Headlines
Loading...
Riddles in Hindusim: হিন্দু কে বা কারা?

Riddles in Hindusim: হিন্দু কে বা কারা?

মনে করুন সৌম্যদ্বীপকে প্রশ্ন করা হলো "প্রমাণ করুন বিক্রম আপনার বাবা?"

সৌম্যদ্বীপ উত্তর দিলো, “যেহেতু বিক্রম নামক ব্যাক্তি আমাকে ছোটো বেলা থেকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড়ো করে তুলেছেন। সবাই আমাকে তাঁর ছেলে বলে জানে। আমার মা আমাকে তাঁর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, এবং আমার ধমনীতে তাঁর রক্ত বইছে। তাই তিনিই আমার বাবা।”

কিন্তু প্রশ্নকর্তা সৌম্যদ্বীপের এই উত্তরে সন্তুষ্ট হলেন না। তাঁর মতে " সৌম্যদ্বীপ বিক্রমের ছেলে হতে পারো না, কারন সৌম্যদ্বীপ সুতপার সন্তান।", "বিক্রম সৌম্যদ্বীপকে কোলে পিটে করে বড় করেছে বলেই সে বিক্রমের সন্তান হতে পারেনা। কারণ অনেক সময় কাকা, জেঠু, মাসী, দাদারাও সৌম্যদ্বীপকে কোলে পিটে করে বড় করেছে।", "সৌম্যদ্বীপের শরীরের শুধু বিক্রম নয়, বিক্রমের বাবা, তাঁর ঠাকুরদা, এবং সুতোপার বংশের রক্তও বইছে।" 

আপনি ভাবছেন আমি কি গাঁজা খেয়ে আজেবাজে বকছি। না আমি নয় এটি Dr. B. R. Ambedkar বিরচিত Riddles in Hinduism নামক বইটির একটি তুলনামুলক যুক্তি।  আমি সেই যুক্তিকে অন্য উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে আমার বক্তব্য বুঝতে সুবিধা হয়। এই বইটি আদৌ AMBEDKAR বিরচিত কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।

এই বইটি তিনটি তিনি ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম ভাগের প্রথম ধাঁধা, "একজন হিন্দু নিজেকে হিন্দু কিভাবে বলবে ?" এই নিয়ে তিনি তার ওই বইয়ে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।

 লেখক উল্লেখ করেছেন, "খ্রিস্টান, মুসলিম, পার্সি এদের সকলকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন এরা কেনা খ্রিস্টান, মুসলিম, পার্সি। তাঁদের কাছে খ্রিস্টান, মুসলিম, পার্সি হাওয়ার স্পষ্ট জবাব থাকবে। কিন্তু যদি একজন হিন্দুকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় এতে সন্দেহ নেই যে একজন হিন্দু সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বেন এবং কী বলতে হবে তা বুঝতে পারবেন না।" তাঁর মতে হিন্দুর উত্তর বিভ্রান্তিকর।

হিন্দুদের বিভ্রান্তকর উওর 

লেখক নিজের মতো করে হিন্দু ধর্মের সকল সম্ভাব্য জবাব গুলোকে অস্বীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন:

  1. যদি সে বলে যে সে হিন্দু কারণ, সে একই ঈশ্বরের পূজা করে যেমন সকল হিন্দু সম্প্রদায় করে। তার উত্তর সত্য হতে পারে না। সমস্ত হিন্দু এক ঈশ্বরের উপাসনা করে না
  2. যদি সে বলেন যে সে হিন্দু কারণ সে অন্যান্য হিন্দুদের মতো একই রীতিনীতি পালন করেন তার উত্তর সত্য হতে পারে না। সব হিন্দুদের একই রীতিনীতি পালন করে না
  3. আবার যদি সে বলেন যে সে হিন্দু কারণ সে জাতিভেদে বিশ্বাস করে। তার এই উত্তর সন্তোষজনক হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। বর্ণপ্রথার একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হিন্দুধর্ম, এবং যে ব্যক্তি স্বীকৃত হিন্দু বর্ণের অন্তর্গত নয় সে হিন্দু হতে পারে না

এই তিনটি আক্ষেপ হিন্দুকে হিন্দু পরিচয় দেয় না এমনটা একেবারেই নয়। এখানেই তিনি দুটি শব্দ ব্যবহার করেছেন “সমস্ত হিন্দু” বা “সব হিন্দু”। অর্থাৎ তিনি এটা জেনেও হিন্দুকে তাঁর হিন্দু পরিচয় থেকে আলাদা করে দেখাতে চান। হিন্দুরা বিভ্রান্ত নয়, আসলে তিনিই বিভ্রান্ত।

তাঁর দেখানো সম্ভাব্য জবাব থেকে ভিন্ন জবাব কি হতে পারে না? নিশ্চয়ই হতে পারে। যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয় আমি নিজেকে কেন হিন্দু বলি? আমার উত্তর হবে, আমি নিজেকে হিন্দু মনে করি এবং হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম বোধ করি। তাই আমি হিন্দু। 

এই জবাবের উত্তরে তিনি বলেছেন, “Hinduism has no definite creed. The beliefs of persons who are by all admitted to be Hindus often differ more widely from each other than do those of Christians and Muhammadans.” 

এর ভাষান্তর করলে তাঁর অর্থ দাঁড়ায়, “হিন্দু ধর্মের কোন নির্দিষ্ট বিশ্বাস নেই। যারা হিন্দু বলে স্বীকার করে তাদের বিশ্বাস প্রায়শই খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের বিশ্বাসের চেয়ে অনেক বেশি ভিন্ন।”

কেন ভায়া! আমি খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে কেন আমার ধর্মকে পরিমাপ করবো? আমার ঈশ্বর বা ধর্ম শাস্ত্র তো আমাকে কাফের বা হেদন থেকে আলাদা করে কোনো স্বীকৃতি দেননি। তিনি আমাকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করেছেন। 

এই পুস্তকের লেখক আরো বলেছেন, "যে ব্যক্তি স্বীকৃত হিন্দু বর্ণের অন্তর্গত নয় সে হিন্দু হতে পারে না।" এটা বুঝতে পারলাম না! তিনি লিখেছেন, "বর্ণপ্রথা হিন্দু ধর্মের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।" বর্ণপ্রথা যদি হিন্দু ধর্মের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হয় তবে তিনি কেন বলেছেন "Hinduism has no definite creed."। নিজেই নিজের যুক্তি খন্ডন করছেন। কারণ এই পুস্তকের লেখক তাঁর পাঠকদের মগজে এই কথাটা বল পূর্বক স্বীকার করাতে চান যে "বর্ণপ্রথাই হিন্দু ধর্মের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।" 

হিন্দু এক ঈশ্বরের উপাসনা করে না — তাই হিন্দু হিন্দু নয়

যে সমস্ত হিন্দু এক ঈশ্বরের উপাসনা করে না, সে হিন্দু নয় এরকম যুক্তির কোনো অর্থ নেই। বহু উপাসনা করেও একজন হিন্দু ততটাই হিন্দু যতটা এক ঈশ্বরের উপাসনা করে একজন হিন্দু নিজেকে হিন্দু বলে মানে।

হ্যা কিছু হিন্দুদের মধ্যে কেউ একেশ্বরবাদী, কেউ নাস্তিক এবং কিছু কিছু ধর্মবাদী। এমনকি যে হিন্দুরা একেশ্বরবাদী তারাও একই দেবতার উপাসক নয়। 

কেউ ভগবান বিষ্ণু, কেউ শিব, কেউ রাম, কেউ কৃষ্ণকে পূজা করে। এরা সকলেই হিন্দু। এরা নিজ নিজ রুচি ও প্রকৃতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়কে গ্রহণ করেছেন। সম্প্রদায় বিভক্ত হয়েও সেই একই দেবতা ভিন্ন রূপে তাঁর ইষ্ট দেবতা। মূলে তারা এক এবং অদ্বিতীয়। বেদ বলছে:

"একম স বিপ্র বহুধা বদন্তি" — একই ঈশ্বরকে বহূ রুপে বহু নামে জ্ঞানীরা জানেন।

সব হিন্দুদের একই রীতিনীতি পালন করে না।

কেউ কি মাথার দিব্যি দিয়েছে সকল হিন্দুকে একই রীতি পালন করতে হবে? খ্রীষ্টানদের মধ্যে ক্যাথলিক, প্রটেস্টান, পেন্টাকোস্টাল এরকম অনেক সম্প্রদায় আছে। তাদের রীতি নীতি এক নয়। মাতা ম্যারীকে কেবল ক্যাথলিক চার্চে পূজা করা হয়। ইসলাম মজহবে সকল মুসলমান মাজার পুজা করে না। রীতি নীতি আলাদা হলেই তাঁর পরিচয় বদলে যায় না।

পরিশিষ্ট:

হিন্দু ধর্ম কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম নয়। এমন কোনো হিন্দু নেই যারা একটি দেবী বা দেবতার পূজা করে বা একটি ধর্ম পুস্তক মেনে চলে। আমি নিজেকে হিন্দু বলে জানি, এটাই যথেষ্ট। তাই, এই আম্বেদকরের Riddles in Hinduism পুস্তকটি একটি Time pass ছাড়া কিছুই নয়। অবসর সময়ে বসে হিন্দু ধর্মের গালমন্দ করে গেছেন। 

এটা আদৌ কোনো হিন্দুর বিবেচনার বিষয়ই নয় যে কেন তার নিজের ধর্মের ব্যাপারে তার অবস্থান এত বিব্রতকর এবং এতটা বিভ্রান্তিকর। বরং এসব থেকে উঠে এসে বেদান্তের উক্তি "অহম ব্রহ্মস্মি" স্মরণ করে আত্ম উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এই সব অপ্রাসঙ্গিক কথা নিয়ে কোনো হিন্দুর নিজের মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, আজ জিনি ইন্দ্রের আসনে বসে আছেন, কাল ও কর্মের আবর্তে সে নর্দমার কীট হয়েও জন্মাতে পারে। আর নর্দমার কীটও স্বর্গের দেবতা হয়ে যেতে পারে। দেবতা কেন, ঈশ্বর স্বরূপে ঈশ্বরত্ব পেতে পারে।

H. R. Sarkar is a dedicated blogger and entrepreneur with expertise in creating digital products and Blogger templates. Managing websites like TechaDigi.com and Hinduhum.net, they bring creativity and technical proficiency to their projects. Through their YouTube channel, Lost Eternal Science, H. R. Sarkar explores the fusion of Hindu spirituality and science, offering unique insights to their audience. With a passion for innovation, they strive to inspire and educate through their work.

৩টি মন্তব্য