যখন প্রথমবার আধার কার্ড এসেছিলো তখন, এটি একটি নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে মনে করা হয়ে ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেমন আধার ডেটার লিক, Fake আধার কেন্দ্র এবং ছদ্ম আধার কার্ডের ধরা পরা পড়া।
ফলস্বরূপ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও, আগামী সেন্সাস এবং সমীক্ষায় আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হবে না। শুধু আধারই নয়, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড এবং প্যান কার্ডও নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড: নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে চালু হচ্ছে কি?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া এবং কিছু ওয়েবসাইটে "স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড" (Smart Citizenship Card) নামে একটি নতুন কার্ড চালু হতে চলেছে বলে খবর ছড়িয়েছে, যা কথিতভাবে ভারতীয় নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। এটি আধার কার্ড, ভোটার আইডি বা অন্যান্য ডকুমেন্টসের অপর্যাপ্ততা পূরণ করবে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে, আমার সাম্প্রতিক অনুসন্ধান (নভেম্বর ২৫, ২০২৫ অনুসারে) থেকে দেখা যাচ্ছে যে এটি একটি অসমর্থিত দাবি বা গুজব, যা অফিসিয়াল সরকারি ঘোষণার উপর ভিত্তি করে নয়। নীচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছি, যাতে আপনি সঠিক তথ্য পান।
স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ডের দাবির উৎস এবং সত্যতা যাচাই
সম্প্রতি wbpay.in নামক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে দাবি করা হয়েছে যে ভারত সরকার স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড চালু করতে চলেছে, যা নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। এতে বলা হয়েছে যে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো ডকুমেন্টসে ডেটা লিক, ফেক আইডেন্টিটি এবং অসম্পূর্ণ রেকর্ডের কারণে এগুলো নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়। কার্ডটি একটি সিকিউর, অল-ইন-ওয়ান আইডেন্টিটি হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু আধার বা ভোটার কার্ড তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্যে (যেমন ফিনান্সিয়াল ট্রানজেকশন বা ভোটিং) বৈধ থাকবে।
তবে, এই দাবি অফিসিয়াল নয়। আর্টিকেলটিতে কোনো সরকারি সোর্স, অ্যানাউন্সমেন্ট বা রেফারেন্স নেই—এটি সম্পূর্ণভাবে অনুমানভিত্তিক বা গুজব-ভিত্তিক। wbpay.in একটি স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম, যা সরকারি নয়, এবং এতে কোনো প্রকাশন তারিখ বা ডিসক্লেইমার নেই যা এর সত্যতা নিশ্চিত করে। সোশ্যাল মিডিয়া (যেমন X, পূর্বে টুইটার) তে এই লিঙ্কটি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কিছু ব্যবহারকারী এটিকে "ঝুনঝুনা" বা সরকারের নতুন "লাইন লাগানোর" উপায় বলে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কোনো অফিসিয়াল নিশ্চিতকরণ নেই।
ভারত সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট indiancitizenshiponline.nic.in-এ স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ডের কোনো উল্লেখ নেই। এই সাইটটি সিটিজেনশিপ অ্যাকুয়াইয়ারের প্রক্রিয়া বর্ণনা করে, যেমন বার্থ, ডিসেন্ট, রেজিস্ট্রেশন বা ন্যাচারালাইজেশন দিয়ে, এবং CAA-২০১৯-এর অধীনে বিশেষ প্রভিশন। আবেদনের জন্য ডকুমেন্টস যেমন পাসপোর্ট, বার্থ সার্টিফিকেট ইত্যাদি দরকার, কিন্তু নতুন কার্ডের কথা নেই।
indiancitizenshiponline.nic.in
ভারতে নাগরিকত্বের বর্তমান প্রমাণপত্র সমূহ
ভারতে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কোনো একক "ডেজিগনেটেড" ডকুমেন্ট নেই। সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, ১৯৫৫-এর অধীনে নাগরিকত্ব বার্থ, ডিসেন্ট, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি দিয়ে নির্ধারিত হয়। ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে যে আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। ভালিড প্রমাণসমূহ হলো:
- ভালিড ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট
- বার্থ সার্টিফিকেট
- ভোটার আইডি (EPIC)
অন্যান্য ডকুমেন্টস যেমন এডুকেশন সার্টিফিকেট বা রেসিডেন্স প্রুফও কখনো কখনো ব্যবহার হয়, কিন্তু আধার শুধুমাত্র আইডেন্টিটি এবং অ্যাড্রেস প্রুফ হিসেবে কাজ করে, নাগরিকত্বের জন্য নয়।
সরকারের পূর্ববর্তী উদ্যোগ: MNIC এবং NPR/NRC
সরকার পূর্বে মাল্টিপারপোজ ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড (MNIC) চালু করার চেষ্টা করেছিল, যা একটি স্মার্ট কার্ড ছিল বায়োমেট্রিক ডেটা সহ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট, আইরিস স্ক্যান ইত্যাদি)। ২০০৮-০৯-এ পাইলট প্রোগ্রামে ১২.৮৮ লক্ষ কার্ড ইস্যু হয়, কিন্তু এতে ডিসক্লেইমার ছিল যে এটি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। পরে এটি বাতিল হয় এবং ডেটা আধারে ট্রান্সফার হয়।
ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (NPR) ২০১১ সেন্সাসে তৈরি হয় এবং ২০১৫-১৬-এ আপডেট হয় (১১৯ কোটি রেসিডেন্টের ডেটা)। NPR রেসিডেন্টসের ডেটাবেস, যাতে সিটিজেন এবং নন-সিটিজেন উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। এটি ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ ইন্ডিয়ান সিটিজেনস (NRC)-এর ভিত্তি হতে পারে, কিন্তু NRC শুধুমাত্র অসমে চালু হয়েছে এবং জাতীয় স্তরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ২০১৯-২০-এ CAA এবং NRC-এর বিরোধিতার পর NPR আপডেট হোল্ডে আছে। সরকার জানিয়েছে যে জাতীয় NRC-এর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
সিটিজেনশিপ (রেজিস্ট্রেশন অফ সিটিজেনস অ্যান্ড ইস্যু অফ ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড) রুলস, ২০০৩-এর অধীনে সরকার ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড ইস্যু করতে পারে, কিন্তু এটি এখনো বাস্তবায়িত নয়।
উপসংহার এবং পরামর্শ
স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড চালু হচ্ছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা অফিসিয়াল নয় এবং সম্ভবত একটি গুজব। ভারত সরকারের কোনো অ্যানাউন্সমেন্ট নেই, এবং বর্তমানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য পাসপোর্ট, ভোটার আইডি বা বার্থ সার্টিফিকেটের মতো ডকুমেন্টস ব্যবহার হয়। যদি আপনার নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে অফিসিয়াল সাইট indiancitizenshiponline.nic.in-এ আবেদন করুন বা লোকাল অথরিটির সাথে যোগাযোগ করুন। গুজব ছড়ানো সাইটস থেকে সতর্ক থাকুন এবং সরকারি সোর্স যাচাই করুন। যদি আরও বিস্তারিত তথ্য চান, তাহলে জানান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন