Headlines
Loading...

কাগজে কলমে যে সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতা, সমান অধিকারের কথা বলে, বাস্তবে সেই  ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে এসেছে অসাংবিধানিক ভাবে। হ্যা, আমিও অবাক হয়েছিলাম। আরো অবাক হবেন এটা জেনে যে এই ধর্মনিরপেক্ষতা পাশ্চাত্য ধর্ম নিরপেক্ষতা এক নয়। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হলেও আসলে এটি পন্থ নিরপেক্ষ দেশের কথা বলা হয়েছে।

হিন্দু প্রধান দেশ বলেই ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা জীবিত আছে। বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের কি অত্যাচার হচ্ছে, সেটা চোখে দেখার মতো না।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ হলো ভারত। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি ধর্ম নিরপেক্ষ ও সার্বভৌম স্বাধীন দেশ। অর্থাৎ আমাদের দেশের শাসন কোনো ধর্মীয় আইন আইন দ্বারা পরিচালিত হবে না। সরকার বা সরকারি সংগঠন কোনো একক ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য করবে না। সবার প্রতি সমান দৃষ্টি রাখতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তাহা দেখা যায় না।

ভারতে বসবাসকারী অধিকাংশই হিন্দু। তারপর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগণ মুসলিম। এরপর শিখ, জৈন, বুদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক আছে। পূর্ব প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিং নিজে শিখ হয়ে রাজনৈতিক ভোট ব্যাংক সংগ্রহের জন্য মুসলিম দের উদ্দেশ্যে বলেন, "ভারতের সম্পদে মুসলিমদের অগ্রাধিকার।” 

ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫ অনুসারে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার আছে। কিন্তু যখন হিন্দু ধর্মের উৎসব, রীতি ও সংস্কৃতি পালনের প্রশ্ন আসে, সেখানে প্রযোজ্য সীমাবদ্ধতা  ধর্মীয় অধিকার বাধা প্রাপ্ত হয়। যেমন, হিন্দুদের বলিপ্রথা যা শক্তি উপাসনার একটি অভিন্ন অংশ, সেখানে মূলত ছাগ পশুর বলি হয়। সেটাই নৃশংসতার  নিষেধাজ্ঞার নামে বহু স্থানে আটকে দেওয়া হয়েছে। অথচ, ঈদে রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়, KFC নামক বিদেশী কম্পানির চিকেন বিক্রিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

অর্থাৎ, ধর্ম নিরপেক্ষ শব্দটি একটি ধাপ্পাবাজি।১৯৭৬ সালে ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে যোগ করা হয়েছিল। 

এই সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেহেতু সংবিধানের প্রস্তাবনায় "ধর্ম নিরপেক্ষ" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাই অনেকের দাবি এটি নিজেই অসাংবিধানিক। কেন? আসুন জেনে নেই।

 সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬৮ অনুসারে বলা হয় যে সংসদ সংবিধানের যেকোনো অংশ সংশোধন করতে পারে, তবে রাজ্যসভা ও লোকসভা দুটোর অনুমোদন প্রায়োজন। কিন্তু সেই ইমার্জেন্সীর সময় বিপক্ষ দল জেলের ভেতরে ছিলো। সুপ্রীম কোর্টের কোনো গুরুত্বই ছিলো না, অর্থাৎ কোর্টের রায়ের কোনো পালন হতো না। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ৺ইন্দিরা গান্ধী সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অর্থাৎ Preamble এ সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ, এই দুটি শব্দ যোগ করেন।

১৯৭৩ সালের ৺কেশবানন্দ ভারতী মামলায় বলা হয়েছে, সংবিধানের "মৌলিক কাঠামো" (Basic Structure) পরিবর্তন করা যাবে না।  (যেমন, গণতন্ত্র, সাম্যবাদ, ন্যায়বিচার, অধিকার ইত্যাদি)। কিন্তু আমাদের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ৺ইন্দিরা গান্ধী ইমার্জেন্সির সময় ৪২তম সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করে, মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন করেছিলেন।

তবে বলে রাখা ভালো, ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষতার মতো ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ নয়, বরং এটি সর্বধর্ম সম্মানের নীতির উপর ভিত্তি করে পক্ষপাত বিহীন নীতি। যেখানে রাষ্ট্র সকল ধর্মের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখবে।

“কাগজে কলমে সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ, কিন্তু বাস্তবে ভারতীয় সমাজ কি কখনও ধর্মনিরপেক্ষ হবে?”

রাজনৈতিক মেরুকরণ:

এই সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে রাজনৈতিক মেরুকরণ ধর্মনিরপেক্ষতার গালে চপেটাঘাত।

রাজনৈতিক দলগুলো বারবার মুসলিম ও হিন্দু ভোটব্যাংক তৈরি করেছে। কিছু দল সংখ্যালঘু তোষণ করেছে, আবার কিছু দল সংখ্যাগরিষ্ঠ উগ্রতা জাগিয়ে তুলেছে।

জাতপাত নিয়ে বিভাজন:

ব্রাহ্মণ-শূদ্র-চণ্ডাল বিতর্ক এখনো রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সংরক্ষণ, ভোট, ও দলিত রাজনীতি জাতপাতের ভেদাভেদকে উত্তেজিত করে রেখেছে। একদিকে যেমন বলা হয়, সকলের সমান অধিকার দরকার, অন্য দিকে সেই অধিকারে পদ প্রাপ্ত হয়ে অন্যের অধিকার হরণ করার কথা বলা হয়।

জনসংখ্যা প্রসঙ্গ:

মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুললে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ও ভয়ের আবহ তৈরি হয়। তবে জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও ভারতীয় মুসলিমরা জনসংখ্যার দ্বিতীয় বৃহত্তম। তাও সব ক্ষেত্রে তারাই যেন অধিকার বঞ্চিত। 

বর্তমানে (জুলাই ২০২৫) ভারতের আনুমানিক মোট জনসংখ্যা প্রায় ১.৪৩ বিলিয়ন (১৪৩ কোটি)। জনসংখ্যার ধর্মীয় গঠন নিয়ে সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য তথ্য ২০১১-এর জনগণনা থেকে পাওয়া যায়, যেখানে হিন্দুদের শতকরা হার ছিল ৭৯.৮% এবং মুসলিমদের ১৪.২%。 ২০২৩ সালের অনুমান অনুযায়ী, মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৯.৭ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ১৪% এর কাছাকাছি। চলুন সরলভাবে বুঝি: 

অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থী

যেভাবে বিভিন্ন দেশ বিদেশ থেকে আসা মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে, এবং যেভাবে অন্য ধর্মের প্রতি অবমাননা মূল বক্তব্য রাখা হচ্ছে। তাতে করে একধরনের সাংস্কৃতিক দখলদারির পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ হলো, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম।

এখানে বাংলাদেশ এবং ভারত সীমানার বহু স্থানে কোনো ব্যারিকেট নেই। তাই, বহু বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গীয়া মুসলিম ভারতে প্রবেশ করেছে। ভারতের স্থানীয় নেতাদের সাহায্যে আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, রেশন কার্ড তৈরী করে সরকারি চাকরি ও বহু উচ্চ পদে মনোনীত হয়ে আছে। 

তারাই বহু মাদ্রাসা তৈরী করে, সরকারি ভাতা দেওয়া হয়।  যেখানে মধ্য যুগীয় ইসলামী কওমি শিক্ষা দেওয়া হয়। এক কথায় কাফের ও কুফ্র বিরুদ্ধে মুজাহিদ বা সৈনিক হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়। সেই মাদ্রাসায় অনুপ্রবেশকারীদের ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করে পরবর্তীতে, ওই ছাত্ররাই গ্রামে স্থায়ী ভাবে সংসার পেতে বসবাস করছে। ফলে জনসংখ্যাগত ও ভূ-সামাজিক পরিবর্তন ঘটছে। 

এর পর সংখ্যা বৃদ্ধি হলে হিন্দুদের ওপর ধর্মীয় অবমাননার নামে, হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে, ধর্মান্তরন এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা তৈরি করে হিন্দুদের পলায়ন করতে বাধ্য করছে। ডেমোগ্রাফিক রিসেটমেন্ট বা মানসিক উদ্বাস্তু হিসেবে সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দু আজ নিজের অধিকারে জন্য সংখ্যালঘুদের নিয়ন্ত্রিত সরকারের কাছেই হাত পাচ্ছে।

কমিউনিস্ট মানসিকতা:

দুই প্রকার কমিউনিস্ট মানসিকতা আছে। একটি বিপ্লবমুখী, আরেকটি বিদ্বেষমুখী। উভয়ের মূল লক্ষ্য একটাই। বিপ্লবমুখী কমিউনিস্ট প্রচলিত সব কিছুকে পুরাতন, পিছিয়ে পড়া, অচল প্রতিপন্ন করে বা অচল প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। পুরাতন গুড়িয়ে নতুন উদ্ভাবন বা নতুনের বরণ করার কথা বলে। কিন্তু যারা বিদ্বেষমুখী কমিউনিস্ট তাদের কোনো উদ্ভাবনের জোর নেই। এদের কাছে যা কিছু তাদের মতাদর্শ থেকে ভিন্ন মনে হয়, সেটারই বিরোধ করে। প্রায়োজন হলে অসাধু উপায়ে, মিথ্যা বলেও নিজের বক্তব্যকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

একনায়ক তন্ত্র:

কমিউনিস্ট একনায়ক তন্ত্রে বিশ্বাসী। অর্থাৎ, একবার ক্ষমতায় আসার পর জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে বন্দুকের নল ও তলোয়ারের ধার ব্যবহার করা। 

বিশ্লেষণ, বিস্মরণ, বিক্ষেপণ, এবং বিপ্লব:

কমিউনিস্টদের প্রথম পদক্ষেপ হলো সমাজকে বিশ্লেষণ করা। সমাজের সবল এবং দুর্বল স্থানগুলো খুজে বের করে। সমাজ সেবার নামে ভ্রান্ত ধারণা এবং ভ্রান্ত প্রচার করা। যেমন, হিন্দু সমাজে নারী মূর্তিকে পূজা করা হয়। বিভিন্ন উপন্যাস, চলচ্চিত্র ও গল্পের মাধ্যমে এই ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করা হয়েছে যে, সধবা স্ত্রীর সিঁথির সিদুর হলো দাসত্বের প্রতীক। আগের যুগে দলপতি দাসীর সিঁথি কেটে রক্ত রঞ্জিত করতো। সেই প্রতিকী এই সিঁথির সিঁদুর।


 সমাজের নৈতিক বিস্মৃতি ঘটায় ফলে সমাজে অসামঞ্জস্যতা, আন্তঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সেই অসামঞ্জস্যতা, বিচ্ছিন্ন আন্তঃসংযোগকে সংজ্ঞায়িত করে, অর্থপূর্ণ ও ভিন্ন মানের প্লব কান্তি বলা হয়। 

0 Comments:

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads