Headlines
Loading...
পরিমাপ একক ও হিসেবের পদ্ধতি: ইতিহাস, প্রয়োগ ও বিবর্তন

পরিমাপ একক ও হিসেবের পদ্ধতি: ইতিহাস, প্রয়োগ ও বিবর্তন

ভূমিকা

মানুষের সভ্যতার অগ্রযাত্রায় পরিমাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য, জমি, বস্ত্র কিংবা নির্মাণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্ভুল হিসাব ও পরিমাপ অপরিহার্য। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন পরিমাপ একক ও পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও কার্যকর করেছে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব পরিমাপের বিভিন্ন একক, এর ইতিহাস এবং বর্তমান যুগে তাদের ব্যবহার।

পরিমাপের প্রাচীন একক ও পদ্ধতি

প্রাচীনকালে মাপের পদ্ধতি অনেকাংশেই স্থানীয় ঐতিহ্য এবং প্রয়োজনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরণের মাপ ব্যবহৃত হতো। যেমন:

১. দৈর্ঘ্য মাপার একক:

হাত: প্রাচীনকালে দৈর্ঘ্য মাপার জন্য মানুষের হাতের দৈর্ঘ্যকে ভিত্তি ধরা হতো।

১ হাত = প্রায় ১৮ ইঞ্চি।

গজ: কাপড় মাপার জন্য ব্যবহৃত।

১ গজ = ৩ ফুট।

তিল: ছোট পরিমাপের একক।

১ তিল = ১/৮ ইঞ্চি।

২. ওজন মাপার একক:

রতি: স্বর্ণ বা মূল্যবান পণ্য মাপার জন্য।

১ রতি = ০.১২ গ্রাম।

ছটাক: খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য মাপার জন্য।

১ ছটাক = ৩৭.৩ গ্রাম।

সের ও মন: শস্য মাপার জন্য ব্যবহৃত।

১ সের = ৮০০ গ্রাম।

১ মন = ৩৭.৩ কেজি।

৩. জমি মাপার একক:

ধুর: ছোট জমির মাপ। ১ ধুর = ৬.৭৫ বর্গফুট।

কাঠা: ১ কাঠা = ২৭২.২৫ বর্গফুট।

বিঘা: বড় জমি মাপার জন্য। ১ বিঘা = ২০ কাঠা।

৪. আয়তন মাপার একক:

চিমটি: ছোট পরিমাণের মাপ।

কুড়ি: গণনার একক। ১ কুড়ি = ২০টি।

আধা: তরল মাপার জন্য।

১ আধা = ১/৮ সের।

আধুনিক পদ্ধতির বিকাশ

উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে মেট্রিক পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি আরও সুনির্দিষ্ট ও মানসম্মত পরিমাপের সুযোগ করে দেয়।

মেট্রিক পদ্ধতির এককসমূহ:

1. ওজনের জন্য: গ্রাম, কিলোগ্রাম। ১ কিলোগ্রাম = ১০০০ গ্রাম।

2. দৈর্ঘ্যের জন্য:

মিটার, সেন্টিমিটার। ১ মিটার = ১০০ সেন্টিমিটার।

3. আয়তনের জন্য:

লিটার। ১ লিটার = ১০০০ মিলিলিটার।

4. গতি ও সময়:

মিটার/সেকেন্ড।

১ মিনিট = ৬০ সেকেন্ড।

আধুনিক যুগে পরিমাপের ব্যবহার:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: সুনির্দিষ্ট একক ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি তৈরি।

শিক্ষা: আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাসে মেট্রিক পদ্ধতি শেখানো হয়।

ব্যবসা: আমদানি-রপ্তানিতে অভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার বাণিজ্যকে সহজ করেছে।

গৃহস্থালি: দৈনন্দিন রান্নাবান্না ও বাজারে কেনাকাটায় নির্দিষ্ট মাপ গুরুত্বপূর্ণ।

 প্রেক্ষাপট

এখনও গ্রামীণ অঞ্চলে প্রাচীন পদ্ধতি ও একক ব্যবহারের চল রয়েছে। যেমন, জমি মাপার জন্য বিঘা বা কাঠা এবং খাদ্য মাপার জন্য সের বা ছটাক ব্যবহৃত হয়। তবে শহরাঞ্চলে এবং আধুনিক ক্ষেত্রগুলোতে মেট্রিক পদ্ধতির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

পরিসমাপ্তি

পরিমাপ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীন পদ্ধতি থেকে শুরু করে আধুনিক মেট্রিক পদ্ধতিতে আসা পর্যন্ত এটি মানবজাতির জ্ঞানের এক অমূল্য উপহার। বর্তমান যুগে উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং শিক্ষার অগ্রগতির জন্য পরিমাপের সুনির্দিষ্টতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক পরিমাপ পদ্ধতি রপ্ত করা এবং প্রতিদিনের কাজে তা প্রয়োগ করা আমাদের উন্নতির চাবিকাঠি।

0 Comments: