ইসলামের দরজা থেকে ফিরে আসার কারণ কি?

ভূমিকা :

কোনো ধর্মকে আঘাত করা বা অপবাদ প্রচার করা এই website বা  আর্টিকেলের উদ্দেশ্য নয়। এখানে ইসলামকে কেন্দ্র করে যে প্রশ্ন ও সংশয় গুলো বিভিন্ন উৎস থেকে এসেছে, সেগুলোই আমার অনুভবের সঙ্গে জুড়ে, সকলের মধ্যে তুলে ধরছি। আমি ইসলামকে বোঝার চেষ্টা করেছি এবং একটা সময় আমি জাকির নায়েকের ফ্যান ছিলাম। কিন্তু তাঁর ধর্ম বিরোধী আক্ষেপ ও অপপ্রচার আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বিপরীত ভাবে দেখতে বাধ্য হয়েছি। কেন? সেটাই আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করছি।

বহু মানুষের ইসলাম সম্পর্কে একই প্রশ্ন ও সংশয় যে, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শেষ নবি, কিন্তু তাঁর এই নবীয়ত্ পাওয়ার কোনো প্রামাণিক সাক্ষ্য কেউ দেয়নি। তিনি একজন স্বঘোষিত নবী ছিলেন। 

সাধারণ মানুষ এই নবী ও আল্লাহকে নিয়ে কথা বলতে বলতে ভয় পায়। সত্যি বলতে আমিও পাই। আসলে এই ভয় আল্লাহ বা তাঁর নবী হযরত মুহম্মদ নয়, বরং তাঁর অনুসারী মুসলীমদের অজ্ঞতার কাছে নিজের জীবন বলি হতে ভয় লাগে। "গুস্তাখ নবী কি এক সাজা সর তানসে জুদা" — এই নেরেটিভটি পাকিস্থানের ওয়াহাবী মুসলিম সংগঠন তাবলিক জামাতের হাত ধরে শুরু হয়েছে।  $ads={1}

যেখানে আল কুরানে আল্লাহ নিজেই বলছেন, "যারা সত্য গোপন করে, তাদের কাফের বলা হয়।" তাই আমি এই প্রতিবেদনটি লিখছি তাঁতে কিছু তিক্ত শব্দ আছে।  সেটা বিবেক দিয়ে বিচার করবেন ও খন্ডন করবেন। যা আমারও অজানা।  

ছোটোবেলা থেকেই ধর্মের প্রতি আগ্রহী না থাকলে কেউ ধর্ম নিয়ে রুচি দেখায় না। যারা নিজেদের নাস্তিক বলে, তারাও ইশ্বরকে নিজের বিরোধ ভাব দিয়ে স্মরণ করে।  কিন্তু যারা আস্তিক তারা ঈশ্বর বিশ্বাস করেও অপরের আস্থার বিরোধ করে । 

ঈশ্বর এক কিন্তু আমরা এক হতে পরলাম না কেন?

"ঈশ্বর এক"  তবে ওই এক ঈশ্বরের সৃষ্টিতে এতো ধর্ম, মত পথ কেন? এক ইশ্বর জগত পরিচালনা করেছেন। তাহা সত্ত্বেও আস্তিকদের মধ্যেই এতো ভেদাভেদ কেন? —এই প্রশ্ন আমাদের নিজেদের করা উচিত। তবেই সঠিক মূল্যায়ন হবে। 

বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ গুলো পড়ার পর যা জেনেছি, সেটাই বলছি। কোনো ধর্মের প্রতি আমার মনে কোনো বিদ্বেষ বা ঘৃণা নেই। হাজার হাজার প্রশ্ন আছে।

ঈশ্বর আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?

ঈশ্বর আমাদের যে কারণে সৃষ্টি করেছেন? এই প্রশ্নের জবাব আমি হিন্দু গ্রন্থে পেয়েছি। হিন্দু ধর্ম অনুসারে ঈশ্বর নিজের একাকীত্ব দূর করতে নিজেকে "বহু হবো" এই ইচ্ছা বা কামনা প্রকাশ করে বহু হয়েছেন। তিনি এক থেকে বহু হয়েছেন। (দেখুন তৈত্তিরীয় উপনিষদ 3.1-6, এবং ব্রহ্ম-সূত্র 1.1.2)। সেই বহুর মধ্যে আমিও আছি, আপনিও আছেন। তিনিই আমি, তিনিই তুমি। তিনিই একমাত্র আছেন আর তিনি ছাড়া জগতে কিঞ্চিৎ মাত্র কিছুই নেই।

আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?

আল্লাহ আমাদের যে কারণে সৃষ্টি করেছেন এর জবাব মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এরকম, আল্লাহ আমাদের তাঁর ইবাদত করার জন্য, তাঁর সেবা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে শ্রেষ্টত্ব পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন (কোরআন 67/2)। এই জীবন পরকালের জীবনের পরীক্ষা। আখেতারের পর আপনি জান্নাত যাবেন না জাহান্নামে যাবেন, সেটাই পরীক্ষা করতে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।

আখেরাতেই সব শেষ

আমাদের হিন্দুদের মধ্যে, আখেরাত বলে কিছু নেই। মৃত্যুর পর জীবাত্মা নিজের ভালো মন্দ কর্মের ফল ভোগ করে। পুনঃ পুনঃ জন্ম নেয় ও সুখ দুঃখ ভোগ করে এবং এই পুনঃজন্ম দ্বারা সে ঈশ্বরকে জানতে পারে। আজকে যে নাস্তিক ঈশ্বর বিশ্বাস করে না। পুনঃজন্মের মধ্য দিয়ে সে কোন এক জন্মে আস্তিক হয়ে জন্মায়। আবার যিনি আস্তিক, ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, ধর্ম আচরণ করে, আবার খারাপ কাজ করে। সেই আস্তিক ব্যক্তিও নরক ও স্বর্গ ভোগ করে। ঈশ্বর নিজের সৃষ্ট মানুষের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করে না। তবে, যে মানুষ ঈশ্বরকে যথাযথ জেনে যায়, ইশ্বর ব্যতীত অন্য কিছুই আশা করে না। সেই ব্যক্তি এই জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে যায়।   $ads={2}

পুনর্জন্ম 

মানুষকে বারবার জন্ম নিতে হয়। কারণ, মানুষ এক জীবনে সব কিছু জানতে বা বুঝতে পারে না। এমন মানুষও আছে যারা জন্মানোর পর থেকেই হাবা-গোবা বোকা হয়ে জন্মায়। এমন দেশ আছে যেখানে মানুষের মধ্যে কোরআন, বাইবেল, গীতা সম্পর্কে কোনো ধারনাই নেই। ওরা সকলেই কি জাহান্নামে যাবে? ওদের কি মুক্তি হবে না? বিচার করে দেখুন।

ধর্ম বোধ 

হিন্দু হিসেবে ধর্ম বলতে আমরা যা শিক্ষা পেয়ে এসেছি সেটা হলোকর্তব্য কর্মকে পালন করা’। যেমন, পিতার ধর্ম, রাজার ধর্ম, দাসের ধর্ম, ক্ষত্রিয়ের ধর্ম, যথাক্রমে পিতৃধর্ম, রাজধর্ম, সেবাধর্ম, ক্ষত্রিয় ধর্ম। 

যজ্ঞ, হোম, পূজা, অর্চনা, বন্দনা ইত্যাদি এসব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে পড়ে। এগুলো ধর্ম নয়, ধর্মাচার। পাশ্চাত্য রিলিজিওন বা মজহব গুলো এই ধর্মাচারকে ধর্ম বলে মনে করেন। তাই আমাদের শাস্ত্রকে তারা তাদের মতন করে ধর্মের ব্যখ্যা করে। ধর্ম কি? এর বিষয়ে বিস্তারিত ভিডিও ও আর্টিকেল লেখা হয়েছে। 

ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য

এসব ধর্মীয় আচার আচরণের মূল উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরে সাথে একত্ব বোধ, সামাজিকতা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। ঈশ্বরে সাথে একত্ব বোধ কে  উপলব্ধি করেই আত্ম উন্নয়ন সম্ভব। রাজার বন্ধুই রাজার পাশে বসে, বন্ধুর কথাই রাজা মানে। আমাদের ধর্ম সেই ঈশ্বরের সঙ্গে নিজের এক সম্পর্ক স্থাপন করতে পূজা, অর্চনা, বন্দনার স্মরণ নেয়। আসলে তো, "আমরা সবাই রাজা, আমাদেরই রাজার রাজত্বে। নইলে মোরা রাজার সাথে মিলবো কি শর্তে? " 

ইসলামকে ধর্ম বলা সুসংগত নয় কেন?

ইসলাম শব্দটি আরবি। যার অর্থ হলো (আল্লাহর প্রতি) সম্পূর্ণ সমর্পন। আল্লাহের বাণী,  যা কোরানে বর্ণিত আছে সেটা পালন করা, এক আল্লাহ এবং তাঁর নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করা। ইসলামের ফরজ। যিনি আল্লাহকে মানেন অথচ নবীকে মানেন না তারা ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের, তারা বিপথগামী। ওই বিপথগামীর নরকের ইন্ধন।

এদের বিপথে চালিত করে শয়তান নামক আল্লাহরই তৈরী একটি ফরিশতা। আল্লাহ শয়তানের দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করে। সেটাই নির্ভর করে পরকালে মানুষ কোথাও যাবে। 

প্রকৃত অর্থে এই আল্লাহ মুসলমানদের কোন ধর্ম দেননি। তিনি একটি কিতাব দিয়েছেন। এই কিতাবের নাম আল কোরআন। যার মধ্যে আছে, আদম থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা। 

ওই কিতাবে আল্লাহ দিয়েছেন পরকালের ভয় ও আল্লাহর বিভিন্ন সুনাম। বিচারের দিনে, আল্লাহ সকল মৃতদের পুনরুজ্জীবিত করবে। সেদিন আল্লাহকে জবাব দিতে হবে। সেদিন তিনি নিজের আসল রূপ মুসলমানদের দেখাবেন। 

যিনি নিজেকে মুসলিম বলেন, অথচ মুসলিমের মতন আচরণ করেন না। আল্লাহ সেদিন তাকে অস্বীকার করবে। কারণ তারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে। 

আল্লাহ কোন ধর্ম দেননি — প্রমাণ কি?

তিনি যদি ধর্ম দিতেন তাহলে কিভাবে নামাজ পড়তে হবে, কিভাবে রোজা রাখতে হবে, কিভাবে হজ করতে হবে, এই সব কিছুর নিয়ম তিনি খুব সহজেই আল কোরানে বলে দিতে পারতেন। কিন্তু কোনো মুসলিম এগুলো কোরআন থেকে দেখতে পারবেন না। কারণ এসব আল্লাহর তরফ থেকে আসেনি। 

ইহুদিরা যেভাবে আযান দেয়, মুসলমানরাও সেভাবে আযান দেয়। আরবের সংস্কৃতিতে ইবাদতের যে পদ্ধতিগুলো ছিল সেগুলোই আজকের মুসলমানরা সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করছে। 

আল্লাহ বলেছেন "আমি বিস্তারিত ব্যখা সহ কোরান প্রেরন করেছি, উহাতে আমি কোন কিছু বলতে বাদ রাখি নাই।" 

وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

—আর মানুষের জন্য তাঁর আয়াত সমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। আল-বাকারাহ, ২/২২১

এখন প্রশ্ন হতে পারে এই সব নিয়ম কোরানে না পাওয়া গেলে ইসলাম ধর্ম কি তবে মানুষ নির্মিত?

কোরানের এই বাক্যগুলি মেনে নিলে কোরান ও আল্লাহর মিথ্যা প্রমাণ হয়। তাই অনেকেই বলেন ইসলাম মানুষ নির্মিত একটি সামাজিক ব্যবস্থা এবং আরব্য সাম্রাজ্যবাদ। কোরআন রচনা করা হয়েছে বহু সাহাবী ও তৎকালীন অভিলেখের সংকলনের দ্বারা এবং বহু অভিলেখ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই, ভুল ও সঠিকের কোনো তুলনা করার জায়গায়ও নেই। যদি আপনি কুরআনকে মিথ্যা বলেন সেটাও সত্য, আবার সত্য বলেন, সেটাও সত্য। তাই ইসলাম শ্বাশত বা সদাতন নয়। 

ইসলাম শাশ্বত নয় 

শাশ্বত তাকেই বলা হয় যাকে কোনো কালেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, বা যা কোনো একটি ঘটনার ওপর নির্দিষ্ট থাকে না, এটি সর্বকালীন হয়।  কোরান মূলত মুহাম্মদ ও তার জীবনের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। হযরত মুহাম্মদ ছাড়া কোরআনের আয়াত কোথা থেকে আসছে কেউ জানতে পারতো না। 

জিব্রাইলকে তিনি ছাড়া কেউ দেখতে পেতেন না। তার ওপর বিপদ আসলে নতুন নতুন আয়াত নাজিল হয়ে যেত। অনেক ক্ষেত্রে একটি আয়াত অপরটির বিরোধী। সকল মুসলমানের জন্য যেটা হারাম, সেটাই হযরত মুহাম্মদ এর জন্য হালাল হয়ে যেত। নবী আলেম, ওলামাদের জন্য VIP ব্যাবস্থা এবং যারা নাস্তিক, আল্লাহ ব্যতীত অন্য ঈশ্বরের উপাসনা করে, মূর্তি পূজা করে, শির্ক করে। তারা হলো নরকের ইন্ধন।

এর পর আসে আল্লাহর চ্যালেঞ্জ। মুসলমানরা কোরআন সুরা আত্ব তূর (৫২) আয়াত সংখ্যা ৩৪  উল্লেখ করে বলেন। যদি কোরআন মানুষ নির্মিত হয় তবে একটা আয়াত লিখে দেখান।

একটা আয়াত রচনা করা মানুষের পক্ষে মোটেও সাধ্যাতীত নয়: 

"অতএব, তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে তার অনুরূপ বাণী নিয়ে আসুক।" (আল-বায়ান)

সূরা আত্ব তূর (৫২) আয়াত ৩৪

সারা দুনিয়ার মানুষকে এ আয়াতের মাধ্যমে সর্বপ্রথম এ চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। মুসলমানদের মত অনুসারে এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী নয়, বরং কোনো মানুষের পক্ষে এরকম বাণী রচনা করা সাধ্যাতীত। যা শব্দ-ছন্দে, অলৌকিকতা, ভাষালঙ্কার, সুন্দর উপস্থাপনা, বিরল বাকপদ্ধতি, তথ্য পরিবেশন ও সমস্যা সমাধানের দিক দিয়ে তার প্রতিদ্বনিদ্বতা করতে পারে।

এর থেকে হাস্যকর কথা আর কি হতে পারে ? আরবি ভাষায় এক একটি অক্ষর যেমন - আলিফ, জিম, কাফ ইত্যাদি গুলো আমাদের দেবনাগরী সংস্কৃত ভাষার অক্ষর যেমন : আ, ল, ই, ক, খ, গ এর মতো মুক্ত ও বিজ্ঞানিক নয়। আলিফ এই শব্দে ৫ টি স্বর বর্ন (আ,অ,ই,অ ) ও দুইটি ব্যঞ্জনবর্ন (ল,ফ্) ব্যবহার করতে হয়েছে।  কারন তাদের বর্ণমালায় স্বরবর্ন নেই। তারা  তাই আরবি আলিফ (আ+ল+অ+ই+ ফ্+ অ ) সতন্ত্র কোনো বর্ন বলে গণ্য নয়।  এটি একটি আস্ত শব্দ। আমাদের ক, চ, ট, ত, প, বর্গ শব্দ গুলো সতন্ত্র। এমনকি  ক এবং ক়  একই দেখতে হলেও উচ্চারণ গত দিক থেকে আলাদা। বৈদিক ব্যাকরণ এতটা বৈজ্ঞান যা আজও স্ট্যান্ডফোর্ড , অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে গবেষণা করা হয়। কম্পিউটারের স্পিচ রিকগনিশন  সফটওয়্যার তৈরি করতে এই সংস্কৃত ব্যাকরণের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। 

তাদেরও আমাদের ভাষা ও লিপির তফাৎ একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিই। যেমন সাগরিকা ( ساجاريكا ) আরবিতে এই শব্দটি লিখ্তের 'সিন্' (س) ও 'আলিফ' (ا)  লিখলে সা হয়, এরপর  জিম, আলিফ মিলিত হয়ে  গ  উচ্চারণ হয় ,  এরপর  রা (ر), য়া (ي), কাফ (ك), আলিফ (ا) লিখতে হয়। এরকম একটি ভাষায় ভাষালঙ্কার, সুন্দর উপস্থাপনা, বিরল বাকপদ্ধতি তো দূরে থাক।  আমাদের সংস্কৃত ভাষার কাছাকাছিও নয়। যাই হোক তাঁদের ভাষা নিয়ে আমাদের বলার দরকার নাই। 

সংস্কৃত ভারতের এমন একটি সুন্দর ভাষা যেখানে পণ্ডিত এবং কবি দ্বারা আশ্চর্যজনকভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এই শ্লোকগুলি পাঠ করার সময় রামায়ণের কথা বলে কিন্তু যখন পিছন থেকে পাঠ করা হয় তখন মহাভারতের কথা বলে। সংস্কৃত সাহিত্যের এক বিস্ময়!

तं भूसुतामुक्तिमुदारहासं वन्दे यतो भव्यभवम् दयाश्रीः
श्रीयादवं भव्यभतोयदेवं संहारदामुक्तिमुतासुभूतं ॥

বাংলায় উচ্চারণ 
তং ভূসুতা মুক্তি মুদারহংস বন্দে য়তো ভব্যভবম্দয়াশ্রী। 
শ্রীযাদবং ভব্যভতোদেবন সংহারদামু ক্তিমু তাসুভূ তং॥

কোরানের মতো একটা আয়াত রচনা করা মানুষের পক্ষে মোটেও সাধ্যাতীত নয়। একজন কবি তাঁর ভাব ও শব্দ চয়ন,  দ্বারা  খুব সহজেই সেটা করতে পারবে। তাছাড়া, কোরআনে তেমন কিছুই নেই যাকে সুন্দর বলা যায়। আমি তেমন কিছুই পাইনি।

এবার মুসলমানদের চ্যালেঞ্জ করছি ,"আল্লাহর প্রচলিত কোরানে কি এমন একটি আয়াত দেখতে পারবেন যেটি উভয় দিক থেকেই অর্থ বহন করে? " এটা সম্ভব না। কারণ, কোনো সৃষ্টি একবার মাত্রই সম্ভব। অন্য কেউ তাহা চেষ্টা করলে সেটা প্রথমটার অনুকরণ বা COPY বলা হবে। 

পাশ্চাত্য তথাকথিত ধর্ম গুলো মানুষের ক্ষমতাকে ঈশ্বর, দেবতা, অসুরের থেকে ছোটো করে দেখেছে। আর যেখানেই কোন মানুষ, বা সাধারণ মানুষের থেকে উর্ধ্বে উঠে নিজের ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। তাকে হয়, শয়তানের বাচ্চা বলা হয়েছে, নতুবা ঈশ্বর বিরোধী বলে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয়েছে। যীশু খ্রীষ্টের কথা আমরা সবাই জানি। গ্যালিলিও গ্যালিলির কথা তো সবাই জানে।

পাশ্চাত্য সভ্যতারা ধর্মের আড়ালে নিজেদের রাজতন্ত্র কায়েম করে নিজ নিজ স্বার্থ সিদ্ধি করেছে। তাই তাঁদের মধ্যে কোনো ধর্ম নিয়ে সুরাহা হয়নি। তাঁরা মূখ বন্ধু করার জন্য একে অপরের মুন্ড ছেদন করেছে। 

আমাদের দেশে মানুষকেও দেবতা হিসেবে পূজা করা  শিখিয়েছে। ধর্মীয় দ্বন্ধ থাকলেও শাস্ত্র নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয়েছে। ধর্মের অপব্যাখ্যাও হয়েছে, কিন্তু আমরা এসব কিছুকে গ্রহন করে নিজেদের শুধরে নিতে শিখেছি। 

আপনি ভেবে দেখুন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এই আল্লাহ বা ঈশ্বর তো অনেক কিছুই করে না। কারন, আমাদের কর্মই স্বকার্যকরণক্ষম (মনু ১/১৬) প্রকৃতির বিধান দ্বারা আমাদের ফল দেয়। আল্লাহ বা গড কি করে জানি না। 

মুহাম্মদ (সা) সকল অত্যাচারকে মুখ বুজে সহ্য করতেন।

একবার এক মৌলবীর কাছে একটা গল্প শুনে ছিলাম। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতটা উদার ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি তাঁর ওপর সকল অত্যাচারকে মুখ বুজে সহ্য করতেন। 

একবার নবীজী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় এক ইহুদী নারী নবি করিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তার মাথায় বাড়ীর আবর্জনা ফেলে দেয়। নবি কিছু না বলেই চলে যায়। এভাবেই প্রায়ই ওই ইহুদী মহিলা নবীজীর অপমান করত। একদিন, নবীজী সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলেন। সেদিন ওই বুড়ি মহিলাটি আর তাঁর মাথায় আবর্জনা ফেলেননি। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ওই বৃদ্ধ মহিলার বাড়ী গিয়ে জানতে পারেন, সেই মহিলা অসুস্থ্য। তাঁর আপনজন কেউ নেই। তাই নবীজীই তাঁর সেবা শুশ্রূষা করেন। সেবা পেয়ে তিনি সুস্থ্য হয়ে যান এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

এরকমই ঘটনা স্বামী বিবেকানন্দর বিষয়ে আছে। যেখানে ভগবান স্বামীজীকে এক হিন্দু পণ্ডিত ঈর্ষা বসত গালি গালাজ ও অপদস্ত করতো। একদিন বৃদ্ধ অসুস্থ্য হলে, স্বামীজি তার সেবা করে সুস্থ করে ছিলেন এবং ওই বৃদ্ধ স্বামীজির কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে সুপথে চালিত হয়েছিল। এই ঘটনা 'সবার স্বামীজি' নামক বইতে পেয়ে যাবেন।

হযরত মুহাম্মদের গল্পটি এই গল্পের অনুকরণ। কোনো হাদীসে ওই ঘটনার উল্লেখ নেই। যদি থেকে থাকে তবে সেটা আমার অজ্ঞাত। 

হজরতের এই সুন্দর একটা গল্প শুনে আমি তাঁর প্রতি ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। বুক ভারি হয়ে চোখ থেকে অশ্রু ধারা নির্গত হয়েছিল। আমি ভাবতাম সত্যিই কি মহান ব্যক্তিত্ব! কিন্তু যখন জানলাম এই গল্প মিথ্যা ও বানোয়াট। মুসলিমদের কথার প্রতি আমার ভরসা উঠে গেল।

ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান 

আমি তখন খুবই ছোটো। ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান কম ছিলো। তবুও অনুভূতি গুলো প্রবল ছিলো। কলেজে পড়া কালীন আমি কিপড মোবাইলে কোরআন পড়তে শুরু করি।  তখন স্যামসাংয়ের মোবাইলের চল ছিলো। আমার মোবাইলে আমি জাভা অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে কোরআন পড়তাম। ওইটুকু মোবাইলে ছোট্ট একটি application খুব ভালো চলতো না। কয়েকটা সূরার পড় আর কিছুই থাকতো না। তাই কুরআন কেনার সখ জাগে।

তখন এতো কিছু বুঝতাম না। ভালই লাগতো। আল্লাহ ও ঈশ্বর এক মনে করতাম। আমার কাছ একটা পকেট বাইবেল ছিলো। সেটা পড়তাম। গীতাপ্রেসের গীতা তো ঠাকুর ঘিরেই ছিলো। সেটাকে মা রোজ ফুল দিয়ে পুজো করতো। আমি চুপি চুপি গিয়ে পড়তাম। সব যেন একই কথা বলতে চায় এইরকম মনে হতো। কিন্তূ আমার ধারনার বাইরে সত্য আদৌ তা ছিলো না। 

ধীরে ধীরে বুঝতে শিখালাম এগুলো আসলেই মিথ্যাচারে ভরপুর। ইন্টারনেট সোশ্যাল মিডিয়া বলতে তখন অরকুট ছিলো। আজকের Facebook এর মতো সেটি ছিলো বহুল প্রচলিত।  

এরপর YouTube এলো। তখন বিভিন্ন খবরের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন দর্শন সম্পর্কে জানতে পারলাম। ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে আমার মোহ ভঙ্গ হলো।

এরপর মোহ ভঙ্গ হাওয়ার আগে আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করেছিলাম ইসলাম সম্পর্কে ভালো মনোভাব রাখার। কিন্তু পারলাম না। নিত্য দিনের হিংসা, হানাহানি, সন্ত্রাসবাদ যার সঙ্গে ইসলামের নাম জড়িয়ে থাকে। সেটা আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল।

এমনকি একজন হিন্দু হয়ে যখন আমি ইসলামকে তাঁর স্বরূপে জানতে মুসলিমদের কাছে প্রশ্ন করতে শুরু করি, উল্টে তারা আমার ধর্মেরই বিভিন্ন দোষ গুলো গোনাতে শুরু করে। তাই ইসলামের প্রতি আরেকটু ভরসা কম হোলো। এরপর, 

আমি আকাশ থেকে পড়লাম।

একদিন আমি এক্স মুসলিম আসিফ মহিউদ্দিনের লাইভ দেখলাম, ও তসলিমা নাসরিনের লেখা গুলো পড়তে শুরু করলাম। ইসলামে প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেল। আমি শুধু কোরআন পড়েছিলাম এবং বিবাদিত আয়াত গুলোর ব্যাখ্যা গুলো মুসলিমদের মুখে শুনেছিলাম। কিন্তু আমি যখন হাদীস গুলো নিজে বুঝে পড়তে শুরু করলাম। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। সেই সব থেকে 

আল্লাহর বাণী হজম করাও কঠিন। 

সন্দেহ হোলো, এই কোরআন শরীফ সত্যিই কি আল্লাহর বাণী, যা জিবরাঈলের মারফত নবি করিম সাললাল্লাহু ইলাহী ওয়াসাল্লামের নিকট নাজিল হয়েছিল হেরা নামক গুফায়? 

সেখানে, হজরত মুহম্মদকে আল্লাহর  ফরিশতা জিব্রাইল নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু কে কোরানের পরিচয় করিয়ে ছিলেন।

এই গ্রন্থে এমন সব কথা  আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেছেন যা আমি হজম করতে পারলাম না। সেই সব হজম করাও কঠিন। এই নমুনা।

33 নম্বর সূরার 51 নম্বর আয়াত:

"আপনি, [হে মুহাম্মাদ], তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বাদ দিতে পারেন অথবা যাকে ইচ্ছা নিজের কাছে নিতে পারেন। আর যাদের থেকে আপনি [সাময়িকভাবে] বিচ্ছেদ করেছিলেন তাদের [স্ত্রীদের] থেকে আপনি যা চান - [তাকে ফিরিয়ে দিতে] আপনার কোন দোষ নেই। এটি আরও উপযুক্ত যে তারা [নবীর স্ত্রীরা] সন্তুষ্ট থাকবে এবং শোক করবে না এবং আপনি তাদের যা দিয়েছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট থাকবে - সেগুলি সবই [নবীর স্ত্রীরা]। আর আল্লাহ জানেন তোমাদের অন্তরে কি আছে। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সহনশীল।"

পড়লে খুবই স্বাভাবিক ও সাধারণ মনে হয়। কিন্তু কোরআনের আয়াত গুলো বুঝতে হলে হাদিস গুলো অনুসরণ করতে হয়।  এই আয়াতের ব্যাখ্যা সহি বুখারী ও সহি মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। 

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যে সমস্ত নারীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজেদেরকে দান করত এবং বিয়ে করত, আমি তাদের প্রতি ঈর্ষাণ্বিত হতাম। আমি বলতাম, একজন মহিলা কি করে নিজেকে দান করতে পারে? কিন্তু যখন এ আয়াত নাযিল হল, তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, আমি দেখছি আপনার রব আপনার ইচ্ছা অনুসারেই তা করেছেন ৷ [বুখারী: ৫১১৩; মুসলিম: ১৪৬৪]

অর্থাৎ, যা কিছু ইসলামে অন্যান্য মুসলিমদের জন্য হারাম করা ছিলো। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তাহা হালাল করা হয়েছে। 

নবির অন্যান্য স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের এই একাধিক নারীর সঙ্গে মিলন নিয়ে ঈর্শিত হতেন। কিন্তু যখন তিনি জানতে পালেন যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের জন্য বিশেষ ছাড়, তখন তার অন্তরের চিন্তা ও দুঃখ কমে গেল এবং তাঁর অন্তর পবিত্র হয়ে গেল। ধন্য এমন সরলতা। 

সত্যিই মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত সরল মনের মানুষ ছিলেন। শুধু তাই না। এই একই আদেশ নবীর অন্যান্য স্ত্রী দের জন্যও প্রযোজ্য হয়।

আপনি যদি কারো স্ত্রী হন। আপনি যদি আপনার স্বামীকে অন্য স্ত্রীদের সঙ্গে দেখেন। আপনার কেমন মনে হবে? তিনি যত বড়ই ঈশ্বরের সেবক হোক না কেন? আপনি কি সেই ইস্বরকে প্রশ্ন করবেন, তিনি নিজের ভক্তকে দিয়ে এই ধষা, পঁচা, মাংসের নারী শরীর ভোগ করার বৈধতা দিচ্ছেন? তাই মনে প্রশ্ন তো জাগবেই। 

আবার বলে রাখি এগুলো আমার কথা নয়। এগুলো নাস্তিকদের কথা। আমি সেগুলো দেখার পর সংশয়বাদী হয়েছি। এরপরের বিষয় হলো 

ছেলের বিধবা বউকে বিবাহ বৈধ।

এরপরে  ওই ৩৩ নম্বর সূরার ৩৭ নম্বর আয়াতে পৌছে  আরোও অবাক হলাম। কারণ সেখানে আল্লাহ তাঁর নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পোষ্য পুত্রের তালাক দেওয়া বিধবা স্ত্রীকেও নবির জন্য বিবাহ বৈধ করে দিলেন। কারণ যুদ্ধে তাঁর স্বামী নিহত হয়েছেন। 

আপনি একবার ওই নারীর কথা ভাবেন। উনি তো নিজের স্বামীর প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। আর যাকে তিনি শশুর ভাবতেন। তাঁর সঙ্গে বিবাহ বৈধ করলেন স্বয়ং আল্লাহ।

কি এমন বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে ছেলের বিধবা বউকে বিবাহ বৈধ করতে হলো? শশুর ও বৌমার একটা সামাজিক মর্যাদা তো আমাদের সমাজে আছে? যাঁকে তুমি এতদিন ছেলের বৌয়ের মতো দেখেছ, তাঁকে কিভাবে তুমি নিজের করবে? এই সকল বিচার করেই আমি অবাক হলাম। এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যাখ্যাই আমার দ্বিধা দূর করতে পারিনি।  কেউ যদি এর জবাব দিতে পারেন কৃতজ্ঞ থাকবো। 

এই সব দেখার ও বোঝার পর সেই পরম বুদ্ধিমান ব্যাক্তি আর আল্লাহ ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না। কারণ আল্লাহর দূত জিব্রাইল শুধুমাত্র নবীকেই দেখা দিতেন, তাকেই ওহী প্রদান করতেন। অন্য কোনো সাক্ষী বা প্রমাণ ছিলো না। নবীর আদেশ শেষ আদেশ। 

হিন্দু হিসেবে, এমন অদৃশ্য অযুক্তিক দেবতার প্রতি বিশ্বাস কিভাবে সম্ভব? এটা আমার বুদ্ধিতে খাটে না। হিন্দু হিসেবে আমার এটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিলো। কারণ আমার ঈশ্বর তো জগতের সব যায়গায় আছেন। পাথরের মূর্তিতেও তাঁর দর্শন করি, পশুর মধ্যেও দর্শন করি। (ঈশ্বর তত্ত্ব দ্রষ্টব্য)

এই মল, মূত্র, হাড়, মজ্জার দেহ কি শুধুই ভোগের জন্য? একজন নবীকে এই বিষয়ে ছাড় দেওয়া কি কোনো দিব্য সত্ত্বার কাজ হতে পারে? এটাও কি সম্ভব? তিনি তো নবী। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার এই কৃতিত্ব কে ভালো চোখে দেখবে না। তার ওপর প্রশ্ন উঠবে। এটাও তার জানা উচিত ছিল।

তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্যে যে যোগ্য ছিলো তার সাথেই বিবাহ দিতে পারতেন?  তা ছাড়া ওই বিধবা নারীকে তাঁর সমাজে দ্বিতীয়বার গ্রহন করবে না  এমন কোনো বাধা বদ্ধকতাও ছিলো না। কিন্তু এটা আল্লাহর তরফ থেকে আল্লাহরই আদেশ ছিল। হয়তো সে কারণেই তিনি তেমনটি করেননি।

হতেই পারে আমারই বোঝার ভূল

এই কথার রহস্য আমি আমার এক পরিচিত এক মুসলীম দাদার কাছে জানার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। হতে পারে আমার দৃষ্টিভঙ্গির কোনো ত্রুটি থাকতে পারে। হয়তো আমার বোঝার ভূল। তাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি এই আরোপ গুলোকে অস্বীকার করলেন। কারণ তিনিও তেমন কিছই জানতেন না। পরবর্তী সময়ে তিনি সব দেখে শুনে বললেন "আমি তো ধর্ম নিয়ে অতো কিছু জানি না"। যারা আলেম ওলামা আছে, তাদেরকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। সেই সুযোগ আমি পাইনি কোনো আলেম আমার হাতের নাগালে নেই।

“আমারই বোঝার ভূল” —এই ভেবে সেই সন্ধান প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে লাগলাম। সেই খোঁজের যাত্রায় আমি আরেকটা নতুন জিনিসও জানতে পারলাম। সেটি হলো, কোরআন শরীফ হজরত মুহাম্মদের জীবনকালে সংকলিতই হয়নি। তাই 

গোড়ায় গলত : 20 বছর পর কুরআন গ্রন্থ আকারে সংকলন

তার মৃত্যুর পর প্রায় 20 বছর পর খন্ড খন্ড আয়াত গুলো একত্রিত করে সূরা ও আয়াতে রূপান্তরিত করা হয়েছে।  উসমান ইবনে আফফান মুসলিম জাতির জন্য আল কুরআনকে গ্রন্থ আকারে সংকলন করেন। অর্থাৎ বুঝলাম গোড়ায় গলত। যাই হোক, কুরআনের অথেন্টিটিসিটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমার মতে এই কোরআন মানুষ নির্মিত একটি পুস্তক। 

এরপর আমি ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে শুরু করলাম এবং বুঝতে শুরু করলাম যে এটা আরব্য সাম্রাজ্যবাদ ছাড়া কিছুই নয়। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন যুদ্ধে এই কোরআন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

এই ধর্মের খলিফা নির্বাচনের বিবাদে, সিয়া ও সুন্নি মুসলিম বিবাদ হয়েছিল হযরত মুহাম্মদের পরবর্তী ওয়ারিশের বিতর্ককে কেন্দ্র করে এবং সেই সময় নবির পরিবারের লোক ও পরিচিতিরাই পরষ্পরের হত্যা করেছেন। বুঝলাম সেটা আর যাই হোক, এটা ধর্ম নয়। 

পশুর মত কামড়াকামড়ি খামচা খামচি আদর্শ ধর্ম হতে পারে না। কোনো দার্শনিক, আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এই বইয়ে নেই। যেখানে আমাদের ঈশ্বর ভব ভয় মুক্ত করে সেখানে আল্লাহ ভয় দেখায়। যেখানে আমাদের ঈশ্বর ভব মোহ মুক্ত করে সেখানে আল্লাহ জান্নাতের লোভ দেখায়। তাই আমার দৃষ্টিতে ইসলাম আদর্শ ধর্ম মনে হয় না।

নবীজীর স্ত্রীর  কবর এখন পাবলিক টয়লেট 

আমি কেন বলছি ইসলাম আরব্য সাম্রাজ্যবাদ? এর পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। আজ আরবের অবস্থা দেখুন। সেখানে সবকিছুই হচ্ছে যা হওয়া উচিত নয়। 

বেশ কিছুদিন আগে একটা খবর জানাতে পারি আরবে নবীজীর স্ত্রীর যে কবর ছিলো, সেটি ভেঙ্গে পাবলিক টয়লেট গড়েছে আরব সরকার। 

এখানে ভারতে একজন বিদেশী আক্রান্তকারীর তৈরী বাবরি মসজিদ নিয়ে মুসলমানরা হিন্দুদের ভূমিতেই হিন্দুদেরকে ভাবাবেগ আহত করার আরোপ করছে।  ওদিকে নবীজীর নিজের মাটিতে, তাঁর স্ত্রীর যে কবর পাবলিক টয়লেট হয়ে গেল সেটা কেউ জানতেও পারলো না। কেউ প্রশ্নও করলো না। সত্যি অবিশ্বাস!

কোন বিরোধ কোন প্রতিরোধ নেই। কোন ধরনা হলো না। মুখ দিয়ে একটা কেউ টু-শব্দ বের করল না।  কারণ আমাদের দেশের মুসলিমরা আরবদের মানসিক দাস। 

আরব দেশ গুলো জাকাত, হজ, ইত্যাদির মাধম্যে অর্থ উপার্জন করে। আর আমাদের মতো গরীব মানসিকতার লোকেরা সেই শেখদের পদলেহন করতে যায়। 

পরিশিষ্ট

ওয়াহাবী মুসলিম অন্যের উপাস্য নিয়ে উপহাস, অপমান করে, কিন্তু তাদের নবীর নামে কোনো কিছু ভূল বললেই অমুসলিমদের গর্দান উড়ে যায়। এটাই দুর্বলতা ও মিথ্যাবাদীর পরিচয়। 

আমি অজ্ঞ। অজ্ঞদের ভুল ক্ষমা করতে হয়, অথবা তাদের সন্মান করতে নেই। কিন্তু ইসলামের অনুসারীরা মাথা কেটে ফেলতে আদেশ দেয়। চার্লি হেব্দ, নূপুর শর্মার কথা। কেই না জানে। আমি শুধু বর্ননা করেছি আমি কিভাবে  ইসলামের দরজা থেকে ফিরে এসেছি এবং কেন। আমি আজো জানতে ইচ্ছুক  আমি কোথায় ভুল বলেছি বা মিথ্যা বলেছি।  আমি তো সেটাই বলেছি যেটা আমাদের দেশের কনভার্টেড মুসলমানরা বলে থাকেন।  

এই ভেবেই আমি ইসলামের দরজা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। কারণ আমার দেশের নিজেস্ব ধর্ম সংষ্কৃতি ও বিশাল দর্শন আছে এবং সেটা জানতে জানতেই শেষ করতে পারবো কি না জানি না। যতটুকু জানতে পেরেছি। সেটাই আমার গৌরব বৃদ্ধি করেছে।

এক জন্মে হবে না, তাই আমি বার বার হিন্দু হয়েই জন্মাব এবং হিন্দু হয়েই মরবো। একদিন সর্বজ্ঞ হয়ে সেই সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময় ইশ্বরকে প্রাপ্ত হবো। ইহা আমার আস্থা ও বিশ্বাস।

4 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন
InterServer Web Hosting and VPS

Copying content is illegal

Please refrain from copying content.