ত্রেতাযুগের কথা। অযোধ্যাপতি দশরথের জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীরামচন্দ্রকে প্রচণ্ডতপা বিশ্বামিত্র যজ্ঞে বিঘ্নকারী দুই অসুর তাড়কা ও সুবাহু সহ অন্যান্য অসুরদের বিনাশের জন্য পিতৃগৃহ হইতে লইয়া চলিয়াছেন বনপথে। সঙ্গে রামানুজ লক্ষ্মণ। পথিমধ্যে মধ্যে মধ্যে নীরবতা ভঙ্গ করিয়া ঋষিপ্রবর অতীত কাহিনীর অবতারণা করিয়া শ্রীরাম-লক্ষ্মণের জ্ঞান সঞ্চয়ের সুযোগ এবং পথক্লান্তি দূর করিয়া দিতেছেন। রাক্ষস নিধনের পরেও তাঁহাদের লইয়া মিথিলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করিলেন। পথিমধ্যে নৌকাযোগে গঙ্গানদী অতিক্রম করিয়া একটি সুসজ্জিত নগরী দেখিতে পাইলেন। শ্রীরামচন্দ্র সেই নগরীর নাম ও রাজবংশের ইতিহাস জানিতে চাহিলে বিশ্বামিত্র বলিতে লাগিলেন:
"এই নগরীর নাম বিশালা। পূর্বে সত্যযুগে কশ্যপ-পত্নী দিতির পুত্রগণ দৈত্যেরা ছিলেন মহাবলবান, আর অদিতির পুত্রগণ আদিত্য তথা দেবগণ ছিলেন ভাগ্যবান, বীর ও অতীব ধার্মিক। একসময় তাহাদের মনে হইল কিভাবে তাহারা অমৃতত্ব বা অমরত্ব লাভ করিবেন। এই ভাবনা লইয়া উভয় বৈমাত্রেয় ভ্রাতাগণ, ক্ষীরোদসমুদ্র মন্থনের ফলে অমৃত লাভ হইবে মনস্থ করিয়া সমুদ্রতীরে পৌঁছিলেন। তাঁহারা বাসুকিকে মন্থনরজ্জু এবং মন্দর পর্বতকে মন্থন দণ্ড করিয়া সহস্রবর্ষ ধরিয়া সমুদ্র মন্থন করিতে লাগিলেন। ইহাতে বাসুকিনাগ হলাহল উদ্দ্গীরণ করিতে লাগিলেন এবং তাহাতে দেবতা ও দৈত্যগণসহ সমগ্র জগৎ দগ্ধ হইবার উপক্রম হইল। তাঁহাদের কাতর প্রার্থনায় মহেশ্বর আবির্ভূত হইয়া সেই মহাবিষ কণ্ঠে ধারণ করিলেন। পুনরায় মন্থন কার্য আরম্ভ হইল। তখন মন্দরপর্বত সমুদ্রের জলের তলায় চলিয়া যাওয়ায় নারায়ণ কূর্মরূপ ধারণ করিয়া স্বীয় পৃষ্ঠে মন্দরকে ধারণ করিলে পুনরায় মন্থনকর্ম চলিতে লাগিল। সহস্রবর্ষ অতীত হইলে আয়ুর্বেদময় দণ্ড-কমণ্ডলুধারী ধন্বন্তরি আবির্ভূত হইলেন। পরে ষাট কোটি অপ্সরা ও তাহাদের পরিচারিকাগণের উদ্ভব হইল। দেব-দানবগণ কেহই তাহাদের গ্রহণ না করায় তাহারা 'সাধারণ' স্ত্রীরূপে পরিচিতা হইল। ইহার পর বরুণ দেবতার কন্যা বারুণীর উদ্ভব হইল। দৈত্যরা সেই সুরকন্যাকে গ্রহণ না করায় 'অসুর' নামে এবং দেবতাগণ অনিন্দ্যসুন্দরী বারুণীকে গ্রহণ করায় 'সুর' নামে পরিচিত হইলেন। ইহার পর অশ্বশ্রেষ্ঠ উচ্চৈশ্রবা, শ্রেষ্ঠ মণি কৌস্তুভ এবং অমৃত উত্থিত হইল। দেবগণ ইহাদের গ্রহণ করিলেন। এই অমৃত দেবগণ লইলেন দেখিয়া দৈত্যগণ দেবগণের সহিত তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। এদিকে মোহিনী রূপে শ্রীবিষ্ণু তাহা হরণ করিয়া পলায়নপর হইলে দৈত্যগণ সেই মোহিনীর পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইল। শ্রীবিষ্ণু এবং দেবগণ সমবেতভাবে অসুরগণকে নিধন করিলেন এবং পুরন্দর ইন্দ্র পুনরায় রাজ্য লাভ করিলেন। আর আদিত্যগণ অমৃতের ভাগীদার হইয়া অমর হইলেন। একসময় ইন্দ্র এই রাজ্যে বাস করিয়াছিলেন এবং দিতির ব্রতোদ্যাপনে সাহায্য করিয়াছিলেন। পরে সূর্যবংশজাত মহারাজ ইক্ষাকু এই দেশের রাজা হন। তাঁহার বিশাল নামে এক ধার্মিক পুত্র ছিলেন। তিনি এই নগরী নির্মাণ করিয়া ছিলেন বলিয়া ইহার নাম হইল বিশালা'। '
বাল্মিকী-রচিত রামায়ণে বর্ণিত এই সমুদ্রমন্থনে অমৃত-উদ্ভবের কাহিনী শ্রীরামচন্দ্র শুনিয়াছিলেন ত্রেতাযুগে। তাহার পর এই কাহিনী আরও পল্লবিত হইয়া বিশালবুদ্ধি ব্যাসদেব-বিরচিত মহাভারতের আদি পর্বে বিবৃত হইয়াছে। এই অমৃত ঘনদুগ্ধজাত একপ্রকার খাদ্য।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে একপ্রকার মন্থনের বিষয় বর্ণনা করা হইয়াছে। তাহাতে সাধক নিজ দেহকে অধরারণি এবং প্রণব বা ওকারকে উত্তরারণি করিয়া ধ্যানরূপ পুনঃপুনঃ মন্থন করিতে হইবে। ইহাতে অন্তরে নিগূঢ় জ্যোতির্ময় পরমাত্মার দর্শন লাভ ঘটিবে। অরণি কাষ্ঠের ঘর্ষণে অগ্নির উৎপত্তি হয় আর এইখানে ধ্যান সহযোগে পরা, পশ্যন্তী, মধ্যমা বাকের দ্বারা পুনঃ পুনঃ নিষ্ঠার সহিত জপ করিতে থাকিলে অন্তরস্থিত দিব্যজ্যোতি বা পরমাত্মার অনুভব লাভ হইয়া
থাকে। "স্বদেহমরণিং কৃত্বা প্রণবঞ্চোত্তরারণিম্। ধ্যাননির্মথনাভ্যাসাদ দেবং পশ্যেন্নিগুঢ়বৎ।।” (শ্বেঃ ১।১৪) পুরাণে বর্ণিত আছে, সৃষ্টির পূর্বে শ্রীনারায়ণ ক্ষীরোদ-সমুদ্রে অনন্ত নাগের শয্যায় শয়ন করিয়া নিদ্রিত থাকেন।
নির্গুণ ব্রহ্মের মধ্যে সিসুক্ষা জাগিলে ত্রিগুণময়ী মায়ার আবির্ভাব হইল। তাহার প্রথম নাম হইল হিরণ্যগর্ভ। তিনিই প্রথম জাত হন এবং পুরুষরূপে পরে ব্রহ্মা বা প্রজাপতি নামে পরিচিত হন। অনন্তশায়ী নারায়ণের নাভিকমল হইতে ব্রহ্মার উদ্ভব। নার অর্থাৎ জল যাহার আশ্রয়, তিনিই নারায়ণ। মানবের দেহের অভ্যন্তরে হৃদয় হইল ক্ষীরোদ-সমুদ্র, মন্ত্র হইল মন্থন দণ্ড, শ্বাস-প্রশ্বাস হইল মন্থনরজু। পুনঃপুনঃ জপের ফলে সমাধি অবস্থায় হৃদয়ে প্রকাশিত হন
আত্মজ্যোতি। এই আত্ম-জ্যোতিকে সহস্রারে লইয়া পরমাত্মজ্যোতি বা ব্রহ্মজ্যোতিতে লীন করিতে পারিলে অমৃতত্ব লাভ হইবে। তাহাকে আর জন্ম-মৃত্যুচক্রে বা ভবসমুদ্রে ফিরিয়া আসিতে হইবে না। এই হৃদয়ে রহিয়াছে বিষ্ণুগ্রন্থি, জ্ঞান-অজ্ঞানের সংযোগস্থল। যোগের অনাহত চক্র। এইখানে হৃদাকাশ। 'হৃদাকাশে চিদাদিত্য সদা ভাসতি ভাসতি।' এই আকাশে বা শূন্য স্থানে জ্ঞানসূর্য সর্বদা উজ্জ্বল রূপে প্রকাশিত রহিয়াছেন। 'অঙ্গুষ্ঠ- মাত্রঃ পুরুষঃ অন্তরাত্মা সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ।' (কণ্ঠ ২। ৩। ১৭.১) 'ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি। ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া।' (গীতা ১৮।৬১) এই ঈশ্বর, অন্তরাত্মাই অমৃত।
তাঁহাকে কিভাবে লাভ করা যাইবে, তাহা বিভিন্ন উপনিষদ্ বিভিন্ন শ্লোকের মাধ্যমে বর্ণনা করিয়াছেন।
কেন উপনিষৎ বলিতেছেন-
পরমাত্মা সম্বন্ধীয় প্রশ্নের উত্তরে-পরমাত্মশক্তি দেহকে অবলম্বন করিয়া কার্যসাধন করেন, তাহা এই শ্লোকে বলা হইতেছে। শরীরে পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় (বাক্ পাণি, পাদ, পায়ু ও উপস্থ), পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক) বাহির হইতে দৃষ্টিগোচর হয়, কিন্তু ইহাদের নিজস্ব কোন ক্ষমতা বা শক্তি নাই যদি পরমাত্মার শক্তি তাহাতে ক্রিয়া না করে। অর্থাৎ কর্ণ থাকিলেও শ্রবণ শক্তি না থাকিলে উক্ত কর্ণ শুধু দেহের শোভা বর্ধন করে। কর্ণের মধ্যে থাকিয়া যে শক্তি শ্রবণ করিয়া থাকে, তাহা পরমাত্মারই শক্তি। তেমনি মন থাকিলেও তাহার মনন শক্তি না থাকিলে জড় বুদ্ধি সম্পন্ন হয়, তাই মনের মনন শক্তি সেই পরমাত্মারই শক্তি। বাগিন্দ্রিয় আছে, কিন্তু কথা বলিতে পারে না, তবে সে বোবা হইয়া থাকে। তাহার বাক্য উচ্চারণ শক্তি পরমাত্মারই শক্তি। প্রাণ অর্থাৎ বাঁচিয়া থাকা বা জীবিত থাকা তখনই সম্ভব যখন প্রাণন শক্তি বা জীবনীশক্তি কর্ম করিতে পারে। এই জীবনীশক্তি পরমাত্মারই শক্তি। চক্ষু ইন্দ্রিয়ের দৃষ্টিশক্তিও তাঁহারই শক্তি। তিনি না থাকিলে চক্ষু থাকা সত্ত্বেও দেখিতে পায় না। সেই জন্য জড় ইন্দ্রিয়গুলিতে 'আমি' বোধ ত্যাগ করিয়া বিবেকীগণ জড়জগৎ হইতে বা এই দৃশ্য সংসার হইতে মুক্ত হইয়া অমৃতত্ব লাভ করেন। বোধের দ্বারা যাঁহারা জড় জগতের প্রতি অহং-মুক্ত হইতে পারেন, তাঁহারাই জীবিত থাকিয়াও অমৃতত্ব লাভ করেন অর্থাৎ ব্রহ্মের সহিত একাত্ম হইয়া জীবন্মুক্তি লাভ করেন।
দেহে অন্তঃপ্রবিষ্টচৈতন্য ইন্দ্রিয় রূপ ছিদ্রগুলি বহির্মুখ করিয়া গর্ত করিয়াছেন। তাই জীব বা ইন্দ্রিয় 'পরাক্ পশ্যতি' অর্থাৎ বাইরেরটাই দেখে, অন্তরাত্মাকে দেখে না। কিন্তু কোন কোন ধীর ব্যক্তি আছেন যিনি অমৃতত্ব আকাঙ্ক্ষা করিয়া চক্ষু প্রভৃতি সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলির ক্রিয়াগুলি ভিতর দিকে মোড় ঘুরাইয়া লইয়া প্রত্যক্ আত্মাকে নিরীক্ষণ করেন। এখানে পর এবং আত্মা, পরাক্ ও প্রত্যক্ দুই জোড়া শব্দ পাইতেছি। অন্তঃশক্তিদ্বারা ক্রিয়া করিতেছে ইন্দ্রিয়গুলি (কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি)। যদি পরাক্ অর্থাৎ বহির্মুখে ইন্দ্রিয়গুলি কাজ করে তবে বাহিরের বস্তু দর্শন করে, বাহিরের শব্দ গ্রহণ করে, বাহিরের গন্ধ আঘ্রাণ করে, বাহিরের খাদ্য গ্রহণ করে, বাহিরের পথে হাঁটাচলা করে, বাহিরের বস্তু আকর্ষণ-বিকর্ষণ করে, বাহিরের স্পর্শ অনুভব করে। এইরূপে এই ইন্দ্রিয়গুলি তাহার বিষয় গ্রহণ করিয়া বাহিরের জ্ঞান বা জাগতিক জ্ঞান যাহা অজ্ঞানের নামান্তর বা অবিদ্যার নামান্তর তাহাই অর্জন করে এবং প্রকৃতি প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তনশীল বলিয়া প্রতিক্ষণে মনোহররূপে ইন্দ্রিয়গুলির সম্মুখে উপস্থিত হয়, তাহাতে ইন্দ্রিয়গুলি মজিয়া থাকিয়া জন্ম হইতে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কাল অতিক্রম করিয়া থাকে। ইহাতে স্রষ্টাকে, ব্রহ্মকে, পরমাত্মাকে বা তাহার স্বরূপকে জানিতে পারে না। কিন্তু কোন কোন বিবেকী ব্যক্তি যাহাকে উপনিষদ্ 'ধীর' শব্দে অভিহিত করিয়াছেন, সেইরূপ ব্যক্তি অন্তরস্থিত প্রত্যক্-আত্মাকে জানিয়া অমৃতত্বলাভের আকাঙ্ক্ষায় বহির্মুখী ইন্দ্রিয়গুলির মোড় বা গতি ভিতরের দিকে ফিরাইয়া লয়েন। বাইরের বিষয়ের প্রতি ইন্দ্রিয়গুলির আর কোন গতি থাকে না। তাহারাই কেবল অমৃতস্বরূপ সত্যস্বরূপ, পরমজ্যোতিস্বরূপ পরমাত্মা জানিয়া অমৃত হইয়া যান।
দুইটি গতি ইন্দ্রিয়ের-একটি পরাঙ্গতি অর্থাৎ চক্রের কেন্দ্র হইতে পরিধির দিকে ছড়াইয়া পড়িতেছে, কেন্দ্রাতিগ গতি (Centrifugal motion), আর একটি প্রত্যঙ্গতি অর্থাৎ চক্রের পরিধি হইতে কেন্দ্রের ছিদ্রের প্রতি গতি থাকায় অন্তরস্থিত প্রত্যক্-আত্মা বা কূটস্থ আত্মাকে বা তাহার স্বরূপকে জানিতে পারিতেছে, যেমন ভক্তিপথে মুক্তিলাভের পথে সালোক্য, সামীপ্য, সারূপ্য, সাযুজ্য বা সাপ্তি মুক্তি লাভ হইয়া শেষে ভগবানে লয় পায়, তেমনই অন্তর্মুখী ইন্দ্রিয়গুলি ভগবানের ভগ (সমগ্র ঐশ্বর্য, সমগ্র বীর্য, সমগ্র যশ, সমগ্র শ্রী বা লাবণ্য, সমগ্র জ্ঞান, সমগ্র বৈরাগ্য অর্থাৎ জাগতিক বস্তুতে পরম বিরাগ) লাভের পথে অগ্রসর হইয়া শেষে ব্রহ্মা, পরমাত্মা বা ভগবানে লয় পাইয়া অমৃতস্বরূপ হইয়া যায়। ইহা হইল কেন্দ্রাভিগ গতি (Centripetal motion)। সহজ কথায় অমৃতত্বলাভ করিতে হইলে বহির্মুখী গতিযুক্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে অন্তর্মুখী গতিসম্পন্ন করিতে হইবে। জ্ঞানশাস্ত্র, যোগশাস্ত্র, তন্ত্র এবং ভক্তিশাস্ত্র সকলেই বিভিন্নভাবে এই কথাই বলিতে চাহিয়াছে। পর-কে বা বাহিরের বস্তুকে নয়, গতি হইবে অন্তরাত্মার দিকে, পরাক্ বা বহির্মুখী গতি নয়, গতি হইবে প্রত্যক্ আত্মার দিকে, আপনার অন্তরে স্থিত কূটস্থ আত্মার দিকে। ভগবান সব কিছু মানবকে দান করিয়াছেন, কেবল শ্রেয়কে গ্রহণ করিতে হইবে, প্রেয়কে বা আপাতমধুর বিষয়কে নহে। নিজে না পারিলে সদ্গুরু রহিয়াছেন। তাঁহার শরণাপন্ন হইতে হইবে। আচার্যের সান্নিধ্যে থাকিয়া ব্রহ্মতত্ত্ব, আত্মতত্ত্ব সম্বন্ধে জানিতে হইবে, তাহাকে এই জীবনেই লাভ করিতে হইবে। কেন উপনিষদ্ বলিতেছেন-
ইহ চেদবেদীদথ সত্যমস্তি ন চেদিহাবেদীন্ মহতী বিনষ্টিঃ।
ভূতেষু ভূতেষু বিচিত্য ধীরা প্রেত্যাস্মাল্লোকা অমৃতা ভবস্তি। ২।৫
এই জীবনেই অর্থাৎ বাহ্য বোধ সহ বাঁচিয়া থাকিতে থাকিতেই যদি সত্য অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয় তবেই এই দেহের, জীবনের সার্থকতা হয়, কিন্তু এই জন্মে যদি তাঁহাকে না জানা যায় বা না জানিয়া জীবাত্মা দেহত্যাগ করে তবে মহান বিনাশ অর্থাৎ দীর্ঘকালব্যাপী সংসারে যাতায়াত করিতে হয়। সুতরাং ধীর বা বিবেকী ব্যক্তিগণ সকল ভূতের মধ্যে, জড় ও চেতন পদার্থের মধ্যে ব্রহ্ম সাক্ষাৎকার লাভ করিতে পারিলে তখন তাঁহারা অজ্ঞানজাত সংসার হইতে মুক্তিলাভ করিয়া অমৃত হইয়া যান।
উপনিষৎ শাস্ত্র প্রায় প্রতিমন্ত্রেই জীবের অমৃতত্ব লাভের পন্থার সন্ধান দিতেছেন, কিন্তু ভোগমুখী জীব অমৃত ত্যাগ করিয়া বিষয়-বিষে মজিয়া থাকিতে ভালবাসে। সেজন্য তাহাদের মধ্যে মুক্তির আনন্দলাভের সংবাদ পুনঃ পুনঃ জানাইতে হইবে।
সংগ্রহীত — আর্য দর্পণ [ আষাঢ় ১৪৩০]
0 Comments: