Headlines
Loading...
গাভী যদি মা হয়, তাহলে ছাগিকে মা বা মাসি মানা হয় না কেন?

গাভী যদি মা হয়, তাহলে ছাগিকে মা বা মাসি মানা হয় না কেন?


এই প্রশ্নটি  Quora নামক Social Media platform এ করা হয়েছিল। প্রশ্ন কর্তা ব্যক্তি ছিলেন একজন বাংলাদশী মুসলিম। আর, এই মুসলিম ব্যাক্তির কি উদ্দেশ্য ছিলো সেটা না বললেও সবাই আন্দাজ করতেই পারেন। 

হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে রেষারেষি চিরকালের। কারণ এদের ধর্মীয় সিদ্ধান্ত, রীতিনীতি, সমাজিক অনুষ্ঠান এবং রুচি সংস্কৃতির কোনো মিল নেই।

হিন্দুরা সমগ্র জগতকে আত্মীয় মনে করে, মুসমানরা নিজেদের ছাড়া সবাইকে কাফের (অবজ্ঞাকারি), মুর্তাদ (অর্থাৎ ধর্ম ত্যাগী), মুনাফিক (ভন্ড মুসলিম), এবং মুশরিক (মুর্তি পূজক) হিসেবে দেখে।  আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো দেবতা ইশ্বরের তুলনা হয় না। 

হিন্দুরা যেমন বলে, "যে রাম, সেই কৃষ্ণ", "ইশ্বর আল্লাহ বা ভগবান, সকলের একই নাম।" মুসলীম দৃষ্টিতে ইহা শিরক।কুফর হল "সত্য অস্বীকার" এবং শিরকের অর্থ হল "আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুর উপাসনা করা"। ইসলামী বিশ্বাসের মৌলিক বিষয়বস্তুকে যারা অস্বীকার করে তারা কাফির। অর্থাৎ মুর্তাদ, মুনাফিক, এবং মুশরিক এরা সকলেই কাফির।

তর্কের খাতিরে আপনি বলতে পারেন, আপনার হিন্দু ধর্মেও তো শূদ্রদের ব্রাহ্মণ থেকে হেয় করে দেখা হয়। তাহলে, কি হিন্দু ধর্মেরও কি ওই একই ক্ষেত্র তলে বিচার করা দরকার নেই?

না, হিন্দুদের বর্ণ ও জাত-পাত একটি সামাজিক মর্যাদা। যেমন একজন রাজা ও তাঁর সৈনিকের মধ্যে পার্থক্য থাকে। একজন নোবেল পুরষ্কার প্রদান সাহিত্যিক এবং অপপ্রচার করি ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য থাকে। 

আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই শূদ্রদের তো অধিকাবঞ্চিত করে রাখা হতো। তবে কি এটা অধিকার ভিত্তিক জাতিভেদ নয়?

হিন্দু ধর্মে অধিকার ভিত্তিক জাতিভেদ আছে বৈকি নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সেটা বৈষম্য মূলক আচরন করার জন্য নয়। সেই সময়ের রাজতন্ত্রের সমাজের প্রতি ব্যক্তির কর্তব্যকে সু-ব্যবস্থায় চালিত করতেই এই ভেদাভেদ। নাপিত, ব্রাহ্মণ, বানিয়া এই তিনের অনুপস্থিতিতে জন্ম, বিবাহ, মৃত্যুর সংস্কার বিধি সম্পূর্ন থেকে যাবে। কিন্তু কোরআনে আল্লহ মুর্তাদ, মুনাফিক, এবং মুশরিকদের ঘৃণ্য বলে দাবি করেছেন।

সেই জন্য হিন্দুরা গরুকে মাতা বললে ওদের মনে এই বিষয়ে উপহাস করার প্রবণতা দেখা যায়। স্বধর্ম পালনের মাধ্যমে জীবের চেতনার উন্নতি হয় এবং আত্ম জ্ঞান অর্জন করে আধ্যাত্মের পরম শিখরে পৌঁছে দেয়ার কথা হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র গুলো জোর দেয়।

গাভী হিন্দুদের মা হলে কবি নজরুল ইসলাম কবিতা বলে গেছেন। 

মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।
মুসলিম তার নয়ণ-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ॥
এক সে আকাশ মায়ের কোলে 
যেন রবি শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান॥
এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,
এক সে মায়ের বক্ষে ফলে একই ফুল ও ফল।

দেখুন গরু যদি কেবলই হিন্দুদের মা নয়, তাহলে নজরুল ইসলামের কবিতা অনুযায়ী "এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান" অর্থাৎ মুসলিমরাও গোরুর সন্তান। কিন্তু ওরা একটা পশুকে নিজের মাতা হিসেবে মনে করে না। 

মানুষ আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। 

ভেবে দেখুন, মানুষ আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মানুষ ভাব, সত্তা, বিদ্যমানতা, প্রকাশ, অভিপ্রায় দ্বারা গঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীব। যেভাবে একটা কুকুর, ছাগল, শুকর জন্ম নিয়েছে। মানুষ একই ভাবে জন্ম নিয়েছে। যেভাবে একটা কুকুর, ছাগল, শুকর খিদে পেলে আহার সংগ্রহ করে মানুষও খিদে মেটাতে আহার করে। যেভাবে একটা কুকুর, ছাগল, শুকরের বয়স হলে মৃত্যু হয়, বিপদে ভয় পায়, কষ্টে কান্না করে, আদরে আল্ল্যাদিত হয়। 

মানুষের মধ্যেও এগুলোর ব্যতিক্রম থাকে না। বাবুই পাখি নিজের জন্য সুন্দর ও সুরক্ষিত বাসা নির্মাণ করে, এটাও ওর একটি সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। কোকিল, ময়না, টিয়া পাখি মনুষের কথা অনুকরণ করতে পারে। অর্থাৎ, মানুষ আর পশুর মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।

আমি একজন মুসলিমকে ঈদের দিনে তাঁর গরুকে বাজারে বিক্রি করতে এসে কাদতেঁ দেখেছি। কারণ, ওই গোরুর সঙ্গে ওই মুসলীম ব্যক্তির ছেলে খেলা করতো। ওর ছেলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ওই গরুই ছিলো তাঁর স্মৃতি। ছেলে মারা যাবার পর ওই গরুটি কয়েক দিন না খেয়ে ছিলো। তাই ওই গোরুর প্রতি সাভাবিক ভাবেই একটা আপনত্ব তৈরী হয়। আজ ওই গরুকে বাজারে কোরবানির জন্বিয ক্রি করতে এসে, ওই মুসলিম ব্যাক্তি কাদঁছে। কেন? গোরু তো ওর ছেলে নয়, গরুতো একটা পশু। পশুর জন্য এতো মায়া কেন?

যারা সংবেদনশীল মানুষ তারা এর সত্য বুঝতে পারে। গাভী "যদি মা হয়, তাহলে ছাগিকে মা বা মাসি বলা হয় না কেন?" এরকম প্রশ্ন বিদ্রুপ ওই সংবেদনশীল মানুষ করতে পারবে না।

দেবভাব

হিন্দুদের একমাত্র পূজনীয় প্রাণী যার মধ্যে হিন্দুদের ধর্মীয় আবেগ সঞ্চিত আছে। সেটাই মুসলমাদের খাদ্য।  হিন্দুরা অতিথি দেব ভব, ভেবে পুজা করেন, পিতৃদেব ভব ভেবে পিতার পুজা করেন। সেই ভাবে দেবতার সত্তা, বিদ্যমানতা হিন্দুরা ওই গোরুর মধ্যে দেখে।

মাতৃ ভাব

সেই ভাবে মায়ের মাতৃ সত্তা, বিদ্যমানতা হিন্দুরা ওই গোরুর মধ্যে দেখে। আমরা হিন্দু, পিতার মৃত্যুর পর পিতৃদের জন্য তর্পণ করি। তখন বলা হয়, "পিতা সর্গ পিতা ধর্ম পিতা হি পরমম তপ, পিতৃ প্রীতিমাপন্নে প্রিয়তে সর্ব দেবতা"। তাই "পিতৃ দেব ভব" —পিতাকে দেবতা মনে করো। "মাতৃ দেব ভব"–মাতাকে দেবতা ভেবে নিজেদের মা কে পুজা করি। এমনকি যে কোনো মহিলাকে মাতা জ্ঞানে সন্মান করা হিন্দুদের রীতি। সে আমিনা, খাতিমা, রুবিনা, মারিয়া যেই হোক না কেন। মাতৃত্বের উপাসক হিন্দু নদী, ভূমি এবং পশুর মধ্যেও মাতৃত্বের স্পর্শ অনুভব করে। অন্য ধর্মে এই শিক্ষা বা ভাব নেই।

পরিশিষ্ট

যখন মুসলিম ব্যক্তি সেই মাতৃত্বকে নিয়েই এরকম অপমান জনক প্রশ্ন করে। সেই ব্যক্তিকে আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয়, ইসলম কি এমনি শিক্ষা দেয়?

আচ্ছা হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু কি সকল মুমীন মুলমানদের জন্ম দিয়েছেন? তাহলে হজরত আয়েশাকে কেন আম্মা আয়েশা বলা হয়? এই বিষয়ে মুসলীম সমপ্রদায়ের বিবেচনা করা দরকার।

হ্যা গরু  একটা পশু, তবে সে মায়ের মতো। যদি বলেন গোরু মা নয়, তাহলেও, গুরু পশু নয় একজন গৃহস্তের সম্পদ। ছাগল, ঘোড়া, কুকুর পালন করলেও তারা গোরুর মতো উপকারী পোশু নয়। তাই গৃহস্তের সম্পদ। গো- সম্পদের রক্ষা করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। সেই দিক থেকে বিচার করলেও গো- বংশের রক্ষা করা শুধু হিন্দু নয় প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য।



২টি মন্তব্য

  1. যথার্থ উত্তর। একেই বলে যুক্তিবাদ। এরকম আরো প্রশ্নের জবাব চাই। খুব ভালো লাগলো। চালিয়ে যান।

    উত্তরমুছুন

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads