ঈশ্বর আছে এর কোনো প্রমাণ কি? Is there any proof that God exists?

ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এই নিয়ে নাস্তিক আস্তিকদের মধ্যে বাদ বিবাদ চলতে থাকে। তর্ক বিতর্ক ও কুতর্ক সব মিলিয়ে আলোচনা সমালোচনা চালাতে থাকে। অল্পজ্ঞতা, ভ্রান্ত ধারণা, অসত্য প্রমাণ এবং অহংকার বোধের কারণে মূলত মানুষ নাস্তিক হয়। 

ঈশ্বর আছে এর কোনো প্রমাণ কি?

ঈশ্বর আছে এর কোনো প্রমাণ দেখানো সম্ভব নয়, আবার সম্ভব। 

প্রমাণ দেখানো সম্ভব নয় কারণ, প্রথমত সে কোনো ভৌত ব্যাক্তি বা বস্তু নয়। সে আমাদের থেকে দ্বিতীয় কোনো সত্ত্বা নয়সে আপনারই স্বরূপ। যেভাবে চোখ দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে দেখা যায়, আবার সেই চোখ নিজেকে দেখতে পারে না। আপনি আপনার ডান হাত দিয়ে আপনার বাম হাত ধরতে পারেন। কিন্তু ডানহাত নিজেকে ধরতে পারে না। একে সতঃসিদ্ধ বলা হয়। সেভাবেই ইশ্বর যিনি আপনার, আমার, সবার মধ্যে এক এবং অদ্বিতীয় রূপে, কারণ রূপে, দ্রষ্টা রূপে রয়েছেন। তাই সতঃসিদ্ধ নিজেকে প্রমাণ করতে পারে না।

ঈশ্বর আছেন এর প্রমাণও আছে। তবে, তাঁকে ততক্ষণ দর্শন করা সম্ভব নয় যতক্ষন পর্যন্ত আপনার মধ্যে জ্ঞান বা নিশ্চয়ত্বিকা বুদ্ধি না হয়। নিশ্চয়ত্বিকা বুদ্ধি হলো একটি দর্পণ বা শুদ্ধ জ্ঞানের অবলম্বন। ভ্রান্তি হলে সাদা কাপড়ে ভূত, দড়িকে সাপ বলে ভূল হতে পারে। আবার মানসিক রোগ থাকলেও মানুষ ভুল জিনিস দেখতে পায়। নিশ্চয়ত্বিকা বুদ্ধি সাধনার মাধ্যমে অর্জন করে ঈশ্বর দর্শন করা সম্ভব। 

তিনি নিজেই নিজের মায়ার আবরণে সকল জীবের কাছে অব্যাক্ত। এর জন্য যা নেই তো আছে বলে মনে হয়। যেভাবে স্বপ্নে স্বপ্নের জগত সত্য বলে মনে হয়। সেভাবে নিশ্চয়ত্বিকা বুদ্ধির অভাবে মায়াময় এই জগতকে সত্য বলে মনে হয়। 

এই দৃশ্যমান জগত নেই, এসব মায়া— কিভাবে জানবো?

বিবেক দ্বারা এই মায়ার রহস্য জানা সম্ভব। এই দৃশ্যমান জগতে সব কিছুই পরিবর্তনশীল এবং অস্থায়ী। 

যা ছিলো আজ তাহা নেই। আজ যাহা আছে, আগামীতে তাহা থাকবে না। কোনো এক সময় সেটাও বদলে যাবে। অথচ কোনো কিছুই চির কালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে না।

ঘট ভেঙে মাটি হয়, মাটি দিয়েই মুর্তি হয়। সেটা গলে গিয়ে মাটিতে মিশে যায়। আবার সেই গোলা পঁচা মাটির রস টেনে ছত্রাক উদ্ভিদ তৈরী হয়। এভাবেই সৃষ্টি স্থিতি ও লয় দ্বারা জগত রূপান্তরিত হচ্ছে।

আধুনিক বিজ্ঞানের পদার্থ ও শক্তির নিত্যতা সূত্র জানিয়েছে, কিভাবে সব কিছু একটা এনট্রপি মেনে চলে। বলে রাখি এন্ট্রপি মূলত বিশৃঙ্খলার পরিমাপক। যেখানে সব কিছু সরল থেকে জটিলতর হয়। কোনো একটি প্রক্রিয়া বা বিক্রিয়া বিপরীতমুখি করা সম্ভব হয়। 

আদিতে এই বিশৃঙ্খলার পরিমাণ কম ছিলো এবং সময়ের সাথে সাথে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সময় যতো এগোবে, বিশৃঙ্খলার পরিমাণ ততই বাড়তে থাকবে। আদিতে যখন কিছুই ছিলো না, সেখান থেকে আত্ম, মহত, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকার ইত্যাদি বস্তুগুলো এক এবং অদ্বিতীয় ইশ্বরের বিভিন্ন রূপ। সময়ের সাথে সাথে এদের এই বিশৃংখলা বেড়েছে। 

আবার এটাও একটা সত্য যে এই জগতে perpetual mechanism (চিরস্থায়ী প্রক্রিয়া) বলে কিছুই নেই। তাই কোনো কিছুইনিজে নিজে শুরু হয়নি এবং আজীবন একই ভাবে বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া চলতে পারে না। সেই বাইরের হস্তক্ষেপ, যার কারণে এই জগত সৃষ্টি হয়েছে তাঁকেই আমরা ইশ্বর, গড, আল্লহ বিভিন্ন নামে ডাকি।

অর্থাৎ সব কিছুর মূল বা উৎস আছে। ওই উৎসই এক থেকে বিভিন্নতা লাভ করেছে। তাই বলা যেতে পারে — এই দৃশ্যমান জগত আসলে নেই। সবই মিথ্যা "। 

জীবনের যদি কোনো উদ্দেশ্য কি?

মন, বুদ্ধি, চেতনার মতো আধ্যাত্মিক তত্ত্ব পরিমাপের কোনো যন্ত্র নেই। দেহ নষ্ট হওয়ার পর এদের কি হয়, সেই সকল কেউ জানতে পারে না। তাই ভৌতবাদী এবং বৈজ্ঞানিকরা বলে থাকেন, "Life has no purpose". জীবনের যদি কোনো উদ্দেশ্য না থাকে, তবে তুমি আত্ম হত্যা করো। 

এই ভৌতবাদী নাস্তিকরা সেটাও করতে পারবে না। কারণ তারা এই জীবনকে উপভোগ করতে চায়। আমরাও তো একই কথা বলছি, "সার্থকতার সঙ্গে জীবনকে উপভোগ করো।

আমাদের হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র এই ঘটনাকে উপমা ও অলঙ্কার দ্বারা একে এই ভাবে ব্যখ্যা করছে:

এই দেহ রথের পাঁচটি ঘোড়া, লাগাম টেনে আছেন মন ও বুদ্ধি। সময় চাকায় এই রথ এগিয়ে চলছে তাঁর গন্তব্য পরম ধামের দিকে। রথের মালিক ঘুমিয়ে আছে তাই। মন ও বুদ্ধি রথকে নিজের মতো চালিত করছে। তারাই নিজেকে মালিক মনে করছে । 

 "আমি দেহ নই, মন নই, আমি বুদ্ধি বা চেতনা নই। আমিই সে, আমিই সে।" ইহা চিন্তন মনন করে মায়া থেকে উদ্ধার করা সম্ভব।

পরিশিষ্ট:

যিনি ঈশ্বরের সাক্ষাৎ করেছেন তার মধ্যে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন, রামকৃষ্ণ পরমহংস, নিগমানন্দ পরমহংস, বামাখ্যপা, প্রভৃতি মহাপুরুষ প্রত্যক্ষ দর্শন করেছেন। তাঁদের সেই প্রমাণ পরোক্ষ ভাবে আমাদের জন্য অনুমান এবং অপ্ত প্রমাণ বলে পরিচিত। এই ভাবেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে প্রমাণিত হয়।

এর পরেও যদি কোনো নাস্তিক "ঈশ্বর নেই", এই কথা বলে তবে সে নিজের নাস্তিক তত্ত্বকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বলতেই পারে। 

আপনার মতামত নিচে কমেন্ট বক্সে লিখুন। আপনি কি বিশ্বাস করেন ইশ্বর বলে কেউ নেই? আপনার মতামত আমার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

4 মন্তব্যসমূহ

  1. ঈশ্বর কিভাবে সৃষ্টি হলেন?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. তিনি সৃষ্টির আগেও ছিলেন এবং চিরকাল থাকবেন।

      মুছুন
    2. সে কোনো ভৌত ব্যাক্তি বা বস্তু নয়। সে আমাদের থেকে দ্বিতীয় কোনো সত্ত্বা নয়। সে আপনারই স্বরূপ।

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন
Hostinger Black Friday Sale – Starting from ₹129/mo Promotional banner for Hostinger Black Friday deal: AI website builder, free domain, extra months. Pre-book now. Black Friday Sale Bring Your Idea Online With a Website From ₹129.00/mo + Extra Months & Free Domain Pre-Book Now HinduhumAds

Advertisement

Hostinger Black Friday Sale – Starting from ₹129/mo Promotional banner for Hostinger Black Friday deal: AI website builder, free domain, extra months. Pre-book now. Black Friday Sale Bring Your Idea Online With a Website From ₹129.00/mo + Extra Months & Free Domain Pre-Book Now HinduhumAds