মানুস্মৃতি: সৃষ্টি তত্ত্বের বর্ণনা। ঈশ্বরই জগৎ হয়েছেন।

Manusmriti: Description of the Theory of Creation.  God is the world.

মানুস্মৃতি মনু রচিত গ্রন্থ নয়। মনু স্মৃতি হলো মনু ও ঋষিদের মধ্যে বর্ণ ও তাঁদের মধ্যে মিশ্রণে উৎপন্ন জাতি সমূহের কর্তব্য ধর্ম ব্যখ্যার সংলাপ। ঋষিরা তাঁর কাছে গিয়ে শ্রদ্ধাপূর্বক অভিবাদন করে জানতে চাইলেন। তিনি তাঁদের অভিবাদন গ্রহণ করে বললেন:-

आसीदिदं तमोभूतमप्रज्ञातमलक्षणम्। 
अप्रतर्क्यमविज्ञेयं प्रसुप्तमिव सर्वतः।।7।।

"শোন, সৃষ্টির সময় এই (দৃশ্যমান জগৎ) নিমজ্জিত ছিল অন্ধকার, অপ্রজ্ঞাত, লক্ষণহীন, অচিন্তনীয় এবং অজ্ঞাত। তখন যেন সারা জগত ঘুমিয়ে ছিলো।

ततः स्वयम्भूर्भगवानव्यक्तोऽव्यञ्जयन्निदम् । 
महाभूतादिवृत्तौजाः प्रादुरासीत्तमोन्नुदः।।8।।

योऽसावतीन्द्रियग्राह्यः सूक्ष्मोऽव्यक्तः सनातनः।सर्वभूतमयोऽचिन्त्यः स एष स्वयमुद्‌बभौ।।9।।

অতঃপর পরমেশ্বর, ইন্দ্রিয়ের অগোচর, অপ্রতিহত শক্তি সম্পন্ন,, 'তমোনুদ ', "স্বয়ম্ভু (স্বয়ংপ্রকাশ)" এই মহা-ভূতদের মূর্তিরূপে আবির্ভূত করে ব্যাক্ত হলেন।  $ads={1}

যিনি ইন্দ্রিয়ের অগোচর, সূক্ষ্ম, অব্যক্ত, শাশ্বত, সমস্ত প্রাণীর আত্মা এবং অচিন্তনীয় তিনি নিজেই আবির্ভূত হলেন।"

ঈশ্বর কিভাবে আবির্ভূত হলেন?

এরপর মনু বললেন:—

सोऽभिध्याय शरीरात्स्वात्सिसृक्षुर्विविधाः प्रजाः।
अप एव ससर्जादौ तासु वीर्यमवासृजत्‌।।10।।

তিনি তার নিজের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরণের মানবজাতি তৈরি করতে ইচ্ছা করে প্রথমে জল তৈরি করেছিলেন, ছিলেন।

तदण्डमभवद्धैमं सहस्रांशुसमप्रभम्।
तस्मिञ्जज्ञे स्वयं ब्रह्मा सर्वलोकपितामहः।।11।।

তিনি ওই জলে (তার আত্মশক্তির) বীজ নিক্ষেপ করলেন। বীজটি ছিল ডিম্ব আকৃতির এবং সোনালি সূর্যের মতো উজ্জ্বল প্রভা যুক্ত।

आपो नारा इति प्रोक्ता आपो वै नरसूनवः।
ता यदस्पायनं पूर्वं तेन नारायणः स्मृतः।।12।।

ওই জলকে 'নারা' বলা হয় এবং সেই জল যার অপত্য তাঁকে নর বলে। যেহেতু পূর্বে নরের আশ্রয়ে সেই জল ছিল তাই তিনি নারায়ন নামে অভিহিত (অর্থাৎ নর ও নারায়ণ অভিন্ন)।

यत्तत्कारणमव्यक्तं नित्यं सदसदात्मकम् । 
तद्विसृष्टः स पुरुषो लोके ब्रह्मेति कीर्त्यते।।13।।

যে পরমাত্মা (নারায়ণ) সকল সৃষ্ট বস্তুর কারণ, ইন্দ্রিয় অগোচর, শাশ্বত, যিনি একাধারে সৎ ও অসৎ উভয়ই। তাঁর উৎপাদিত সেই পুরুষ (নর) পৃথিবীতে ব্রহ্মা নামে পরিচিত।"

— এ থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, নর ও নারায়ণ একই। তিনিই বীজ প্রদানকারী পিতা ও বীজের ধারণকারী মাতা। সেই জল 'সম্ভবত মহামায়া বা পরব্রহ্ম স্বরূপিনী আদ্যাশক্তি'। এই আদ্যাশক্তিই জগৎ প্রসব করেছেন এবং লালন করছেন। প্রতি কল্পে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর জননী এবং তদ অংশ উদ্ভূত শক্তি জায়া রূপে প্রকট করেছেন। 

এর থেকে আমরা এটাও বোধ করতে পারি যে, আদ্যাশক্তি এবং নারায়ন অভিন্ন। সকল দেবী দেবতা সেই  এক এবং অভিন্ন পরব্রহ্ম।

কিভাবে তিনি জগত সৃষ্টি করলেন?

এরপর মনু বললেন:-

तस्मिन्नण्डे स भगवानुषित्वा परिवत्सरम् । 
स्वयमेवात्मनो ध्यानात्तदण्डमकरोद्‌द्विधा।।14।।

সেই ভগবান ব্রহ্মা ওই অন্ডে এক বৎসর বাস করে নিজেই নিজের ধ্যানবলে অণ্ডকে দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন।

ताभ्यां स शकलाभ्यां च दिवं भूमिं च निर्ममे ।
मध्ये व्योमदिशश्चाष्टावपां स्थानं च शाश्वतम्।।15।।

সেই খন্ডটি দ্বারা তিনি স্বর্গ ও পৃথিবী নির্মাণ করলেন। তার মধ্যভাগে আকাশ (Space) আট দিক (Direction) ও জলের শাশ্বত আধার বা স্থান অর্থাৎ সমুদ্র সৃষ্টি করেছিলেন। 

उद्‌बर्हात्मनश्चैव मनः सदसदात्मकम्म। नसश्चाप्यहङ्कारमभिमन्तारमीश्वरम्।।16।।

এর পর, তিনি সৎ স্বভাব আত্মা ও অসৎ স্বভাবা মনকে উদ্ভব করলেন। মন হল (স্বকার্যকরণক্ষম) অহংকার ও অভিমানের স্থান। $ads={2}

বিঃ দ্রঃ — এই স্বকার্য করণ সক্ষম অহংকার জগতের সকল কার্যকে পরিচালনা করে। ঈশ্বরের মনের এই অহংতত্ত্ব প্রকৃতির সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় পরিচালনা করে।অসৎ স্বভাবা অর্থাৎ পরিবর্তনশীল মন নশ্বর জগতে বিচরণ করে। alert-success

महान्तमेव च आत्मानं सर्वाणि त्रिगुणानि च। 
विषयाणां गृहीतृणि शनै‌: पंचेन्द्रीयाणि च॥

মহৎ, প্রকৃতির তিনটি গুণ (সত্ত্ব, রজ এবং তম) এবং বিষয় সমূহের গ্রাহক পঞ্চ ইন্দ্রিয় সৃষ্টি করলেন।

—অর্থাৎ দেহভাব সৃষ্টির উপকরণ গুলো সৃষ্টি করলেন। এরপর বিস্তারিত ভাবে মনু  আরো বললেন। 

"অপরিমিত বল সম্পন্ন অহংকার ও পঞ্চতন্মাত্রের সূক্ষ্ম অংশ নিজের অংশ সমূহে সন্নিবেশিত করে তিনি সকল জীব সৃষ্টি করলেন (অর্থাৎ প্রত্যেক জীবের মধ্যে তিনি নিজের অংশ প্রদান করলেন)।

যেহেতু মূর্তি বা শরীর সম্পাদক ছয়টি অবয়ব তাঁর এই ( বক্ষ্যমাণ  আশ্রয় করে সেই জন্য মনীষীগণ (ব্রহ্মার রূপ কে) শরীর বলে থাকেন।

সেই পঞ্চ মহাভূত সমূহ কে আবিষ্ট করে ব্রহ্মা তাদের কার্যসহ উৎপন্ন করে। অহং থেকে ব্রহ্ম সকল জীবের উৎপত্তির কারণ মনের সুক্ষ অংশ সমূহের সহিত উৎপন্ন করে।

মহৎ, অহংকার ও পঞ্চ ভূত এই সাতটি পরমপুরুষ থেকে উৎপন্ন দেহ থেকে নশ্বর জগত প্রকট হয়। অবিনাশী আত্মা থেকে অবিনাশী ব্রহ্মা জ্ঞাত হয়।"

এই থেকে আমার জানলাম ইশ্বর শুধু জগত সৃষ্টি করে বসে নেই। তিনিই জগতে সকল জীবের আত্মা রূপে এবং জড় পদার্থের তন্মাত্র হিসেবে বিদ্যমান আছেন। তিনিই জগত হয়েছেন। তাই, পাথর, মাটি কিংবা ঘটে তাঁকে আবাহন করলে সেই সর্ব ব্যাপী ইশ্বর সেখানেই স্থাপিত হয়। 

প্রাণ প্রতিষ্ঠা রহস্য:

‘তিষ্ঠ’ ধাতুর পূর্বে প্র প্রত্যয় যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠা শব্দটি এসেছে। তিষ্ঠ শব্দের অর্থ হলো বসা, বা স্থান দেওয়া। প্রতিষ্ঠা শব্দটি ব্যবহার করা হয় উৎসর্গ; উদযাপন; অবস্থান বোঝাতে 

এই অর্থ মেনেই হিন্দুরা মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। এর অর্থ এই নয় যে ওই মূর্তি জীবন্ত হয়ে যায়। সেই এক অবিনশ্বর ব্রহ্মকেই প্রাণ বলা হয়েছে। তাঁকে আবাহন করে মূর্তি স্থাপন করা বা ওই মূর্তিতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে এটি মনন করা হলো প্রাণ প্রতিষ্ঠা। এর সুন্দর যুক্তি হলো।

যেভাবে বায়ু সব যায়গায় থাকা সত্ত্বেও নিজে নিজে ফুটবলের ভেতর প্রবেশ করে না। ফুটবলকে ফোলানোর জন্য যন্ত্রের মাধ্যমে বলের ভেতরে বায়ু ভরাট করা হয়। সেভাবেই সর্বব্যাপী পরম পবিত্র পরমাত্মা আমার আপনার সব জায়গায় থাকেন তাকে আবাহন করলে তিনি সেই ভক্তের ইষ্ট রূপে ওই ঘট, পট বা মূর্তিতে প্রকট হন।

মনে রাখতে হবে, 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা' ও 'প্রাণ দান' করা দুটো আলাদা আলাদা বিষয়।

পরিশিষ্ট:

আশা করি আপনাদের একটি গঠন মূলক পোষ্ট দিতে সমর্থ হয়েছি। আপনাদের মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে লিখুন। আমাদের পোস্ট নিয়মিত পাওয়ার জন্য আমাদের website Subscribe করুন। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন
InterServer Web Hosting and VPS

Copying content is illegal

Please refrain from copying content.