Headlines
Loading...
ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্র ইউক্যারিস্ট।

ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্র ইউক্যারিস্ট।

ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্র ইউক্যারিস্ট বা Holy Communion গ্রহনের রীতি প্রায় একই রকম। তাবে কিছু কিছু Technical পার্থক্য আছে। কি সেই বিসমতা, বা সমতা সেটাই আজ আমরা এখানে জানবো।


ধর্মকে নিয়ে মানুষের অনেক কৌতুহল। আপনিও কৌতুহলী তাই এই প্রতিবেদনটি পড়ছেন। আমি মূলত হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন উৎসব, রীতি, সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা করে থাকি। অন্য কোনো ধর্মমত বা ধর্ম সমপ্রদায় নিয়ে আমাদের এই ব্লগ ওয়েব সাইট নয়। 

অনেক সময় নিজের বক্তব্য সম্পর্কে স্পষ্টধারণা তৈরী করার জন্য, পাঠকের বোধ বুদ্ধির আশ্রয় নিতে হয়। অনেক সময় নিজের অসৎ উদ্দেশ্য প্রচার করার জন্য কিছু কিছু অসৎ ব্যক্তি হিন্দু ধর্মের অপব্যখ্যা করে থাকেন। তাহা খন্ডন করে সত্য মণ্ডন করার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আজকের আলোচনার বিষয় গুলো: -

অধিকার ভেদ 

সামন অধিকার সবার দরকার কিন্তু সব ক্ষেত্রে অধিকার সবার সমান হতে পারে নাযোগ্যতা ছাড়া কেউ কোনো পদ লাভ করতে পারে না, তাই সমাজে অধিকার ভেদ আছে। যুক্তি দিয়ে বিচার করলে আমরা সত্যকে সহজে নির্ণয় করতে পারবো। তার জন্য তর্ক, বিতর্ক এবং কুতর্ক নির্ণয় করতে সেই সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। 

আপনি চাকরির ক্ষেত্রেই দেখুন, সবাই Boss বা মালিক হয় না। সবাই সমান মাইনে পায় না। সেরকমই ধর্মীয় বিষয়ে সবাই সমান অধিকার পায় না। প্রত্যেক পদের নিজ নিজ মর্যাদা আছে। যারা নিজের পদ মর্যাদাকে বোঝে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে, তারা সহজেই আমার বক্তব্য গুলোকে বুজতে পারবে। 

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে অধিকার আছে, সেই অধিকারে সাম্যতা আনতে গিয়ে কেউ নিজের প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে সেই একই সম্পর্ক স্থাপন করে না। এখানে শুধু নারী পুরুষের বিষয় নয়। এখানে সামাজিক মর্যাদা কাজ করে। 

তাই ভেদ ছিলো, আছে এবং থাকবে। হাতের আঙ্গুল গুলো এক নয়। এই এই বৈষম্যতা কি খারাপ দেখায়? না সেটি আপনার হাতকে নিপুণতা থেকে বঞ্চিত করে? নিজেই বিচার করুন।

অন্যের মূখের দিকে তাকিয়ে আমরা খুব সহজেই তার ভালো মন্দ বিচার করতে পারি। কিন্তু আয়নার সামনে দাড়িয়ে যখন আমরা নিজের মুখ দেখি। তখনই বোঝা যায় আমরা তাদের মতোই।

এই প্রতিবেদনটি সমাজকে আয়না দেখাবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের অধিকার বা অনধিকার সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেই ভ্রান্তি দূর করতে কেউই কোনো প্রয়াস করে না, বরং যারা একতার কথা বলে জাত পাতের বদনাম করে, তারাই সমাজে ভেদাভেদ ও দূরত্ব তৈরী করে। কারণ তাঁদের মধ্যে সামান্য ভেদ-অভেদ জ্ঞান নেই। 

ভেদ জ্ঞান:

যে যেই রূপে জ্ঞাত, সেটাই তার জাতি। যেমন: মানুষ, পশু, পাখি, কিট পতঙ্গ এগুলো বিভিন্ন জাতি।  আলবার্ট আইনস্টাইন এবং ঋষি কাপুর একই জাতির। আবার আরেক ভাবে আইনস্টাইনের ধর্মীয় জাত ইহুদি কিন্তু ঋষি কাপুরের জাতি হিন্দু। এভাবেই ভাষা, সংস্কৃতি, কর্ম ক্ষেত্র বিশেষে জাত বিভিন্ন। এ'ই ভেদ জ্ঞান বোঝার বিষয়। জগতে তিন প্রকার ভেদ আছে। তারা যথাক্রমে সগত, সজাত ও বিজাত। এখানে সংক্ষেপে সজাত ও বিজাত ভেদ নিয়ে আলোচনা করবো।

সগত ভেদ: 

একই বস্তুর মধ্যে ভেদ যেমন, তোমার মাথা ও পা, বুক ও পেট, অথবা একই পয়সার এপিঠ-ওপিঠ হিন্দু ঈশ্বর এরকম ভেদ শূন্য। 

বিজাতীয় ভেদ: 

আইনস্টাইন কখনোই ঋষি কাপুরের মতো অভিনয় করতে পারবে না। বিপরীতে ঋষি কাপুরকে দিয়ে আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা করানো সম্ভব নয়। এখানে অধিকার ভেদ তাদের দক্ষতায়।

"ঋষি কাপুরকে দিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা করানো সম্ভব নয়।"— এই উক্তি কি ঋষি কাপুরের জন্য অপমানজনক? আবার "আইনস্টাইনকে দিয়ে কখনোই  অভিনয় করানো উচিত না"— এই উক্তি কি আইনস্টাইনের জন্য অপমানজনক? অবশ্যই নয়। কারণ এদের মধ্যে বিজাতীয় ভেদ আছে। তাই এই ধরনের তুলনাই হাস্যকর।

সজাতীয় ভেদ:

এই তুলনা যদি ঋষি কাপুর ও অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে করা হয়, তবে সেটা হবে সজাতীয় ভেদ। অমিতাভ বচ্চনের ফ্যান সাপোর্টার ঋষি কাপুরের সুনাম শুনে খারাপ মনে করবে না। কিন্তু তাঁদের মধ্যে তুলনা করে যদি অমিতাভ বচ্চনকে কম করে দেখানো হয়। তবে বিরোধে হবে।

সজাতীয় ভেদের তুলনা করে হিন্দুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বিবাদকে নিরস্ত্র করতে আমি ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্র ইউক্যারিস্ট প্রসঙ্গ টানছি। আসুন জেনে নিন:

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্র ইউক্যারিস্ট

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্র ইউক্যারিস্ট বা Holy Communion গ্রহনের রীতি হলো এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে চার্চের ফাদার তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্র আত্মার আশীর্বাদে রুটি এবং ওয়াইনকে খ্রীষ্টের মাংস এবং রক্তের রূপ দেয়। এর অর্থ এই যে— সেই রুটি সত্তিকারের মাংস বা রক্তের পরিণত হয় না। প্রতিতাত্মক রূপে মনে করা হয় যে তারা যীশুর মাংস এবং রক্ত প্রসাদ রূপে গ্রহণ করে যীশুর শরীরে এক হয়েছেন। একে Holy Communion বলা হয়। 

সবাই Holy Communion গ্রহণ করতে পারে না। তাদের বিশ্বাস, যারা এই হোলি কমিনিয়ন অর্থাৎ যীশুর দেহ ও রক্ত গ্রহণ করেছে। তাদের শরীরে যীশুর মত ক্ষমতা এসেছে। তাদের আত্মা নরকের আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে। তারা একই পরিবারের সদস্য হয়েছে। যীশু খ্রীষ্টের বলিদানকে স্বীকার করে তাঁরা সেই চুক্তি বা অঙ্গীকার স্বীকার করেছে। যা যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের দিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এবার জেনে নেই ব্রাহ্মণ্যবাদের অধিকার অনধিকার সম্পর্কে কিছু কথা। 

ব্রাহ্মণ্যবাদের সংস্কার 

হিন্দু ধর্ম বা সনাতন বৈদিক ধর্ম ভারতের প্রাচীনতম ধর্ম। এই ধর্মে দীক্ষিত মানুষ সমাজকে চার ভাগে বিভক্ত করেছে। এই চার ভাগ হলো যথাক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এই চার এই তিন বর্ণের লোকেরা উপনয়ন সংস্কার দ্বারা পাঠের অধিকারী হয়। উপনয়ন সংস্কার না হলে বেদ পাঠ করা যায় না। উপনয়ন সংস্কার না হওয়া অবদি ব্রাহ্মণ বলুন , আর  ক্ষত্রিয়, কি বৈশ্যই বলুন। উচ্চ কূল বর্ণে জন্ম নেওয়া সন্তান সন্ততিরা শূদ্র বলেই গণ্য হন। 

এই উপনয়ন সংস্কার হাওয়া মানে সমাজের একটি ভার নিজের কাঁধে নেওয়া। ব্রাহ্মণ শিক্ষা দীক্ষায় ভার নেয়, ক্ষত্রিয় শাসন ও রক্ষার ভার নেয়, বৈশ্য সঞ্চিত অর্থ সমাজের জন্য কি ভাবে বিনিয়োগ করবে, বা বৃদ্ধি করবে সেই শিক্ষা নেয় এবং শূদ্র যিনি উপনয়ন সংস্কার দ্বারা এই ভার থেকে মুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বেদ ছাড়া অন্য কাজ করেন। আবার যিনি উপনয়ন সংস্কার করে বেদ পাঠ ছেড়ে দিয়েছেন, তিনিও তাঁর বংশ সহিত শূদ্র বলে গণ্য হন।

উপনয়ন সংস্কার হলে বিভিন্ন বৈদিক মন্ত্র, যেমন: ‘প্রণব’, গায়ত্রী ইত্যাদি মন্ত্র উচ্চারণ করতে অধিকার গ্রহণ করে। এর অর্থ এই যে— উপনয়ন সংস্কারের পর মন্ত্রগুলো শুধু শব্দ থাকে না।

এখানে কেউ কারোর শিক্ষা, বা সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে না। মানুষের অজ্ঞানতা এই যে, স্মৃতি শাস্ত্রের কথা না জেনে বুঝে সামাজিক দূরত্ব এনেছে। এই দূরত্ব কমিয়ে আমাদের মানুষ হতে হবে। তারপর, না হয় ব্রাহ্মন হাওয়া যাবে।

তাহলে আমরা দেখলাম, উভয় ক্ষেত্রে কেউই এই জগতের কোন কিছুর অধিকার থেকে বঞ্চিত করল না। এই অধিকার বা অনধিকার শুধুমাত্র পরোমার্থিক বা আধ্যাত্মিক চিন্ময় জগতের জন্য । 

 $ads={1}

স্বাদ বদল

সব সময় এক রকম অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে পেতে আমরা একরকম একগুঁয়ে হয়ে গেছি। তাই, এখন স্বাদ বদল দরকার। হিন্দু ধর্মকে ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্ম বলা হয়। বলা হয় ব্রাহ্মণরা নিজেরাই বিভিন্ন শাস্ত্র রচনা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে উচ্চ বর্ণ প্রমাণ করেছেন। কিন্তু আমরা যখন হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র গুলো খুলে দেখি ও অর্থ বোঝার চেষ্টা করি, তারা ব্রাহ্মণ্যবাদ নয় তাঁর বদলে ব্রহ্মবাদ প্রচার করেছে। 

ব্রাহ্মণ্যবাদ নয় ব্রহ্মবাদ 

অনেকের কাছে এই ব্রহ্মবাদ শব্দটি নতুন হলেও ব্রাহ্মণ ধর্ম বা ব্রাহ্মণ্যবাদ শব্দটি পুরাতন। কারণ, ব্রাহ্মণ্যবাদ শব্দটি বহুল পরিমাণে ব্যাবহার করা হয়েছে। অথচ ব্রাহ্মণ ধর্ম বা ব্রহ্মবাদ শব্দটি শাস্ত্রে বহুবার, বহু স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ কোথাও নেই। 

তাই এটি একটি ঢালাই করা শব্দ। ব্রহ্মবাদ বলে— জগতের সকলই ব্রহ্ম, গুণ ও কর্ম ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও ক্রিয়া। তাই ব্যবহারিক অর্থে ভিন্নতা হলেও মূলে সকলকেই এক ভাবে বিচার করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ একটা সোনার মূর্তির মাথার থেকে এক রতি সোনার যে মূল্য পায়ের এক রতি সোনার থেকে বেশী হবে না। কিন্তু যদি মূর্তির রূপ বা সৌন্দর্য্য বিচার করতে হয় , তবে মানুষ মুখের দিকেই তাকাবে। তাই ওই সোনার মূর্তির বলে পায়ের মূল্য কমে যাবে না 

ইংরেজ আমলে ম্যাকলে নামক এক ইংরেজ যে কনভেন্ট শিক্ষা প্রণালীর Road Map তৈরী করে গেছেন। সেটা অনুসরণ করে আমরা নিজেদের বৈদিক সনাতন হিন্দু ধর্মকে, নিজেদের দেশীয় সংস্কৃতিকে, নিজেদের সামাজিক মূল্যবোধকে, নিজেদের কর্ম দক্ষতাকে খুব কম ও ভুল বুঝেছি।

বিদেশী সংস্কৃতির মূল না জেনে, তাদের অন্তঃসার হীন, জাগজমক পূর্ন জীবন শৈলীতে মন মুগ্ধ হয়ে নিজেদের মাতা পিতা ও গুরূজনদের, নিজেদের স্ত্রী-পূত্র-ভাই-বোন, দেবী দেবতাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছি।

যত কু-সংস্কার আমরা নিজের ধর্মে দেখতে পাই। আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার বর্ণ ব্যবস্থার নিন্দা করি, নিজেকে নাপিত বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পেলেও হেয়ার স্টাইলিশ পেশাকে শেখার জন্য টাকা খরচ করি। ছুতোর, কামার, দালাল, চাকর এই শব্দগুলো গালির মত মনে হয়। নিজেকে কামার, দালাল, চাকর পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। আবার ওই একই অর্থে কারপেন্টার, ব্লাক স্মিথ, ব্রোকার, সার্ভিস ম্যান — এই শব্দগুলো শুনে সম্মান বোধ হয়। নিজেদের নামের সঙ্গে এই গুলো অনেকেই পদবীর মতো ব্যাবহার করে।

হয়তো সেই জন্যে আমরা পাশ্চাত্য দুনিয়ার থেকে হাজার বছর পিছিয়ে গেছি। তার ওপর সেকুলারিজমের নামে আমাদের মধ্যে একটা ছদ্ম মানববাদ চাপানো হয়েছে। যার মায়া বুঝতে না পেরে মিত্র ও শত্রুভাব আমাদের মন থেকে মুছে গেছে। 

সেকুলারিজম

এই সেকুলারিজম, প্রটিস্টান চার্চ ও রোমান ক্যাথলিক চার্চে রাজ ক্ষমতাকে রাজার শাসন ক্ষমতা থেকে আলাদা করার জন্য লাগু করেছিল। ঈশ্বর মন্ত্রণালয় ও মানুষের মন্ত্রণালয় দুটো আলাদা আলাদা সত্তা।

সেটাই আমরা আমাদের দেশের ধার্মিক সত্তাকে শাসন সত্তা থেকে আলাদা করার জন্য ব্যবহার করেছি। যেখানে এর কোনো প্রয়োজনই ছিলো না। কারণ ভারতের সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে আমরা ভেবেছি নিরপেক্ষ ভাবে সব ধর্ম নিজের নিজের মত ও আদর্শ মেনে চলবে।

তাই, আমরা সাধীন হওয়ার পরে আমাদের যখন সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ পড়ানো হয়, আর একেই যখন বিশ্বের দরবারে সমস্যা হিসেবে দেখানো হয় তখন এটি খুবই খারাপ দেখায়। মনে হয়, বাদরকে লিপস্টিক লাগিয়ে সুন্দর দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

আমরা ( ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্থান ) সব বিষয়ে পাশ্চাত্য দেশের স্বীকৃতির জন্য মুখ চেয়ে থাকি। কারণ আমাদের নিজেদের স্বীকৃতি দেওয়ার সংস্থা নেই। অনেক কিছুই বলার আছে, তবে বলা যাবে না। কারণ যে প্লার্টফর্মে আমরা লিখছি, সেটাও আমাদের নিজের নয়।

তাঁদের দেশে রাজা রানী আছে। আমাদের দেশে শুধুই মন্ত্রী। তাঁরা পোপের আশীর্বাদ নিয়ে কাজ শুরু করে, আমরা পূজা করলে সেকুলারিজম অশুদ্ধ হয়ে যায়। 

এটা সেই দেশ, যেখানে প্রজার সুখের কথা ভেবে এক রাজা নিজের রাণীকে বনে নির্বাসিত করেছিল। তিনি পিতার কথা যাতে মিথ্যা না হয়ে যায়। সে জন্য তিনি রাজ তিলক, রাজ সিংহাসন ত্যাগ করে বনবাসী হয়ে ছিলেন। এই সবই এখন কাল্পনিক বা দার্শনিক গল্প। কিন্তু কে নিজেকে ঈশ্বরের পূত্র বলায় জীবন দিতে হোলো, সেটাই ঐতিহাসিক সত্য। তিনি অবশ্যই সত্য এবং ত্যাগী পুরুষ ছিলেন। আমার বক্তব্য হোলো, ঘরের খেয়ে আমি বনের মোষ কেন তাড়াবো?

আমাদের দেশেই ন্যায় করার জন্য এক রানী নিজের সন্তানকে দণ্ড হিসেবে হাতির পায়ে পিষে মারার আদেশ দিয়েছিলেন এবং সেটা হয়েছে। সেখানে আজকের নেতা ও মন্ত্রীরা প্রজাতন্ত্রের নামে সত্তার আসন অধিকারে জন্য প্রজাকে প্রজার বিরুদ্ধে, দলকে দলের বিরুদ্ধে, ধর্মকে ধর্মের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। 

আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করে। সেটি হলো পোশাক-পরিধান, ন্যায়-বিধান, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, উপকরণ সব কিছুই বিদেশের ভালো। আমাদের দেশের জিনিস সেগুলো থেকে তাঁদের পঁচা গলা নীতি বা বস্তু গুলো মুল্যবান। দেশি চালের কদর নাই, বিদেশী মলে গন্ধ নাই। বিদেশী কাপড়, ঘড়ি, খাবার এমনকি ভাষা সব কিছুরই কোয়ালিটি আছে, আমাদের গুলোতে দোষ। একটা খাবার 2 মাস পুরনো হলেও ভালো। দেশের বিনিয়োগ পতি গুলো ঠগ বাজ, আর বিদেশের উইলিয়াম সাহেব আমাদের দেশের শুভ চিন্তক। মর্ডান বলতে আমার তাদের মতো হওয়াকেই বুঝি। এটাই দুঃখের এবং হাসির বিষয়।

$ads={2}

হিন্দু ধর্ম ব্রাহ্মণ্যবাদ নয় বরং ব্রহ্মবাদ প্রচার করে। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র গুলো সকলকে ইশ্বর রূপে দর্শন করে। অনেকেই আমার এই বক্তব্য হজম করতে পারবে না। কারণ তাদের সেই উপলদ্ধি সেকুলারিজম ও কনভেন্ট শিক্ষার দ্বারা কনভার্টেড হয়ে গেছে। আমি তাদের কাছে "গোবর ও গোমূত্র ভগৎ"। এতে আমি কিছুই মনে করি না। আমি তো তাদের জন্য বলবো যারা আমায় শুনবে ও আমার কথা গুলো নিজের বুদ্ধি দিয়ে বিচার করবে।

ব্রহ্ম এবং ব্রাহ্মণ:

ব্রহ্ম এবং ব্রাহ্মণ দুটো একেবারেই আলাদা শব্দ। ব্রহ্ম, শব্দের অর্থ হলো বিরাট বা সম্পূর্ণ সমন্বিত (whole integrated)। উপনিষদের দৃষ্টিতে এই মহাবিশ্বকে এক এবং অদ্বিতীয় ব্রহ্মের অভিন্ন ও অখন্ড অংশ মনে করা হয়। তাই, সমাজতন্ত্র, বাস্তুতন্ত্র, রাজতন্ত্র সব কিছুকেই বিরাট পুরুষের দেহ রূপে বর্ননা করা হয়েছে। সেই ব্রহ্মের স্বরূপ সমাজের মস্তক বলা হয়েছে ব্রাহ্মণকে, বাহু ক্ষত্রিয়, পেট বা উরু বৈশ্য, এবং চরন হলো শূদ্র। এই বর্ণধর্মই আসলে বৈদিক ধর্ম। 

একেই বর্ণবাদ এবং বর্তমানে ব্রাহ্মণ্যবাদ নামে প্রচার করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ বা Brahmanism একটি ঔপনিবেশিক শব্দ। এই ব্রাহ্মণ্যবাদ শব্দটি ব্যবহার করা হয় সমাজের মস্তক স্বরুপ ব্রাহ্মণ গোষ্ঠীকে সমাজের অন্যান্য  গোষ্ঠী থেকে আলাদা করার জন্য। 

আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা ঈর্ষা বা ego কাজ করে। অন্যকে নিজের থেকে উপরে উঠতে দেখলে আমরা তাকে ঠ্যাং ধরে নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকি। পাশের বাড়ির ছেলে যদি সরকারি চাকরি করে, আর তুমি বেকার। তাহলে তোমার মা-বাবা দিনরাত তোমাকে তার তুলনা দিয়ে কথা শোনাবে। মিস্টার দাস আপনার থেকে বেশি মাইনে পায় । সে তার বউকে নিয়ে মাঝেমধ্যে গোয়া, দার্জিলিং, সুইজারল্যান্ড ঘুরতে যায়। এটা দেখে আপনার সহধর্মিনীর মনে একটা ঈর্ষা জন্ম হবেই। এবং এই ধরনের ঈর্ষার অ্যাকশন গুলোই আপনার মনে সরকারি চাকরি করা ঐ পাশের বাড়ির ছেলে এবং মিস্টার দাসের প্রতি হিংসা (ক্ষোভ) সৃষ্টি করবে।  ব্রাহ্মণ্যবাদ শব্দটি, ওই পাশের বাড়ির ছেলে এবং মিস্টার দাসের অনুরূপভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এতে করে, ব্রাহ্মণরা তো বটেই যারা অব্রাহ্মণ তাদের মনেও ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতি একটা গ্লানি, একটা ঘৃণা তৈরী হয়েছে।

ব্রাহ্মণের মধ্যেও যতটুকু ব্রহ্ম আছে, একটা শপচ, চন্ডাল, মেথরের মধ্যেও ঠিক ততটুকু ব্রহ্মা আছে। শুধু পার্থক্য একটাই, একজন সংস্কার যুক্ত অপরজন সংস্কার মুক্ত। তন্ত্রশাস্ত্র বলে যদি চণ্ডাল ও ব্রহ্মকে জেনে যায় তবে সেও শিবের মতো পূজনীয়। মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে চন্ডালের থেকেও মঙ্গলজনক বিদ্যা গ্রহণ করবে। সেই জন্য ভগবান শংকরাচার্য  একজন চন্ডালের তর্ক দ্বারা পরাজিত হয়ে তাঁকে ষষ্টাঙ্গে প্রণাম করেছিলেন।

খ্রিস্টের মহা প্রসাদ

পাশ্চাত্য দেশের আচার্য যিশু খ্রিস্টের দেহ ত্যাগের পর যখন ক্যাথলিক চার্চ প্রতিষ্টিত হলো, তখন তাদের প্রধান ধর্মগুরু পোপকে বলা হলো মস্তক। পোপের অন্তর্গত বিভিন্ন চার্চ প্রতিষ্টিত হলো। ওই চার্চ গুলোকে পরিচালনা করার জন্য নিযুক্ত হলো বিশপ। মাথা হিসেবে বিশপ চার্চ পরিচালনার কাজ করতো। বিশপের নিচে ফাদার , এবং তাঁর নিচে থাকতো বিভিন্ন ভাত্রী (ব্রাদার) ও ভগ্নী (সিস্টার বা নান) মন্ডলী। এভাবেই তারা গঠন করে যীশু খ্রীষ্টের একটি সম্পুর্ণ দেহ ও পরিবার। এই দেহের অঙ্গ হতে গেলে Baptism নিতে হয়। Baptism এরপর নিশ্চিতকরন করা হয়। এর পর তাঁদের কে ‘মহা প্রসাদ’ বা Holy Communion রূপে ব্রেড ও ওয়াইন দেওয়া হয়। একে Holy Eucharist বলে। 

যে কেউ এই Holy Communion -এ অংশ হতে পারেনা।  অর্থাৎ সবাইকে ওই মহা প্রসাদ দেওয়া হয় না। আবার ওই মহা প্রসাদ খাওয়ার পর সে পবিত্র আত্মার অধিকারী হয়। যে কোনো খ্রিস্টান সেই পবিত্র আত্মার কাছে যীশুর নামে প্রার্থনা করে, পবিত্র আত্মা তাকে তা দেয়। আরোগ্য কামনা করলে কামনা পূর্ন হয়।

এটা খ্রীষ্টানদের বিশ্বাস।  পাশ্চাত্য দেশে একটা সময় মনে করা হতো যে পশু ও নারীদের দেহে কোনো আত্মা থাকে না। এমনকি যারা যীশু খ্রীষ্ট'কে গ্রহন করেনি, তারাদের দেহেও আত্মা থাকে না। এদের Heathen বলা হয়। এই Heathen শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্বর, অসভ্য জাতি,  ধর্মহীন, অখ্রীষ্টান, সাকার বাদী ইত্যাদি অর্থে ‘হীদান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

সংস্কার বনাম কুসংস্কার 

যদি এই খ্রীষ্ট মত ও বিশ্বাসকে অন্ধ বিশ্বাস বলে বদনাম করা হয়, ফাদার বা পোপকে সমাজের শোষক বলে অপমান করা হয়, ওই ‘মহাপ্রসাদ’কে পৈশাচিক প্রসাদ বলা হয়,  তাদের প্রার্থনা ও ভক্তিকে ভন্ডামী বা নাটক বলে অপমান করা হয়। খ্রীষ্টানদের মনে যেমন আঘাত লাগবে। সেভাবেই হিন্দু সংস্কারকে অন্ধ বিশ্বাস, ব্রহ্মবাদকে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং বিভিন্ন দেব দেবীর পূজো অর্চনাকে কুপ্রথা বলা হয় বলেই হিন্দুরাও আহত হয়।

এমনকি একজন হিন্দু নিজেদের প্রতীক (তিলক, টিকি, পৈতা) গুলো ধারন করতে, ধুতি পাঞ্জাবি পড়তে। হীন ভাব পোষণ করে, লজ্জা পায়।

ব্রাহ্মন, পণ্ডিত, শাস্ত্রীদের নিয়ে ঠাট্টা তামাশা, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হয় বলেই ব্রাহ্মন বা পণ্ডিত দেখলেই আমরা তাদের ভন্ড মনে করি। ভন্ড পীর, ভন্ড সাধু এবং ভন্ডামি কোন ধর্মে নেই? কিন্তু বার বার হিন্দুরাই টার্গেট হয়। কেন?

উপসংহার: 

ব্রাহ্মণ্যবাদ — বলে কোনো শব্দ নেই। ব্রিটিশ আমলে এই শব্দটি ষড়যন্ত্রের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার পরবর্তী অনুসারীরা অর্থাৎ আমাদের দেশের বাদামী ইংরেজরা সেটা জিইয়ে রেখেছে। আজ সময় আছে আমরা তাদের সেই ষড়যন্ত্রকে বিফল করতে পারি। তার জন্য দরকার, স্বদেশ চেতনা, সত্য জ্ঞান, ধর্ম নিষ্ঠা এবং সঠিক মার্গ দর্শন। এই আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।  নিজের মতামত নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে জানান। আমরা যথা সম্ভব জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো।

ধর্ম কি? বৈদিক ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মমত গুলর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
ধর্ম শব্দটি হিন্দুদের সংস্কৃত শব্দ। একে রিলিজিয়ন বা দ্বীন বা মাযহাব বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে হবে না। কারণ, শব্দের সঠিক ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রিলিজিয়ন ও ধর্মের নামে যে যে সকল ভ্রান্তি আছে সেগুলো দূর করা দরকার। যেগুলো ধর্ম নয়, সেগুলোকে ধর্ম থেকে আলাদা করেই জানতে হবে।

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: