তেজস বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে সাম্প্রতিক খবরগুলো বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে দুবাই এয়ারশোতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি তেজস যুদ্ধবিমান ক্র্যাশ করে, যাতে একজন অভিজ্ঞ পাইলটের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা শুধুমাত্র ভারতীয় বিমান চালনা শিল্পের জন্য একটি ধাক্কা নয়, বরং আন্তর্জাতিক এয়ারশোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই নিবন্ধে আমরা তেজস বিমান দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ, কারণ, পরিণাম এবং সংশ্লিষ্ট সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব।
তেজস বিমানের ইতিহাস
তেজস বিমান, যা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) দ্বারা নির্মিত, ভারতের স্বদেশী যুদ্ধবিমান প্রোগ্রামের একটি মাইলফলক। এটি একটি একক ইঞ্জিনযুক্ত, ডেল্টা-উইং মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট, যা ভারতীয় বিমান বাহিনীকে আধুনিকীকরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তেজস প্রোগ্রাম শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে, এবং প্রথম ফ্লাইট হয় ২০০১ সালে।
এই বিমানের উন্নয়নে ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তেজস Mk-1 ভার্সনটি ইনিশিয়াল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (IOC) এবং ফুল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (FOC) ভাগে বিভক্ত। বর্তমানে ৪০টি তেজস Mk-1 উত্পাদিত হয়েছে, যার মধ্যে ২০টি IOC এবং ২০টি FOC।
তেজস বিমান দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি বললেই চলে, কিন্তু এই প্রোগ্রামের ২৩ বছরের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় দুর্ঘটনা। প্রথমটি ছিল ২০২৪ সালের মার্চ মাসে জয়সালমারে, যেখানে ইঞ্জিন ফেলিয়ারের কারণে ক্র্যাশ হয়, কিন্তু পাইলট নিরাপদে ইজেক্ট করে। তেজসের ডিজাইন ফ্লাই-বাই-ওয়্যার সিস্টেম এবং অ্যাডভান্সড অ্যাভিয়োনিক্সের জন্য বিখ্যাত।
(এখানে একটি ছবি যোগ করুন: )
আরও জানতে, উইকিপিডিয়া-তে তেজস বিমান দেখুন।
দুবাই এয়ারশো ২০২৫-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
দুবাই এয়ারশো বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এভিয়েশন ইভেন্ট, যা প্রতি দু'বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালের এয়ারশোটি ১৭ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত আল মাকতুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে হয়েছে। এতে ১,৫০০-এরও বেশি প্রদর্শক এবং ১৮০-এরও বেশি বিমান অংশ নেয়।
ভারতীয় বিমান বাহিনী এখানে সূর্যকিরণ অ্যারোব্যাটিক টিম এবং তেজস Mk-1 নিয়ে অংশ নেয়। এয়ারশোর শেষ দিনে তেজস বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, যা সমগ্র ইভেন্টকে ছায়াচ্ছন্ন করে। এয়ারশোতে অন্যান্য বিমান যেমন রাশিয়ান T-50-9 এর ডিসপ্লে ছিল।
(ছবি: )
তেজস বিমান দুর্ঘটনার ঘটনাক্রম
২১ নভেম্বর ২০২৫, দুপুর ২:০০ টায় তেজস বিমানটি সোলো ডিসপ্লের জন্য টেকঅফ করে। রেজিস্ট্রেশন LA-5026। ২:০৫ থেকে ২:০৯ পর্যন্ত লুপ, রোল এবং হাই-স্পিড পাস করে।
২:১০ টায় লো-লেভেল রোল সাথে নেগেটিভ জি-টার্ন চেষ্টা করে। বিমান স্থিতি হারায়, অ্যাঙ্গেল অফ অ্যাটাক বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় এবং স্টিপ ভার্টিক্যাল নোজ-ডাইভে প্রবেশ করে। ২:১১ টায় রানওয়ের কাছে খোলা জায়গায় ক্র্যাশ করে, ফায়ারবল এবং কালো ধোঁয়া উঠে।
ইমার্জেন্সি সার্ভিস দ্রুত সাড়া দেয়। ফ্লাইট অপারেশন ২:১৫ টায় স্থগিত হয়, দর্শকদের সরানো হয়। দুর্ঘটনার ২ ঘণ্টা পর ডিসপ্লে পুনরায় শুরু হয়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিমান ৫০০ ফুটের নিচে ছিল। পাইলট শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রিকভার চেষ্টা করে।
(ছবি: )
বিস্তারিত দেখুন টাইমস অফ ইন্ডিয়া।
পাইলট উইং কমান্ডার নমনশ স্যালের জীবনী
উইং কমান্ডার নমনশ স্যাল, ৩৪ বছর বয়সী, হিমাচল প্রদেশের কাঙ্গড়া জেলার নাগরোটা বাগওয়ানের বাসিন্দা। সৈনিক স্কুল সুজানপুর তিরা থেকে পড়াশোনা। তার বাবা জগন নাথ অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার এবং প্রিন্সিপাল, মা বিনা দেবী।
স্ত্রী আফশানও আইএফ অফিসার, একটি কন্যা সন্তান। দুর্ঘটনার সময় তার বাবা-মা হায়দরাবাদে পরিবারের সাথে ছিলেন। নমনশ ডিসিপ্লিন এবং প্রফেশনালিজমের জন্য পরিচিত।
তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর স্যালুটের ভিডিও ভাইরাল হয়।
(ছবি: )
আরও জানুন এনডিটিভি।
সম্ভাব্য কারণসমূহ
তেজস বিমান দুর্ঘটনার কারণ এখনও তদন্তাধীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
জি-ফোর্স ব্ল্যাকআউট: অতিরিক্ত গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্সে পাইলটের অজ্ঞানতা। ক্যাপ্টেন অনিল গৌড় (অব.) বলেন, জি-সুট পরলেও এমন হতে পারে।
কন্ট্রোল লস: ম্যানুভারের সময় স্থিতি হারানো।
মেক্যানিক্যাল ফেলিয়ার: ফ্লাই-বাই-ওয়্যার বা কন্ট্রোল সার্ফেস সমস্যা।
স্যাবোটেজ: সম্ভাব্য, কিন্তু অসম্ভব নয়।
ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (FDR) এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR) বিশ্লেষণ করা হবে। পূর্বে সোশ্যাল মিডিয়ায় অয়েল লিকের গুজব ছিল, কিন্তু সরকার তা খণ্ডন করে, বলে এটি কনডেন্সড ওয়াটার।
আরও বিশ্লেষণ গ্লোবাল টাইমস।
তদন্ত এবং তথ্য বিশ্লেষণ
আইএফ একটি কোর্ট অফ ইনকোয়ারি গঠন করে। এয়ার মার্শাল সঞ্জীব কাপুর বলেন, কারণ মেক্যানিক্যাল বা স্যাবোটেজ হতে পারে। আইওয়াইটনেস অ্যাকাউন্টস এবং ভিডিও অ্যানালাইসিস চলছে।
ডেল্টা-উইং কনফিগারেশনে লো-স্পিডে এনার্জি লস হয়। তদন্ত সম্পূর্ণ হলে রিপোর্ট প্রকাশিত হবে।
পরিণাম এবং প্রতিক্রিয়া
পাইলটের মৃত্যুতে আইএফ দুঃখ প্রকাশ করে, পরিবারকে সাহায্য করে। এয়ারশো ২ ঘণ্টা পর চালু হয়, যা ইউএস এফ-১৬ পাইলটকে অস্বস্তিকর করে।
রাহুল গান্ধী X-এ শোক প্রকাশ করেন। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান দুঃখ প্রকাশ করেন। এটি তেজস প্রোগ্রামের প্রথম ফ্যাটাল দুর্ঘটনা।
পূর্ববর্তী তেজস দুর্ঘটনাসমূহ
প্রথম দুর্ঘটনা: ২০২৪ মার্চ, জয়সালমারে ইঞ্জিন সিজার, পাইলট ইজেক্ট করে। এটি তেজসের নিরাপত্তা রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এয়ারশোতে বিমান চালনার নিরাপত্তা। এয়ারশোতে লো-অল্টিটিউড ম্যানুভার ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা দরকার।
ভারতীয় বিমান শিল্পের উপর প্রভাব
এই দুর্ঘটনা তেজসের গ্লোবাল ইমেজে ধাক্কা দেয়, কিন্তু স্বদেশী প্রোগ্রাম চালু থাকবে।
উপসংহার
তেজস বিমান দুর্ঘটনা একটি দুঃখজনক ঘটনা, কিন্তু এ থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার। ভারতীয় বিমান বাহিনীকে সমর্থন করুন।
কল-টু-অ্যাকশন: এই নিবন্ধ শেয়ার করুন এবং কমেন্টে আপনার মতামত জানান। আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন আরও আপডেটের জন্য! ধন্যবাদ।
FAQ
তেজস বিমান দুর্ঘটনা কখন ঘটেছে?
২১ নভেম্বর ২০২৫, দুবাই এয়ারশোতে।
পাইলটের নাম কী?
উইং কমান্ডার নমনশ স্যাল।
কারণ কী?
তদন্তাধীন, সম্ভাব্য জি-ফোর্স ব্ল্যাকআউট।
এয়ারশো চালু ছিল কি?
হ্যাঁ, ২ ঘণ্টা পর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন