Some changes have done due to Google Policy Violation, Some Post are Deleted. You May not Find them here. Sorry for Inconvenience.

গণেশের মাথা কেটে তাকে জীবিত করার বিশ্লেষণাত্মক ব্যাখ্যা। | The-Analytical-explanation-of-cutting-off-Ganesha's-head-and-bringing-him-back to life.

শিবের গণেশের মাথা কেটে ফেলার এবং তাকে পুনরায় জীবিত করার কাহিনী হিন্দু পুরাণে গুরুত্বপূর্ণ। এই কাহিনীর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এই গল্পগুলো হিন্দু পুরাণের গভীর দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক দিক নির্দেশ করে, এবং সেগুলো থেকে আমরা নৈতিক শিক্ষা নিতে পারি। এখানে কয়েকটি ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

explanation-of-cutting-off-Ganesha's-head

1. শিব কেন গণেশকে চিনতে পারলেন না:

যারা পুরান পড়েননি বা পরেও ভুল খোঁজার মানসিকতায় যাচাই করতে পারে নি, তারাই এই সত্য বুঝতে পারেননি। তারাই এইরকম অবান্তর প্রশ্ন করে। শিব, সকল দেব অসুর মানব দানব এমনকি কীট পতঙ্গ তাঁর পরিচিত। গণেশকে চিনতে পারলেন না —এই প্রশ্নটি করার আগে পড়ার অনুরোধ রইলো। শ্রী গণেশ নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছিল। 

সেই সময় শিব ছিলেন ধ্যানস্থ এবং তিনি পার্বতী সৃষ্ট গণেশ সম্পর্কে অবগত ছিলেন। জেনেই তিনি গণেশের মাথা কেটে আলাদা করেছিলেন। মাথা কাটার পেছনে এক মাত্র কারণ ছিলো বৃহ্মা দেবের অবজ্ঞা এবং ভগবান বিষ্ণুর অপমান।  তাহলে "শিব কেন গণেশকে চিনতে পারলেন না?" এই প্রশ্নের বিন্দু কোথায় ? 

  1. শিবের সর্বজ্ঞতা: শিব, যিনি সর্বজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান, তাঁর পুত্র গণেশকে চিনতে না পারার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি সবকিছু জানেন এবং সবকিছু দেখেন। সুতরাং, গণেশকে না চিনতে পারার যুক্তি অপ্রাসঙ্গিক।
  2. গণেশের অবজ্ঞা: গণেশ যখন মাতা পার্বতীর আদেশ পালন করতে, শিবের নির্দেশ অমান্য করে তখন শ্রী গনেশ নিজেই নিজের পরিচয় ভগবান শিবকে জানিয়ে ছিলেন। এরপরেও শিবের গণেশের মাথা কাটা বোঝায় যে, এটি কোনো ভুলবশত নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
  3. শিবের ক্রোধ: শিবের গণেশের উপর ক্রুদ্ধ হওয়া এবং তাঁর মাথা কাটা, মূলত গণেশের উৎশৃঙ্খলা আচরণ এবং শিবের আরাধ্য দেব শ্রী বিষ্ণুর আদেশ পালন না করার ফলাফল।

এইভাবে, শিবের গণেশকে চিনতে না পারা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। আসল উদ্দেশ্য হল, শৃঙ্খলা এবং কর্তব্যের গুরুত্ব বোঝানো। হিন্দু পুরাণের এই গল্পটি গভীর দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। যেখানে শ্রী গনেশ শ্রী বিষ্ণুর আদি গণপতি স্বরূপ।  

2. শিব কেন গণেশের কাটা মাথা পুনরায় তার দেহে জুড়ে দিতে পারলেন না:

ঈশ্বরের কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয় , তিনি সব করতে পারেন।  কিন্তু তিনি যা কিছুই করেন তাঁর  পেছনে একটা মহৎ কারণ থাকে। তিনটি কারণ উল্লেখ করা হলো।  

নতুন পরিচয় ও শুদ্ধিকরণ: শিব গণেশের পূর্বের স্মৃতি এবং সংস্কারগুলো থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাঁর মাথা পুনরায় জুড়ে দেননি। নতুন মাথা গণেশকে একটি নতুন জীবন, নতুন দায়িত্ব এবং নতুন পরিচয় প্রদান করে।  একই ভাবে আমরা দেখি দক্ষ রাজার মাথা কেটে শিব ছাগলের মাথা জুড়ে দিয়েছিল। 

পার্বতীর ক্রোধ: পার্বতী শিবকে অনুরোধ করেননি বরং ক্রুদ্ধ হয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিলেন এবং বিশ্ব প্রকৃতি ধ্বংসের হুমকি দিয়েছিলেন। এতে দেবতারা শিবকে গণেশকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করেন।

প্রতীকী শিক্ষা: গণেশের জন্য পশুর মাথা দেওয়া হয়েছিল যাতে তিনি নিজের পূর্ব জীবনের পশুতার শিক্ষা মনে রাখতে পারেন। এটি আমাদের জীবনের ভুল এবং তার থেকে শিক্ষা নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।

3. শিব কেন নিরীহ হাতির মাথা কাটলেন ? শিব কেন গণেশের কাটা মুন্ডুটা জুড়তে পারলেন না:

Idology of Ganesha learning
Idology of Ganesha learning

শিবের নিরীহ হাতির মাথা কাটার এবং গণেশের কাটা মুন্ডু পুনরায় জুড়ে না দেওয়ার পিছনে কিছু দার্শনিক এবং প্রতীকী কারণ রয়েছে। নিম্নলিখিত ব্যাখ্যাগুলি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে:

গণেশের কাটা মুন্ডু পুনরায় তার দেহে জুড়ে দিলে তার পূর্ব জীবনের সমস্ত স্মৃতি এবং সংস্কার ফিরে আসত। শিব চান গণেশ একটি নতুন জীবন শুরু করুক, যেখানে তার পুরোনো জীবনের ভুলগুলি পুনরাবৃত্তি না হয়। এই কাহিনী আমাদের শেখায় যে নতুন জীবনের জন্য পুরানো ভুলগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া প্রয়োজন।

প্রথম জীবিত প্রাণী: যখন শিব প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি গণেশকে পুনরায় জীবিত করবেন, তখন তিনি বলেন যে প্রথম জীবিত প্রাণীর মাথা এনে তা গণেশের দেহে সংযুক্ত করবেন। প্রথম জীবিত প্রাণী হিসাবে একটি হাতি পাওয়া যায় এবং শিব ওই হাতির মাথা স্থাপন করেন। 

যে হাতির মাথা কাটা হয়, সেই হাতির কর্ম বন্ধন ও জীবন মরণর চক্র থেকে জীবন মুক্ত হয়ে যায়। গজাসুর নামক এক অসুর এই  তপস্যা করে ছলো।

প্রতীকী অর্থ: মাতা পার্বতীর অঙ্গরাগ থেকে যে দেহ মল উঠপন্ন হয়েছে, সেই দেহমল থেকে যে গন জন্ম গ্রহন করেছিলো তার নাম গনেশ। ইনি শিবের সকল গনেদের স্বামী। গনেশ মহাদেব শিবের অংশ ছিলো না। সেই কারণে ইশ্বর জ্ঞান হীন সেই মায়া স্রি গণেশ পিতামহ ব্রহ্মা, নারায়ণ সহ  সকল দেবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং সকলকে একাই পরাজিত করেন। শুধু পরাজিতই  নয়, তিনি সেই সকল দেবতাদের উপহাস করে তাদের অপমান করেন।

শিব সেই মাথা কর্তন করে হাতির মাথা স্থাপণ করেন। সেই থেকে তিনি গণপতি, গজরাজ নামে পরিচিত। 

পরিশিষ্ঠ

শিব এবং গণেশের কাহিনী হিন্দু পুরাণের গভীর দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদান করে। শিবের সর্বজ্ঞানীতা, গণেশের পরিচয় এবং শুদ্ধিকরণ, এবং প্রতীকী শিক্ষার মাধ্যমে এটি আমাদের জীবনের নানান দিক নির্দেশ করে। শিবের দ্বারা গণেশের মাথা কাটার এবং পুনরায় হাতির মাথা সংযুক্ত করার ঘটনায় আমরা শৃঙ্খলা, কর্তব্য, এবং পুনর্জন্মের গুরুত্ব বুঝতে পারি। পার্বতীর ক্রোধ এবং শিবের প্রতিশ্রুতি কাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার জন্য পুরানো ভুল থেকে মুক্তির শিক্ষা দেয়। এই কাহিনী আমাদের শেখায় যে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে নতুন শিক্ষা গ্রহণ করা এবং পূর্বের ভুলগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ এবং অর্থপূর্ণ করে তোলে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Advertisement