মনুস্মৃতি ধর্ম সংহিতা : সৃষ্টির আদি থেকে ধর্মের উৎপত্তি পর্যন্ত আলোচনা

মনুস্মৃতির বক্তা মনু নিজে হলেও এর লেখক অন্য এক ঋষি। তাঁর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, ঋষি মনুর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন। অতএব তাই ইহার নাম মনুস্মৃতি মনুসংহিতা নয়। আবার ইহা হিন্দু সমাজের ধর্ম সংহিতাও বটে। আমি এই Blog Post এর নাম "মনুস্মৃতি ধর্ম সংহিতা" করেছি।

সংবিধান অনুসারে যেমন রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। ধর্ম সংহিতা জেনে সেভাবেই ধর্ম আচরণ করা উচিত। ধর্ম কি? ধর্ম কিভাবে উৎপত্তি হয়েছে? মানুষকে ধর্ম কেন মেনে চলা উচিত? সেটাও জানতে হবে। তবেই ধর্ম সংহিতার কথা গুলো বুঝতে পারবেন।

মহাপুরুষ ও পন্ডিতরা যে ক্লিষ্ট ভাষায় ধর্ম শাস্ত্র গুলোকে ব্যখ্যা করেন। সেই সকল ক্লিষ্ট ভাষায় ধর্মের তাত্ত্বিক অর্থ বোঝার ক্ষমতা আজকের প্রজন্মের নেই। তাই সরল এবং আজকের প্রজন্মের ভাষায় লিখছি। আমি অতি নগণ্য এক ব্যাক্তি। তাই আমার এই নগণ্য প্রয়াস দোষ ত্রুটি মার্জনা করবেন। 

এই পরিচ্ছেদে সৃষ্টির আদি থেকে ধর্মের উৎপত্তি পর্যন্ত আলোচনা করবো।

ঋষি জিজ্ঞাসা 

আমরা মনুস্মৃতির প্রথম অধ্যায় শুরুতে দেখতে পাই। মহর্ষি গন একাগ্র চিত্তে উপবিষ্ট মনুর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে যথাবিধ সন্মান অভিবাদন করে বললেন, "হে ভগবান (অর্থাৎ যিনি ভগ অর্থাৎ ষষ্ঠ ঐশ্বর্যের মালিক), সকল বর্ণ এবং তাদের মিশ্রণ জাত বর্ণসমূহের ধর্ম আমাদের বলতে আজ্ঞা হয় (আমাদের বলুন)। হে প্রভু ব্রহ্মার এই সকল অচিন্ত্যনীয় (যাহা চিন্তার বাইরে) ও অপরিমেয় (যাহা পরিমাপ করা যায় না) বিধানের কার্য ও তত্ত্ব সম্বন্ধে একমাত্র আপনিই যথার্থ জানেন। এরপর , মহর্ষিদের সেই প্রার্থণা শোনার পর, অসীম শক্তিমান সেই মনু মহর্ষিগণকে সংবর্ধনা পূর্বক উত্তর দিলেন। 

সেই উত্তর শ্রবণ করে মহর্ষি ভৃগু ও বশিষ্ঠ মনিস্মৃতি রচনা করেন। এই থেকে আরেকটি তথ্য আমরা জানতে পেরেছি যে, মহর্ষি গন নিজেরাই বর্ণ ও মিশ্র বর্ণের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলেন। বর্ণ ও মিশ্র বর্ণের উদ্ভব ও তাদের মধ্যে সামাজিক মর্যাদা মনু বা কোনো মানব নির্মীত নয়। 

যেভাবে মৌমাছি, পিপীলিকার নিজ নিজ এলাকায় নিজ নিজ রানী, সৈনিক, কর্মী থাকে। সেইভাবে মানুষও বর্ণ দ্বারা বিভক্ত। 

জগৎ উৎপত্তি :

মনু সেই সকল ঋষিদের জগত সৃষ্টি এবং আদি ইতিহাস সম্পর্কে বললেন, "এই পরিদৃশ্যমান জগৎ আদিতে অন্ধকার ময়, অজ্ঞাত ও লক্ষণ হীন ছিলো। (প্রকট হাওয়ার আগে) সমগ্র জগৎ নিষ্ক্রিয় ও সুপ্ত অবস্থায় ছিলো। জিনি ইন্দ্রিয় অগোচর, সুক্ষ, অব্যক্ত, সনাতন, সর্ব ভূতের কারণ(মূল) , তিনি নিজেই নিজেকে (জগতের মাধ্যমে) প্রকট করলেন। তিন প্রজা (প্রাণি বর্গ) সৃষ্টির সংকল্প নিয়ে নিজেকে প্রথমে জল এবং সৃষ্টির বীজ জলে নিক্ষেপ করলেন।"

 "অন্ধকার ময়, অজ্ঞাত ও লক্ষণ হীন ছিলো" — বেদের নাসদীয় সূক্ত একই কথা বলছে। তাই এই উক্তি গুলি শ্রুতি প্রমাণ। 

নারায়ণ ও ব্রহ্মার প্রকট

সেই বীজ সূর্যের প্রভা যুক্ত সোনালী ডিম্ব আকৃতির। পিতামহ ব্রহ্মা ওই ডিম্বে শরীর ধারণ করলেন। কিভাবে শরীর ধারণ করলেন, সেটাও বলা হয়েছে। "ওই জলকে নারা বলা হয়। নারার অপত্য হোলো নর। ওই জলের ওপর যিনি শয়ান করে, তিনি নারায়ণ নামে অভিহিত। সেই পরম পুরুষ (ব্রহ্মা) সদ ও অসদ এবং অব্যাক্ত জগৎ থেকে ব্যাক্ত বস্তুর সৃষ্টির কারণ। তাঁর উৎপাদিত এই পুরুষ ব্রহ্মা নামে পরিচিত

আমরা পাশ্চাত্য দুনিয়ার ধর্ম শাস্ত্রে দেখতে পাই, ঈশ্বর 6 দিনে জগত সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে বিশ্রাম করছেন। বাইবেলের আদি পুস্তকে ঈশ্বর প্রথমেই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। ওই পৃথিবী  ও ফাঁকা ছিল, গভীরের উপরের স্তরে অন্ধকার ছেয়ে ছিল, এবং ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর ভেসে বেড়াচ্ছিলেন। এরপর তিনি আলো এবং অন্ধকার আলাদা করে দিন ও রাত নাম দিলেন। এভাবেই দিন ও রাত সৃষ্টি করলেন। আবার এই আলোকেই জোহন ইশ্বরের পুত্র খ্রীষ্ট বলে উল্লেখ করেছে।

হিন্দু সৃষ্টির আদিতেও আমরা দেখলাম জলের ওপর নারায়ণ ভাসমান অবস্থায় শয়ন করছেন এবং ইহুদিদের ঈশ্বরের আত্মা জলের ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে। 

বাইবেলের ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীর জল থেকে আকাশের জলকে আলাদা করার জন্য এই দুই ধরনের জলের মাঝখানে উন্মুক্ত এলাকা তৈরি হোক।” এভাবে  আকাশ এবং পৃথিবী নির্মাণ হলো। হিন্দু শাস্ত্র বলছে অন্য কথা।

স্থান-কাল বাস্তবতা (space time reality)

সেই ভগবান (ব্রহ্মা) এই অন্ডে এক বৎসর বাস করে এই অণ্ডকে দুই ভাগে বিভক্ত করলেন। একভাগ ভূমি , আরেক ভাগ স্বর্গ এবং মধ্য ভাগ আট দিক ও জলের সনাতন অশ্রূয়। তিনি নিজেই সত্য ও অসত্য অর্থাৎ মায়া সৃষ্টি করলেন, এবং মনকে (মায়ার সঙ্গে) যুক্ত করলেন। মন উভয় প্রকার অহংকার (আমি আছি ) ও অভি-মানের (জগৎ সত্য বা যুগপৎ ব্যাপিয়া থাকবার ইচ্ছা এমন অনুভূতি হওয়া) আশ্রয়।

এখানে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র বলছে, মায়ার আশ্রয়ে জগতের (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ) বিষয় সমূহের গ্রাহক পঞ্চ-ইন্দ্রিয় (চোখ, কান, নাসিকা, জিহ্বা এবং ত্বক) জগতকে সত্য বলে আনুভব করছে। আসলে এসব নেই শুধু ঈশ্বরই আছেন। তিনিই জগত হয়েছেন। 

তিন গুন সমূহ (সতঃ, রজ এবং তম) ক্রমশ মহৎতত্ত্ব থেকে অহংকার তত্ত্ব সৃষ্টি করেছিলেন বলে ইহা (অহং বা ) আত্মা নামে  কথিত। এই  শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ তন্মাত্র এবং অহং এই  সূক্ষ অংশ সমূহ নিজের মধ্যে সন্নিবেশিত করে সকল জীব সৃষ্টি করলেন। সৃষ্টি জীবের যে শরীর, সেটা আসলে ব্রহ্মার শরীর।

ব্রহ্মার দেহ

এই সকল সূক্ষ অবয়ব (যার অঙ্গ, হস্তপদাদি শরীর নেই)  বিষয়সমূহের গ্রাহক পঞ্চ-ইন্দিয় এবং তিন গুন সমূহ দ্বারা বয়ব দেহ নির্মাণ হলো। মনীষীগণ এই দেহকে ব্রহ্মার দেহ বলে থাকেন। সেই ব্রহ্মা মহাভূত সমূহকে আবিষ্ট করে অর্থাৎ তাদের থেকে কার্য সহ উৎপন্ন করে। অহং আকার যুক্ত ব্রহ্মা থেকে সকল জীবের উৎপত্তি। মন সহ ওই সূক্ষ অংশ উৎপত্তি ব্রহ্মা থেকে এসেছে। ব্রহ্মার এই সূক্ষ অংশ থেকেই স্থুল জগৎ সত্য বলে অনুভূত হয়।

অহং তত্ত্ব থেকে মহৎ তত্ত্ব, মহৎ তত্ত্ব থেকে আকাশ, আকাশ তত্ত্ব থেকে বায়ু, বায়ু তত্ত্ব থেকে রূপ। এভাবেই রস ও গন্ধ তন্মাত্র জল ও পৃথিবীকে প্রকট করেছে।

দেখুন, স্থান বা অবকাশ আছে বলেই বায়ুর বিস্তার সম্ভব। বায়ুর ঘনত্বে তারতম্য আছে বলেই অগ্নীরূপে সেটা ঊর্ধ্বগামী। যদি বায়ু তত্ত্ব অর্থাৎ স্পর্শ তত্ত্ব না থাকত তাহলে চোখ দিয়ে রূপ দর্শন হতো না। ফোটন কণিকা গুলো X রের মতো অপটিক নার্ভ ভেদে করে চলে যেতো। আবার জলের রূপ আছে কিন্তু তার মধ্যে ওই রূপ তন্মাত্র তারতম্য রস আকারে প্রকাশ করেছে। সেই রস আছে বলেই গন্ধ তন্মাএকে আমরা আনুভব করতে পারি। আবার যা কিছুই আনুভব করি সেটি ইশ্বরেরই বয়ব। এটাই বেদের space time reality.

বেদ ও দেবতা 

ভগবান মনু বলেছেন, এই পঞ্চভূত  সমূহ ( ক্ষিতি , অপ , তেজ, মরুৎ ও ব্যম ) পূর্ব পূর্বটির গুন্ পরটি প্রাপ্ত হয়।  যেমন: তেজ বা আগুনের শব্দ, স্পর্শ, রূপ, আছে কিন্তু তার মধ্যে জলের রস তন্মাত্র নেই। আবার অপ অর্থাৎ জলের মধ্যে শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস আছে। তাঁতে গন্ধ তন্মাত্র নেই। যেভাবে ব্যম অর্থাৎ আকাশের শুধু শব্দ তন্মাত্র আছে স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ তন্মাত্র নেই। এভাবে পূর্ব পূর্বটির গুন পরটি প্রাপ্ত। এভাবেই ভূত সমূহের গুনের সংখ্যা বিচার করা হয়। 

নারায়ণ বেদের শব্দ (অক্ষর ব্রহ্ম) থেকে সকলের নাম ও নিয়তি (পরিণতি) সৃষ্টি করেছেন। তিনিই যজ্ঞ ও সাধন হেতু ইন্দ্রা, বায়ু  ইত্যাদি বৈদিক দেবতা, গণ, প্রাণীসৃষ্টি করেছিলেন। ইন্দ্রা, অগ্নি, বায়ু ও সূর্য থেকে যজ্ঞ সিদ্ধির সনাতন  ঋক , যজু ও সাম বেদ  দোহন করেছিলেন। 

প্রজা (প্রাণী ) সৃষ্টি ও পরিচালনায় সময় ও সময়ের বিভাগ করতে নক্ষত্র, গ্রহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি নদী , সাগর, পর্বত, সমতল অসমতল বাসস্থান নির্মাণ করেছেন। তপস্যার জন্য বাক্য এবং রতির জন্য কাম , ক্রোধ, সন্তোষ সৃষ্টি করেছেন। কর্ম ও অকর্ম (বিবেক দ্বারা ) বিচারের জন্যে  ধর্ম ও অধর্ম পৃষ্টক পৃথক ভাবে বিভক্ত করলেন, এবং এই কর্তব্য এবং অকর্তব্য দ্বন্ধ, সুখ ও দুঃখের সহিত যুক্ত করলেন।

ধর্ম দ্বারা যাহাকে যে কর্মের সঙ্গে নিযুক্ত করা হয়েছে সে সেই কর্মই অবলম্বন করে। ধর্ম দ্বারা প্রবর্তিত হয়ে বার বার সৃষ্ট হয়ে সেই কর্মই করে। তিনি  হিংস্র, অহিংস্র, মৃদু , তীব্র, ক্রূর , যা সৃষ্টি কালে প্রবর্তিত  করলেন সেটা তিনি নিজেই প্রাপ্ত হলেন। অর্থাৎ সেই জীব আকারেই প্রকট হলেন। যেভাবে ঋতু  পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয় , জীব সকল সেইভাবেই গুন দ্বারা আবিষ্ট হয়ে পুনঃজন্ম ও কর্ম প্রাপ্ত  হয়।

বর্ণ উৎপত্তি 

লোক বৃদ্ধির জন্য ব্রহ্মের মুখ, বাহু, উরু ও পদ থেকে যথাক্রমে ব্রাহ্মণধর্ম , ক্ষত্রিয়ধর্ম , বৈশ্যধর্ম এবং শূদ্রধর্ম প্রবর্তিত হলো।  মুখ যেমন কথা বলে , আদেশ করে ব্রাহ্মণধর্ম সেই রকম। বাহু যেমন দেহকে রক্ষা করে ক্ষত্রিয়ধর্ম সেই রকম। উরু যেমন দেহের ভার বহন করে বৈশ্যধর্ম সেইরূপ। পদ বা চরণ যে ভাবে দেহকে গতি বা বেগ প্রদান করে ঈশ্বর প্রবর্তিত শূদ্রদের ধর্ম সমাজকে বহন করে। সমাজকে গতি বা উন্নতি প্রদান করে।

এখানে শূদ্র ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ধর্মের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে এখনো পর্যন্ত মানুষ বা জীব উৎপত্তি হয়নি।

পরিশিষ্ঠ 

জীবকুল যে সনাতন ধর্ম দ্বারা পরিচালিত , সেই ধর্মের বর্ননা ভগবান মনু এখানে উল্লেখ করেছেন। তিনি সমাজকে উচু নিচুতে বিভাজন করেনি। তিনি আমাদের বলেছেন সমাজ কিভাবে বিভাজিত হয়েছে এবং এই বিভাজিত সমাজের বিধি ও নিষেধ গুলো কি কি। 

অজ্ঞ মানুষ কেবল দুই একটা বাছা বাছা শ্লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে সমাজকে উচু নিচু জাতিতে বিভাজনের চেষ্টা করে। আমরা সকলেই জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ইশ্বরের পুত্র। শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ বলছে:

শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা আ যে ধামানি দিব্যানি তস্থূ ॥ — শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ , ২ . ৫ 

শোনো বিশ্ব জন , শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ দিব্য ধাম বাসী।

বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তম্‌ আদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ । 
তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পনথা বিদ্যতে অয়নায় ॥ শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ , ৩ . ৮ 

আমি জেনেছি তাঁহারে মহান্ পুরুষ যিনি আঁধারের পারে। জ্যোতির্ময় । তাঁরে জেনে তাঁর পানে চাহি মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো , অন্য পথ নাহি। 

কি মধুর, আশাময় নাম!  হ্যাঁ, হিন্দু আপনাকে পাপী বলতে অস্বীকার করে। আমরা ঈশ্বরের সন্তান, অমর সুখের ভাগীদার, পবিত্র ও নিখুঁত মানুষ। একজন মানুষকে পাপি ডাকা পাপ। এটা মানব প্রকৃতির উপর একটি স্থায়ী মানহানি। কারণ ওই ইশ্বর পাপী উচু নিচু জাত সৃষ্টি করেনি। তিনি নিজের স্বরূপে আমাদের সৃষ্টি করেছেন।

আমি জাতি ধর্ম মানি, কিন্তু জাতি ভেদ মানি না। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Advertisement