সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য ঘিরে বিতর্কে দেশজুড়ে উত্তাল হিন্দু সমাজ

Chief Justice of India – CJI বি. আর. গাভাইকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে।  তিনি খিল্লি করে অপমান করলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা বিষ্ণুর। দেশ জুড়ে উত্তাল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।   কি ঘটেছে? আসুন বিস্তারিত জেনে নেই।


সম্প্রতি খাজুরাহো মন্দির সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে তিনি এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা অনেক হিন্দুর কাছে অপমানজনক ও অবমাননাকর । মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে হিন্দু সংগঠন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রধান বিচারপতির নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি তুলেছে।

ঘটনার সূচনা

ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশের বিখ্যাত খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্সকে ঘিরে। এক আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন, যেখানে বলা হয়, খাজুরাহোর একটি মন্দিরে সাত ফুট উচ্চতার বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংস হয়েছে এবং সেটিকে পুনর্নির্মাণ ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেওয়া হোক। আবেদনকারী যুক্তি দেন যে, এটি কেবল একটি ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, বরং ভারতের ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষার বিষয়।

এই মামলার শুনানি চলাকালীনই প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই মন্তব্য করেন, মামলাটি মূলত একটি “Publicity Interest Litigation”—অর্থাৎ, আদালতের সময় নষ্ট করে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছে। এরপর তিনি আবেদনকারীকে ব্যঙ্গ করে বলেন, “তোমার দেবতাকে জিজ্ঞেস করো” (Go ask your deity)।

অভিযোগ আরও উঠেছে যে, বিচারপতি গাভাই মজা করে বলেন—যদি বিষ্ণুর কাছে ফল না পাও, তবে শিবের কাছে যেতে পারো। এই মন্তব্যই পরবর্তীতে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।


হিন্দু সমাজের প্রতিক্রিয়া

প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যকে অনেকেই “হিন্দু দেবদেবীর প্রতি অবমাননা” বলে দাবি করেছেন। বিভিন্ন সংগঠন মনে করছে, ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি এমন অবস্থানে বসে ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিদ্রূপ করলে তা কোটি কোটি ভক্তের অনুভূতিতে আঘাত করে।

  • হিন্দু সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
  • সংগঠনগুলো বলছে, বিচারপতির মন্তব্য অশোভন, অযথাযথ এবং অসাংবিধানিক
  • Sanatan Katha Vachak Samanvay Parishad নামে একটি সংগঠন ঘোষণা করেছে, আগামী ২ অক্টোবর তারা সুপ্রিম কোর্টের সামনে বৃহৎ বিক্ষোভ মিছিল করবে।

এছাড়া আরও কয়েকটি হিন্দু সংগঠন প্রধান বিচারপতির অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যদি একই ধরনের মন্তব্য অন্য ধর্ম নিয়ে করা হত, তাহলে কি পরিস্থিতি এত শান্ত থাকত?


প্রধান বিচারপতির অবস্থান

বিতর্ক তীব্রতর হতেই প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন—

  • তাঁর মন্তব্যকে সামাজিক মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • তিনি সবসময়ই সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল
  • মন্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল আদালতের কার্যক্রমের গতি বজায় রাখা এবং অযথা মামলার প্রবাহ রোধ করা

তিনি আরও বলেন, আদালতের রেকর্ডে মন্তব্যটি যেমন ছিল, সেটি নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।


বিশেষজ্ঞদের মত

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচারপতিদের মন্তব্য অনেক সময় কোর্টরুমে “oral observation” হিসেবে আসে, যা লিখিত রায়ে নথিভুক্ত হয় না। তবে যেহেতু মন্তব্যটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, তাই সেটির রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিঘাত তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসাবে গাভাইয়ের মন্তব্যকে অতিরিক্ত গুরুত্ব বহনকারী হিসেবে দেখা হয়। তাই, এমনকি অনিচ্ছাকৃত হলেও, তাঁর বক্তব্য জনগণের কাছে হালকাভাবে নেওয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি অতি-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণও হতে পারে। তাঁদের মতে, বিচারপতি কেবল মামলাটিকে তেমন গুরুতর না ভেবেই ঠাট্টা-রসিকতার মাধ্যমে আবেদনকারীকে থামাতে চেয়েছিলেন।


রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিতর্ক ঘিরে কয়েকটি রাজনৈতিক দলও সরব হয়েছে। বিজেপি ঘনিষ্ঠ কিছু সংগঠন বিচারপতির মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে কিছু বিরোধী দল বলছে, সরকার এ বিষয়ে দ্বৈত নীতি নিচ্ছে—কারণ মুসলিম বা খ্রিস্টান সম্প্রদায় নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য হলে সরকারের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হত।

তবে রাজনৈতিক মূলধারায় এখনও পর্যন্ত কোনো দল সরাসরি প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি জানায়নি।


সামাজিক প্রভাব

এই ঘটনা আদালতের উপর মানুষের বিশ্বাসের প্রশ্নকে নতুন করে সামনে এনেছে। একদিকে সুপ্রিম কোর্ট হলো দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়, যেখানে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় কোটি মানুষ ভরসা রাখে। অন্যদিকে বিচারপতির মন্তব্য যদি কোনো সম্প্রদায়কে আঘাত করে, তবে সেটি জনগণের মনে অবিশ্বাসও সৃষ্টি করতে পারে।

সামাজিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতে ধর্মীয় অনুভূতি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। তাই, যেকোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তির মন্তব্যের আগে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন।


উপসংহার

প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের মন্তব্য নিঃসন্দেহে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বড়সড় আলোড়ন তুলেছে। একপক্ষ বলছে, এটি বিচারপতির ব্যক্তিগত রসিকতা, যার অতিরঞ্জিত ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। অন্যপক্ষ বলছে, এটি হিন্দু ধর্ম ও ভক্তদের প্রতি সরাসরি অপমান

সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি হিসাবে তাঁর মন্তব্যের তাৎপর্য অনেক বেশি। তাই এই বিতর্ক থামাতে তিনি ক্ষমা চাইবেন কিনা, কিংবা আদালত থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা আসবে কিনা—সেদিকেই এখন সকলের নজর।

ভারত এক বহুধর্মী ও বহুসাংস্কৃতিক দেশ। তাই ন্যায়বিচারের পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

Welcome to our website!

নবীনতর পূর্বতন

Advertisement