গণ্ডবেরুন্ডা : দ্বী-মস্তক যুক্ত পক্ষী। Gandaberunda two headed bord


প্রাচীন ও আধুনিক ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন প্রতীক এবং তাদের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে না জেনে ইতিহাস অধ্যয়ন অসম্পূর্ণ। আমদের ইতিহাসে ব্যবহৃত দুটি শক্তিশালী প্রতীকের উদাহরণ হল খ্রিস্টীয় 14 শতকের বিজয়নগর সাম্রাজ্যের গণ্ডবেরুন্ডা এবং দ্বিতীয় টি হলো বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত নাৎসিদের স্বস্তিক। যাহা হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনীর পরিবর্তীত রূপ। তবে নাৎসিদের স্বস্তিক আসলে hakenkreuz বলে পরিচিত যা খ্রিষ্টানদের একটি প্রতীক টেট্রাগ্যমেডিওন . এর সঙ্গে  হিন্দু ধর্মের বা আর্য জাতির কোনো সম্পর্ক নেই। গ্যমেডিওন হলো গ্রীক বর্ণমালার তৃতীয় তম অক্ষর। যেটি দেখতে ইংরেজি বর্ণমালার L এর মতন।  নিচে চিত্র দেখুন। 

বিশ্বের প্রাচীনতম ভাষা হলো সংস্কৃত। সংস্কৃত ভাষার লিপির নাম হলো নাম দেবনাগরী। সমস্ত ইউরোপীয় ভাষা গুলি সংস্কৃত দ্বারা এসেছে বলে মনে করা হয়। বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সংস্কৃতকে সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা হিসাবে বিবেচনা করে। তবে কিছু কিছু ঐতিহাসিকদের দাবি পালি ও প্রাকৃত ভাষা সংস্কৃতি থেকে এসেছে। এটা মনে রাখতে হবে যে, ঐতিহাসিক সত্য দাবি বা অনুমানের ওপর সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে না। অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো দাবীই গ্রহণযোগ্য নয়।

গবেষকরা তৃতীয় শতাব্দী থেকে তামিল শিলালিপির পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা শিলালিপি এবং থাইল্যান্ড ও মিশরে বাণিজ্য পণ্যের আমদানি ও রফতানির সন্ধান পেয়েছেন। $ads={1}

 তামিল ভাষায় লেখা ভারত থেকে প্রথম পান্ডুলিপিগুলির মধ্যে দুটি, 1997 এবং 2005 সালে ইউনেস্কো মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার দ্বারা স্বীকৃত (verified) এবং নিবন্ধিত (certified) হয়েছিল। অর্থাৎ এটা সত্য যে, যখন পাশ্চাত্যের দেশগুলো গায়ে পশুর চামড়া জড়িয়ে স্বীকার করতো। ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি ঋষিরা জ্ঞান ও সংস্কৃত ভাষায় উন্নত ছিল।

তাই এটা বলতে দ্বিধা নেই। আমরাই পাশ্চাত্য দুনিয়াকে ধর্মের জ্ঞান দিয়েছি। আমরাই বিশ্বকে কৃষ্টি, কালচার শিখিয়েছি এবং এটি আমাদের দাবী নয়। এর যথেষ্ট যুক্তি ও প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। বহু বিদেশীদের ভাষায় আমাদের সংস্কৃত ভাষার অনেকে শব্দ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। 

যেমন সপ্ত, অষ্ট, নব, দশ থেকে সেপ্টা অক্টা, নেনা ডেকা এসেছে। সংস্কৃত দেবতা বা দেবস থেকে ডিউস, এবং জিউস 

বাইজান্টাইন এবং রোমান সভ্যতা সহ বিভিন্ন সংস্কৃতিতে দুই-মাথাযুক্ত ঈগলের একটি ইতিহাস রয়েছে। যা আমাদের হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনী গণ্ডবেরুন্ডার স্বরূপ। 

আলবেনিয়ার প্রেক্ষাপটে, এই দ্বি-মাথা ঈগলের উৎপত্তি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য থেকে হয়েছে বলে পাশ্চাত্য বিজ্ঞরা মনে করেন, এটি পূর্ব ও পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের ঐক্যের প্রতীক। মধ্যযুগের সম্ভ্রান্ত কাস্ত্রিওতি পরিবার এই ঈগলের চিহ্ন ব্যাবহার করেছিল।

আলবেনিয়ায় অটোমান সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করার জন্য মেহমেদ বিজয়ীর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কাস্ত্রিওতি পরিবারে প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন আলবেনিয়ান নায়ক হিসাবে পরিচিত। 

তাদের ওই গল্পটি বলে যে একজন কাস্ত্রিওতি নেতা, অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়, দুই মাথাওয়ালা একটি ঈগল যুদ্ধক্ষেত্রের উপর দিয়ে উড়তে দেখেছিলেন। এরপর তাঁরা যুদ্ধে জয়ী হয়। সেই দুই মাথা ওয়ালা ঈগলের এই দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি এটিকে শক্তি এবং ঐক্যের চিহ্ন হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং দ্বি-মাথাযুক্ত ঈগলটিকে তার পরিবার এবং পরে আলবেনিয়ার প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন।

সময়ের সাথে সাথে, দ্বি-মাথাযুক্ত ঈগলটি আলবেনীয় জাতীয় পরিচয়ের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতিনিধিত্ব করে। আজ, এটি আলবেনিয়ার জাতীয় পতাকা এবং অস্ত্রের কোটের একটি বিশিষ্ট প্রতীক হিসাবে রয়েছে, যা দেশের ইতিহাস এবং প্রতিরোধের চেতনাকে মূর্ত করে।  $ads={2}

তারা কেবল ওই দুই মাথা ওয়ালা ঈগল দেখতে পেয়েছিল। আমাদের কাছে এর উৎপত্তির সম্পূর্ণ কাহিনী আছে। শিমোগা জেলার কেলাদি শহরে রামেশ্বর মন্দিরের ছাদের খোদাই, যা কেলাদি নায়কদের রাজধানী ছিল, এটি পৌরাণিক পাখির শক্তির একটি উদ্দীপক চিত্র। এই ত্রাণ খোদাইতে দেখানো হয়েছে একটি দু-মাথাযুক্ত ঈগল (গরুদা বেরুন্ডা) তার ঠোঁটে দুটি সিংহ এবং তাঁর দুই থাবায় দুটি হাতি (চিত্র দেখুন)।

ওই সিংহ হোলো শিবের ষরভ অবতার। এই ষরভ অবতার নেওয়ায় পেছনে যে কাহিনী আছে সেটা হলো। ভগবান বিষ্ণু হিরণ্য কাশ্যপ বধের জন্য নৃসিংহ অবতার নেন। নৃসিংহদেবের ক্রোধে জগত জুড়ে প্রলয় সৃষ্টি করে। তখন শিব এক ডানাওয়ালা সিংহের রূপ ধারণ করেন এটি ছিল তাঁর ষরভ অবতার। এই ষরভ অবতার নৃসিংহদেবের সঙ্গে লড়াই শুরু করেন। সেই সময় বিষ্ণুর আরেক অবতার 'শৃঙ্গ বরাহ' ও তাঁর পর্ষদ সকলে নৃসিংহদেবের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন নৃসিংহ অবতার এই গরুদা বেরুন্ডা বা গণ্ডবেরুন্ডা রূপ নেয়।

গ্রীক সহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে, ডানা সহ একটি সিংহের মূর্তি আছে।  সিংহের দেহের সাথে, ঈগলের মাথা এবং ডানাকে গ্রিফিন বলা হয়। এই শক্তিশালী প্রাণীটি পৃথিবী ও আকাশের আয়ত্তের প্রতিনিধিত্ব এবং প্রজ্ঞাশক্তির সাথে যুক্ত। প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রিফিন ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীতেও পাওয়া যায়। ভগবান বিষ্ণু এবং শিবের অবতার গন্ডভেরুন্ড ও ষরভ আবতার।

প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনী এদের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন যোগ আছে। পৌরাণিক কাহিনীগুলি ভারতীয় সংস্কৃতির অগ্রগতি এবং পরিবর্তনের চিহ্নিত দশকগুলির মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। 

এই কাহিনীগুলি প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির ধারাবাহিক ধারণার কিছু অংশ প্রতিফলিত করে এবং নতুন ধারণার উদ্ভাবনে অবদান রেখেছে।উল্লেখযোগ্যভাবে, পৌরাণিক কাহিনীগুলি মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক ভারতীয় সমাজের পরিবর্তনের প্রতীক হিসাবে বিশ্লেষণ করা হতে পারে। যখন সমাজে সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং আর্থিক পরিবর্তন ঘটে, তখন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ধারণার পরিবর্তন অনেক সময় পৌরাণিক কাহিনীগুলির মাধ্যমে দর্শন করা হত। এই কাহিনীগুলি সমাজের প্রতিবিম্ব হিসাবে অনুপ্রাণিত করে, এবং নতুন ধারণা এবং মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন
InterServer Web Hosting and VPS

Copying content is illegal

Please refrain from copying content.