Headlines
Loading...

৭ মে, ২০২৫:  ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে হত্যাকাণ্ডের বিচার আজ থেকে শুরু। 2:00AM নাগাদ, মধ্যরাতে,  পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুলোতে হামলা চালাল ভারত। এর নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন সিঁদুর। গুঁড়িয়ে দেওয়া হল অন্তত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। বিস্তারিত বিবরণ আলোচনা করা হলো।

অপারেশন সিন্দুর: বিবরণ

 ৭ মে, ২০২৫; ভোর ১:৪৫ নাগাদ (ভারতীয় সময়) অভিযান শুরু হয় এবং পিওকেতে ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশ দেওয়া হয়, সেই মাদ্রাসা ও ক্যাম্প গুলো লক্ষ্য বস্তু হিসেবে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এগুলো হাফিজ সাঈদের প্রশিক্ষণ শিবির এবং বাহাওয়ালপুর, কোটলি, এবং মুজাফফরাবাদের সন্ত্রাসী অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত।

ভারতীয় বিমান বাহিনী (আই.এ.এফ) কর্তৃক এয়ার স্ট্রাইক করা হয়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলাগুলো ছিল “ফোকাসড, পরিমিত, এবং অ-উত্তেজনামূলক”। কোনো পাকিস্তানি সামরিক বা অসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়নি

প্রেক্ষাপট: 

পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টি. আর. এফ), যাকে লশকর-ই-তৈয়বার একটি শাখা বলে মনে করা হয়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। 

The Hindu পত্রিকার অনুসারে এই অভিযান ২০১৬ সালের উরি হামলার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার ও বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের পর তৃতীয় বড় প্রতিশোধমূলক হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেছে, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত। জয় হিন্দ!” 

ভারতীয় নেতাদের বক্তব্য

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী:

পহেলগাম হামলার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিমানবন্দরে জরুরি বৈঠক করেন।

গত মাসে, অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল, ২০২৫-এ মোদী সশস্ত্র বাহিনীকে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” প্রদান করেন, যাতে তারা হামলার প্রতিক্রিয়ায় লক্ষ্য, সময়, এবং পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আঘাত হানা জাতীয় সংকল্প।” 

৩ মে, ২০২৫-এ অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জোয়াও লোরেনকোর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মোদী বলেন, “সন্ত্রাসবাদ মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। পহেলগাম হামলাকারীদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনা হবে।

 meeting of the CCS at 7, Lok Kalyan Marg.

 অপারেশন সিন্দুরের সময় মোদী ৭, লোক কল্যাণ মার্গ থেকে অভিযানের তদারকি করেন, এবং এন. এস. এ দোভাল তাকে নিয়মিত ব্রিফ প্রদানকরেন। দোভাল অপারেশনের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেন এবং জানান, “কোনো পাকিস্তানি বেসামরিক, অর্থনৈতিক, বা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়নি। শুধুমাত্র পরিচিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করা হয়েছে।” তিনি এই হামলাকে “ফোকাসড, পরিমিত, এবং অ-উত্তেজনামূলক” বলে বর্ণনা করেন।

৬ মে, ২০২৫-এ দোভাল মোদীর সঙ্গে দুইবার বৈঠক করেন, যেখানে পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামরিক ও কূটনৈতিক বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। ABPলাইভ

ওয়াশিংটন পোস্ট এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে দোভাল বলেছিলেন, পাকিস্তানে আক্রমণ অবাস্তব, তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য গোপন পদক্ষেপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, “পাকিস্তানের দুর্বলতা ভারতের তুলনায় অনেক বেশি।”

অন্যান্য কর্মকর্তা:

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়: একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের পদক্ষেপ ফোকাসড এবং পরিমিত। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি। ভারত লক্ষ্য নির্বাচন ও কার্যকরণে যথেষ্ট সংযম প্রদর্শন করেছে।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও সেনাপ্রধানরা: মোদীর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে অপারেশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়

 পাকিস্তানি নেতাদের বক্তব্য

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ:

অপারেশন সিন্দুরের পর শরিফ এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “কাপুরুষ শত্রু (ভারত) পাকিস্তানে পাঁচটি স্থানে সমষ্টিগত হামলা চালিয়েছে। এই  কাজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জোরালো জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে, এবং জোরালো জবাব দেওয়া হচ্ছে।”

 পহেলগাম হামলার পর শরিফ বলেন, পাকিস্তান পর্যটকদের প্রাণহানি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে ভারতের ২৩ এপ্রিলের পদক্ষেপগুলোকে “একতরফা, অন্যায্য, রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত, অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন, এবং আইনি ভিত্তিহীন।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ:

২৮ এপ্রিল, ২০২৫-এ রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, "ভারতের বক্তৃতা তীব্র হচ্ছে, এবং পাকিস্তান উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।" ৩০ এপ্রিল, ২০২৫-এ আসিফ আল জাজিরাকে বলেন, "ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে, এবং পাকিস্তান যে কোনো সামরিক পদক্ষেপের “জোরালোভাবে” জবাব দেবে।"

ভারত জাতিসংঘে মুহাম্মদ আসিফের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলে, "পাকিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন ও অর্থায়নের ইতিহাস স্বীকার করেছেন, যা পাকিস্তানকে দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশ করে"।

আই. এস. পি. আর (পাকিস্তান সামরিক মুখপাত্র):

ডিজি ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আই. এস. পি. আর) জানিয়েছে, ভারত বাহাওয়ালপুর, কোটলি, এবং মুজাফফরাবাদে তিনটি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা স্বীকার করেছে, কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি। তবে জনবহুল এলাকায় আক্রমণ করেছে এবং তিনজন নিহত হয়েছে।  

Sky news Reporter Yalda Hakim পাকিস্থানি মন্ত্রী Attaullah Tarar's কে জিজ্ঞেস করলেন, "ভারত বলছে ৯ টি টেরোরিস্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুলোতে আক্রমণ করেছে"। জবাবে Attaullah বলছেন, "পাকিস্থানে কোনো টেরোরিস্ট নেই, বরং আমরা টোররিস্ট আক্রমণ দ্বারা ভুক্তভুগি। ভারতীয় সেনা আমাদের জনবহুল এলাকায় আক্রমণ করেছে এবং তিনজন নিহত হয়েছে। এর যোগ্য জবাব আমরা দেবো।"


পাকিস্থানি মন্ত্রী Attaullah Tarar এর এই বক্তব্যের পর দেখা যায় তিনটির বেশী কফিনে পতাকা মোরা কফিনে মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাদের শহীদ সন্মান জানানো হচ্ছে। যেখানে লস্কর-ই-তৈয়বার সন্ত্রাসী হাফিজ আব্দুল রউফ নামাজের ইমামতি করছেন এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।

এর থেকে স্পষ্ট হয় যে পাকিস্তান যে কেবল জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছে , তাই নয়।  সেনা ও জঙ্গি মিলিত ভাবে কাজ করছে।  এর আরো একটি প্রমান দেখুন। নিচের ভিডিওতে যখন পাকিস্থানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলো, "পাকিস্তান জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ, আশ্রয় ও সংরক্ষণ দিচ্ছে ?"  প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উত্তর, "আমেরিকার সহায়তায়, আমরা তিন দশক ধরে হাত নোংরা করেছি।"

 "পাকিস্থান বলছে ভারতের 5টি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়েছে, এর প্রমাণ কই?" পাকিস্থানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর হ্যাস্যকর বক্তব্য। ভারতীয় স্যোশাল মিডিয়ায় প্রমাণ আছে। ভেবে দেখুন, একজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিজের কোনো সোর্স নেই। তিনি আন্তঃরাষ্ট্রীয় মিডিয়া চ্যানেলে বসে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রমাণ দেখাচ্ছেন। 

উপসংহার

অপারেশন সিন্দুর পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের একটি কৌশলগত এবং লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতীয় নেতারা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং এনএসএ দোভাল, এই অভিযানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় সংকল্পের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা সুনির্দিষ্ট এবং অ-উত্তেজনামূলক বলে দাবি করা হয়। অন্যদিকে, পাকিস্তানি নেতারা এই হামলাকে আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত করে জোরালো জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদিও তারা পহেলগাম হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই অভিযান ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।



0 Comments:

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads