদের মূর্তির পূজায় ভুল কোথায়?

মুসলমান সব সময় কোরআন কিনে পড়েনা। কুরআনের বাণী যেই বয়ের ভেতর থাকে - সেটা কেনে। হিন্দুরা মূর্তি পূজা করে। 

আমার বক্তব্য হলো বই না থাকলে আল্লাহর বাণী যেভাবে মুসলমানদের কাছে পৌঁছত না। মূর্তি বা প্রতীক না থাকলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব মানুষ ভুলে যেতো। একজন মুসলিম যখন নামাজ পড়তে বসে, সে কি আল্লাহকে স্মরণ করে? নাকি, তার মন পড়ে থাকে নিজের দোকান, বাড়ি, বউ-বাচ্চা, ব্যবসার দিকে। নিশ্চই সে আল্লাহর কথা ভাবে না।

 কারণ , আল্লাহর কোনো স্বরূপ নেই। আর মানুষের মন রূপের অনুরাগী। একজন মুসলিম নামাজের সময় শুধু কিছু ধর্মীয় পদ্ধতি , যা সে শিখেছে সেটাই পালন করে। কিন্তু হিন্দু তাঁর দেবতার অস্তিত্ব সম্মুখে দেখতে রেখে মনকে নিবদ্ধ করে। 

ইশ্বরের কি ক্ষমতা নেই সাকারে প্রকট হওয়ার।

অবশ্যই আছে। কিন্তু বিষয়টি তাঁর ইচ্ছাধীন - আমাদের নয়। আল্লাহ নিজেকে প্রকট করে না।

—অর্থাৎ তিনি সাকার হতে পারেন। সেই সাকার স্বরুপকে আমরা অপরব্রহ্ম বলে জানি। আর নিরাকার কে হিন্দু পরব্রহ্ম বলে জানেন। এই জায়গায় মুসলিমদের জ্ঞান সীমিত।

আল্লাহ কিভাবে অপমানিত হয়?

আল্লাহ অপমানিত হননা। আল্লাহকে অপমান করার সাধ্য কারো নেই। অপমানিত হয় মুসলিম বান্দারা, তাদের ধর্মবিশ্বাস অপমানিত হয়।

—কিছুদিন আগে ফ্রান্সে এক ব্যক্তি কোরআন শরীফ জ্বালিয়েছে, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নোংরা ভাষায় গালি দিয়েছে। ওই ব্যক্তিকে আইনি ভাবে আটক করা হলেও মুসলমানরা ওকে হত্যা করেছে। কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে ওয়াজিবুল কতল। অর্থাৎ আল্লাহর বাণীতে স্পষ্ট হয় যে আল্লাহর অপমান বোধ আছে।

এই একটা কাগজের বইয়ের মূল্য।

কাগজের কোন মূল্য নেই, মূল্য আছে সম্মানের। আপনার ডায়েরি থেকে কেউ একটা পেইজ ছিড়লে আপনার গায়ে লাগবেনা, কিন্তু আপনার উচ্চশিক্ষার সনদ (সার্টিফিকেট)! সেটা ছিড়লে কেমন লাগবে?

— যার নিজের সম্মান বোধ আছে সে অপরকেও সম্মান দেয়। হিন্দুদের লিঙ্গপূজা, যোনীপূজা, গোমাংস দেখিয়ে ধর্মীয় ভাব আবেগে আঘাত করা বন্ধ করুন। হিন্দুদের লিঙ্গপূজা, যোনীপূজা, দেবতার মূর্তি হলো সেই উচ্চশিক্ষার সনদ।

যদি কাগজের তৈরী কুরআনে আল্লার বাণী থাকতে পারে। মাটির মূর্তিতে দেবতা কেন থাকবে না।

আল্লাহ্‌র বাণী আমরা পূজা করিনা। আল্লাহ্‌র বাণীতে যা লেখা আছে - সেইমত চলি, সেইমত কাজ করি। মূর্তির মধ্যে এমন কি দেখা যায়, বা মূর্তিতে এমন কি শক্তি আছে যে বড় বড় দেবতাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা করতে হবে?

— অর্থাৎ মূর্তিতে কোন অসুবিধা নেই। মূর্তির অস্তিত্বকেই আপনার পছন্দ করেন না। কুরআনের নিয়ম অনুসারে চলে আপনাদের কি উন্নতি হয়েছে? আর যারা ঈশ্বর মানে না, তাদেরই বা কি অবনতি হয়েছে? যদি, কোরআনের মত অনুসারে চলা আপনার অধিকার হতে পারে। তাহলে একজন হিন্দু কিভাবে তার ঈশ্বরকে ডাকবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

কোরআন জ্বালিয়ে প্রমাণ 

মূর্তি বিসর্জন দেয়া হয়, কারণ মূর্তি হল "কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী"। আমাদের কাছে কোরআনের প্রয়োজন কখনো ফুরায় না যে ওটা আমরা জ্বালিয়ে আপনাদেরকে কিছু প্রমাণ করে দেখাবো।

—পূজার জন্য হিন্দুদেরও মূর্তির প্রয়োজন নেই। গ্রামাঞ্চলে অনেক দেবস্থান আছে, যেখানে কোন মূর্তি নেই। মূর্তি যে ঈশ্বর নয়। সেটা বোঝাতেই বিসর্জন দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু কিছু মূর্তি যেগুলো প্রতিষ্ঠিত মঠ বা জ্যোতিরলিঙ্গ সেগুলো বিসর্জন দেওয়া হয় না। যেমন আপনাদের কাবার ওই কালো পাথর।   

উপসংহার

হিন্দু ও মুসলিম—দুই সম্প্রদায়ই প্রতীক এবং ধর্মীয় গ্রন্থকে সম্মান দিয়ে থাকেন, তবে তার ব্যাখ্যা ভিন্ন। একে অপরের বিশ্বাসকে সম্মান করাই প্রকৃত ধর্মীয়তা।

এই ব্যাখ্যাগুলো দিয়ে আপনি যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেন। তবে, বিতর্কের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত পারস্পরিক বোঝাপড়া, বিরোধ সৃষ্টি নয়।

ইসলাম: অর্থ, মূল আদর্শ ও হিন্দু ধর্মের সঙ্গে তুলনা


This is introduction paragraph

ইসলাম কী?

ইসলাম একটি মাযহব, যা এক সময় নির্দিষ্ট জাতির জন্য ছিল, পরবর্তীতে এটি একটি বিশ্বজনীন ধর্মীয় ব্যবস্থায় পরিণত হয়। এটি ৭ম শতকে আরব উপদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের অনুসারীরা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে এবং মনে করে, এটি আল্লাহর প্রেরিত চূড়ান্ত জীবনব্যবস্থা।

ইসলামের অর্থ

"ইসলাম" শব্দটি আরবি "সালাম" থেকে এসেছে, যার অর্থ "শান্তি" এবং "আত্মসমর্পণ"। অর্থাৎ, ইসলামের মূল আদর্শ হলো আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করা এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করা।

ইসলামের মূল আদর্শ

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা মূল আদর্শ রয়েছে—

১. শাহাদাহ (কালেমা) – একজন মুসলিমকে বিশ্বাস করতে হবে যে, "আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ হলেন তাঁর রাসুল।"
২. সালাত (নামাজ) – প্রতিদিন পাঁচবার নির্দিষ্ট নিয়মে আল্লাহর উপাসনা করতে হয়।
৩. সাওম (রোজা) – রমজান মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস রাখতে হয়।
৪. যাকাত – নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে, তার একটি অংশ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে হয়।
৫. হজ – জীবনে অন্তত একবার সামর্থ্যবানদের জন্য মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা ফরজ।

এছাড়া, ইসলামে ন্যায়বিচার, দানশীলতা, মানবতার কল্যাণ এবং আত্মসংযমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের তুলনা

সৃষ্টিকর্তার ধারণা
ইসলামে একেশ্বরবাদ প্রচলিত, যেখানে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু উপাস্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে, হিন্দু ধর্মে নিরাকার ব্রহ্মের ধারণা রয়েছে, আবার বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনাও প্রচলিত।

ধর্মগ্রন্থ
ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো কুরআন, যা ইসলামের সর্বোচ্চ বিধান। হাদিস হলো নবীর কথা ও কাজের সংকলন, যা ধর্মীয় ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ ও গীতা উল্লেখযোগ্য।

উপাসনা পদ্ধতি
ইসলামে নামাজ, দোয়া, ও জিকির প্রধান উপাসনা পদ্ধতি। হিন্দু ধর্মে পূজা, যজ্ঞ, ধ্যান, জপ ও কীর্তন প্রচলিত।

মুক্তি বা পরকাল বিশ্বাস
ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, মানুষ মৃত্যুর পর কেয়ামতের দিনে পুনরুত্থিত হবে এবং তার কর্ম অনুযায়ী জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। হিন্দু ধর্মে পুনর্জন্মের ধারণা রয়েছে, যেখানে কর্মফল অনুযায়ী পরবর্তী জন্ম নির্ধারিত হয়। চূড়ান্ত মুক্তি হলো মোক্ষ, যেখানে আত্মা ব্রহ্মের সঙ্গে একীভূত হয়।

সামাজিক কাঠামো ও বিভাজন

ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম উভয় ক্ষেত্রেই সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা যায়, যা মূলত ধর্মের শিক্ষার পরিবর্তে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার ফল।

ইসলামে তাত্ত্বিকভাবে সব মুসলমান সমান, তবে বাস্তবে আরব মুসলিম ও ধর্মান্তরিত মুসলিমদের মধ্যে সামাজিক পার্থক্য দেখা যায়। বিশেষ করে, আরব অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে বংশগত পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে ধর্মান্তরিত মুসলমানদের অনেক সময় নিম্নস্থ মনে করা হয়। যদিও ইসলামের মূল শিক্ষা অনুযায়ী এই পার্থক্যের কোনো ভিত্তি নেই, সামাজিকভাবে এটি প্রচলিত রয়েছে।

হিন্দু সমাজেও জাতিভেদ ব্যবস্থা প্রচলিত, যা মূলত সামাজিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণে গঠিত হয়েছে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর বিভিন্ন ব্যাখ্যায় জাতিভেদ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। অনেক আধুনিক হিন্দু পণ্ডিত মনে করেন, জাতিভেদ ছিল মূলত কর্মভিত্তিক একটি ব্যবস্থা, যা পরবর্তীতে কঠোর সামাজিক বিভাজনে পরিণত হয়।

উপসংহার

ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম উভয়ই মানুষের নৈতিকতা, আত্মসংযম, এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেয়। যদিও ইসলামে একেশ্বরবাদ ও নির্দিষ্ট উপাসনা পদ্ধতি রয়েছে, হিন্দু ধর্মে ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপাসনার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিকতা দেখা যায়। যা একটি মুক্ত ও উন্নত সমাজ ব্যবস্থার লক্ষন। এদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, মানবতার কল্যাণ এবং আত্মিক উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

সামাজিক বিভাজন কোনো ধর্মের মূল শিক্ষা নয়, বরং এটি মানুষের তৈরি একটি কাঠামো, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।

Responsive Ad Code Here...

সম্পাদকীয়

[বৈদিক ধর্ম][reviewbox]
Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads