দূর্গা প্রতিমায় বেশ্যা দ্বারের মাটির ব্যবহার করা হয় কেন, এর সত্যতা কি?
ভূমিকা:
ইন্টারনেটে বহু স্থানে মানুষ মনগড়া কিছু তথ্য দেওয়া থাকে এবং যুক্তি দেখিয়ে সেগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে উপস্থাপন করা হয়। যার কোনো ভিত্তি বা শাস্ত্র প্রমাণ নেই। সেই রকমই এই বেশ্যার দ্বার মৃত্তিকা ও মা দুর্গার প্রতিমায় তার ব্যবহার নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক রকম যুক্তি দেখিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, "পূরুষ মানুষ যখন পতিতালয়ে প্রবেশ করে। তার আগে সে তার সঞ্চিত পূণ্য পতিতার দ্বারে ফেলে যায়"। অনেকে যুক্তি দেখিযেছেন, "যেহেতু পতিতাও নারী, তাই নারীর সন্মানের কথা মাথায় রেখেই এই কার্য"। এসব মন ভোলানো মনগড়া অশাস্ত্রীয় যুক্তি ছাড়া কিছুই নয়। কারণ, এই সব যুক্তি শাস্ত্রে উল্লেখ করা নেই। আর যেটা বলা হয়েছে সেটা জানলে আপনিও অবাক হবেন।
শাস্ত্রেই বলা হয়েছে এই বেশ্যা এর আসল রহস্য। কি সেই রহস্য? আসুন জেনে নেই।
বেশ্যা সম্পর্কে তন্ত্র শাস্ত্রের উক্তি:
মহানির্বাণ তন্ত্রে ভগবান শিব মা পার্বতীকে তন্ত্রের কালি, কুল-কুণ্ডলিনী ও কুল তত্ত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে বলছেন:
অভিষিক্তা ভবেদ্বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে।কুলটা সঙ্গমাদ্দেবি রৌরবং নরকং ব্রজেৎ৷৷
— 'হে প্রিয়ে, তন্ত্রে অভিষিক্ত কুলিন কন্যাই হলো বেশ্যা। কুলটা সঙ্গম করলে রৌরব নরকে যেতে হয়।' অর্থাৎ বেশ্যা দুই প্রকার ১) কুলিন বেশ্যা এবং ২) কুলটা বেশ্যা।
এখন এই তন্ত্রে অভিষিক্তা কুলিল বেশ্যা কেমন? ভগবান শ্রী শিব আবার বলছেন।
পূর্ণা অভিষিকো দেবেশি দশ বিদ্যাবিধোস্মৃত।
অর্থাৎ, '(কালি, তাঁরা, ছিন্নমস্তা, কমলা ইত্যাদি) দশ মহাবিদ্যা ও স্মৃতি শাস্ত্র অর্থাৎ বেদজ্ঞ নারী যিনি পূর্ণা অভিষিক্তা নারী।' —এই কুলিন বেশ্যা শহরের পতিতা পল্লীর কুলটা বেশ্যা নয়। ভগবান শিব এঁনাদের পুরস্চরন বিধি দ্বারা পূজা করতে বলেছেন। শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস নিজের স্ত্রী মা সারদাকে পূজা করেছিলেন আমরা জানি। কারণ, নারী সয়ং আদ্যা শক্তির অংশৌদ্ভূতা। তাই হিন্দু ধর্মমতে তাঁর পূজা করা হয়। ষঠঃউপাচার এবং পুরস্চরন দ্বারা একজন পূর্ণা অভিষিক্তা নারী কুলিন বেশ্যা হন। এই বেশ্যা কুলটা বেশ্যা নয়।
এবম্বিধা পুরস্চয্যা বেশ্যায়াশ্চ কুলেশ্বরী।এবম্বিধা ভবেদ বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে॥
এই নারীকে বেশ্যা বলার কারণ কি?
এনাদের বেশ্যা বলার কারণ হল; যেভাবে কুলটা বেশ্যা নিজের রূপ ও লাস্য দ্বারা কামি পুরুষকে বশ করে। সেভাবেই ভৈরবী, কালি, তারা প্রভৃতি দেবীর আবরণ যোগিনী গন তাদের যোগ ও সাধনার শক্তি দ্বারা ত্রি-লোক কে বশ করতে পারে। যথা – "...বশ্যং ত্রিলোকং তত বেশ্যা" —ত্রি লোক যা'র বশীভূত তিনিই বেশ্যা।
যেভাবে পঞ্চ ম-কার সাধনায় মাংস, মৎস্য, মদ্য, মুদ্রা ও মৈথুন আসলে কোনো মাংস, মৎস্য, মদ্য, মুদ্রা ও মৈথুন নয়। নীচে সংক্ষেপে বলা হলো। অন্য এক সময় এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
দেবাদিদেব মহাদেব শিব বলেছেন: মায়া প্রক্তাং দূষ্কৃতে প্রবলে কলৌ। — মহানির্বাণ তন্ত্র
—কলিযুগে মায়া প্রবল থাকবে। মানুষ সেই সময়ে সত্যই একমাত্র ধর্মের জন্য জীবিত থাকবে। সত্যকে জীবিত রাখতে গেলে কৌশল অবলম্বন করে ভগবান শিব তন্ত্রের এই গুপ্ত জ্ঞান এই ভাবেই প্রদান করেছেন। যাতে করে, অযোগ্য ব্যক্তি এসব তত্ত্ব যেন এর অপ ব্যবহার না করতে পারে। আবার যা শাস্ত্রে আছে, সেই সকল জ্ঞানও সম্পুর্ন নয়। পরম্পরা গত গুরুমুখি জ্ঞান অর্জন দরকার। তাই প্রকৃত সদ গুরুর দীক্ষা ও দিক নির্দেশনা ছাড়া যে কেউ যেন তন্ত্রের পথে অগ্রসর না হয় এবং সনাতন ধর্মের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তিতে না থাকে।
0 Comments: