Headlines
Loading...
এটা জানলে আর কেউ ধর্ম পরিবর্তন করবে না, বরং হিন্দু ধর্ম গ্রহন করবে।

এটা জানলে আর কেউ ধর্ম পরিবর্তন করবে না, বরং হিন্দু ধর্ম গ্রহন করবে।

আমরা বিশ্বাস করি সকল ধর্ম এবং সকল ধর্মমত গুলো সত্য এবং ইশ্বর প্রদত্ত। স্থান কাল ও পাত্র ভেদে ইশ্বর ধর্মী ও ধর্মের পার্থক্য করেছেন ঠিকই কিন্তু মূলে তারা এক। সত্য এক, বিজ্ঞরা তাকে বহু ভাবে ব্যখ্যা করেছেন। 


উৎপত্তি:

সৃষ্টির আদিতে অনাদি পরমেশ্বর ‘নাদ’ উৎপন্ন করেছিলেন। এই নাদ থেকেই জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। নাদের আদিতে , মধ্যে ,  এবং অন্তে কার যুক্ত হয়ে সাকার ব্রহ্ম রূপে তিন আবির্ভূত হয়েছেন। আদিতে তিন দেবতার আবির্ভাব হয়েছে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর এই তিন দেবতা জগতে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় প্রাপ্তির মাধ্যমে অনাদি কল্প ধরে পুনঃ পুনঃ জগতের সৃজন, পালন ও সংহার করে আসছেন। যখন ব্রহ্মা সৃজন করেন, তখন তাঁর দেহ থেকে বিষ্ণু ও মহাদেব প্রকট হন। যখন বিষ্ণু সৃজন করেন তখন তাঁর দেহ থেকে ব্রহ্মা ও মহাদেব প্রকট হন। এভাবেই তারা তিন হয়েও এক 'সৎ-চিৎ-আনন্দ'। এক ও অদ্বিতীয় সত্ত্বার নাম নেই। কিন্তু আমরা তাঁকে সচ্চিদান্দ বলে ডাকি।

এই সৎ-চিৎ-আনন্দ বা সচ্চিদান্দ কখনো শিব, কখনো বিষ্ণু, কখনো ব্রহ্মা। তাই আদ্যাশক্তি মহামায়া যার আশ্রয় করে এই ত্রদেব কল্পে কল্পে সৃষ্টি স্থিতি ও লয় সম্পাদন করছেন। সেই আদি শক্তিও সচ্চিদান্দ স্বরুপা। তিনি অভিন্ন, অখন্ড, মঙ্গলময় এবং চরাচরে ব্যাপ্ত।

আধুনিক বিজ্ঞান ও সনাতন:

সৎ-চিৎ-আনন্দ হলেন সত্য অর্থাৎ, অপরিবর্তনীয়, চেতনাময়, এবং আনন্দ স্বরুপ। প্রতিটি জীবের আসল স্বরুপ হলো এই সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরুপ। তাই প্রতিটি জীবের মধ্যে বেচেঁ থাকার ইচ্ছা, চেতনা ও আনন্দ ভোগের ইচ্ছা আছে। এমনকি জগতের জড় পদার্থের মধ্যেও নিজেকে টিকিয়ে রাখার গুণ আছে। উদ্ভিদের সেই চিৎ শক্তি না থাকলে তার মধ্যে অভিযোজনের ক্ষমতা থাকতো না। চিৎ শক্তি কাজ করছে বলেই অনু পরমাণুর মধ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুণ দেখা যায়। পদার্থ বিজ্ঞান শুধু সেই গুণ সমুহ বিচার করে আমাদের বলতে পারে অমুক পরমাণুর ইলেকট্রন গুলো নিকটবর্তী সুস্থির পরমাণুর ইলেকট্রন যোজ্যতায় সুস্থির হওয়ার জন্য অমুক পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তমুক মৌল গঠন করে। কিন্তু নিকটবর্তী সুস্থির পরমাণুর ইলেকট্রন যোজ্যতায়  আসার যে কারণ সেটা কেন হচ্ছে বলতে পারে না। তাই, বিদ্দ্যান গন কোয়ান্টাম থিওরির ভাবনা করেছেন। 

এই কোয়ান্টাম থিওরিরও যখন পদার্থের অস্তিত্ব কিভাবে হয়েছে তাহা ব্যাখ্যা করতে পারলো না। তখন বিজ্ঞানী ও থিও লজিস্টরা ‘স্ট্রিং থিওরী’র দিকে এগিয়ে গেলো। বলা হলো, সকল পরমাণু এবং অন্তঃপরমাণবিক শক্তি গুলো এই স্ট্রিং নামক কম্পমান ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ দ্বারা গঠিত। 

এই ভাবেই বিজ্ঞান ধিরে ধিরে সূক্ষ থেকে সূক্ষতর জ্ঞানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং অনেক বিজ্ঞানী universal consciousness কে স্বীকার করেছেন। এই মত অনুসারে এই ব্রহ্মাণ্ড একটি বিশাল সুপার কম্পিউটারের মতো কাজ করে। কোনো এক জায়গায় কোনো ছোটো পরিবর্তন হলে, তার প্রভাব সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে যায় এবং সেটাকে সঠিক করার জন্য সমগ্র  বিশ্ব থেকে অনেক গুলো সম্ভাবনা কাজ করতে থাকে। এটাই হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে চিৎ শক্তি বলে জানান হয়েছে।

যদি কেউ বলে ধর্মগুলো তৈরি হয়েছে অন্ধবিশ্বাস থেকে, এবং বিজ্ঞান পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং ক্রমাগত অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আমি তাদের প্রশ্ন করতে চাই। যখন ডালটন তার পরমাণুবাদ তত্ত্বটি দিয়েছিলেন তখন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ সেটাকে সত্য বলেই গ্রহণ করেছিল, ডালটনের পরমাণুবাদকে অন্ধভাবেই বিশ্বাস করেছিল। পাঠ্যপুস্তকে সেই ডাল্টনের পরমাণুবাদকেই পড়ানো হয়েছে। ম্যাক্সওয়েল, প্ল্যাঙ্ক প্রভৃতি বৈজ্ঞানিকরা যখন আধুনিক পরমাণুবাদ স্থাপন করলেন। তখন মানুষ জানলো পরমাণু শুধু ইলেকট্রন প্রোটন দিয়ে তৈরি নয়। তাহলে বলুন,  বিজ্ঞানে কি অন্ধবিশ্বাস নেই? আসলে যে কোনো সত্যে পৌঁছতে গেলে আস্থা রেখে একটি পথে অগ্রসর হতে হবে। পৌঁছানোর পরই বলা যাবে, সত্যটা কি?

জীব এবং জগত: 

হিন্দু ধর্ম অনুসারে, ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে সাচ্চিদানন্দ নিজ মায়ার সঙ্গে এক ছিলেন। তিনি মায়া বিস্তার করে খিরদ সাগর তৈরী করলেন। সেই সগরের জলকে নার বলা হয়েছে। ওই 'নার' নমক জলে নারায়ণ প্রকট হলেন।  নারায়ণের প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের হাজার হাজার ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি ও ধ্বংস হয়। আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড তারই মধ্যে একটি। প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কর্তা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর এই তিন দেবতা থাকেন। প্রথম কল্পে ভগবান বিষ্ণু তাঁর নাভি কমল থেকে নিজের স্বরূপে সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মার উৎপত্তি করেন। সেই ব্রহ্মদেব হাজার বছর তপস্যা করে জগত সৃষ্টি করে। সত্য, দ্বাপর, ত্রেতা ও কলি এই তিন যুগ অতিবাহিত হলে মহেশ্বরে সব লয় পায়। তখন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর এক হয়ে মহাকালের রূপ ধারণ করবে। সব কিছু গ্রাস করে পুনরায় সৃষ্টির নতুন পর্যায় শুরু হবে। 

প্রজাপিতা ব্রহ্মা যিনি সৃষ্টিকর্তা, তাহার দেহ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সয়াম্ভু মনু ও শতরূপা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সয়ম্ভু মনুর নয় জন মানসপুত্র (মারিচ, অত্রি, অঙ্গীরা, পুলহ, পুলাস্ত, কৃতু, বশিষ্ট, ভৃগু এবং কশ্যপ)। মনু সেই সাত পুত্রের মধ্যে একজন ছিলেন ঋষি কশ্যপ। ঋষি কশ্যপের স্ত্রী দীতি ও অদীতির গর্ভ থেকে জন্ম হয়েছে দেবতা, দানব, আসুর, মানব, নাগ, সর্প, অন্ডজ, স্বেদজ জীব এবং কিট। তাই দেবতা থেকে কিট, সকলেই আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। মানুষ ছাড়া সকল জীবকুল অজ্ঞ। দেবতারাও বদ্ধ। তাই, কেবল মানুষ মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করতে পারে।

মুক্তির পথ সদগুরুর হাত ধরে হয়। গুরুর সঙ্গে জুড়ে থাকার জন্য দীক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। গুরুই সকলের পাপ ক্ষমা করে, গুরুই বিচারক, গুরুই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। এক শরীরে তিনি সব। গুরুই সাক্ষাৎ পরমেশ্বর। শক্তি যার বাম কোলে, মুক্তি তাহার আজ্ঞা। আদি গুরুর প্রতিরুপে, তিনি একমাত্র রাস্তা। তাই, শ্রীকৃষ্ণও গুরু করেছেন ঋষি সন্দীপনকে। শ্রী রামচন্দ্রের গুরু ছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ। ঋষি বশিষ্ঠের কোনো গুরু ছিল না। তিনি ভগবান মনুর মানসপুত্র ছিলেন।

বর্ণ ও জাতি:

সৃষ্টির আদি ভাগে কোনো বর্ণ ছিলো না সকলেই ব্রহ্ম নিষ্ঠ ব্রাহ্মন ছিলেন। ঋষিরদের পুত্রদের পিতৃ বলা হতো। সেই পিতৃ বা পিতরদের নাম কব, হবিস্মন্ত, আজপা ও সুকালিন। এরা ক্রমশ ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্রের পিতৃপুরুষ। হবিস্মন্ত এবং আজপার সন্তানরা ধন, হিংসা, ক্রোধ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় তারা ব্রাহ্মণত্ব চ্যুত হয়েছিল। সুকালিনের সন্তান আলস্য, নিদ্রা, আকর্মন্যতার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে শুদ্রত্ব প্রাপ্ত হলেন। এই বর্ণ গুলো একত্রে ইশ্বরের দেহ তৈরী করে। অর্থাৎ সমাজ রুপে দেহ তৈরী করে। বেদের জ্ঞান, পবিত্রতা ও শক্তি বজায় রাখার স্বার্থে প্রত্যেক বর্ণে জন্য সংস্কার ও অধিকার নির্দেশ করা হলো। এই সংস্কার থেকেই আর্য জাতির উদ্ভব হোলো। আর্য সংস্কার চ্যুত অনার্যদের ম্লেচ্ছ, শক, হুন, যবন, পারখ, ইত্যাদি জাতির কথা আমরা পাই। 

মূলত প্রাচীন কালে মিশরীয় সভ্যতার জন গোষ্ঠীকে মলেছ বলা হতো আর পরবর্তিতে ইহুদীদের কেও ম্লেচ্ছ বলা হতো। এই ইহুদিদের জাতীয় পতাকায় যে The hexagram বা ষঠকনা বিশিষ্ঠ যে দুই ত্রিভুজ অঙ্কিত আছে। যার অর্থ "যা দেওয়া হয়েছে ফেরত নেওয়া হবে”। ওই একই চিহ্ন হিন্দুরাও তন্ত্রে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রকৃতি ও পূরুষের মিলন বোঝাতে। এই প্রসঙ্গে আমরা এখনো খোঁজ করছি। পরবর্তীতে সেই বিষয় আলোচনা করা হবে। এখন আমরা ১৬ বিধ সংস্কার সম্পর্কে জানবো। 

সংস্কার:

সংস্কার ছাড়া কোনো মানুষ সু-সংস্কৃত হতে পারে না।  সংস্কার প্রাপ্ত না হলে কু-সংস্কার বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে সেচ্ছাচার বৃদ্ধি পায়। যার ফলে কলহ উৎপন্ন হয়। সমাজকে এক সূত্রে বাধার জন্য আর্য ঋষিরা ১৬ প্রকার সংস্কার প্রণয়ন করেছেন। যথা:— গর্ভাধান, পুংসবন, সীমন্তোন্নয়ন, জাতকর্ম, নামকরণ, নিষ্ক্রমণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, কর্ণভেদ, বিদ্যারম্ভ, উপনয়ন, বেদারম্ভ, কেশান্ত ও ঋতুশুদ্ধি, সমাবর্তন, বিবাহঅন্ত্যেষ্টি। এই ১৬ সংস্কারের মধ্যে  কিছু কিছু সংস্কার হিন্দু সমাজে গ্রহন করা হয়। এই সংস্কার গুলো বৈদিক সংস্কার। এছাড়াও তান্ত্রিক সংস্কার আছে। তবে সুগুলো সর্ব সাধারণের জন্য নয়। খ্রিষ্টানদের (রোমান ক্যাথলিক) -দের মধ্যেও এমন ৭ প্রকার সংস্কার (বা Sacrament) আছে। যার দ্বারা তাদের উদ্ধার হয়। ইসলাম ধর্মে সংস্কার-কে সুন্নত বলা হয়।

পাপ-পূণ্য, পুনর্জন্ম ও পরলোক:

স্বর্গ-নরক আছে কি নেই এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। তবে আপ্ত বাক্য এবং শ্রুতি প্রমাণ বলা আছে। হিন্দু ধর্ম অনুসারে প্রত্যেক জীব নিষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেয়। জন্মের পর সে 16 বছর পর্যন্ত যে সকল পাপ করে তার কোনো ফল ভোগ করতে হয় না। 16 বছর পর যে সকল পাপ হয়, সে তাহা ভোগ করে। হিন্দু ধর্মের এমন কোনো বিধান নেই যে, বেদ না মানলে বা অমুক দেবতা না মানলে অনন্ত কাল ধরে নরকের যাতনা সে ভোগ করবে। সব পাপের ক্ষমা হয় জীবন কালেই প্রায়শ্চিত্ত ও পাপ স্বীকার দ্বারা। ইশ্বর এই দয়া টুকু মানুষকে করেছেন। অর্থাৎ, তুমি কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম পুস্তক মেনে চলো বা না চলো, ইশ্বরকে মানো অথবা না মানো। এতে তুমি পাপের ভোগী হবে না। কর্মের ফল সকলকে ভোগ করতে হবে। প্রায়শ্চিত্ত ও পাপ স্বীকার করলে কেবল মাত্র পাপের বোঝা কমে যাবে। যেখানে পা ভাঙার যোগ থাকবে, সেখানে পায়ে সামান্য চোট দিয়েই চলে যাবে। এই হলো কৃপা।

ছোটো ছোটো শিশু অনেক সময় মারা যায়, জন্ম থেকে তাকে শারীরিক কষ্ট ভোগ করতে হয়। সে তো পাপ পুণ্য বোঝে না, কোনো কর্মই করেনি। এমন শিশুর দুর্ভোগ কেন? হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে এর উত্তর হোলো পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্ম বা প্রারব্ধ। পূর্ব জন্মের স্মৃতি লুপ্ত হয়ে নতুন জন্ম প্রাপ্ত হয়। কিন্তু সংস্কার লুপ্ত হয় না। সেই জন্যে একই মায়ের পেটে জমজ ভাই একই আদর, একই শিক্ষা পেয়েও আলাদা আলাদা চরিত্রের হয়। এটাও প্রামণ পুনর্জন্ম হয়। মৃত্যুর পর আত্মার কোনো পরিবর্তন হয় না, জীবের কর্ম ও সংস্কার নতুন গর্ভে রূপ ধারণ করে। 

হিন্দু ধর্মে এটাও বলা হয়েছে 86 লাখ যোনীর মধ্যে মানুষ যোনী সর্ব উৎকৃষ্ট। কারণ কেবল মানুষ যোনীতে জীব ইশ্বরকে আরাধনা করে। অন্য সকল যোনী কেবমাত্র ভোগ করার জন্য তৈরী। দেব যোনীও ভোগ যোনী।

ইশ্বরের প্রেম:

কর্ম এক প্রকার বীজ। যার ফলকে প্রারব্ধ বলা হয়। প্রারব্ধ কেউ আটকাতে পারে না। যেমন, ইশ পুত্র যিশু খ্রিস্টের ক্রুশে জীবন দান এবং ভগবান শ্রী কৃষ্ণের পায়ে তির বিদ্ধ হয়ে প্রাণ ত্যাগ। এই সবই প্রারব্ধ ছিলো। পায়ে তির বিদ্ধ হয়ে কেউ কি মারা যায়? যিনি অন্ধকে চোখ দান করে, রোগীকে সুস্থ করে। সে কি পারতো না নিজেকে বাঁচাতে? কিন্তু এসবই পূর্ব নির্ধারিত প্রারব্ধ। খ্রীষ্ট নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন ওই ভবিষ্যত বাণীকে পূর্ণ করার জন্য যা ইশ্বর তাঁকে বলেছিল (যোহন 17:2-6)। এরপর যিশু খ্রিস্ট বলেছেন: “আমি তাদের জন্য এখন প্রার্থনা করছি৷ আমি সারা জগতের জন্য প্রার্থনা করছি না, কেবল সেই সকল লোকদের জন্য প্রার্থনা করছি যাদের তুমি দিয়েছ, কারণ তারা তোমার।” (যোহন 17:9) —এটি ছিলো ইহুদী জাতির জন্য। যিশু খ্রিস্ট নিজে একজন ইহুদী ছিলেন তাই তিনি যা কিছু বলে গেছেন, তাই সেটা ইহুদী জাতির জন্য ছিলো। আমরা সনাতনী হিন্দু। যিশু খ্রিস্টের কথার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তাঁর সেই বলিদানকে আমরা সন্মান করি। 

যিশু খ্রিস্টর পিতা ও পবিত্র আত্মাকে হিন্দু ধর্মের দৃষ্টিতে অবলোকন।

খ্রীষ্ট ভক্তরা যীশু খ্রীষ্ট কে ঈশ্বর মনে করেন। যিনি কুমারী মাতা মেরির গর্ভে অযৌন পদ্ধতিতে অবতারিত হয়েছিলেন। যীশু একজন ইহুদি ছিলেন এবং শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে দৈব গুণের প্রকাশ ছিলো। তার ব্যাখ্যায় ইহুদি বিদ্বানরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন। জর্ডন নদীতে জোহন দ্বারা বপ্তিস্মা নেওয়ার পর তিনি আশ্চর্য কাজ শুরু করেন। তাঁর এই আশ্চর্যের কাজ দেখে ইহুদি পুরোহিতরা ঈর্ষা করতে শুরু করেন এবং ষড়যন্ত্র করে তাঁর হত্যা করা হয়। মৃত্যুর তিন দিন পর তিনি আবার জীবিত হয়ে ওঠেন। এবং ইহুদিদের ধর্মীয় পুস্তকে উল্লেখ্য করা ভবিষ্যত বাণীকে পূর্ণ করেন। এরপর তিনি তাঁর বারোজন শিষ্যকে  বার্তা বহনের আদেশ দিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন।

ইহুদী জাতি হিন্দু থেকেই আগত। বেদ মার্গ ত্যাগ করে তারা ম্লেচ্ছ হয়েছে। এই ইহুদি সম্প্রদায় পূর্বে জরস্ট্রিয়ান ধর্ম সম্প্রদায় ভক্ত ছিল। পরবর্তীতে মিশর, ইরান, ইসরাইলের দিকে প্রসারিত হয়। মেরুতন্ত্র নামক শাস্ত্রে বিভিন্ন জাতি, ও তাদের আধ্যাত্মিক বিভাজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পারখ, ফারসি জাতির উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন 

पश्चिमाम्नायमन्त्रास्तु प्रोक्ताः पारखभाषया। 
अष्टोत्तरशताशीतिर्येषां संसाधनात् कसौ।
पञ्च खानाः सप्तमीरा नव शाहा महाबलाः।
 हिन्दुधर्मप्रलोप्तारोजायन्वे चक्रवर्त्तिनः।

এই ইহুদীদের পূর্ব-পুরুষ গ্রীক ও মিশরে বসবাস করতো। পরবর্তী সময়ে তারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রীক ও মিশরের দেবী দেবতাদের হিন্দু দেবী দেবতাদের মতোই পৌরাণিক কাহিনী আছে। জিউস ও ইন্দ্র একই রকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। আমরা মিশরের দিকে যদি এগিয়ে যাই, সেখানে দেখতে পাই ফ্যারাওরা নিজেদের ইশ্বর বলতে শুরু করেছিল। তন্ত্রশাস্ত্রে এর উল্লেখ আছে।  

খ্রীষ্ট ভক্তরা যখন প্রচারে আসে। তারা বলেন, আমাদের ইশ্বর জীবিত ইশ্বর। তিনি নিজের জীবন দিয়ে সকলের পাপ ক্ষমা করেছেন। এতটুকু আমরা স্বদরে গ্রহন করি। কিন্তু যখন তারা বলতে শুরু করে, "তোমাদের ইশ্বর দেবতারা ব্যভিচার ও লড়াই করেছে"। তখন হিন্দুরা দুঃখ পায়। হিন্দুরা নিজের ধর্ম সম্পর্কে সামান্য কিছুই জানে না না । তাই তারা চুপ করে থাকে। খ্রীষ্ট ভক্তদের মত অনুসারে তাদের ইশ্বর একজন জীবিত ইশ্বর এবং পাপের ক্ষমা করতে পারেন। হিন্দুদের মনে প্রশ্ন জাগে, তবে আমাদের ইশ্বর কি মৃত? আমাদের ইশ্বরের কি সেই ক্ষমতা নেই? খ্রিষ্টানরা নিজের ধর্ম ছাড়াও অন্য ধর্মের অনুশীলন করে। আর আমরা তো কীর্তন, বাদ্য বাজিয়ে মাতোয়ারা হয়ে ইশ্বরকেই এক কোনায় ঠেলে রাখি। আমরা জানি না আমাদের ইশ্বর আসলে কে, তিনি আমাদের জন্য কি করেছেন। তবে যেনে রাখুন :—

যীশু যাকে পিতা বলেন, তিনি আর কেউ নন সয়ং সচ্চিদান্দ সদাশিব। এখন প্রশ্ন হলো সদাশিব কে? উত্তর এই প্রকার বোঝার চেষ্টা করুন— কৃষ্ণ নিজের যে বিরাট রূপ অর্জুনকে দেখিয়ে ছিলেন সেই বিরাট রূপের যে মহাকাল রূপ যিনি সমগ্র জগত গ্রাস করছিলেন, সেই পঞ্চ মস্তকধারী শিবই হলেন সদা শিব। এই একই রূপকে শাক্ত, বৈষ্ণবরা পরমাপ্রকৃতি, ব্রহ্ম স্বরূপিনী, পরমাত্মা, ইত্যাদি নামে ও রূপে স্মরণ করে। যোগীগন একেই আত্মা বলেন।

খ্রীষ্ট ভক্তরা না জেনেই ওই শিব তত্ত্বের আরাধনা করেন। শিব পুরাণ ও বিষ্ণু পূরণে আছে বিষ্ণু ও শিব একই। একই পয়সার এপিঠ ও পিঠ। আমি শিব বললাম কারণ এতে বোঝাতে সুবিধা হবে।

এবার শুনুন, খ্রীষ্ট  যেই পবিত্র আত্মার বলে বিভিন্ন চমৎকার করেন, তিনি হলেন আদ্যা শক্তি মহামায়া। এই মায়ার সংসারে মায়ার দাড়াই কাজ করে। এই মায়া কে? আমাদের যেমন মন আছে, ইশ্বরের তেমন মায়া। সেই শক্তিকে আয়ত্ত্ব করতে হলে ঈশ্বরই হতে হয়। তাই যিশুও ইহুদীদের মুক্তি দাতা ইশ্বর ছিলেন। তিনি ইহুদি জাতিকে উদ্ধার করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন। 

ইশ্বর আমাদের জন্য কি করেছে? 

ইশ্বর কী আমাদের উদ্ধারের জন্য তাঁর একমাত্র পুত্রকে বা নিজেকে বলি দিয়েছেন? তিনি কি তাঁর শেষ নবীকে পাঠিয়ে কাফের বা মুমিনদের ভাগ কোরেছেন? 

না, ইশ্বর এসব কিছুই করেননি। তিনি নিজের স্বরূপকে আমাদের মনের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন। তিনি কাফের মধ্যেও আছেন আবার মুমিনদের মধ্যেও আছেন। তিনিই পুত্র হয়ে বলিদান দিয়েছেন আবার তিনি বলি দাতা হয়ে বলি গ্রহন করেছেন। কারণ সব কিছুই তিনিই পরিচালনা করেন। তাই, হিন্দু ধর্মের গভীরতা সব থেকে বেশী। 

তিনি আমাদের তাঁর (গীতায় যে) জ্ঞান দিয়েছেন। যার দ্বারা আমরা তাঁকে জেনে নিজেরাই পাপ থেকে মুক্ত হতে পারি। তিনি আমাদের জন্য পুনর্জন্মের ব্যবস্থা করেছেন। যাতে আমাদের মত অজ্ঞ জীব পুনঃ পুনঃ জন্ম গ্রহন করে নিজেকে বার বার উন্নত থেকে উন্নত করতে পারেন। তিনি তাঁর আশ্রিত এবং  অনাশ্রিতদের মধ্যে ভেদভাব করেননি।

তিনি প্রত্যেক মানুষকে বিবেক দিয়েছেন, ভালো ও মন্দের বিচার করার জন্য। তিনি প্রত্যেক মানুষকে চিত্ত ও মন দিয়েছেন চিন্তন ও মনন করার জন্য। 

এই দেহ, এই ইন্দ্রিয় তো ভোগের যন্ত্র নয়, যোগের যন্ত্র। তিনি এতটা দয়ালু যে যোগের পথে বিফল হলে,  তন্ত্র পথে তাঁর কাছে পৌঁছানো যায়। তিনি মন্দকে ঘৃণা করতে বলেনি। তিনি বলেছেন, মন্দকে জেনে তা থেকে দূরে থাকতে। এমনকি মন্দ থেকেও ভালোকে গ্রহন করতে।

ঈশ্বর কোনো ভুল করেনা বা তাঁর নিজের সৃষ্টিকে তিনি অবহেলা করে ধ্বংস করেন না। তিনি লীলাধর,  তিনি মায়াধর, তিনি মায়ার লীলা করেন। 

রাবনকে আমরা মন্দ বলি, কারণ শ্রী রামকে আমরা ইশ্বরের অবতার মনে করি। কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত রাবণ যখন নিজের শেষ নিশ্বাস নিচ্ছিল, শ্রী রাম তাঁর ভাই লক্ষণকে রাবনের কাছে রাজনীতির জ্ঞান নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিল। আবার এই রাবণ তাঁরই নিত্য ধামের পার্ষদ যার নাম ছিল জয়। 

পায়ে তির বিদ্ধ হয়ে কেউ কি মারা যায়? এসবই তাঁর ছলনা। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ প্রাণ ত্যাগের লীলা করে গেছেন। রানী গান্ধারী তার সন্তান শত সন্তান হারানোর পর পুত্র হারানোর আবেশে ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তার যদু ধ্বংশ হবে, কুরু বংশের মতোই যদু কুল শশানে পরিণত হবে।

গান্ধারীর আক্ষেপ ছিলো, চাইলে শ্রী কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থামাতে পারতেন। সেখানে শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধ করতে উপদেশ দিয়ে ছিলো। আমরা দেখতে পাই, যুদ্ধের আগে শ্রী কৃষ্ণ নিজেই শান্তি দূত হয়ে রাজা ধৃতরাষ্ট্রের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন।

রাজা ধৃতরাষ্ট্র যদি শুধু ৫টা গ্রাম পাণ্ডবদের দিতেন, দুর্যোধন যদি শ্রী কৃষ্ণকে অপমান না করে তাড়িয়ে দিতেন। তাহলেই এই যুদ্ধ আটকানো যেতো। সব দোষ রাজা ধৃতরাষ্ট্র ও তাঁর পুত্র দুর্যোধনের। শ্রী কৃষ্ণের কোনো দোষ ছিলো না। তা সত্বেও শ্রী কৃষ্ণ মাতা গান্ধারীর অভিশাপ গ্রহন করে আত্ম বলিদান দিয়েছেন। 

যে বেধের তীর বিদ্ধ হয়ে তিনি জীবন দিয়েছেন, সেই বেধকে তিনি আশির্বাদ করে গেছেন। এমন উত্তম উদারণ থাকতে আমরা কেন ইহুদিদের বা অন্য ইশ্বরকে গ্রহন করবো?


এসব কথা আমি এই কারনেই বলছি কারণ মানুষ শুধু নিজ ধর্ম মতকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়। সব ধর্মমত গুলো নিজেকে বড় করে দেখায়। হিন্দু ধর্মেই শৈব, স্মার্ত, শাক্ত, বৈষ্ণ পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলে। 

ইসলামে সিয়া, সুন্নি, আহমদিয়া পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলে। খ্রীষ্ট ধর্মে প্রটিষ্ঠান, কেথলিক, অর্থডক্স নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে। 

ধর্মের উদ্দেশ্য হলো ইশ্বরের সত্যতা প্রকট করা। সেটা প্রত্যেকেই করছে কিন্তু নিজ নিজ বুদ্ধি ও বিবেক দ্বারা। এর মধ্যে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল বলা মুশকিল। অনেকটা খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মতো।

হিন্দু ধর্ম বলে ইশ্বর কখনোই insecure বা jealous হয় না। সব কিছুই যখন তাঁর হাতে, সব কিছুই যখন তার থেকেই এসেছে, তবে কোনো কিছু কিভাবে অপবিত্র হবে?  

ইশ্বর যদি নিজেই নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে insecure বা jealous অনুভব করে, তবে ওই ইশ্বরের সৃষ্টিতে insecurence বা jealousy করার মতো লুসিফার দরকার নেই, সে নিজেই শয়তান হয়ে যাবে।

ইশ্বর লীলাধর ও মায়াধর তিনি নিজেই নিজের দ্বারপাল দের নিজের শত্রু বানিয়ে লীলা করেন। যেভাবে ফুটবল খেলার মাঠে বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে দল বানিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। খেলার শেষে সবাই একসাথে আনন্দ করে। যে যে রূপে ঈশ্বরের বিশ্বাস করে, তিনি সেই রূপেই প্রকট হয়ে অভীষ্ট সাধন করে।

full-width

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: