Headlines
Loading...
বাল্মীকির রামায়ণে রামের জীবন কি নিরামিষ ছিল না

বাল্মীকির রামায়ণে রামের জীবন কি নিরামিষ ছিল না

হিন্দুরা রামায়ণ পড়ে না। হিন্দুরা সংস্কৃত ভাষাও জানে না। তাই হিন্দুদের সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতা নেই। হিন্দুদের নিজস্ব ধর্ম পরম্পরার কোনো জ্ঞান নেই। গুরু, দেবতা, ইশ্বর, অবতার, ভগবান সব কিছুই গুলিয়ে গু হয়ে গেছে।



তাই এই অজ্ঞান দুনিয়ায় কিছু লোক বিজ্ঞ সেজে অজ্ঞ সমাজকে গর্তে ফেলে দেয়। আর কিছু কিছু লোক এই হিন্দুদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে মুনাফা কামিয়ে যায়। নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী মশায় সেই রকম একটি লেখক।।

আবার হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু কিছু তথাকথিত প্রবচক হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র গুলো ভুল ব্যখ্যা করে, মিথ্যা অপবাদ প্রচার করে। হিন্দুরা সেই ভুল ব্যাখ্যা উপলদ্ধি করেও সেই ভূলকে সুধরে দিতে অক্ষম। এই এই অক্ষমতার কারণে তাদের এই অপবাদের সংশোধন করার বদলে গালি গালাজ করাটা আরেক মূর্খতা।

রামায়ণে শ্রীরাম মাংস ভক্ষণ করতেন  কি না। সেই বিষয়ে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী নামক এক পুরাণ তত্ত্ববিদ রামায়ণের শ্লোককে  নিজের মতন ব্যাখ্যা করেছেন।

 এই ভাদুড়ি মহাশয় একজন খাসা বামপী লেখক। 

তাঁর এই স্বরচিত বিদ্যা বুদ্ধির বিচার, খন্ডন ও ভ্রান্তির মূল উৎপাদন করে করে, সত্য বিচার ও যুক্তির মন্ডন করবো। 

ভূমিকা:

আনন্দ বাজার পত্রিকার একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী লিখেছেন, রামায়ণে শ্রী রাম যেখানে যেখানে  ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত রাজকুমার ছিলেন তাই তিনি মাংস, মভক্ষণ করতেন। তিনি লিখেছেন "প্রাদেশিক রামায়ণগুলি রামকে মদ্য-মাংসের ধারেকাছে যেতে দেয়নি। কৃত্তিবাস, তুলসীদাস— এঁরা সকলে ব্রাহ্মণ্য এবং বৈষ্ণবী হাওয়ায়। এঁরা কোনও অবস্থাতেই ক্ষত্রিয়কুমারের স্বাভাবিক খাদ্য (মদ্য-মাংসের) রাম-লক্ষ্ণণকে খেতে দেননি।"

 $ads={1}

ম*দ মাংস ও ভক্ষণ কি বেদ বৈধ?

পশু পশুর মাংস ভক্ষণ করে। হিন্দু শাস্ত্র গুলো মদ ও মাংস খাওয়ার বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতি বর্ননা করেছে ঠিকই কিন্তু একেবারে খোলা ভাবে অনুমতি দেয় না। এর উদ্দেশ্য হলো মদ ও মাংস থেকে নিবৃত্ত হওয়া। "নিবৃত্তি চ মহা ফলম"

ভগবদ্গীতা (16.7) বলে, প্রবৃতিম চ নিবৃত্তিম চ জানা না বিদুর অসুরাঃ না শৌচাম নাপি চাচারো না সত্যম তেষু বিদ্যাতে: রাক্ষস, বা অসুর প্রকৃতির মানুষ প্রবৃত্তি এবং নিবৃত্তির অর্থ জানে না , আচার এবং সত্যবাদীতা তাঁদের মধ্যে নেই। তারা বলে, “জগৎ ও জাগতিক সুখই পরম সত্য, এই জগতের কোন ভিত্তি (নিয়ম) নেই, এই জগত ঈশ্বর ছাড়াই ক্রিয়াশীল। শুধুমাত্র কামনা তৃপ্তির জন্য আমাদের জীবন সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যৌন তৃপ্তি তৃপ্ত করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য আমাদের নেই৷

ভারতীয় ইতিহাসের একজন সুপরিচিত বস্তুবাদী দার্শনিক চার্বাক বলেছিল:

যবজ্জীবেত সুখম জীবেত, ঋণম কৃত্ত্বা ঘৃতম পিবেত।ভস্মি ভূতস্য দেহস্য পুনর্গমনঃ কুতঃ॥

"যতদিন বেঁচে থাকো, নিজেকে উপভোগ করো। যদি ঘি পান করলে আনন্দ পাওয়া যায়, তবে সেই উদ্দেশ্যে ঋণ নিতে হলেও তা করুন। দেহ ছাই হলে আর কেউ ফেরত আসে কি না কে জানে?"

আজকের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও লেখকদের দৃষ্টি এবং মতামত একদম চার্বাকদের মতন। ভাদুড়ী মশায় নিজের দৃষ্টি ভঙ্গীকে রামায়ণের ওপর প্রয়োগ করছেন। মদ্য মাংস নাকি ক্ষত্রিয় কুমারদের স্বাভাবিক খাদ্য।

তিনি ঠিক বলছেন না ভুল এই প্রতিবেদন শেষ হোলে নিজেই বুঝতে পারবেন।

শাস্ত্র বলে, এই সকল মানব, দানব, দেবতা, অপদেবতা, পশু-পাখি, কিট-পতঙ্গ, এমনকি উদ্ভিদ ঋষির সন্তান। কারো মধ্যে ছোটো বড় ভেদে না। তাই উপনিষদের মন্তব্য:

আয়ম নিজাহ পরো ভেতি গণনা লঘুচেতাসম।
উদার চরিতনাম তু বাসুধৈব কুটুম্বকম ॥

এই আপন, এই পর, এই ভেদ বিচার লঘু চিত্তের মানুষ করে থাকেন। উদার চরিত্রের মানুষ সমগ্র জগকে আত্মীয় মনে করে।

মানুষ ও পশুর মধ্যে এই পার্থক্য আছে। পশুদের নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। পশুদের পাশবিক ধর্ম আছে, সেটা তারা বুঝতে পারে না, কিন্তু মানুষ বিবেক দিয়ে কর্তব্য ও কর্তব্য বিচার করে ধর্ম অধর্মের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে। তাই মানুষ সেই পাশ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ হয়। কোনটা খাদ্য আর কোনটা অখাদ্য সেটা বিচার করতে হয়। শাস্ত্র বলে:

নাত্তা দূষ্যত্যদন্নাদ্যান্ প্রাণিনোহহন্যহন্যপি ।
ধাত্রৈব সৃষ্টা হ্যাদ্যাশ্চ প্রাণিনোঽত্তার এব চ ৷৷
(মনুস্মৃতি:৫.৩০)

"ভক্ষ্য প্রাণিসকল ভক্ষণ করে ভোক্তা দোষভাগী হয় না। বিধাতাই ভক্ষ্য প্রাণী ও ভক্ষকগণকে সৃষ্টি করেছেন ।"

উদ্ভিদ ভক্ষণ করা মানুষের জন্য বিধেয়, মাংস ভক্ষণ অপরাধ। কিন্তু মানুষ মাংসও ভিক্ষ্মণ করে। তাই পশুর মাংস ভক্ষণ নিয়ে শাস্ত্রে বিধান আছে।

যখন কারও জীবন বিপদে পড়ে, যখন তা (পশুকে) যজ্ঞের জন্য (বলির জন্য) প্রস্তুত করা হয়, এবং যখন  দেবতা ও পিতৃদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে, মাংস খায়, তার কোন পাপ হয় না।' শ্রীমদ্ভাগতম বলছে— শ্লোক ১:১৩:৪৬ এবং ৪৭

কালকর্মগুণাধীনো দেহোঽয়ং পাঞ্চভৌতিকঃ।
কথমন্যাংস্তু গোপায়েৎ সর্বগ্রস্তো যথা পরম্ ৷৷
অহস্তানি সহস্তানাম পদানি চতুষ্পদাম্।
ফল্গূনি তত্র মহতাং জীবো জীবস্য জীবনম্॥

—কাল (মৃত্যু), কর্ম, ও ত্রিগুণের অধীন এই পাঞ্চভৌতিক দেহ রক্ষা করতে ভগবানই সকলের উপযুক্ত জীবিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাত-পা যুক্ত প্রাণী (মানুষ, বাঁদর, কুমির, টিকটিকি, কীটপতঙ্গ,  ইত্যাদি) হাত-পা বিহীন প্রাণী (সাপ ও উদ্ভির), এবং চতুষ্পদ জন্তুরা (গরু, ছাগল, বাঘ, ভাল্লুক, ইত্যাদি) পরস্পরের খাদ্য।  বড় প্রাণীরা ছোট প্রাণীদের খেয়ে বেঁচে থাকে। এইভাবে এক জীবই অন্য জীবের খাদ্য।

যদিও এটি খুব সামান্য খাদ্য শৃঙ্খলার বিশ্লেষণ, পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের বহু আগেই খাদ্য শৃঙ্খলার ধারণা আমাদের শাস্ত্র দিয়েছে। অথচ আমরা এই বিষয়ে অজ্ঞাত। 

প্রতিদিন, চলতে ফিরতে উঠতে বসতে, সব ক্ষেত্রেই আমাদের দ্বারা জীব হত্যা হচ্ছে। অর্থাৎ জ্ঞাত-অজ্ঞাত সর্ববস্থাতেই জীব হত্যা হচ্ছে। এইজন্য আমরা ভূত ঋণে গ্রস্থ। এই ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের শাস্ত্র পঞ্চযজ্ঞ করার বিধান দিয়েছে।

তান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী নিজের কামনা পূর্ণ করার জন্য যে পশুকে বলি দিতে হবে ঈশ্বরের নিমিত্তে ওই পশু যেন সদগতি প্রাপ্ত হয়, সেই প্রার্থণা করতে হবে। একে পশুযজ্ঞ বলা হয়। 

 পশুর মাংস খাওয়া পশু বলির উদ্দেশ্য নয়। পশুকে পাশ বন্ধ থেকে মুক্তি দিয়ে সদগতি প্রাপ্ত হাওয়া, এবং সাধক আধ্যাত্মিক ফল লাভ করা এই দুটোই বলির মুখ্য কারণ। কারণ যজ্ঞ দ্বারা সকলের মঙ্গল হয়। হিংসা হিংসা বলে বিবেচিত হয় না। "কথমন্যাংস্তু গোপায়েৎ সর্বগ্রস্তো যথা পরম্" ভগবানই সকলের উপযুক্ত জীবিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

মাংস শব্দটিকে আমরা পশুর মাংস হিসাবেই গণ্য করি। কিন্তু শাস্ত্রীয় ব্যখ্যা অনুযায়ী মাছ বা ফলের শাশ বা মেসোকার্প-কেও মাংস বলা হয়। শৈব, বৈষ্ণব, ব্রাহ্মণ এবং যারা আধ্যাত্বিক পথে চলেছেন তাঁদের ক্ষেত্রে মাংস ভক্ষণ সর্বদা অনুচিত। শৈব, বৈষ্ণব, ব্রাহ্মণদের জন্য বলি হিসেবে ফল, সবজি ও ফলের শাসকে মাংস বলা হয়েছে। পশু বলির জয়গায় তারা ফল, সবজি ও ফলের বলি দেবে। 

 $ads={2}

মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ট ও বুদ্ধিমান প্রাণী। তাই বলে সে তার থেকে কম বুদ্ধিযুক্ত প্রাণীর ওপরে অন্যায় করতে পারে না। খুব বেশি প্রয়োজন হলে মাংস ভক্ষণ করা অনুচিত। যেমন আকাল, জীবনসংশয়, খাদ্য অভাব, এরকম বিকট পরিস্থিতিতে শিকার করে মাংসভক্ষণ অনুচিত নয়। এমন পরিস্থিতিকে বলা হয় আপদকাল

তন্ত্রের মা কালী কালের বুকে দাঁড়িয়ে রসনা প্রিয়। তিনি জিহ্বা কর্তন করে সাধকে রসনা নিবৃত্তির ইঙ্গিত দিচ্ছেন। রসনার ফল ইঙ্গীত করে তিনি সাধককে খর্গ এবং রসনার পরিণতি নর মুন্ডু দেখে ভয় প্রদান করছেন। কিন্তু তিনি অভয় মুদ্রা ও কর পাত্র দ্বারা নিবৃত্তির ও মুক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছেন। 

বৈদিক যুগে বহু ক্ষেত্রে মানুষ বিবিধি সংস্কার দ্বারা অভিষিক্ত ম*দ পান করতো। ম*দের নেশায় ডুবে মাতাল হাওয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা বা কোনো ঋষি দেয়নি।

 ম*দ ও তামসিক খাদ্য। মানুষ ব্রহ্ম শক্তি ক্ষয় হয়। মদ্য পানের ফলে দ্বিজ পতিত হয়ে সপচ ও চণ্ডাল হয়ে যায়। এদের বিপথ থেকে উদ্ধারের জন্য, তন্ত্র শাস্ত্র বিবিধ পদ্ধতি ও নিয়ম নীতি আরোপ করে তাদের জন্য মদ্য, মাংস, মৎস, মুদ্রা, ও মৈথুন এই পঞ্চ ম-কার সাধনার ব্যবস্থা করে। যার দ্বারা সাধককে কৌশলে কুপথ থেকে সু পথে আনা যায়।

যোগ সাধনায় সাধকের মাংস হলো মৌনতা,  সাধকের মদ হলো খেচুড়ির দ্বারা তালু থেকে নির্গত অমৃত ধারা পান করা। আজ্ঞা চক্র ধ্যান কেন্দ্র করে দিব্য জ্যোতির দর্শনকে মৎস ভক্ষণ করা বলা হয় এবং জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনকে মৈথুন বলা হয়।

তবে শ্রী রামের মতো মহা মানব কি এই তন্ত্র, বেদ, উপনিষদের বাণী উপেক্ষা করে পশুর মাংস ভক্ষ্মণ করতে পারে? 

এই মাংস এবং মদ নিয়ে শ্রী রামের খাদ্যভাস, ক্ষত্রিয় রাজা মহারাজ আদাভাস জাস্টিফাই করার আগে আমাদের এই তাত্ত্বিক বিষয় গুলো সঠিক সঠিক ভাবে জানাতে হবে। কোনো বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বা লেখকের নিজস্ব মতবাদ চলবে না। 

পরম্পরাগত শিক্ষা না নিয়ে যদি স্কুল শিক্ষক পুরাণ তত্ত্ববিদ হতে শুরু করে। তাহলে (আজকের যুগে) যে কোনো ট্রাক চালক নিজেকে বিমানের পাইলট বলতে পারে। আপনি ওই বিমানে যেতে রাজি তো?

রামচন্দ্র কি মা সীতাকে মাংস খাওয়াr জন্য প্রলোভিত করেছিলেন?

নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী এবিপি বাংলার সেই রিপোর্টে লিখেছেন, চিত্রকূট পাহাড়ের এক জায়গায় জায়গায় মন্ডাকির তরশোভা দেখাতে দেখা যায় রামচন্দ্র সীতাকে হরিণের মাংস দিয়ে তৃপ্তি করতে চেয়েছিলেন। — "সীতাং মাংসেন ছন্দয়ন।" তাঁর এইবক্তটি তিনি এই শ্লোক থেকে বের করেছেন। 

तां तदा दर्शित्वा तु मैथिलीं गिरिनिम्रगाम्। 
निषसाद गिरिप्रस्थे सीतां मांसेन छन्दायन ॥ ১ ॥

তাং - তাঁকে (সীতাকে), তদা (tada) - তখন, দর্শিত্বা - দেখালেন,  মৈথিলিং - মিথিলার কন্যাকে, গিরিনিম্রগাম্ - পাহাড়ী হরিণ, নিষাসাদ- নিষাদ নামক পর্বতে উপবেশন করে, গিরিপ্রস্থে - পাহাড়ের ঢালাইয়ের উপর, তু - থেকে, সীতাং - সীতাকে, মাংসেন - মাংস দ্বারা,  ছন্দয়ন - সন্তুষ্ট করলেন।

প্রথম পংক্তিতে হরিণের কথা বলা হয়েছে। "দর্শিত্বা  মৈথিলিং গিরিনিম্রগাম্" এর অর্থা মৈথিলার কন্যা সীতাকে পাহাড়ের হরিণ দেখালেন। তাঁর পরের পংক্তিতে বলা হয়েছে। "নিষসাদ গিরিপ্রস্থে" নিষাদ পাহাড়ের ঢালাই এর ওপর বসলেন।‌ এর পর বলা হয়েছে "সীতাং মাংসেন ছন্দয়ন" সীতাকে মাংস দ্বারা সন্তুষ্ট করলেন।

এখানে কি ওই কোন হরিণের মাংস দিয়ে, মা সীতাকে সন্তুষ্ট করা হয়েছিল? এর উত্তর পেতে হলে পরবর্তী শ্লোক টি দেখুন।

इदं मेध्यमिदं स्वादु  निष्टप्तमिदमग्निना
एवम अस्ते स धर्मात्मा सीतया सह राघवः ॥ ২ ॥

ইদং - এই, মেদ্য - স্মৃতি বর্ধক, সুপাচ্য বা ঔষধি গুল্ম ফল, ইদং - এটি, স্বাদু - সুমধুর, নিষ্টতপ্তম্ - উপযুক্তভাবে তপ্ত, ইদম - এটি, অগ্নিনা - আগুন দ্বারা, এবম- এইভাবে বলে, অস্তে স ধর্মাত্মা - সেই ধার্মিক,  সীতায়া - সীতার,  সহ - নিকট, রাঘবঃ - রঘুর পৌত্র বা বংশধর।

" ইদং মেদ্য, ইদং স্বাদু   নিষ্ঠপ্তম্ ইদং অগ্নিনা ।" এটি একটি স্মৃতি বর্ধক, এটি সুমধুর, অগ্নি দাঁড়া ভালোভাবে তাপ দেওয়া হয়েছে বা রান্না করা হয়েছে। 

"এবম অস্তে স ধর্মাত্মা  সীতয়া সহ রাঘবঃ" — এভাবে বলার পর ধর্মাত্মা রঘুনন্দন সীতার কাছে গেলেন। এখানে মেদ্য কথার অর্থ কি, সেটা জানুন।

মেদ্য কথার অর্থ কি মাংস?

এখানে "ইদং মেদ্য ইদং স্বাদু" এখানে "মেদ্য" শব্দাংশ টি এই বামপী নাস্তিক জ্ঞানীরা 'মাংস' অনুবাদ করেছেন। কিন্তু আয়ুর্বেদ এবং সুশ্রুত সংহিতায় 'মেদ্য' শব্দের অর্থ করা হয়েছে "মেধা বর্ধক গুল্ম"। আবার “মেদ্য” শব্দের অন্য অর্থ 'পবিত্র' (স্যাক্রেট)।

সংস্কৃত শব্দকে পাশ্চাত্য ভাষায় ভাষান্তর করতে গিয়ে পাশ্চাত্য বিদ্বানগণ,  সেই ভোগ কে স্যাক্রিফাইস অনুবাদ করেছেন। সম্ভবত সেই স্যাক্রিফাইস শব্দটিকে আমাদের দেশের বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবীরা, “মেদ্য” শব্দের অর্থ মাংস করেছেন। অর্থাৎ ঈশ্বরকে নিবেদিত পশু মাংস।

একই শব্দের অনেক অর্থ হতে পারে। কোন ক্ষেত্রে কোনটা বিবেক দ্বারা বিচার করে ব্যবহার করা উচিত। দেখুন মধ্য শব্দের বিভিন্ন অর্থ আছে।

তাই শ্রীরাম পশু বা হরিণ মাংস নয়‌ বরং ফল বা কন্দ মূল্যের শাস দিয়ে সীতা মাতাকে সন্তুষ্ট করেছেন। মাংস তিনি খেতন না ‌।  কিভাবে এই কথা বলছি? তবে দেখুন।

শ্রীরাম কি নিজেরর প্রতিজ্ঞা ভুলে গেছেন?

রামায়ণে তিনি সীতাকে বলেছেন, বাল্মিকী রামায়ণ দ্বিতীয় অধ্যায়,  পঁচানব্বইতম সর্গ , ১৬ নাম্বার শ্লোক

लक्ष्मणश्चैव धर्मात्मा मन्निदेशे व्यवस्थितः । त्वं चानुकूला वैदेहि प्रीति जनयती मम॥ ১৬ 

—বিদেহী নন্দিনী! ধার্মিক লক্ষ্মণ সর্বদা আমার আদেশ পালন করে এবং আপনিও আমার ইচ্ছা পালন করেন; এটি আমার খুব ভালো লাগে।

उपस्पृशंस्त्रिषवना मधुमूलफलेशनः। নयोध्याय न राज्याय स्पृहये च त्वया सह ॥१७॥

হে প্রিয়তমা! তোমার সাথে বাস করে, তিনবার স্নান (ত্রি সন্ধ্যা) ফল ও মুল (মধুমুলফলাশনঃ) আহার করে আমি অযোধ্যায় যেতে চাই না, রাজ্য পেতে চাই না।

যেখানে মন্দাকিনী ও চিত্রকুট প্রকৃতিতে সাত্ত্বিক পুষ্টিকর ফলমূল, শাক, গুল্ম, লতা খাদ্যের সম্ভার আছে। তিনি কি সেথায় মাংস খেয়ে নিজের পেট ভরবেন? আসলে তিনি বলেছেন, সেই ফল, মূল খেয়ে তিনি  এতটাই তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট যে তিনি রাজমহলের রাজ সুখ চান না। 

ভাদুড়ী মহাশয়ের খোলা "কৌশল্যার কাছে শ্রী রামের যে নিরামিষ খাওয়ার প্রতিজ্ঞা ছিল, সে প্রতিজ্ঞার কথা বনবাসের আতুর অবস্থায় অতি সঙ্গত কারণেই বাল্মীকি মনে রাখেননি।" 

তিনি রামায়ণ এবং বাল্মিকীকে একটি কাল্পনিক গল্পকথা এবং লেখক হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। শ্রীরাম তো বনবাসের আতুর অবস্থায় ছিলো না।  বরং তিনি ফল, মূল খেয়ে এতটাই তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট জীবন যাপন করছেন, সেই সুখ অনুভব করে তিনি আর রাজমহলের রাজ সুখ ফিরে পাওয়ার স্পৃহা ত্যাগ করেছেন। তত্ত্ববিদ ভাদুড়ী মশায়ের সেই কূটনীতিও খাটলো না। 

বাল্মিকী, রাম ও রামায়ণ কি কাল্পনিক?

কোন গল্প সাজানো নাটক বা কল্পনা হতে পারে। কিন্তু রামায়ণে বাল্মীকি শ্রী রামের জন্ম কাল, গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান, ঋতুকাল সব বর্ণনা করেছেন। এমনকি রাম ও রাবনের যুদ্ধের সময় গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান কিভাবে বদলাচ্ছিল সেই সব উল্লেখ করেছেন। কল্পনায় কেউ এতটাও নিখুত তথ্য দিতে পারে না। 

তাই রামায়ণ কল্পনা হতে পারে না। 

রামায়ন কি ইতিহাস? নাকি সাহিত্য?

বাল্মিকী বিরচিত রামায়ণ একটি সংস্কৃত সাহিত্য তো বটেই, সঙ্গে আমাদের ইতিহাসের তথ্যও বটে। ঐশ্বরিক ঘটনাগুলো বাদ দিলে রামায়ণ সেই সময় মানুষের জীবন বৈচিত্র, সামাজিক ব্যবস্থা, ও দর্শন ধর্মের রূপরেখা তুলে ধরে। 

পাশ্চাত্য দেশে হিস্ট্রি এবং আমাদের দেশে ইতিহাস এই শব্দ দুটো এক নয়। ইতিহাসের তথ্যের সঙ্গে জ্ঞান, ভাব, ভক্তি যুক্তি থাকে। 

ঐশ্বরিক সত্তার আলোকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শ্রীরাম কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়, তিনি ভগবানের অবতার। তিনি নর রূপে নারায়ণ। রামায়ণ কোনো ফিকশন নয়। আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাস এবং প্রমাণ। এর উপর অবান্তর হস্তক্ষেপ গ্রাহ্য নয়।

পরিশেষ:

ভাদুড়ী মশায় নিজের মতো করে আমাদের রামায়ণ ইতিহাস শাস্ত্র অর্থকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি শ্রী রামকে কাজে লাগিয়ে মাংস ভক্ষণ ন্যায়সঙ্গত দেখাতে চেয়েছেন। রাম মদ্য মাংস খেত এমন অর্ধ সত্য প্রমাণ প্রস্তুত করে। তিনি ঋষি, রাম ও রামায়ণের ভাবকে বিকৃত করেছেন।

মনে রাখতে হবে শ্রীরাম একজন ইক্ষাকু বংশের ক্ষত্রিয় রাজা তো বটেই। সঙ্গে, তিনি একজন ঋষির বংশধর। তিনি বিবস্বানে মনুর বংশধর ছিলেন। শুধু রামই কেন, আমরা সকলেই কোনো না কোনো ঋষির বংশধর। আমাদের সকলের গোত্র, বর্ণ, বেদ ও গুরু পরম্পরা আছে। 

তাহলে আমরা দেখলাম, ভাদুড়ী মশায় রামায়ণের অর্থের অনর্থ করার চেষ্টা করছেন তাই নয়। তিনি বৈষ্ণব ও ব্রাহ্মণের ওপর নিন্দা জনক কটাক্ষ করতে পিছুপা হননি। অথচ ভাদুড়ী মহাশয় নিজেই একজন ব্রাহ্মণ। 

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: