মনিস্মৃতিতে শূদ্রদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
মনুস্মৃতি পাঠ করে, বিভিন্ন বিজ্ঞ ব্রাহ্মণ পন্ডিত এবং বর্তমান পরিস্থিতি অবলোকন করে আমি যা বুঝতে পেরেছি তা অতি চিন্তা জনক। কারণ হিন্দু সমাজের ভাঙ্গন ও পতনের দায়ী একটি বিচারধারা। চার বর্ণের মধ্যে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। তার জন্য একমাত্র দায়ী একটি বিশেষ জাতিগোষ্ঠী। এদের আমরা বামপন্থী সেকুলার ব্রাহ্মণ বলে থাকি। বামপন্থী সেকুলার ব্রাহ্মণরা প্রকাশ্যে গো মাংস খেয়ে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সনাতন ধর্মের ধ্বংস কামনা করে। আরেক প্রকার ব্রাহ্মণ আছে যারা এদের ষড়যন্ত্র সফল করতে নিজের মুখতা প্রকাশ করে। তাদেরকে আমি দাম্ভিক ব্রাহ্মণ বলে উল্লেখ করেছি।
শাস্ত্রে ব্রাহ্মণ কে সকলের পিতা বলা হয়েছে। সমাজরূপী বিরাট পুরুষের মস্তক রূপে ব্রাহ্মণকে কল্পনা করা হয়েছে। তাই এই বিরাট পুরুষের বিভিন্ন অঙ্গের যদি হানি হয়ে থাকে। তার দায়ভার ব্রাহ্মণদেরকেই নিতে হবে।
ব্রাহ্মণ কুলে জন্মেও ব্রাহ্মণ নিজ কুল চ্যুত:
বর্তমান যুগে ব্রাহ্মণ কুলে জন্ম নিয়েও অনেকেই ব্রাহ্মণ কুল চ্যুত হয়ে গেছেন। কারণ তারা নিষ্ঠা ধারন করতে পারেনি।
ব্রাহ্মনত্বের শর্ত:
শাস্ত্র বলছে:—
যোহনধীত্য দ্বিজো বেদমন্যত্র কুরুতে শ্রমম্।স জীবন্নেব শূদ্রত্বমাশু গচ্ছতি সান্বয়ঃ ৷৷
অর্থাৎ —যে দ্বিজ বেদ পাঠ করে না বরং অন্য বিষয়ে পরিশ্রম করেন, তিনি শীঘ্র জীবদ্দশায় সবংশে শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হন।
যো ন বেত্তভিবাদস্য বিপ্রঃ প্রত্যভিবাদনম্।নাভিবাদ্যঃ স বিদুষা যথা শূদ্ৰস্তথৈব সঃ॥ব্রাহ্মণং কুশলং পৃচ্ছেৎ ক্ষত্রবন্ধুমনাময়ম্।বৈশ্যং ক্ষেমং সমাগম্য শূদ্রমারোগ্যমেব চ॥
অর্থাৎ —যে (দাম্ভিক)ব্রাহ্মণ অভিবাদনের প্রত্যভিবাদন করতে জানেন না, তিনি বিদ্বান্ ব্যক্তির অভিবাদ্য নন ; তিনি শূদ্রতুল্য। সাক্ষাৎ হলে ব্রাহ্মণকে কুশল, ক্ষত্রিয়কে অনাময়, বৈশ্যকে ক্ষেম ও শূদ্রকে আরোগ্য বলতে হবে।
ব্রাহ্মনের দম্ভ থাকা চলবে না
আধুনিক ব্রাহ্মণ সমাজ মনুস্মৃতি থেকে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থসিদ্ধির মন্ত্রগুলো গ্রহণ করে এসেছে। তথাপি, তাহারা যাদেরকে নিজের থেকে নিচু বলে মনে করে। নিজের থেকে ছোটো জাত বলে মনে করে। শাস্ত্র যেখানে ওই ছোটো বা নিচু জাতকে আপন করার কথা বলেছে। কারণ "শাস্ত্রে ব্রাহ্মণ কে সকলের পিতা বলা হয়েছে"। , পিতা তার পুত্রকে কিভাবে ঘৃনা করবে? কিন্তু, অভিমানী, অজ্ঞানী নাম ধারী ব্রাহ্মণ তাদের গ্রহণ করেনা। আসলে এই নামধারী দাম্ভিক ব্রাহ্মণ-দেরই চন্ডাল বলা হয়েছে।
· শূদ্রকে বেদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে শিক্ষা থেকে নয়
একথা সত্য যে শূদ্রদের শিক্ষা ও অধিকার থেকে ব্রাহ্মণ সমাজই বহুকাল বঞ্চিত রেখেছে। এর প্রমাণ ইতিহাসের পাতায় পাতায় প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার এ কোথা বলা ভুল হবে যে, শূদ্রদের কোন শিক্ষা বা অধিকার একেবারেই ছিল না। শাস্ত্রে বহু জায়গায় শূদ্র গুরুর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, শূদ্রদের কাছ থেকেও উত্তম শিক্ষা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। শাস্ত্রে ব্রাহ্মণদের শুধুমাত্র বেদপাঠ ও শিক্ষাদানের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণকে বেদ পাঠ ব্যতীত অন্যান্য কাজ এবং শূদ্রকে বেদ পাঠ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। যেভাবে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই তিন বর্ণের শিক্ষার্থীরা ব্রাহ্মণ আচার্যের কাছে বেদ শিক্ষা পাঠ করতো। অনুরূপে শূদ্র শিক্ষক বা আচার্যের কাছে শূদ্ররা নানাবিধ জীবিকা নির্বাহের শিক্ষা অর্জন করত। ব্রাহ্মনের জীবন বিপন্ন হলেই জীবন নির্বাহের জন্য অন্যান্য কাজ যেমন কৃষিকাজ, পশুপালন, ক্ষত্রিয় কর্ম, করতে পারবে।
শাস্ত্র ব্রাহ্মণের জীবনকে খুবই কঠোর ভাবে বেঁধে রেখেছে। বর্তমানে সেই কঠোরতা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা প্রায় অসম্ভব। মনুষমানহিতার মনুসংহিতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের 162 ও 163 নম্বর শ্লোক যা বলছে তার অর্থ নিম্নরূপ— “ব্রাহ্মণ সর্বদা সন্মান কে বিষের মতন মনে করবে। অমৃত মনে করে সর্বদা অপমান আকাঙ্ক্ষা করবে। অপমানিত ব্যক্তি সুখে শয়ন করে সুখে জাগ্রত হয় এই সংসারে সুখে বিচরণ করে। অপমানকারী বিনষ্ট হয়।”
“The Brahmin will always regard honor as poison. Always consider insult as nectar and desire for insults and humiliation. The humiliated person sleeps happily and wakes up happily and wanders happily in this world. The blasphemer perishes.”
কর্ম ও অধিকার ভেদ:
মনস্মীতির দশম অধ্যায় সকল বর্ণের নিজ নিজ কর্ম এবং কর্তব্য নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। দ্বিজ কখনো শূদ্রের কর্ম করবে না এবং শূদ্র কখনো দ্বিজ ও কর্ম করবে না।
অনাৰ্য্যমাৰ্য্যকৰ্ম্মাণমাৰ্য্যঞ্চানাৰ্য্যকর্মিণম্ । সম্প্রধাযাব্রবীদ্ধাতা ন সমৌ নাসমাবিতি॥
অর্থাৎ —আর্য অনার্যের কর্ম ও অনার্য আর্যের কর্ম বিচার করে বিধাতা বলেছিলেন, 'এরা সমানও নয়, অসমানও নয়'।
বিপাকে পড়ে কোনো কাজ করলে তার প্রায়শ্চিত্ত করলেই তার দোষ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। স্বেচ্ছায় বা লোভ বশত কোন কাজ করলে সেটা দোষ যুক্ত হয়। যেমন ধরুন, আপনার বাড়িতে ডাকাত পড়ল আর আপনি নিজের জীবন বাঁচাতে হাতে বন্দুক তুলে নিলেন এবং ওই ডাকাতকে গুলি করে মারলেন। আপনার হাতে একজন প্রাণ হারালো ঠিকই কিন্তু সেটা হত্যা বলা চলবে না। কারণ আপনি তাকে মারতে আসেননি, তাকে না মারলে সে আপনার পরিবারের ক্ষতি করতে পারত। কিন্তু জেনে বুঝে, পরিকল্পনা করে, বা ক্রোধের বশে কাউকে হত্যা করলে তার সাজা আপনাকে পেতেই হবে।
দ্বিজরা শূদ্র হয়েছে:
কোনো এক সময়ে ব্রাহ্মণরা, এরকমই বিভিন্ন কারণে পতিত হয়ে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র বর্ণে রূপান্তরিত হয়েছিল। এর প্রমাণ মহাভারতে পাওয়া যায়—
"হিংসানৃতপ্রিয়া লুব্ধা: সৰ্ব্বকর্ম্মোপজীবিনঃ। কৃষ্ণাঃ শৌচপরিভ্রষ্টা স্তে দ্বিজাঃ শূদ্রতাং গতাঃ ॥” - (মহাভারত শান্তি পর্ব)
—হিংস প্রিয়, নৃত্য প্রিয় ,শৌচ ভ্রষ্ট ও লোলুদ্ধ হয়ে সর্ব্বকর্মকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করা দ্বিজরা শূদ্র হয়েছে। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক স্তরের উচ্চ আদর্শের পতন হয়েছে বলেই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র এই চার বর্ণের বিভাগ হয়েছে। শাস্ত্র বলছে এই স্তরকে আবার উর্ধ্বে উত্তোলন করা সম্ভব। ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য তপস্যা করে পুনরায় ব্রাহ্মণ হতে পারে।
মনু শাস্ত্র বলেছে:
শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতাম্ । ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবন্তু বিদ্যাদ্বৈশ্যাৎ তথৈব চ॥
অর্থাৎ —শূদ্র ব্রাহ্মণত্ব প্রাপ্ত হয়, ব্রাহ্মণ শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়। ক্ষত্রিয় থেকে শূদ্রাতে জাত পুত্র শূদ্র হয়, ক্ষত্রিয়ের দ্বারা বৈশ্যাতে জাত পুত্র বৈশ্য হয়।
এখানে বলা হয়েছে ক্ষত্রিয় পুরুষ থেকে শূদ্রা নারী জাত পুত্র শূদ্র হয়, ক্ষত্রিয়ের দ্বারা বৈশ্যার গর্ভের পুত্র বৈশ্য হয় । কিন্তু বিশ্বামিত্র ঋষি রাজা থেকে ব্রাহ্মণ হয়েছিলেন। কারণ, রাজা অর্থাৎ ক্ষত্রিয়দের বেদ পাঠে অধিকার আছে কিন্তু যেহেতু শূদ্রের সেই বেদ পাঠে অধিকাবঞ্চি তাই অন্য এক উপায় তাহা সম্ভব।
শূদ্র কিভাবে ব্রাহ্মণ হতে পারে ? আসুন দেখি।
শূদ্রায়াং ব্রাহ্মণাজ্জাতঃ শ্রেয়সা চেৎ প্ৰজায়তে।অশ্রেয়ান্ শ্রেয়সীং জাতিং গচ্ছত্যাসপ্তমাদযুগাৎ॥
অনুবাদ— শূদ্রায়াং ব্রাহ্মণাজ্জাতঃ (শূদ্রা ও ব্রাহ্মণ জাত) শ্রেয়সা (কন্যা) চেৎ (যদি) প্ৰজায়তে (জন্ম দেয়) অশ্রেয়ান্ শ্রেয়সীং (কন্যার কন্যা ) জাতিং (প্রজন্মে) গচ্ছত্যা(যায়) সপ্তমাদ (সপ্তম তম ) যুগাৎ (বর্ষে)॥
অর্থ— শূদ্রা কন্যা যদি ব্রাহ্মণকর্তৃক বিবাহিত হয়ে কন্যাজন্ম দেয়, সেই কন্যার কন্যা— এভাবে সপ্তম প্রজন্মের সপ্তম বছরে ওই সন্তান বা সন্ততি ব্রাহ্মণ হয়।
—কিন্তু এই শ্লোকটিকে দাম্ভিক ব্রাহ্মণরা অস্বীকার করে। কারণ, শূদ্রগামী ব্রাহ্মন পতিত হয়ে যায়। তাই নিজের পতন কেউ চায় না। অর্থাৎ দাম্ভিক ব্রাহ্মণরা শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতাম্ — অর্থাৎ এই শ্লোকটিও অস্বীকার করে। এখানেই ওই দাম্ভিক ব্রাহ্মণদের ধূর্ততার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা শাস্ত্র মতকেই গ্রহন করবো। দাম্ভিক ব্রাহ্মণ চন্ডাল আগেই বলেছি।
সৰ্ব্বতঃ প্রতিগৃহীয়াব্রাহ্মণস্বনয়ং গতঃ।পবিত্রংদুষ্যতীত্যেতদ্ ধর্মতো নোপপদ্যতে ॥
বিপন্ন ব্রাহ্মণ সকলের (ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র) থেকে প্রতিগ্রহ (ভিক্ষা) করবেন ; পবিত্র দূষিত হয় —এই কথা শাস্ত্র সম্মত নয়।
ব্যতিক্রম:
ধর্মাধর্ম সম্বন্ধে অভিজ্ঞ ক্ষুধার্ত বামদেব প্রাণ রক্ষার জন্য কুকুরের মাংস ভক্ষণে ইচ্ছুক হয়েও লিপ্ত হননি পাপ লিপ্ত হননি মহাতাপস শ্রী মহা তপস্বী ভরদ্বাজ নির্জন বনে পুত্রসহ ক্ষুধার্ত হয়ে বিধু নামক সূত্রধরের নিকট বাস করে গাভী ভিক্ষণ করেছিলেন। ক্ষুধার্ত ধর্ম অধর্মে অভিজ্ঞ বিশ্বামিত্র চন্ডালের হাত থেকে কুকুরের মতো জঘন্য মাংস গ্রহন করে ছিলেন। তাই, সমাজকে বোঝা উচিৎ কট্টরতা দ্বারা মানুষ নিজের ও নিজ ধর্মকেই ক্ষতি করে।
ব্রাহ্মণ ও শূদ্রের বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি:
মনুস্মৃতি বলছে —
बिप्र सेवैव शूद्रस्य विशिष्टं कर्म्म कीर्त्त्यते।यद तोऽन्यद्वि कउरूते तद्भवत्यस्य निष्फलम
ব্রাহ্মণের সেবাই শূদ্রের বিশিষ্ট কর্ম বলে কথিত। অন্যথায় সে যা কিছু করে তা তার কাছে অকেজো হয়ে যায়।
শুধুমাত্র এই শ্লোক এবং এর অর্থ পড়লে মনে হবে ব্রাহ্মণরা যেন শূদ্রকে নিজের দাস করে রাখার চেষ্টা করছে।
শূদ্রকে কি উচ্ছিষ্ট দেওয়া হয়?
এর পরের শ্লোকটি বলছে:—
उच्छिष्टमन्नं दातव्यं जीर्णीनि वसनानी च।पुलाकाश्चैव धान्यानां जीर्णाश्चैव परिच्छेदाः।
ব্রাহ্মন শূদ্রকে উচ্ছিষ্ট অন্ন (এটো নয় এমন অতিরিক্ত চাল) জীর্ণ বসন এবং ক্ষুদে শস্য ইত্যাদি দিতে দেবে।
এটা পড়ার পর মনে হবে ব্রাহ্মণরা যেন শূদ্রকে মানুষ বলে মনেই করে না। শাস্ত্র মতে কাউকে উচ্ছিষ্ট খাওয়ানো বা অন্যের উচ্ছিষ্ট খাওয়াকে অপরাধ বলে মনে করা হয়। তাই উচ্ছিষ্ট বলতে অনেকে এখানে এটো ভাত নয়। উচ্ছিষ্ট বলতে অতিরিক্ত খাদ্যকে বোঝানো হয়েছে। উচ্ছিষ্ট অন্নের অনেক প্রকার আছে:
(১) পরিবেশিত হওয়ার পর অন্যের দ্বারা স্পর্শ করা খাবারকেও উচ্ছিষ্ট বলা হয়। (২) একই সারিতে খেতে বসে, কেউ যদি উঠে দাড়ায় তবে ওই সারির সকলের আহারকে ওই উত্থিষ্ট ব্যক্তির উচ্ছিষ্ট মনে করা হয়। (৩) খাদ্য পাক করার সময়, বা খাওয়ার পরিবেশন করার সময় কথা বললে ওই খাদ্যকেও উচ্ছিষ্ট বলা হয়। (৪) খেতে বসে কেউ যদি খেতে খেতে কথা বলে তবে সে ক্ষেত্রেও উচ্ছিষ্ট মনে করা হয়। এরকম অনেক ভাবেই অন্ন উচ্ছিষ্ট হয়।
জীর্ণ বসন বলতে এখানে পুরনো কাপড়কেই বলা হয়েছে, ক্ষুদে শস্য মানে ভাঙ্গা চালকেই বলা হয়েছে। কিন্তু দেখুন, ব্রাহ্মণ নিজেরাই তো ভিক্ষা করে খায়। নৈষ্টিক ব্রাহ্মণরা দিনে একবার খায়। যেখানে ব্রাহ্মণ নিজেরাই দরিদ্রের মতো জীবনযাপন করে। সেখানে সে তাঁর সেবক কে এর থেকে বেশি কিই বা দিতে পারে?
শূদ্র চাইলে ক্ষত্রিয় সেবা করবে, অথবা বৈশ্যের সেবা করবে। শূদ্রের নিষিদ্ধ দ্রব্য ভক্ষণে, কোন পাপ নেই, সে উপনয়ন সংস্কার কর্ম রহিত। এ কথাও মনু বলেছেন।
শূদ্রের জন্য বিহিত যজ্ঞ নেই:
नास्याधिकारो धर्मोहस्ति न धर्मात् प्रतिषेधनम्॥
তার যেমন ধার্মিকতার ওপর কোন অধিকার নেই এবং ধার্মিকতার কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই। অর্থাৎ —বৈদিক যজ্ঞ শূদ্রের জন্য বিহিত নয়। শূদ্রের জন্য বিহিত পাকযজ্ঞ বিধান দেওয়া হয়েছে। এই পাকযজ্ঞে হোম, মানস জপ, মন্ত্র ছাড়া পূজা, নিত্যশ্রাদ্ধ ইত্যাদি পুণ্যকর্ম।শূদ্র সদাচার অবলম্বন করেই ইহলোক ও পরলোকে প্রশংসিত হয়ে থাকেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ চাইলেও, আপদকাল ব্যতীত নিত্য বেদ পঠন ও পঠন ছাড়া অন্যান্য কর্মে নিযুক্ত হতে পারবে না।
যেহেতু ব্রাহ্মণ পিতা তুল্য শ্রদ্ধেয় এবং সকলের অভিভাবক, সে হেতু শূদ্রের সেবা, সামর্থ্য, দক্ষতা ও পোষ্য বর্গের সংখ্যা বিচার করে তার যোগ্য জীবিকা স্থির করেন।
यथा यथा हि सद बृत्तमातिष्ठ अनसूयकः।तथातथेमं चामुं च लोकों प्राप्नोत्यनिन्दितः॥
—কারণ তারা (ব্রাহ্মণরা) যেমন অনুসুয়া পরায়ন হয়ে অর্থাৎ ঈর্ষা রহিত হয়ে সত্য মার্গ গ্রহণ করে, দোষ রহিত ব্যক্তি সেভাবেই এই লোক ও স্বর্গ বা পরলোক প্রাপ্তির জন্য (ঈর্ষা) বর্জন করবে। এই মনে করে ব্রাহ্মণ যেন গর্বিত না হয়। তার জন্য স্মৃতি শাস্ত্র আবার বলছে:
शक्तेनापि ही शूद्रेण न कार्यों धनसंचयषः।शूद्रों ही धनम आसद्य व्राह्मणानेव वाधते
অনুবাদ: शक्तेनापि ही शूद्रेण (বল বা ক্ষমতা প্রয়োগ করে শূদ্রের) न कार्यों धनसंचयषः(ধন সঞ্চয় করা কর্তব্য নয়)। शूद्रों ही धनम आसद्य (শূদ্ররা সম্পদের উৎস) व्राह्मणानेव (ব্রাহ্মণদের) वाधते(বৃদ্ধি করে)
ভাবার্থাৎ —'শক্তি দ্বারা শূদ্রের সম্পদ সঞ্চয় করা উচিত নয়। শূদ্ররাই ব্রাহ্মণদের সম্পদ ও ধন বৃদ্ধি করে।' বোঝানো হয়েছে, শূদ্রের ধনকে ব্রাহ্মণ যেন বল প্রয়োগ করে হরন না করে। কারণ শূদ্রই ব্রাহ্মণের ধন বৃদ্ধি করে। এই শ্লোকটি অনুবাদ করতে গিয়ে অনেক অনুবাদক গন এভাবে অনুবাদ করেছেন— "শূদ্র সক্ষম হলেও ধন সঞ্চয় করবে না, কারণ শূদ্র ধন লাভ করে ব্রাহ্মণদের এই পীড়া দেয়।" এই অনুবাদ ধর্মের দশ লক্ষণের পরিপন্থী নয়। তাই এই অনুবাদ বিকৃত।
উপসংহার:
এই রকম ভুলের জন্য ব্রাহ্মণকে শূদ্র বিরোধী এবং শূদ্রকে ব্রাহ্মণ বিরোধী করে তোলা সহজ হয়েছে। বামপন্থী সেকুলার বিচার ধারায় অনুপ্রাণিত ব্রাহ্মণ আজ হিন্দু ধর্মের ধ্বংসের জন্য ব্রতি হয়েছে। তারা মনুবাদ, হিন্দুত্ববাদের অস্তিত্বই রাখতে চায় না। তাদের মতে লেলিন, স্টালিন যা বলেছে, সেটাই ঠিক।
0 Comments: