Headlines
Loading...
হঠযোগ হল যোগের একটি শাখা, যা দেহ এবং মনকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে শারীরিক কসরত এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের (প্রাণায়াম) উপর জোর দেয়। "হঠ" শব্দটি দুটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে—"হ" মানে সূর্য এবং "ঠ" মানে চাঁদ। এই যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মনের মধ্যে একটি সমন্বয় সাধন করা হয়।

হঠযোগের মূল উদ্দেশ্য:

  • শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী করা।
  • মনের শান্তি এবং স্থিতি আনয়ন।
  • আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

হঠযোগের উপাদানসমূহ:

1. আসন (শারীরিক ভঙ্গি):
বিভিন্ন শারীরিক ভঙ্গি বা আসনের মাধ্যমে শরীরকে সুসংহত এবং শক্তিশালী করা হয়। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।

2. প্রাণায়াম (শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ):
নিয়ন্ত্রিত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের শক্তি ও জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করা হয়। এটি মনোযোগ এবং ধ্যানের জন্য মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করে।

3. মুদ্রা (আঙ্গুল এবং শরীরের ভঙ্গি):
জীবনীশক্তি নিয়ন্ত্রণ এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ব্যবহার করা হয়।

4. বন্ধ (শক্তি নিয়ন্ত্রণ):
শরীরের নির্দিষ্ট অংশে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের শক্তি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

5. ধ্যান (মেডিটেশন):
মনের স্থিতি এবং একাগ্রতা আনয়নের জন্য ধ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন।

হঠযোগের উপকারিতা:

  • শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করা।
  • মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস করা।
  • মনোযোগ বৃদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করা।
  • আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ প্রসারিত করা।
হঠযোগ প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত একটি পদ্ধতি যা শুধুমাত্র শারীরিক ব্যায়াম নয়, বরং দেহ, মন এবং আত্মার মধ্যে একটি গভীর সংযোগ স্থাপন করার উপায়।

হঠযোগের প্রণেতা:

হঠযোগের প্রধান প্রণেতা হলেন গোরক্ষনাথ (Gorakshanath) এবং মৎস্যেন্দ্রনাথ (Matsyendranath)। এঁরা নাথ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং হঠযোগের সূচনা ও প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তবে হঠযোগ নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি হল "হঠযোগ প্রদীপিকা", যা ১৫শ শতকে স্বামী স্বাত্মারাম (Swatmarama) লিখেছিলেন। এছাড়াও, আরও দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল:

1. ঘেরাণ্ড সংহিতা (Gheranda Samhita)
2. শিব সংহিতা (Shiva Samhita)

হঠযোগ প্রদীপিকার শ্লোকসমূহ (উল্লেখযোগ্য শ্লোক):

হঠযোগের উদ্দেশ্য:
हठस्य प्रथमं द्वारं आसनं पूर्वमुच्यते।
कुर्यात्तदासनं स्थैर्यमारोग्यं चाङ्गलाघवम्॥
(Hatha Yoga Pradipika, Chapter 1, Verse 17)
বাংলা অর্থ:
হঠযোগে প্রথমে আসনের অনুশীলন করতে বলা হয়েছে, যা স্থিরতা, সুস্বাস্থ্য এবং শরীরকে হালকা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আসন ও প্রাণায়াম সম্পর্কে:

प्राणस्य शोधनं कृत्वा आसनं स्थिरं आचरेत्।
आसनेन रजो हन्ति प्राणायामेन हन्ति तमः॥
(Hatha Yoga Pradipika, Chapter 1, Verse 19)
বাংলা অর্থ:
আসনের মাধ্যমে শরীরকে শুদ্ধ করতে হবে এবং প্রাণায়ামের মাধ্যমে মনের অন্ধকার বা অজ্ঞতা দূর করতে হবে।

শান্তি ও ধৈর্য:

यथा सिंहो गजो व्याघ्रो भवेद्वश्यः शनैः शनैः।
तथैव सेवितो वायुः वश्यो भवति योगिनः॥
(Hatha Yoga Pradipika, Chapter 2, Verse 11)
বাংলা অর্থ:
যেভাবে সিংহ, গজ ও বাঘকে ধীরে ধীরে বশীভূত করা হয়, ঠিক সেভাবেই নিয়মিত প্রণালীর মাধ্যমে শ্বাস বা প্রাণ শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

যোগের সাত ধাপ:

 शोधनं दृढता चैकमलघवो दीप्तिरेव च।
प्रज्ञा धैर्यं च नैष्कर्म्यं सप्त सिध्दयः क्रमात्॥
(Gheranda Samhita, Chapter 1, Verse 10)

বাংলা অর্থ:
যোগের মাধ্যমে সাতটি ধাপ অর্জন করা যায়—শরীরের শুদ্ধি, দৃঢ়তা, হালকা অনুভূতি, দীপ্তি, জ্ঞান, ধৈর্য এবং কর্মহীনতা (মোক্ষের অবস্থা)।

হঠযোগের সারসংক্ষেপ:

হঠযোগের মূল শ্লোক এবং শিক্ষাগুলি আমাদের দেহ ও মনের ভারসাম্য রক্ষা করে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এর ভিত্তি হল শুদ্ধি, নিয়ন্ত্রণ, এবং ধ্যানের মাধ্যমে আত্ম-সিদ্ধি।

0 Comments:

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads