ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রতীক ও রহস্য উন্মোচন।


দেয়াল শুধু ইটের কাঠামো নয়, এটি ইতিহাসের সাক্ষী। বলা হয়, "দেয়ালের কান আছে"— অর্থাৎ, সত্য কখনো চুপ করে থাকে না, একসময় না একসময় প্রকাশ পায়। ইতিহাসে আমরা দেখি, যারা নিজেদের অতীত লুকোতে চায়, তারা দেয়ালের চিহ্ন মুছে ফেলে বা বিকৃত করে ফেলে।

ঠিক তেমনই, ধর্মীয় প্রতীকগুলো সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু তাদের উৎস সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়নি। খ্রিস্টধর্মের ক্রস (Cross) শুধু বিশ্বাসের প্রতীকই নয়, বরং আত্মত্যাগ ও জীবনের চাবি হিসেবেও বহু সংস্কৃতিতে দেখা যায়। এই লেখায় আমরা খ্রিস্টীয় ক্রস এবং তার পূর্ববর্তী ধর্মীয় প্রতীকগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করব।

যারা নিজের ইতিহাস লুকোতে চায় তারা এই দেয়াল ভেঙে ফেলে বা চিহ্ন গুলো বিকৃত করে। কারণ তারা ওই প্রমাণ গুলো আর রাখতে চায় না। 

ইন্টারনেটে একদিন হয়তো কেউ আমার এই পোস্ট পড়বে, বা আমার এই লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কোনো লেখকের পোস্ট পড়বে। সেদিন আমি নাও থাকতে পারি। শতক হোক বা দশক, আজ হোক বা কাল সত্য নিজেকে প্রকাশ করবেই। যদি পরম্পরা অক্ষুন্ন ও অবিকৃত রাখা যায়। তবে সেটা স্থায়ী হবে। 

আজ ইং ১লা জানুয়ারি ২০২৫ সাল। আজ আমরা খ্রীষ্ট ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে আলোচনা করবো যা খ্রীষ্ট ধর্মের পূর্বে ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে ধার করেছে। এই তার বিষয় সূচি। 

ক্রস কি জিনিস?

ক্রসের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য

যীশু খ্রিস্ট ক্রুসবিদ্ধ হয়ে আত্মত্যাগ করেছেন, যা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র স্মৃতি। তাই, খ্রিস্টানরা ক্রসকে বিশ্বাসের চিহ্ন হিসেবে গ্রহণ করে গলায় ধারণ করেন।

যীশু তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন:

"যদি কেউ আমার পিছনে আসতে চায়, তবে সে নিজেকে অস্বীকার করবে, তার ক্রুশ ধারণ করবে এবং আমার অনুসরণ করবে।" (ম্যাথিউ ১৬:২৪)

এখানে "নিজেকে অস্বীকার করা" বলতে বোঝানো হয়েছে— ব্যক্তিগত ইচ্ছা, অহংকার ও বাসনা ত্যাগ করে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া। "ক্রুশ ধারণ করবে"— এটি প্রতীকী ভাষা, যার অর্থ হলো আত্মত্যাগের মাধ্যমে ঈশ্বরের পথে চলা।

"ক্রুশ ধারণ করবে"— এই বক্তব্যে তিনি একটি প্রতীকী অর্থ দিয়েছিলেন। তিনি বলছেন: "যদি কেউ আমার পিছনে আসতে চায়" — অর্থাৎ তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর পথে হাঁটতে চায়। তবে "সে নিজেকে অস্বীকার করবে" — অর্থাৎ নিজের ইচ্ছা, অহংকার, এবং নিজের পরিচয় ত্যাগ করবে। তারপর তিনি বলেছেন "ক্রুশ ধারণ করবে" অর্থাৎ— নিজের জীবনে আত্মত্যাগ গ্রহণ করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে। ঠিক যেভাবে যীশু খ্রিস্ট নিজেকে অপরের মঙ্গলের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।

যীশুর জন্মের আগেও কি এই প্রতীক বিদ্যমান ছিল? যীশুর ক্রসের বিভিন্ন রূপ আছে। যেমন: ১. লাতিন ক্রস, ২. গ্রীক ক্রস, ৩. সেন্ট অ্যান্ড্রু ক্রস, ৪. হুক ক্রস, ৫. আয়রন ক্রস, ৬. টাও ক্রস, ৭. ক্রুসিফিক্স, ৮. সেলটিক ক্রস, ৯. প্যাট্রি আর্ক ক্রস ইত্যাদি।

যীশুর ক্রুশ (Crucifixion Cross) ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ও সংস্কৃতিতে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করেছে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু ক্রসের ধরন তুলে ধরা হলো—

১. লাতিন ক্রস (Latin Cross ✝️): এটি সবচেয়ে প্রচলিত খ্রিস্টান ক্রস, যা খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার প্রতীক।
২. গ্রীক ক্রস (Greek Cross ✚): এটি চারটি সমান বাহুর সমন্বয়ে তৈরি। এটি পূর্ব অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের 
৩. সেন্ট অ্যান্ড্রু ক্রস (Saint Andrew's Cross ✕): এটি "X" আকৃতির ক্রস, যা সেন্ট অ্যান্ড্রু-এর শহীদ হওয়ার প্রতীক।
৪. হুক ক্রস (Hooked Cross 卐): এটি প্রাচীন সভ্যতাগুলোর একটি প্রতীক, যা পরবর্তীতে নাৎসি পার্টি (Nazi) গ্রহণ করেছিল। এটি মূলত একটি সৌভাগ্যের প্রতীক ছিল।
৫. আয়রন ক্রস (Iron Cross ✠): এটি জার্মান সামরিক প্রতীক, যা খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের সময় থেকে ব্যবহৃত হয়।
৬. টাও ক্রস (Tau Cross ⊥): এটি "T" আকৃতির ক্রস, যা ফ্রান্সিসকান সম্প্রদায় এবং প্রাচীন ইহুদিদের দ্বারা ব্যবহৃত হত।
৭. ক্রুসিফিক্স (Crucifix ✞): এটি একটি লাতিন ক্রস, যার উপর যীশুর দেহ থাকে। এটি ক্যাথলিক চার্চে বেশি ব্যবহৃত হয়।
৮. সেলটিক ক্রস (Celtic Cross ☩): এটি লাতিন ক্রসের সাথে একটি বৃত্ত সংযুক্ত অবস্থায় থাকে, যা আইরিশ ও স্কটিশ সংস্কৃতিতে জনপ্রিয়।
৯. প্যাট্রিয়ার্ক ক্রস (Patriarchal Cross ☨): এটি একটি দ্বৈত অনুভূমিক রেখাযুক্ত ক্রস, যা বাইজেন্টাইন ও পূর্ব ইউরোপের খ্রিস্টানদের প্রতীক।

তবে প্রশ্ন হলো, যীশুর আগেও কি ক্রসের কোনো অস্তিত্ব ছিল?

প্রাচীন সংস্কৃতিতে ক্রসের ব্যবহার

খ্রিস্টান ক্রসের ইতিহাস আসলে আরও পুরনো। বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় ক্রসের মতো চিহ্ন দেখা যায়, যেমন:

✔️ মিশরীয় 'আঙ্খ' (Ankh) – এটি "জীবনের চাবি" নামে পরিচিত। এটি অমরত্ব এবং সৃষ্টির প্রতীক ছিল।

✔️ সুমেরীয় ও ব্যাবিলনীয় প্রতীক – অনেক দেব-দেবতার হাতে ক্রসের মতো চিহ্ন দেখা যায়।

✔️ নর্স (Norse) সভ্যতার ক্রস – থর দেবতার হাতুড়ি "মিয়োলনির" (Mjölnir) ক্রসের মতো আকৃতির ছিল এবং এটি শক্তি ও সুরক্ষার প্রতীক ছিল।

✔️ প্রাচীন রোমান ক্রস – এটি শুধুমাত্র শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হতো, যা পরে খ্রিস্টধর্মে আত্মত্যাগের প্রতীকে রূপান্তরিত হয়।

প্রাচীন Cross হলো জীবনের চাবি

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ক্রুশ ধারণ করা কথাটি খুবই তাৎপ্যপূর্ণ। খ্রিস্টধর্মের ক্রস এবং মিশরীয় চিহ্ন ‘Ankh’ (আঁখ)-এর মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক বা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওই চিহ্নটি মিশরীয় সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক, যাকে "জীবনের চাবি" বলা হয়। এটি জীবন, অমরত্ব এবং সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মিশরীয় দেব-দেবীরা এই প্রতীকটি ধারণ করতেন, যা তাঁদের অমরত্ব এবং জীবনীশক্তিকে বোঝাতো। 

মিলিয়ে দেখুন, বাইবেলে যীশু খ্রিস্ট নিজেকে 'জীবন বৃক্ষ' বলে উল্লেখ করেছিলেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করতেন, তাঁর আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানবজাতি পাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। এটি ইহুদী ধর্মগ্রন্থ(old testament) ইশাইয়ার (Isaiah) ৫৩ অধ্যায়ে উল্লেখিত "পীড়িত দাসের" ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত।

ইশাইয়ার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, একজন নির্দোষ দাস নিজের দুঃখ এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে অন্যদের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবেন। খ্রিষ্টানরা মনে করেন যীশু এই ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ করেছেন।

ঐতিহাসিকভাবে, যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বলা হয়, তাঁর রক্তে ইহুদি জাতির পাপ থেকে মুক্তি মিলেছিল, এবং সেই ত্যাগ পরবর্তীতে খ্রিস্টধর্মের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যদিও ক্রস এবং আঁখ চিহ্নের আকার ও অর্থে পার্থক্য রয়েছে, দুটিই জীবন এবং পুনর্উত্থানের ধারণার সাথে যুক্ত।

খ্রিষ্টান ধর্মে যীশুকে বিভিন্ন উপাধিতে অভিহিত করা হয়, যার মধ্যে "রাজকুমার" (Prince) বা "শান্তির রাজপুত্র" (Prince of Peace) অন্যতম। এটি ইহুদি ধর্মগ্রন্থে থাকা একাধিক ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে সম্পর্কিত, বিশেষত ইশাইয়া ৯:৬-এ যাকে "শান্তির রাজপুত্র" বলে অভিহিত করা হয়েছে।

ইহুদিরা মসিহা (মেসিয়াহ) বা মুক্তিদাতা হিসেবে একজন শক্তিশালী রাজকুমারের আগমনের প্রত্যাশা করছিল, যিনি তাদের মুক্তি দেবেন এবং শত্রুদের পরাজিত করবেন। যীশু তাঁর শিক্ষায় নিজেকে আধ্যাত্মিক রাজকুমার হিসেবে পরিচিত করেছিলেন, যাঁর রাজত্ব পার্থিব নয়, বরং স্বর্গীয় বা আধ্যাত্মিক। তিনি মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে এবং ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করতে এসেছিলেন।

এই কারণে অনেক ইহুদি সেই সময় তাঁকে প্রত্যাশিত "রাজকুমার" হিসাবে গ্রহণ করেনি, কারণ তারা মনে করেছিল যে মেসিয়াহ একজন শক্তিশালী পার্থিব শাসক হবেন। যীশু, বিপরীতে, প্রেম, আত্মত্যাগ, এবং ঈশ্বরের রাজ্যের কথা প্রচার করেছিলেন, যা ইহুদীদের ধারণা থেকে একেবারে ভিন্ন ধরনের রাজত্ব।

অ্যান্টি ক্রাইস্টের ধারণা এবং ধর্ম বিচ্ছেদ।

আপনি যদি লক্ষ্য করেন, তবে দেখবেন ক্যাথলিক চার্চের পোপ থাকে কিন্তু প্রোটেস্টান চার্চের মিনিষ্টার থাকে। ক্যাথলিক চার্চের নিয়ম নীতি সেই রোমান সাম্রাজ্যের রাজা কনস্টেন্টিন থেকে চলে আসছে। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে ক্যাথলিক চার্চের পোপের রীতি নীতি নিয়ে দুর্নীতি সৃষ্টি হলে মার্টিন লুথার  প্রোটেস্টান চার্চ তৈরী করেন। তার চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রধান কারণ ছিল চার্চের কিছু প্রথা ও নীতির প্রতি তার তীব্র বিরোধিতা।

মার্টিন লুথার ১৫১৭ সালে তার "৯৫টি থিসিস" প্রকাশ করার মাধ্যমে ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। প্রোটেস্ট্যান্ট রিফরমেশন ক্রমেই জনপ্রিয় হতে থাকে, এবং ক্যাথলিক চার্চের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।

ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে সংঘাত ছিল ধর্ম, রাজনীতি, এবং সমাজের বিবর্তনের একটি জটিল অধ্যায়। এই যুদ্ধগুলো ইউরোপের ইতিহাসে গভীর পরিবর্তন এনেছিল এবং আধুনিক ইউরোপের জন্মের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। ৩০ বছরের যুদ্ধ এবং ওয়েস্টফালিয়ার শান্তি চুক্তি ধর্মীয় যুদ্ধের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটায় এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ভিত্তি তৈরি করে। 

প্রথম দিকে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান পরস্পর পরস্পরকে অ্যান্টি-খ্রাইস্ট বা খ্রীষ্ট বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করতো। 

অ্যান্টি-ক্রাইস্ট (Anti-Christ) হলো খ্রিস্টান ধর্মে এমন একটি ধারণা, যা বাইবেলে এবং খ্রিস্টান ঐতিহ্যে উল্লেখিত। এটি এমন একটি ব্যক্তিকে বা শক্তিকে বোঝায়, যে যীশু খ্রিস্টের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং মানুষের মধ্যে পাপ ও অশান্তি ছড়ায়। অ্যান্টি-ক্রাইস্টকে খ্রিস্টান ধর্মে একটি শেষকালের (End Times) ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অ্যান্টি-ক্রাইস্টের কাজ:

  • মানুষকে ঈশ্বর এবং যীশু খ্রিস্টের থেকে দূরে সরানো।
  • মিথ্যা শিক্ষা এবং প্রতারণা ছড়ানো।
  • পাপ এবং অশান্তি বৃদ্ধি করা।
  • যীশু খ্রিস্টের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করা।

২০১৩ সালে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে স্যাটানিক টেম্পল স্থাপত হয়। 

স্যাটানিক টেম্পলের সাতটি মূলনীতি (Seven Tenets) রয়েছে, যা তাদের কার্যক্রম ও বিশ্বাসের ভিত্তি। এগুলো হলো:

  • 1. অন্যদের সাথে সহমর্মিতা এবং সহানুভূতিশীল আচরণ।
  • 2. বিচার এবং স্বাধীনতার গুরুত্ব।
  • 3. দেহ এবং মনকে অঙ্গিকারপূর্ণ ভাবে সম্মান করা।
  • 4. মত ও যুক্তি বিজ্ঞান ও প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রহণ করা।
  • 5. ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
  • 6. ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং তা সংশোধন করা।
  • 7. নীতিগুলো একটি দিক নির্দেশক, যা সবসময় পরিবর্তন যোগ্য।

যাই হোক, প্রথমেই বলে রাখি আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং আমি অ্যান্টি-ক্রাইস্ট নই। আমার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমি ঈশ্বর ও মানুষকে বিশ্বাস করি, শয়তান বিশ্বাস করি না। তাই, যা কিছুই আমি এখানে বলবো, সেগুলো অলরেডি ইন্টারনেট দুনিয়ায় আছে। যা মূলত এই পক্ষের দুই পক্ষের লড়াই ও বিরোধী মতাদর্শ থেকেই উদঘাটন হয়েছে।

মার্টিন লুথার বনাম ক্যাথলিক চার্চ

মার্টিন লুথারকে ক্যাথলিক চার্চ এবং তার সমর্থকরা অ্যান্টি-ক্রাইস্ট তকমা দিয়েছিলেন, কারণ তিনি পোপের ক্ষমতা এবং চার্চের রীতিনীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। আবার, এদিকে লুথার নিজেও পোপ এবং ক্যাথলিক চার্চকে অ্যান্টি-ক্রাইস্ট বলে সমালোচনা করেন। সেই দৃষ্টিতে উভয়ই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সঠিক। সেই বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নাই।

সেই সময়ে ক্যাথলিক চার্চে টাকার বিনিময়ে খুনী বা পাপীদের পাপ ক্ষমা দেওয়া হতো। লুথার এর বিরোধিতা করে। এছাড়াও অনেক কারণ ছিলো যা লুথরের কাছে ভন্ডামি মনে হয়েছিলো। 

বিচার করে দেখলে, খ্রিষ্টান ধর্ম নিজেই কোনো আলাদা ধর্ম নয়। এর প্রতীক, রীতি এবং আদর্শ অনেকটা প্রাক খ্রিস্টান ধর্মের থেকে ধার করা। রোমান, নর্ডিক, গ্রীস, মিশর সংস্কৃতির একটি সংমিশ্রিত ধর্ম।

 যেমন:

X-mass: 

প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে X-mass পালন করা হয়। এটি একটি পেগান উৎসব ছিলো। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে পেগনদের ধর্মান্তর করতে গিয়ে পেগন্সদের  সংস্কৃতিক আচার খ্রিস্টান অনুষ্ঠান মিশে গেছে। ক্রিসমাস উদযাপনে পেগান সংস্কৃতির প্রভাব সুস্পষ্ট, বিশেষ করে উইন্টার সলস্টিস, স্যাটারনালিয়া, এবং ইউল উৎসবের উপাদানগুলো ধরা পড়ে।  খ্রিস্টান ধর্ম এটিকে যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এই 25 ডিসেম্বর দিনটিকে পেগনরা সূর্যের জন্ম তিনি হিসেবে উদযাপন করতো। গাছের নিচে মোমবাতি দেওয়া, উপহার দেওয়া, ইত্যাদি পেগন রীতি ছিলো, সেগুলোই খ্রীষ্ট ধর্মে দেখা যায়। 

আঙ্খ Cross:

আগেই বলেছি, খ্রীষ্ট ধর্মের ক্রস এবং মিশরীয় চিহ্ন ‘(Ankh, ☥)’ (আঁখ)-এর মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক বা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওই চিহ্নটি মিশরীয় সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ছিলো, যাকে "জীবনের চাবি" বলা হতো। শুধু মিশরী নয়, ব্যাবিলন এবং সুমেরীয় সভ্যতার দেব দেবীর মূর্তিতেও এই ANKH বা জীবনের চাবি চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেছে। যেখানে এই একই চিহ্ন পুরুষ ও প্রকৃতির মিলন চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়।


Iron Cross 

এছাড়াও খ্রীষ্ট ধর্মে Iron Cross ব্যবহার করা হয় যা সুমেরীয় দেবতা অনুনাকির গলায় পাওয়া যায়। Iron Cross প্রুশিয়ার রাজা ফ্রেডেরিক উইলিয়াম III ১৮১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি প্রুশিয়ার সেনাদের অসাধারণ সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের জন্য দেওয়া হতো।


এই চিহ্নটি প্রুশিয়ার প্রাক খ্রিস্টান ধর্মের দেবী লাইমার প্রতীক।


হিটলারের স্বাস্তিক

আপনারা Hooked Cross এর নাম তো শুনেই থাকবেন। হ্যা, যা হিটলার ব্যবহার করেছিল। সে নিজেকে Aryan বলতো। সেই ক্রস দেখতে প্রায় হিন্দু স্বস্তিকের মতো। পার্থক্য হলো সেই হুকেড ক্রস একটু বাঁকানো।

নোর্ড বা নর্স জাতিরা যে দেবী দেবতাদের বিশ্বাস করতো। সেই সংস্কৃতিকে শয়তান বা শয়তানের প্ররোচনা আখ্যা দিয়ে খ্রিস্টান ধর্ম নর্ডিক অঞ্চলে প্রবর্তিত হয়েছে। সেই নর্ডিকদের ভাষা ছিলো রুনস ভাষা। নিচে Runes লিপিতে একটি বাক্য লেখা হয়েছে — "Þórr er Þrumuguð, hann er sonr Óðins, sá er regn færir." যার অনুবাদ করলে মোটামুটি অর্থ দাঁড়ায়, "থর হলেন বজ্রের দেবতা, ওডিন পুত্র, তিনি বর্ষা আনেন"



আয়রন ক্রস ও হিটলারের স্বস্তিক 

অর্থাৎ , আমরা যা কিছু ধর্ম বা রিলিজিয়ন সম্পর্কে জানি, সেটা মূলত বরফের ওপরের অংশ। আসল ও বিশাল অংশটি জলের অনেক গভীরে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন
Hostinger Black Friday Sale – Starting from ₹129/mo Promotional banner for Hostinger Black Friday deal: AI website builder, free domain, extra months. Pre-book now. Black Friday Sale Bring Your Idea Online With a Website From ₹129.00/mo + Extra Months & Free Domain Pre-Book Now HinduhumAds

Advertisement

Hostinger Black Friday Sale – Starting from ₹129/mo Promotional banner for Hostinger Black Friday deal: AI website builder, free domain, extra months. Pre-book now. Black Friday Sale Bring Your Idea Online With a Website From ₹129.00/mo + Extra Months & Free Domain Pre-Book Now HinduhumAds