দুর্গাপূজা এবং উৎসব Durga Puja and Festival
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার — একটি খুবই সুন্দর বিচার। হিন্দু মুসলিম একতার কথা মাথায় রেখে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্ব প্রথম এই স্লোগান দিয়ে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু, আমাদের দেশের ও দেশের বাইরের কিছু সংখ্যক মানুষের এই slogan পছন্দ হয়নি। পূজা এক জিনিস, আর তাঁকে ঘিরে উৎসব পালন করা আরেক জিনিস। সামান্য এই বোধ টুকু যাদের নেই, তাদের নিয়ে কথা বলা সময়ের অপচয় মাত্র।
দুর্গাপূজা হল হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান উৎসব, যা দেবী দুর্গার আরাধনা উপলক্ষে পালন করা হয়। এটি সাধারণত আশ্বিন মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) পালিত হয় এবং পাঁচ দিনব্যাপী উদযাপন করা হয়: ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, এবং দশমী (বিজয়া দশমী)।
AI Generated Image |
দূর্গাপূজা বাঙালির আবেগ
দূর্গাপূজা ও উৎসব বাঙালি জাতির এক বড় উৎসব। পিতৃপক্ষ শেষ এবং দেবী পক্ষের সূচনা থেকেই বাঙালির বাড়িতে পূজো পূজো রব উঠতে থাকে। কাশবন আর মহালয়ার আগমনি সঙ্গীতে যখন চারিদিকে পুজোর আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। মা দুর্গার আগমনে বাঙালি পুজোর আনন্দ মেতে ওঠে। বাঙালির জন্য দেবী তখন ঘরের মেয়ে। এই দূর্গাপূজা বাঙালির আবেগ।
চারটি দিনের অপেক্ষা
এই সময় সবাই নতুন কাপড় কেনে। ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব পালিত হয়। নিজেকে নতুন ভাবে সাজিয়ে বাঙালি শুধু মাত্র ওই চারটি দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে।
ব্যাবসার রমরমা
ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসা তখন রমরমিয়ে চলে। একদিকে কুমোর টুলিতে লাখ লাখ টাকার মূর্তির বায়না আসে। অন্য দিকে মণ্ডপ সজ্জায় লাখ লাখ টাকার বাজেট হয়। কোটি কোটি মানুষ ওই মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শনের জন্য আসে। এই পূজাকে ঘিরে একটা ইকো সিস্টেম তৈরী হয়েছে।
দেবী দুর্গা কোথায়?
এই লাখ ও কোটি টাকার ভেতর আসল দূর্গা পূজো এক কোণায় পড়ে থাকে। সাবেকি একচালা প্রতিমার বদলে এখন তৈরী হয় আলাদা আলাদা ফ্যাশানের দেবী প্রতীমা। তাই, এখন আর দেবীর পূজা হয় না। থিমের পূজা হয়। দেবী দুর্গা কোথায়?
এই আড়ম্বর আছে বলেই যে যেমন পারে নিজের মতো মুর্তি বানিয়ে পূজা করে। শাস্ত্রে উল্লেখ করা সেই দেবীর রূপ ও ভাব এখন আর দেখা যায় না।
শাস্ত্রে দেবী মুর্তির বর্ণনা।
দেবী দুর্গার প্রতিটি অস্ত্রের প্রতীকী অর্থ ও ব্যবহার সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানানো হল:
- ত্রিশূল: ত্রিশূল তিনটি শূল বা শাখা নিয়ে গঠিত, যা সৃষ্টির, সংরক্ষণের, এবং ধ্বংসের প্রতীক। এটি দেবীর শত্রু বিনাশের ক্ষমতাকে প্রকাশ করে।
- খড়্গ: খড়্গ বা তলোয়ার দেবীর সাহস ও শক্তির প্রতীক। এটি শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
- চক্র: চক্র বা সুদর্শন চক্র সময় ও নিয়তির প্রতীক। এটি দেবীর সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানের প্রতীক।
- গদা: গদা শক্তি ও ক্ষমতার প্রতীক। এটি দেবীর শারীরিক শক্তি ও ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
- শঙ্খ: শঙ্খ শুভ ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি দেবীর পবিত্রতা ও শুভ শক্তির প্রতীক।
- শক্তি: শক্তি বা শক্তিশালী অস্ত্র দেবীর শক্তি ও ক্ষমতার প্রতীক। এটি দেবীর অসীম শক্তিকে নির্দেশ করে।
- ঢাল: ঢাল সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষার প্রতীক। এটি দেবীর রক্ষাকারী শক্তিকে নির্দেশ করে।
- বাণ: বাণ বা তীর লক্ষ্যভেদ ও সঠিকতার প্রতীক। এটি দেবীর সঠিকতা ও লক্ষ্যভেদের ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
- ধনুক: ধনুক যুদ্ধ ও প্রস্তুতির প্রতীক। এটি দেবীর যুদ্ধের প্রস্তুতি ও ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
- ঘণ্টা: ঘণ্টা শত্রুদের বিভ্রান্ত করার প্রতীক। এটি দেবীর শত্রুদের বিভ্রান্ত ও পরাজিত করার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
দেবী দুর্গার এই অস্ত্রগুলি তাঁর বিভিন্ন গুণাবলী ও শক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেবী দুর্গার এই রূপ তাঁর অসীম শক্তি, সাহস, এবং সুরক্ষার প্রতীক।
শাস্ত্রে দেবী দুর্গার মূর্তির বর্ণনা অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে। দেবী দুর্গাকে সাধারণত দশভুজা রূপে চিত্রিত করা হয়, যেখানে তিনি দশটি হাতে বিভিন্ন অস্ত্র ধারণ করেন। তাঁর বাহন হল সিংহ, যা শক্তি ও সাহসের প্রতীক। মহিষাসুরমর্দিনী রূপে তাঁকে মহিষাসুর নামক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়।
দেবী দুর্গার মূর্তির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য:
- দশভুজা: দেবীর দশটি হাতে ত্রিশূল, খড়্গ, চক্র, গদা, শঙ্খ, শক্তি, ঢাল, বাণ, ধনুক, এবং ঘণ্টা থাকে।
- বাহন: দেবীর বাহন সিংহ, যা তাঁর শক্তি ও সাহসের প্রতীক।
- মহিষাসুরমর্দিনী: দেবীকে মহিষাসুর নামক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়, যা তাঁর অসুরবিনাশী রূপকে প্রকাশ করে।
- মহামায়া: দেবী দুর্গা মহামায়া বা মহাজাগতিক শক্তির প্রতীক, যা সৃষ্টির আদি কারণ।
- অন্য রূপ: দেবীর অনেক রূপ রয়েছে, যেমন কালী, চণ্ডী, নারায়ণী, ইত্যাদি12.
দেবীর বিভিন্ন নাম:
দেবী দুর্গার অনেক নাম রয়েছে, যেমন:
- মহিষাসুরমর্দিনী: মহিষাসুরকে বধকারী।
- চণ্ডী: উগ্র রূপের দেবী।
- নারায়ণী: নারায়ণের শক্তি।
- জগদ্ধাত্রী: জগতের ধারক।
দেবী দুর্গার মূর্তি ও রূপের এই বর্ণনা তাঁর শক্তি, সাহস, এবং সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আপনার কি দেবীর কোনো নির্দিষ্ট রূপ বা নাম সম্পর্কে আরও জানতে ইচ্ছা আছে?
1: দুর্গা - উইকিপিডিয়া: Durga Puja 2021: সাধ্বী-চিত্তরূপা-সর্ববিদ্যা-বহুলপ্রেমা! দেবী দুর্গা
দুর্গাপূজার বিভিন্ন ধাপ:
- মহালয়া: দুর্গাপূজার সূচনা হয় মহালয়া দিয়ে, যা দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের দিন হিসেবে পালিত হয়।
- ষষ্ঠী: ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন হয়, অর্থাৎ দেবীকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
- সপ্তমী: সপ্তমীর দিন দেবীর নবপত্রিকা স্থাপন করা হয় এবং পূজা শুরু হয়।
- অষ্টমী: অষ্টমীর দিন কুমারী পূজা এবং সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- নবমী: নবমীর দিন মহা আরতি এবং হোম (যজ্ঞ) অনুষ্ঠিত হয়।
- দশমী: বিজয়া দশমীর দিন দেবী দুর্গার বিসর্জন দেওয়া হয়, যা আনন্দ ও বিষাদের মিশ্রণ।
পূজার আচার-অনুষ্ঠান:
- পুষ্পাঞ্জলি: প্রতিদিন সকালে দেবীর পায়ে ফুল অর্পণ করা হয়।
- আরতি: প্রতিদিন সন্ধ্যায় আরতি করা হয়, যা দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
- সন্ধি পূজা: অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে বিশেষ পূজা করা হয়।
- কুমারী পূজা: কুমারী মেয়েদের দেবীর রূপে পূজা করা হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক:
দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনেরও একটি উপলক্ষ্য। প্যান্ডেল হপিং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং বিভিন্ন ধরণের খাবার এই উৎসবের অংশ।
আপনার কি দুর্গাপূজার কোনো নির্দিষ্ট দিক সম্পর্কে আরও জানতে ইচ্ছা আছে?
0 Comments: