Headlines
Loading...
সনাতন ধর্মের 'গুরুপ্রসাদী' প্রথা সম্পর্কে অপবাদ।

সনাতন ধর্মের 'গুরুপ্রসাদী' প্রথা সম্পর্কে অপবাদ।

গুরুপ্রসাদী বলে আদৌ কোনো প্রথা ছিল না। ইহা একটি কাল্পনিক কাহিনী মাত্র। ডিরেজিওর ইয়ং ইন্ডিয়ান সোসাইটির অনুপ্রেরণায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুবকদের মধ্যে একরকম আন্দোলন শুরু হয়। সেই কাল খন্ডে এরকম বহু terminology উদ্ভব হয়। গুরুপ্রসাদী এরকমই একটি অপবাদ। এই অপবাদ অনুসারে, "বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে সহবাস করার আগেই গুরুদেবের কাছে নিজের স্ত্রীকে নিবেদন করতে হতো। গুরুর নব বধূর সাথে সহবাস করা হয়ে গেলে তার প্রসাদ পেতেন শিষ্য, তাই এই প্রথার নাম হল গুরুপ্রসাদী।" ঊনবিংশ শতাব্দীর এক লেখক কালিপ্রসন্ন সিংহের  'হুতোম প্যাঁচার নকশা' বইয়ে এইরকম ঘটনার বিবরণ মেলে। হুতোম প্যাঁচার নকশা কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক সামাজিক নকশা জাতীয় রচনা। বিছিন্ন বা কাল্পনিক কনো সামাজিক ঘটনাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক আকারে লেখা এই হুতোম প্যাঁচার নকশা বইটিতে কোন শাস্ত্রিয় প্রমাণ দেওয়া নেই। এমন নেক্কার জনক ঘটনা যোদি কোথাও ঘটেও থাকে, তবে সেটা নিছকই লজ্জাজক। সনাতন ধর্মের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।


গুরু কে?

শ্রীশ্রীগুরুগীতা আনুশারে গুরু শব্দের অর্থ নিম্ন প্রকার বলা হয়েছে :-

গুকারশ্চান্ধকারঃ স্যাদ্ রুকারন্তন্নিরোধকঃ।
 অন্ধকারনিরোধিত্বাৎ গুরুরিত্যভিধীয়তে ।। (শ্রীশ্রীগুরুগীতা )

তারক উপনিষদের মতে, গুরু শব্দের অর্থ হচ্ছে গু=গুহা বা অন্ধকার, রু=তেজ বা আলো। পরম পুরুষ শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব একদা বলেছেন, "গুরু হলেন 'ঘটক’। যিনি ভগবানের সঙ্গে ভক্তের মিলন ঘটান। শিষ্যের মনের আকুলতা অনুযায়ী মন্ত্র ও ইষ্ট ঠিক করে দেন।"

শ্রীমদ্ভগবতে বলা হয়েছে, "যিনি তার আশ্রিত জনকে জন্ম-মৃত্যুর সংসার আবর্ত থেকে উদ্ধার করতে না পারেন,তার গুরু হওয়া উচিত নয়" (ভাঃ৫/৫/১৮)।  শ্রীগুরুই জ্ঞানালোক দ্বারা শিষ্যের অন্ধকারাচ্ছন্ন মনকে আলোকিত করেন। সকল শিষ্যের কাছে তাঁর নিজ গুরু সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম। তিনিই শিষ্যের ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। তবে কোনও শিষ্যের উচিত নয় তাঁর গুরুকে ভগবানের প্রতিনিধি ভেবে অন্য গুরুর অবমাননা করা। বরং অন্যের গুরুদেবকে ভক্তি প্রদর্শন করাও প্রকৃত সদগুরুর প্রকৃত শিষ্যের পবিত্র কর্তব্য। 


প্রসাদ কাকে বলে?

প্রসাদ শব্দটি দুটি পদ 'প্র' 'সাদ' এর সমন্বয়ে গঠিত। পদ 'প্র' এর অর্থ পূর্বে, সামনে এবং 'সাদ' পদের অর্থ 'বাস করা'। প্রসাদ ক্রিয়াপদ প্রসিদতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং যার অর্থ বাস করে, সভাপতিত্ব করে, খুশি করে বা অনুগ্রহ করে। যে কোন খাদ্য বস্তু  দেবতার প্রতিমূর্তির জন্য দেওয়া হয়, তা প্রসাদ বলে বিবেচিত হয়। 

বস্তুগত অর্থে, প্রসাদ একজন  ভক্ত ও দেবতার মধ্যে আদান প্রদানের একটি প্রক্রিয়া।উদাহরণস্বরূপ, একজন ভক্ত কোনো বস্তু যেমন ফুল, ফল বা মিষ্টির নৈবেদ্য দেয়। দেবতা তখন তাঁর সূক্ষ্ম অংশ ভোগ করেন। এই-ঐশ্বরিকভাবে বিনিয়োগ করা পদার্থকে ভোগ বলা হয় এবং ভক্ত দ্বারা গ্রহণ, পরিধান ইত্যাদি গ্রহণ করা পদার্থকে প্রসাদ বলা হয়।

ভোগের বস্তুকে ইষ্ট দেবতার চরণে নিবেদিত করে সেটা প্রসাদ বা প্রসন্ন রূপে গ্রহণ করা হয়। 

ভোগ নিবেদন পদ্ধতি (সংক্ষিপ্ত ):

ভোগ নিবেদন পাত্রে একটি করে তুলসী, বা বেল পাতা (দেব-দেবী ভেদে বেল বা তুলসি পাতা বর্জনীয় ) পাতা দিতে হবে। ভোগ নিবেদন পাত্রের পাশে একটি জলের পাত্র রাখতে হবে। ভোগ নিবেদনে আপনার গুরু প্রদত্ত দীক্ষামন্ত্র/পঞ্চতত্ত্ব/হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কমপক্ষে ১০ বার (প্রতি পাত্রের জন্য) জপ করে নিচের এই মন্ত্র উচ্চারণ করে ফুল, জল অর্পণ করুন।

নিবেদনের প্রণাম মন্ত্র :   

সমানায় স্বাহা

উপানায় স্বাহা

অপানায় স্বাহা

ব্যানানায় স্বাহা

পস্তুরমসি  স্বাহা

ভূ পতয়ে নমঃ

ভূব পতয়ে নমঃ

স্ব পতয়ে নমঃ

ভূভূর্বস্ব পতয়ে নমঃ

নারায়ণ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ।

এতৎ সোপকরণামান্ননৈবেদ্যং

 ওঁ শ্রীশ্রীদেব বা শ্রীশ্রীদেব্যৈ নমঃ 

(বলে নৈবেদ্যে ফুল দিতে হবে)।

ভোগ নিবেদনের পর : বিগ্রহে বা ঘটে বীজমন্ত্রে ধ্যানমন্ত্র অনুযায়ী ধ্যান করতে হবে (কমপক্ষে ১০ বার)

এই ভাবেই শাস্ত্র প্রসাদ ও গুরুর ব্যাখ্যা করেছে। মনে হয় না, কোনো কালেও গুরুপ্রসাদি বলে কিছু ছিলো। এই সব কিছুই বিধর্মীদের কুমতলব ও কু -চক্রান্ত। অন্যের বউকে মা বলে স্মরণ করতে হবে, এটাই শাস্ত্রীয় বিধান।

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: