Headlines
Loading...
ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছেন?

ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছেন?

প্রতিটি ধর্মেই বলা হয় ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছেন? ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তাই আবার প্রশ্ন করা হয় যে, যার অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তাঁকে কেন মানতে হবে?

সেমেটিক ধর্ম গুলো (আব্রাহামিক ও অন্যান্য রিলিজিয়ন) —এর জবাবে বলেন। স্রষ্টা স্থান ও কালের অতীত। তাই, স্রষ্টার কোনো স্রষ্টা থাকতে পারে না। অর্থাৎ, মেনে নিতে হবে। 

তাঁদের চোখে ঈশ্বর একজন মহামানব, জিনি মহাকাশের ওপর থেকে জগতের সব কিছু সৃজন ও পরিচালনা করেছেন। কিন্তু হিন্দু স্রষ্টার ধারণা একটু জটিল। 

হিন্দু ধর্মে প্রতিটি সম্প্রদায়ের (বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব ইত্যাদি ) নির্দিষ্ট দেব-দেবীরাই পরম ব্রহ্ম এবং প্রত্যেকেই অন্যান্য দেবতার থেকে অভিন্ন। অর্থাৎ, একই দেবী বা দেবতা ভিন্ন ভিন্ন নামে ভিন্ন ভুন্ন ভক্তের কাছে পূজিত হয়ে আসছে। এখানে ঈশ্বর কোনো একটি সত্ত্বা না। ঈশ্বর একটি তত্ত্ব। সেই তত্ত্বই সত্তার রূপ ধারণ করে বিভিন্ন দেব দেবী হয়েছে।

সুতরাং, এই ধর্ম ও মঝব গুলোর মধ্যে এই পার্থক্য গুলো আছে। আসুন নিম্নের বিষয় গুলো বিস্তারিত আলোচনা করি।

ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের স্রষ্টা কে?

পাশ্চাত্য যাহাকে God বলেন। আমরা তাঁকে পরমাত্মা বা পরম ব্রহ্ম বলি। সেই পরমাত্মাকেই বলা হয় "সচ্চিদানন্দ"। তিনি সত্য, চেতনাময় এবং আনন্দ স্বরুপ। এই চেতনা একটি নর্দমার কীট থেকে শুরু করে স্বর্গের দেবতা হয়ে ব্রহ্মা পর্যন্ত এক। স্তরে স্তরে সেই একই ব্রহ্ম চেতনা। যারা আনন্দ আস্বাদনের প্রয়াস করছে।

নর্দমার কীট ওই পচা দুর্গন্ধে যে আনন্দ পায়, একই আনন্দ স্বচ্ছ জলে পায় না। কারণ, নর্দমার কীটের আনন্দের বস্তু স্বচ্ছ জলে নেই। ওই স্বচ্ছ জলে  নর্দমার কীট অপুষ্ট হয়ে মারা যাবে। আবার স্বচ্ছ জলের মাছ, যে আনন্দ স্বচ্ছ মিষ্টি জলে পায়। নোনা জলে পায় না। 

অর্থাৎ, চেতনার স্তরের ভিন্নতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ব্রহ্মে সত্য, চেতনা ও আনন্দের স্তর ভিন্ন ভিন্ন।

এই ভাবে স্তরে স্তরে বিভিন্ন জীবের মধ্যে এক ব্রহ্মই সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক গুণের প্রভাবে বদ্ধ হয়ে নিজের নিজের স্তরে অনিত্য জগতে আনন্দ ভোগ করছে।

তাই মহাপুরুষরা বলে গেছেন বাইরে কোথাও সুখ বা দুঃখ নেই। সমগ্র বিশ্ব তোমার অন্তরে। কবির অনুভবে —

আমার হেয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, 
দেখতে আমি পাইনি। 
বাহির পানে চোখ মেলেছি, 
হৃদয় পানে চাই নি॥ (রবীন্দ্র নাথ)

হিন্দু সৃষ্টি তত্ত্ব অনুসারে ঈশ্বর যেই মাত্র জগত সৃষ্টির কাজ শুরু করেছে, তিনি সেই মুহুর্তেই নিজের পরমা প্রকৃতিকে এই “ইদম” বলে প্রকট করেছেন। অর্থাৎ, ঈশ্বরের নিজের অস্তিত্ব প্রকট হয়ে যাওয়াই জগত প্রকট হয়ে যাওয়া।

সংস্কৃত ইদম শব্দের অর্থ "এই"। এই ইদম হল, এই পরমা প্রকৃতি, ব্রহ্মময়ী মহামায়া। জিনি এই জগতের অনু-পরমানুতে আছেন। ক্রিয়াশীল জগতের তিনি পরাশক্তি।

ঈশ্বর স্বয়ং সেই পুরুষ। জিনি ইদমকে প্রকট করে কিছুই করেননি। তাঁর সেই পরমা প্রকৃতিই  চালিকা শক্তি। সেই মহামায়াই তাঁর প্রকট শক্তি রূপে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের স্রষ্টা। এই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর সেই পুরুষেরই তিনটি অভিব্যক্তি। 

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতি খন্ডে, শ্রী হরি তাঁর ভক্ত নারদ মুনিকে বলছেন  — "প্র অর্থাৎ প্রকৃষ্ট এবং কৃতি অর্থাৎ সৃষ্টির মূল। সকল দেবতার স্ত্রী ও যত কিছুই বিশ্বে পালন, সঞ্চালন ও সংহার করছে। সেই সব কিছুই দেবী দুর্গার স্বরুপ। দেবী দুর্গাই এই জগতের সত, রজ এবং তম গুণের দ্বারা সৃজন করেছেন।" 

সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মা তাঁর শক্তিতেই সৃজন কর্তা, ভগবান বিষ্ণু তাঁর ঐশ্বর্যে পালন কর্তা এবং মহাদেব শিব তাঁর শক্তিতেই লয় কর্তা। সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী (দুর্গা) এই তিন দেবতার শক্তি। এই দেবতারা হলেন ওই পরম ব্রহ্মের রূপ।

ব্রহ্মা :

পুরাণে ব্রহ্মা প্রকট হয়েছেন বিষ্ণুর নাভি কমল থেকে। অর্থাৎ আমাদের স্রষ্টার স্রষ্টা আছে। আগে থেকেই এই জগতের ঐশ্বর্য বা উপাদান ছিল বলেই এই বিশাল সৃজন সম্ভব হয়েছে। এই উপাদান বা ঐশ্বর্য কোথা থেকে এসেছে? এর উত্তর হলো বিষ্ণু।

বিষ্ণু :

পুরাণে বলা হয় ঈশ্বরের দেহ থেকেই জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কিভাবে দেহ থেকে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে? আসুন জেনে নেই।

বিষ্ণুর আরেক নাম নারায়ণ। কারণ নার নামক সমুদ্রে তিনি নিদ্রিত। তাঁর দেহ থেকে যে ঘাম ঝরছে, সেই ঘাম থেকেই এই নার নামক সমুদ্র সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থায়, তিনি একাই ছিলেন। তারপর বহু হলেন। প্রতিটি ঘামের বিন্দু বিন্দু করে তিনি বিস্তার লাভ করে যে সংসার বানালেন সেই থেকেই সৃষ্টির উপাদান তৈরী হলো। এই দ্বিতীয় সত্ত্বা সংসারকে তিনি ইদম বললেন। এই ঐশ্বর্য্য পরমা প্রকৃতির স্বামীরূপে তিনি বিষ্ণু বা লক্ষ্মী পতি বলে খ্যাত। 

অর্থাৎ পালন কর্তা বিষ্ণুই সৃষ্টির উপাদান। তাহলে তাঁর আগে কে ছিলো? বিষ্ণুর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে? অর্থাৎ এবার আমাদের কাল বা সময়ের দিকে অগ্রসর হতে হবে। কারণ, কোনো কিছু আরম্ভ হলেই কাল বা সময় নিয়ে ভাবতে হবে। কোনো কিছু শেষ হলেও সময় নিয়েই গণনা করতে হবে।

এই জায়গায় এসে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র বলছে আমার জানা নেই। হ্যা, সোজা কথা। জিনি কালাতীত তাঁকে কালের মধ্যে থাকা আমি আপনি কিভাবে বলতে পারি? তাহলে তো এই কালাতীত, নিরঞ্জন, অবিজ্ঞেয় এই শব্দ গুলো বাদ দিতে হবে। 

তাই, ঋষিরা কাল চক্রের কথা বলছে। বলা হয়েছে কালের চক্রে ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশ্বর প্রতি কল্পে পরস্পর পরস্পরকে সৃষ্টি করছেন। ব্রহ্মার কল্পে ব্রহ্মা থেকেই শিব ও বিষ্ণু প্রকট হয়েছে। বিষ্ণুর কল্পে ব্রহ্মা এবং জীব বিষ্ণু থেকে প্রকট হয়েছে। 

আছেন বলেই আমরা এই অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছি। আর জিনি আমাদের মধ্যে ‘আমি’, এই সব কিছু অনুভব করছেন। সেই সাক্ষী সত্তাই সকলের মধ্যে ঈশ্বর। তাঁর অস্তিত্ব অনুভব করা সম্ভব নয়। এই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের পরম ব্রহ্মের সাকার স্বরুপ বা সাকার ব্রহ্ম। নিরাকার ব্রহ্মের কোনো উপমা নেই।

নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা

নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করা যায় না। তিনিই তো আমাদের আমি। তিনি এত নিকট যে তিনি আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাঁকে তো জানাই যায় না। যেমন, এই আপনার ডান হাত দিয়ে আপনি বাম হাত ধরতে পারেন। কিন্তু ডান হাত দিয়ে ডান হাত ধরা সম্ভব নয়। আবার এই চোখ দিয়ে আপনি সব কিছু দেখতে পারেন। কিন্তু চোখকে দেখতে হলে আয়নার প্রয়জন হয়। সেই ভাবেই নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা সম্ভব নয়।

এই সাকার জগতে সেই নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করতে মূর্তি বা প্রতিকৃতি দরকার। ব্রহ্ম সমাজ, আর্য্য সমাজ নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার কথা বললেও যদি কেউ তাঁদের প্রতিষ্ঠাতার মূর্তির অপমান করে। তবে কি তারা ছেড়ে কথা বলবে? 

আর ঈশ্বরীয় পুস্তক বিশ্বাসকারী ধর্ম সম্প্রদায়ের পুস্তকের অবমাননা করলে কি তাঁরও ছেড়ে কথা বলবে? না। বরং তারা একটি কাগজের বইয়ের প্রতি এতটা আস্থাবান যে তারা নিজের জীবন দিয়েও ওর রক্ষা করবে।

ওতো দূরে যেতে হবে না। আপনি নিজের বাবার ছবি রাস্তায় টাঙিয়ে তাতে পথচারীদের দিয়ে তাহাতে পেচ্ছাপ করাতে পারবেন কি? তাও, করতে হবে না। আপনি বুকে হাত রেখে বলুন, “ওই ছবিতে যে ব্যক্তি আছে। সে আমার পিতা নয়। সে একটি চোর” বলতে পারবেন কি?

না, পারবেন না। কারণ আমরা ছবি, আকৃতি বা লক্ষ্মণ দেখেই বিচার করতে শিখেছি। শব্দকে অক্ষর রূপ দিয়েছি। সেই অক্ষর কে আপনার মগজ চিত্র রূপে মনে রেখেছে বলেই আপনি এই প্রতিবেদন পড়তে পারছেন। 

তাই হিন্দু ধর্মে নিরাকার ব্রহ্মের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে সাকার ব্রহ্মের উপাসনা করা হয়। সাকার যেমন সত্য, নিরকারও তেমন সত্য। তা না হলে একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা। আবার, অপর পক্ষ বলবে আমারটি সত্য, তোমারটি মিথ্যা। এভাবে, মিথ্যার উপর কেরামতি করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা মতবাদ শত শতবাদ বিবাদ। তাই, আমাদের উচিত এক হয়ে যাওয়া। কারণ, স্রষ্টা এক। 

স্রষ্টা কে ?

এক কথায় উত্তর —আপনিই স্রষ্টা। না, আমি এই রক্ত মাংসের দেহ নির্মিত এই মানুষটার কথা বলছি না। আমি বলছি এই দেহের যে আমিত্ব ধারণ করে আছেন। এই জগত যে ঈশ্বরের তৈরী। সেই ঈশ্বর আপনার আমিত্ব। 

আপনি যা কিছু নিজের মনে করেছেন। সেই গুলোই আপনার হয়ে গেছে। আর যে গুলো আপনি ত্যাগ করেছেন। সেগুলো আপনার জন্য বিরোধ সৃষ্টি করেছে। আপনি আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন, থেকে শুরু করে পোষা কুকুরের জন্য যে আপনত্ব অনুভব করেন। একটি মুরগি তাঁর নিজের আমিত্বের আয়তায় যা কিছু আছে তাঁর জন্য একই আপনত্ব অনুভব করে। তাই, আপনাকে কেউ আঘাত করলে আপনার পোষা কুকুরটাও  আপনাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। এটি আমিই সেই ব্রহ্মের প্রমাণ।

আমরা (হিন্দুরা) স্রষ্টা বলি না। আমরা বলি সৃজিনকর্তা। "স্রষ্টা" শব্দটি অনেকটা যান্ত্রিক অর্থ বহন করে — যেন কোনো এক সর্বশক্তিমান সত্তা বিশ্বকে একবার সৃষ্টি করেছে, তারপর দূরে সরে গেছে। যেমন স্টিভ জবস অ্যাপেলের স্রষ্টা। 

"সৃজিনকর্তা" শব্দটি তুলনামূলকভাবে বেশি চেতনাপূর্ণ, ধারাবাহিক, এবং অন্তর্জগতে জড়িত এক সত্তার ইঙ্গিত দেয়। এখানে ঈশ্বর কেবল সৃষ্টির সূচনাকারী নন, তিনি সেই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার অংশ, সেই প্রক্রিয়ায় চলমান, এবং তিনি সৃষ্টি, পালন, সংহার — এই তিনের মধ্যেই অবস্থান করেন। 

ঈশ্বর কি আমাদেরই কল্পনা?

এর উত্তর একটাই তবে অর্থ দুই রকম হতে পারে। যদি আপনি বিশ্বাস করেন ঈশ্বর বলে কেউ নেই। তাহলে ঈশ্বর আমাদেরই কল্পনা। আর যদি আপনি বিশ্বাস করেন ঈশ্বর আছেন। তাহলে এর জবাব হলো হ্যা, আপনিই তো সেই। 

এখানে ঈশ্বর আর বাইরের কেউ নন, বরং আপনার চেতনার গভীরে অবস্থানরত চিরসত্য। এটি অদ্বৈত দর্শনের প্রতিচ্ছবি — "अहं ब्रह्मास्मि" (আমি ব্রহ্ম)।

একটি ছোট্ট গল্প শুনুন। একবার এক যুবক তাঁর গুরুর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,

— “গুরুদেব, ঈশ্বর কি সত্যিই আছেন? নাকি উনি শুধু আমাদের কল্পনা?”

গুরুজী চুপ করে থাকলেন। তারপর এক আয়না এনে যুবকের সামনে ধরলেন।

— “তুমি কী দেখছো?”
— “আমাকে।”, যুবক বলল।
— “তবে এটা কি তুমি, না তোমার প্রতিবিম্ব?”
— “আমি আছি বলেই তো আমার প্রতিবিম্ব। কিন্তু প্রতিবিম্বটা তো শুধু একটা ছবি।”
— “ঠিক তাই,” গুরুজী বললেন, “তুমি যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করো, তাহলে তুমি কেবল বাইরের এই দেহবিম্বে আটকে আছো। এই দেহটা কি তুমি না দেহটা তোমার? 
 — “অজ্ঞে, দেহ তো আমারই। আমি কি দেহ নই?”
—“এই পরিধনের কাপড় তোমার, নাকি তুমি কাপড়?”

— “আমি তো চেতনা। যে এই দেহের ও কাপড়ের মালিক।” শিষ্য জবাব দিলো।

এবার গুরু বললেন, “আর যদি গভীরে যাও — আত্মস্মরণে, আত্মজিজ্ঞাসায় — তাহলে বুঝবে, তোমার ওই প্রতিচ্ছবির পেছনে যে ‘আমি’। সেই ‘আমি’ই ঈশ্বর।”

চেতনার উর্ধ্বেও কি আমি ?

— “তুমি নিজেই তো সেই। আত্মার গভীরে বিরাজমান এক শুদ্ধ চেতনার সাক্ষী।” গুরু বললেন, “ চেতনা কি তুমি তোমার বলে মনে করো?”

— হ্যা, আমার চেতনা।

—অর্থাৎ, তুমি চেতনার উর্ধ্বে সেই সাক্ষী যে আমার চেতনা বলে অনুভব করছে।

— আমি, কে?

গুরুজী শান্ত কণ্ঠে বললেন,

— “তুমি সেই, যা নিয়ে আমার কাছে এসেছো।

মনন করো, চিন্তা করো —

দেখবে, সর্বভূতের অন্তরে তুমি নিজেই বিরাজমান।

এই জ্ঞানই ঈশ্বরস্বরূপ। এই ‘আমি’ই আত্মা, এই আত্মাই পরম।"

জীব জীবের খাদ্য

জীব জীবের খাদ্য। উদ্ভিদ মাটি ভেদ করে বেরিয়ে আসে আর প্রাণী প্রাণবায়ু আহরণ করে জীবিত থাকে। এই প্রবীরা অন্য জীবের শিকার করে নিজের পুষ্টি জোগায়। আবার,  এমন কিছু উদ্ভিদ আছে যারা কীট পতঙ্গের শিকার করে নিজেরা জীবিত থাকে। ছত্রাক মৃত, বা পচা দেহের ওপর জন্মায়। কেন? কারণ, এটাই প্রকৃতি নিয়ম। এই নিয়ামকেই বলা হয় ধর্ম। এই ধর্মকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথা

প্রাকৃতিক ধর্ম

প্রকৃতি এই ধর্মের দ্বারা জগত পালন করছে। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় সর্বদা হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রকৃতির কোলে ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বরের পুনঃ পুনঃ আবির্ভাব ও তিরোভাব হচ্ছে। এই একই ভাবে এই ব্রহ্মান্ড আবির্ভূত হয়েছে এবং একদিন তিরোভাব হবে। এটিকে বলা হয় প্রাকৃতিক ধর্ম। যেমন, আগুনের দাহিকা শক্তি সব ক্ষেত্রে একই। এটি আগুনের প্রাকৃতিক ধর্ম।

আচার ধর্ম

আমরা মানব প্রজাতি এই রহস্য জানি। পশুরা জানে না। তাই আমরা যা কিছুই করি, তার পেছনে এক একটি নিয়ম নিষ্ঠা আছে। একে বলা হয় আচার ধর্ম। এই আচার ধর্ম মানুষের সৃষ্টি। যাতে একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতিতে সকল মানুষ যেন একই ভাবে ওঠা-বসা করে। যেমন: শাক্ত সম্প্রদায়ের আচার ধর্ম বৈষ্ণব থেকে ভিন্ন। হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম নিজ নিজ আচার ধর্ম মেনেই পৃথক পৃথক অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।

স্বধর্ম

যেখানে যা কর্তব্য, যে কর্মকর্তা যে কাজের জন্য নিয়োজিত। সেই কাজ করাই স্বধর্ম।  কর্তব্য কর্মই ধর্ম। যেমন, রাজার রাজ ধর্ম, পুত্রের তাঁর পিতার প্রতি পুত্র ধর্ম পালন করা স্বধর্ম।



0 Comments: