বর্ণ ও জাতির মধ্যে পার্থক্য কী? বর্ণ ও জাতি কি এক?

Caste system and Race

Facebook এর মত SOCIAL MEDIA তে অনেক সময় হিন্দু ধর্মকে নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। সেই সুবাদে একজন হিন্দু বিরোধীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁর মনে যে সকল প্রশ্ন ছিলো। সেই প্রশ্ন গুলোর যে সকল জবাব আমি দিয়েছি সেটাই আজ আপনাদের জন্য পুনঃ উপস্থাপন করলাম। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন- ধর্ম, বর্ণ ও ব্রাহ্মণের সংজ্ঞা কি? বর্ণ ও জাতি কি এক? এর জবাবে আমি বলেছিলাম:

ধর্ম, বর্ণ ও ব্রাহ্মণের সংজ্ঞা কি? বর্ণ ও জাতি কি এক? 

ধর্ম সেটাই যা ধারণ করে বস্তু বা ব্যক্তির স্বরুপ অবিকৃত ও রক্ষিত থাকে। যা পরম্পরা গত ভাবে বরণ করা হয়েছে তাহাই বর্ণ। ব্রহ্মকে জেনে যিনি ব্রহ্মের শক্তি ধারন ও বহন করেন, তিনিই ব্রাহ্মণ। বর্ণ ও জাতি এক নয়। এর পর আমি তাঁকে প্রশ্ন করি। আপনি কি আমায় শূদ্রদের সংজ্ঞা দিতে পারবেন? তিনি কোনো জবাব দেননি তিনি আবার প্রশ্ন করেন। 


বর্ণ ও জাতির মধ্যে পার্থক্য কী? বর্ণ ও জাতি কি এক?

প্রশ্ন কর্তা তখনই প্রশ্ন করে যখন সে সেই বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে বা অ সম্পুর্ন জ্ঞানের জন্য সন্দেহ থেকে। তাই তাঁকে তার অবস্থান বুঝিয়ে বললাম। তবে শুনুন, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র এগুলো জন্ম এবং বংশ পরম্পরাগত। যে যেই রূপে জ্ঞাত সেটাই তার জাতি। যেমন বাঙ্গালী, নেপালি, বিহারী, মারাঠি ভাষাগত দিক থেকে জাতি। আবার ব্যাবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, মালিক কর্মের ভিত্তিতে জাতি। 

সেই ভাবেই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র  শাস্ত্রের ভিতিত্তে ভিন্ন ভিন্ন জাতি। এর মধ্যেও ভিন্ন ভিন্ন উপজাতি মিশ্র জাতি আছে।

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য এদের উপনয়ন সংস্কার 

শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে জন্মর পর থেকে সকলেই শূদ্র হয়ে জন্মায়। সংস্কার দ্বারা দ্বিজ হয় অর্থাৎ দ্বিতীয় জন্ম হয়। পরম্পরা অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য এদের উপনয়ন সংস্কার হয় বলে এরা বেদের মূল শিক্ষ গুলো অর্জনের অধিকারী। যেমন, পৌরহিত্য, পঠন-পাঠন, হোম ইত্যাদি। 

শূদ্রর উপনয়ন সংস্কার নেই।

শূদ্রর উপনয়ন সংস্কার নেই। কারণ, উপনয়ন সংস্কার করেও যারা বেদ ছাড়া অন্য বিষয়ে পরিশ্রম করে তারাই স্ববংশে শূদ্র হয়। যে বিষয়ে তারা নিষ্ঠাবান নয়। তাঁদের উপনয়ন সংস্কার করানো হয় না। তবে তারা বেদের উপ ভাগ যেমন, পুরাণ, উপনিষদ, তন্ত্রের অধিকারী। শিক্ষা বা ধর্মীয় অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত নয়।

শাস্ত্রের অধিকার ভেদ

শুধু মূল আর স্থূল ভেদেই এই শাস্ত্রের অধিকার ভেদ। কেউ জোর করে বা কুমতলবে সমাজে ভেদাভেদ তৈরী হয়নি। সেই জন্য গীতায় ভগবান বলেছেন। গুণ ও কর্ম ভেদে চার বর্ণ সৃষ্টি হয়েছে।

মানুষ নিজ নিজ অধিকার ভেদ জ্ঞাত হয়ে, অন্যের পদ প্রতিষ্ঠা নিয়ে ঈর্ষা দ্বেষ করে না। অধিকারের জন্য লড়াই করে না। সে নিজ নিজ অবস্থান নিজের পদ প্রতিষ্ঠাকে সম্মান করে ও সেই পদ প্রতিষ্ঠাকে উন্নত করতে ব্রতী হয়।

শূদ্র এবং সুদ্র 

আপনাদের মতন মানুষেরা ব্রহ্মনের বিরুদ্ধে শূদ্রকে ক্ষুব্ধ করে বিরোধিতা করার জন্য দার করিয়েছেন। ব্রাহ্মণের বেদ, স্মৃতি, শ্রুতি চর্চাকে আইনত অবৈধ করে তাঁদের চোখে শূদ্রদের অস্পৃশ্য, নীচু জাতি এই সকল উপমায় আখ্যায়িত করেছেন। শূদ্র এবং সুদ্র এই দুটি আলাদা শব্দ। শূদ্র হলো সমাজের একটি বর্গ বিশেষ যারা সমাজকে বহন করে। সুদ্র হোলো পাপাচারী ব্যক্তি। 

কোন সাম্যহীন সমাজ কি ধর্মীয় সমাজ বলে গন্য হতে পারে?

ধর্মীয় সমাজ বলে কোনো কথা নেই। যদি ধর্মীয় সমাজ থাকে তবে বিধর্মীয় সমাজ থাকবে। সেই জায়গায় ধর্মীয় সমাজ নিজেকে আলাদা করে ভাববে। সেই জায়গায় দাড়িয়ে আপনি কি সাম্যের কথা বলতে পারেন?

বৈষম্যই প্রকৃতির নিয়ম। 

বৈষম্যই প্রকৃতির নিয়ম। তবে তাঁর মধ্যে একটা লয় বা প্যাটার্ন থাকতে হবে। আপনার হাতের পাঁচটা আঙ্গুল যদি সমান হতো। তবে আপনি কি নিপুণতার সাথে কাজ করতে পারতেন? বুড়ো আঙুল তর্জনীর নিচে, আবার কনিষ্ঠা আঙুলটি দুর্বল। কিন্তু ওটাও কাজের। সেই ভাবেই সমাজের সকল স্তরের মানুষের অবদান রয়েছে। কেউ বড় বা ছোট নয়। নাপিত না থাকলে ব্রাহ্মণের উপনয়ন সংস্কার হবে না। ব্রাহ্মণের উপনয়ন সংস্কার না হলে সেও শূদ্র থাকে যাবে।

ভেবে দেখুন সম্য আনতে পারেন কি না?

আপনার সঙ্গে আপনার স্ত্রীর যে সস্পর্ক সেই সস্পর্ক যদি আপনার ছেলে সাম্যতার দাবী দেখিয়ে আদায় করতে চায়। আপনি কি সেটা মেনে নেবেন? ছেলে কথা বাদ দিলাম। পাশের বাড়ির পাল বাবু যদি একই অধিকার দাবী করেন। আপনি মেনে নেবেন। এটা একটা সামাজিক মর্যাদা। সেভাবেই চার বর্ণের নিজ নিজ মর্যাদা আছে।

আজকের পরিপ্রেক্ষিতে যদি আপনি বিচার করেন। স্কুলের প্রিন্সিপালের অবর্তমানে স্কুলের দারোয়ান কি প্রিন্সিপালের ভূমিকা পালন করতে পারে? যদি সেই শিক্ষাগত যোগ্যতাও দারোয়ানের থাকে। তাও সে কি প্রিন্সিপালের আসনে গিয়ে বসতে পারে। ধরলাম সেটাও হলো। বাকি সহকারী অধ্যাপকরা কি সেটা মেনে নেবে? এখানে না ব্রাহ্মন্যবাদ আছে, না হিন্দুত্ববাদ। এটা একটা সামান্য সামাজিক মর্যাদা। সেভাবেই চার বর্ণের নিজ নিজ কর্ম মর্যাদা আছে। 

ব্রাহ্মণের মর্যাদাকে বড় করে দেখানো শূদ্রের মর্যাদাকে হেয় করে দেখানো

সমাজে যারা ফাটল ধরাতে চায়। তারা শুধু ব্রাহ্মণের মর্যাদাকে বড় করে দেখায়। আর শূদ্রের মর্যাদাকে হেয় করে দেখানো হয়। কেন? শূদ্র ছাড়া কি সমাজ এক পাও এগোতে পারবে? তা ছাড়া সেবা করলেই কি কেউ কারো ছোটো হয়ে যায়? না, হয় না। রাজা কি তাঁর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে প্রজার সেবা করে না? সৈনিক নিজের জীবন উৎসর্গ করে সমাজের সেবা করে না? ব্যাবসায়ী, কৃষক এরা কি সমাজের জন্য সেবা করে না? এই সেবকদের সেবা করলেই আপনি ছোটো হয়ে যাবেন না। বরং সেবাই তো সমাজের মূল।

ভেবে দেখুন, 

এই কারনেই সমাজে এতো ভেদাভেদ। এর থেকেই জাত পাত নিয়ে ঘৃনা, বিদ্বেষ ও মারামারি। তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে—"স্ব ধর্ম নিধং শ্রেয়, পর ধর্ম ভয়াবহ।"


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন
InterServer Web Hosting and VPS

Copying content is illegal

Please refrain from copying content.