শয়তান যদি স্রষ্টা হতো, তবে জগতটি সম্ভবত প্রলোভন, বিশৃঙ্খলা, এবং কঠোর আনুগত্যের দাবির উপর নির্ভর করত। কারণ এগুলোই শয়তানের চাহিদা। তার জগত হয়তো অহংকার ও সম্মানের দাবিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত, যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা আধ্যাত্মিক উন্নতির পরিবর্তে প্রলোভন ও পরীক্ষা প্রাধান্য পেত। কিন্তু শয়তান স্রষ্টা হতে পারেনা । কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা আমাদের ভাবায়।
আদৌ কি ঈশ্বর, আল্লাহ, গড আছেন?
উদাহরণ স্বরূপ, “রাস্তায় টেনে আনা হলো, মুনাফিকদের। ওদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা, ওদের যারা টেনে আনলো, তাদেরও মুখ একরকম কালো মাস্ক দিয়ে ঢাকা। এরপর ওদের লাইন করে বসানো হলো। চারিদিকে মোবাইলের ক্যামেরা খুলে চিৎকার, “সেই স্রষ্টা সব থেকে মহান। স্রষ্টা সব থেকে বড়।” তারপর গর্জে উঠলো বন্দুকের শব্দ। চিৎকার থেমে গেল, মুনাফিকের নিথর দেহ পড়ে রইলো। রক্তে ভিজে গেল মাটি। হাউ মাউ করে কাদতেঁ শুরু করলো মুনাফিকের স্ত্রী ও সন্তানরা। কিন্তু তাদেরও নিস্তার নেই ওদের স্ত্রী ও সন্তানকে আলাদা করে জড়ো করা হলো একটি বাজারে। ওখানে ওদের টাকার বিনিময়ে কৃতদাসী ও কৃতদাস হিসেবে বিক্রি করা হবে।
আজ এই এসব গল্প মনে হলেও, পাশ্চাত্যের দেশগুলো তে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে এভাবেই মানুষ বিক্রি হতো। এটাই ছিল অসুর সংস্কৃতির ধর্ম। আজ যারা মানবতার কথা বলে, নারী অধিকারের কথা বলে ভারতকে জ্ঞান দেয়। তারা আজও ওই আসুরিক ধর্মের পালন করে। এখন তারা সভ্য হতে শুরু করেছে।
মানুষ কতল করে, পরমেশ্বর কি খুশী হয়?
হিন্দু, ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী আমরা সবাই জানি ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন নিজেকেই ব্যাক্ত করতে। এই জগত তাঁর ভক্তি পরিক্ষার ল্যাবরেটরি নয়। তিনি আমাদের একেবারে আপন। তিনি এতটাই আপন যে, এই জগতের কোনো প্রাণী কষ্ট ভোগ করলে তিনিই তাহা অনুভব করেন। সুখী হলে তিনি তাহা আনুভব করেন। এই জন্য তিনি চেতনময়। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, তিনি যদি এতই আপন, তবে যখন কোনো প্রাণী কষ্ট ভোগ করে, তিনি কেন তার কষ্ট দূর করার জন্য আসেন না? তিনি কেন নির্দয়ী?
ইশ্বর কেন প্রকট হন না?
চেতনাময় ব্রহ্ম সকল প্রাণীর সুখ-দুঃখ, অভাব-অনটন লাঘব করেন না কারণ, তিনি নির্দযী নন। যাকে আমরা তিনি বলছি, ঈশ্বর আল্লাহ গড বলছি। তিনি বাইরে কোথাও নেই। সেই ঈশ্বরই প্রত্যেক জীবের আত্মা। আমরা বড় ছবির একটি ছোট্ট অংশ মাত্র।
বলা হয়, তিনি তাঁর পরা-প্রকৃতি দ্বারা এই জগত সৃষ্টি করেছেন। এই কষ্ট বা সুখ আসলে শরীরের। শরীরে সেই পরা প্রকৃতির উপাদান দিয়ে তৈরি। এবং এই প্রকৃতি পরিবর্তনশীল অর্থাৎ এই সুখ, দুঃখ, অভাব-অনটন আজ যা কিছু আছে, কাল থাকবে না। এই পরা প্রকৃতি বা মায়া হলো আমাদের সীমানা। আমরা বড়ো ছবির ছোট্ট অংশে বদ্ধ।
তিনি প্রকট, এই কথাটি ভুল। তিনি তো এই প্রকৃতির দ্বারাই প্রকট হয়ে আছেন। এখন অপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব উচিত, তিনি এই দুঃখ কষ্ট কেন দিয়েছেন?
জগৎ সংসারে দুঃখ কষ্ট কেন?
গরীবের দুঃখী কারণ তাঁর ধন সম্পদ নাই। ধনীর ধন সম্পদ আছে তাও সে দুঃখী, কারণ তাঁর পুত্র সন্তান নাই, একজন ধনী যার ধন, সম্পদ পুত্র সন্তান আছে, সেও দুঃখী কারণ সেই সন্তান মাতা-পিতার অবাধ্য। অর্থাৎ সুখ বা দুঃখের কোনো মানদণ্ড নেই। মানুষ জানে না কোথায় থামতে হবে। সুখ দুঃখের কারণ আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করি।
এই কারণ গুলো ষড়রিপু নামে পরিচিত। কাম, ক্রোধ, লোভ মোহ ও মাৎসর্য পূর্ণ না হলে দূঃখ হয়। কামনা পূর্ণ হলে সুখী হয়।
“আছে যত যার, চাই আরো তাঁর।চাওয়ার নাই কোনো অন্ত।সবচেয়ে সুখী সেই,যার কোনো দায় নেই,যিনি জেনেছেন অনাদি অনন্ত।”
অর্থাৎ, সুখ দুঃখ বলে বাস্তবে কিছুই নেই। যাদের আপন বলছি, সে আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, তার আয়ু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তাঁকে কোনো না কোনো দিন, কোনো না কোনোভাবে মরতে হবে। এই সত্য সবাই জানি, তাও আপনজন হারালে কষ্ট হয়। কারণ, এই বদ্ধ শরীরে আমরা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও মাৎসর্য এই ষড়রিপু ত্যাগ করতে পারিনা।
এই সব কিছুই ঈশ্বরের ঐশ্বর্য। সেই ঐশ্বর্য নিজের ভেবে, তাতে মোহিত হয়ে তাঁকে ভূলে যাই। এটা হলো অহংকার। আমরা জানি, আজ যা আছে, কাল থাকবে না। কিন্তু জেনেও, ওই মুহূর্তকে ভোগ করার জন্য আনন্দে মেতে উঠি। একটা সময় আসে, যখন ঐ সুখ অসার মনে হয়। একটা সময় আসে যখন ওই সুখের চেয়েও বেশি কিছু পাওয়ার ইচ্ছে হয়। এখান থেকেই শুরু হয় দুঃখের যাত্রা।
এই সুখ বা দুঃখের বিষয় পাশ্চাত্য ঈশ্বরবাদ বলেন, মানুষের আদি মাতা ও পিতা ইভ ও আদম, ঈশ্বরের কথা উপেক্ষা করে ইডেন গার্ডেনের নিষিদ্ধ ফল খেয়েছেন। যার ফলে সংসারে এই সুখ দুঃখের প্রভাব দেখা যায়। এর পেছনে শয়তানের হাত আছে। অর্থাৎ, যা কিছু ভালো, সেই সব ঈশ্বরের কিন্তু যা কিছু মন্দ, সে সবের পেছনে ঈশ্বর দায়ী নয়। দায়ী শয়তান। কিন্তু, যুক্তি দিয়ে বিচার করে দেখুন, শয়তানও তো সুখী নয়। তাঁর দূঃখ কে দৃষ্টি করেছে? ঈশ্বর?
আমরা সনাতনীরা বলছি, ভালো বা মন্দ সব কিছুই আমাদের তৈরী, কিন্তু সেগুলোর প্রভাব আমাদের জীবনে কতটা পড়বে, সেটাও আমরা নিয়ন্ত্রন করতে পারি। ভালো বা মন্দ আমাদের কর্মফল ও বিবেকের ওপর নির্ভশীল। তাহলে প্রশ্ন করুন, ঈশ্বর কোথায়? তাঁর প্রয়োজনীতা কি? এর এক কথায় উত্তর হলো —
ইশ্বর আমাদের আত্ম পরিচয়।
ঈশ্বর স্বর্গে নেই। বা তাঁরও ওপরে নেই। তিনি আমাদের আত্ম স্বরূপ। বাইবেলেও বর্ণিত হয়েছে তিনি আদমকে তাঁর নিজের রূপে বানিয়েছেন। যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, "পিতার স্বর্গরাজ্য তোমার অন্তরে।” যারা নিজের জীবনকে নরক করে রেখেছে, তারাই স্বর্গের স্বপ্ন দেখে। আমরা বলি আমার স্বর্গ চাই না, নরক চাই না। আমরা চাই মুক্তি।
হিন্দু অদ্বৈত বলছে, ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। এর অর্থ Monothesatic Religion এর একমাত্র ইশ্বর নন। এক এবং অদ্বিতীয় অস্তিত্ব অর্থাৎ তিনি স্বজাতীয় ভেদ শূন্য, বিজাতীয় ভেদ শূন্য এবং সগত ভেদ শূন্য। অর্থাৎ, মানুষের মতো মানুষ আছে, গোরুর মতো গরু আছে, কিন্তু পরমেশ্বরের মতো দ্বিতীয় কোনো পরমেশ্বরের নেই, এটা স্বজাতীয় ভেদ, তিনি বিজাতীয় ভেদ শূন্য, অর্থাৎ ঈশ্বর ব্যতীত কিছুই নেই। যেমন, মানুষ ও গরু, গরু ও বেড়াল, ভালো ও মন্দ, এরকম আলাদ আলাদা অস্তিত্ব বিজাতীয় ভেদ। তাই, ইশ্বর ও জগৎ আলাদা আলাদা নয়।আবার তিনি নিজের মধ্যেও অভেদ, যেমন তিনি শুধুই ভালো আর মন্দ বলে কিছুই নেই। এরকম ঈশ্বর নয়।
এই চিন্তা আব্রাহামিক ধর্মমত গুলোতে আছে। সেখানে ইশ্বর ও জগত দুটি আলাদ আলাদা বস্তু। এমনকি ইশ্বরের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী শয়তান বা দজ্জাল কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। কারণ, দ্বন্দ্ব অসদ বস্তু। ইশ্বর অসদ বস্তু নয় তাই তিনি
এরপর হলো সগত ভেদ। ইশ্বরকে অনাদি অনন্ত বলা হয়। অর্থাৎ, শুরু ও শেষ নেই। খ্রীষ্টান ধর্মে বলা হয় তিনিই আলফা (α), অর্থাৎ আরম্ভ এবং ওমেগা (Ω) অর্থাৎ অন্ত। তিনি পবিত্র, আমাদের ঈশ্বরের কাছে পবিত্র বলেও কিছু নেই।
পবিত্র অপবিত্র বা সর্ববস্থা গতঃপিবা,য়ৎ স্মরেৎ পুন্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তর শুচিঃ।
পবিত্র অথবা অপবিত্র অবস্থায় যিনি পুন্ডরীকাক্ষ অর্থাৎ শ্রী বিষ্ণুকে স্মরণ করেন, তাঁর বাহ্য এবং অভ্যন্তর শুচি হয়ে যায়।
বহু দেবী-দেবতা কি?
হিন্দু ঈশ্বর যদি ভেদ শূন্যই হন, তবে এত দেবী-দেবতা কেন? দেবী দেবতারা হলেন পরমেশ্বরের মায়াধীন আমাদের মতোই এক প্রকার সত্তা।
বহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ থেকে আরম্ভ করে ইন্দ্র, অগ্নী, যম, কুবের এরা সবাই পরমেশ্বরেরই ব্যক্ত সত্তা। কাজেই এরা অব্যক্ত পরমেশ্বরের ব্যক্তরূপ।
যেমন ক খ গ ঘ বর্ণ গুলি বাগ যন্ত্রের উচ্চারিত ব্যক্ত রূপ। সেভাবে বিভিন্ন দেবী দেবতারা ঈশ্বরের ঐশ্বর্যের ব্যক্ত রূপ। যাদের কাজ হলো জগত পরিচালনায় সহযোগিতা করা। এরা সবাই মূলে অভিন্ন।
সর্ব শক্তিমান, তাঁর কি সহযোগী কেন প্রয়োজন ?
পরমেশ্বর সর্ব শক্তিমান — এতে কোনো দ্বিমত নেই। যখন আমরা বলি “সর্ব শক্তিমান” তখন আমরা কোন শক্তির কথা বলি? শক্তি কি শুধুই বাহুবল? শক্তি বলতে আমরা সামর্থ্যকেও বুঝি। আমাদের বলা, চলা, আহার সব কিছুই সেই সর্ব শক্তিমানের শক্তিরই অংশ।
যেমন, রাজা সামর্থ্যবান, তিনি সকলের অন্ন দাতা। তাই বলে রাজা তো দাড়িপাল্লা নিয়ে বাজারে বসেন না, বা নিজে হাতে মৃত্যু দন্ড দেন না। তিনি আদেশ দেন, তাঁর হয়ে তাঁর প্রতিনিধি করেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে রাজা একাই যুদ্ধ করেন না। রাজার সেনাবাহিনী যুদ্ধ করে। সেনাবাহিনী তাঁর শক্তি।
তাই, এটা একটি সম্পূর্ন ভুল ধারনা যে ঈশ্বরের সহযোগীর প্রয়োজনও নেই। ঈশ্বরের সহযোগী না থাকলে গ্যাব্রিয়েল বা জিবরাইল কে ছিলেন? যিশুর জন্মের সময় ঈশ্বরের দূত গ্যাব্রিয়েলকে পাঠানো হয়েছিল, নবী মুহাম্মদের কাছে সেই গ্যাব্রিয়েল বা জিবরাইলই কোরআন নিয়ে এসেছিল। এছাড়া নবী এবং বিভিন্ন ভবিষ্যত বক্তাদের উপযোগীতা কি?
সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের ইচ্ছায় যখন জগতের এতো কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তাঁদের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে, তাই নয় কি?
তাই, হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন দেবী দেবতারা তারই প্রকাশিত সাকার রূপ , এরা তাঁরই শক্তিতে চালিত।ঈশ্বর কোনো শর্ত সাপেক্ষে নয়।
প্রকৃত ধর্মের প্রকৃত ঈশ্বর সবার জন্য সমান
মুনাফিক, নাস্তিক, অস্তিক, কোনো কিছুই তাঁর অপছন্দের নয়। কারণ তিনিই তো এদের সৃষ্টি করেছেন।
কিন্তু, আল্লাহ বা গড জগত সৃষ্টি করেছেন মানুষের ইবাদত গ্রহণ করতে। আর, তাঁর নাফরমানী করলেই মানুষের দুর্গতি।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বলছে, ঈশ্বরের ভক্তি করার বিভিন্ন বিধি আছে বটে, সব বিধিতেও তিনিই পূজিত হন। তাই কোনো রকম বাধা নেই। সকল উপাসনা পদ্ধতিতে ঈশ্বরের কৃপা পাওয়া যায়। এমনকি উপাসনা না করেও শুভ কর্মের দ্বারাই ঈশ্বরের কৃপা লাভ হয়।
অন্য দিকে আল্লাহ বা ইয়াহবা বলছেন, “আমায় ছাড়া অন্য কোনো উপাসনা করবে না। করলে নরকের আগুণ তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে।
একবার ভেবে দেখুন, যদি শয়তান স্রষ্টা হত তবে এই জগত কেমন হতো?
সুনাম শুনে দেবতা খুশি হয়, শয়তান কি নিজের জন্য অসন্মান চাইবে? না, শয়তানও সন্মান চাইবে। ইসলামিক কাহিনী অনুসারে, ইলবিস্ জিন আল্লাহের নাফরমানী করে শয়তান হয়েছে।
আল্লাহ মাটি থেকে আদমকে ও তাঁর স্ত্রী হবা (ইভি)সৃষ্টি করে। তারপর পরমেশ্বর আদমকে সব কিছু শিখিয়ে ফরিশতাদের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আল্লাহ সকল ফরিস্তাদের আদমকে সেজদা করতে বললেন। সবাই সেজদা করলো, কিন্তু ইবলিস বলে এক জিন সেজদা করেনি। আল্লাহর নাফরমানী কুফর। তাই, আল্লাহ ইবলীসকে স্বর্গ থেকে বের করে দিলেন। সেই বিতাড়িত ইলবিসই হলো শয়তান।
সেই, ইবলিস আল্লাহর ইচ্ছাতেই মানুষকে ঘৃণা করে। মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে বিপথগামী করে। ইলবিস আল্লাহ বিরোধি নয়। সেও আল্লাহর ইবাদত করে, তার কাজ হলো মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে, আল্লাহর প্রতি ঈমান পরিক্ষা করা
একই গল্প আছে খ্রিষ্টানদের বাইবেলেও। তবে সেখানে গল্পের ভঙ্গিমা কোরআন থেকে আলাদা। খ্রীষ্টান শয়তান ঈশ্বরের সরাসরি শত্রু। যাকে মাঝে মাঝে ডেভিল বা দিয়াবল (Diabolos / Devil) বলা হয়। ডেভিল হলো অপ দেবতা “διάβολος”। এর অর্থ এসেছে ক্রিয়া পদ διαβάλλειν (diabállein) থেকে,যার মানে — “বিরোধিতা করা, আলাদা করে দেওয়া, বা দোষ চাপানো।” এই দিয়াবল বা Devil এসেছে জরথুস্ত্রবাদ (Zoroastrianism)-এর দেইবা (Daeva) ও আহুরা (Ahura)-দের গল্প থেকে। দেইবারা ডেভিল হয়ে গেছে।
এই কনসেপ্ট হিন্দুদের দেব ও অসুরের গল্পের উল্টো রূপ। যেখানে অসুর গুলো ভলো, আর দেবতার অন্ধকার জগতে বাস করে।
দেবতা ইন্দ্র, অগ্নী এদের বেদে অসুর বলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে অসুর ও দেবতাদের ইর্ষা জনিত কারণে বিভেদ হয়ে যায়।
জরথুস্ত্রবাদী দের গল্পে আহুর বা অসুররা অগ্নী পূজা করেন, তারা আগুনকে পবিত্র মনে করেন, আহুরা মাজদা অর্থাৎ অসুর মহান তিনি আলো সুন্দর জগৎ সৃষ্টি করলে আঙ্গীরা মুনি বা অঙ্গীরা মাইনু ঈর্ষা করে নিজের সেনা ‘দেইব’ বা দেবতাদের দ্বারা অসুর সংস্কৃতিতে আক্রমণ করে।
এই দেইবরা হলেন অহুরার বিরোধী। পরবর্তী সংস্কৃতিতে এই দেইব ডেভিল হয়ে গেছে।
হিন্দু গল্পে আসুররা মুনি ঋষিদের যজ্ঞ ও ধ্যানে নানা বাঁধা সৃষ্টি করতো। হত্যা লুঠ ও নানা অত্যাচার করতো। দেবতদের স্বর্গ এবং অসুরদের পাতালে স্থান দেওয়া হলো। এভাবেই অসুর ও দেবতা আলাদা দুটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
দেবতারা ডেভিল এবং অসুর বা আহুরা হলেন ইয়াহবা।
ইসলামের শয়তানের সঙ্গে ইয়াজিদিদের মেলেখ তাউস এর সঙ্গেও মিলে যায়। কিন্তু, সেই গল্পেও কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে বা সাংস্কৃতিক বিবিধতার কারণে পরিবর্তন হয়ে গেছে।
ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের বললেন তোমরা একে সেজদা করো। সব ফেরেশতারা করলো মেলেক তাউস করলো না। ঈশ্বর জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি আমার কথার অবজ্ঞা করলে। মালেখ তাউস বললেন। আপনি আমার স্রষ্টা। অপনাকে ছাড়া আমি কাউকে সেজদা করি না। এই জবাবে ঈশ্বর খুশি হলেন এবং ইয়াজিদিদের প্রধান দেবতা নিযুক্ত করলেন।
ইসলামে এই ঘটনা একটু অন্য রকম। সেখানে মেলেখ তাউস শয়তান ইলবিশ নামে পরিচিত। আদমকে সেজদা না করায় আল্লাহ ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে স্বর্গ অর্থাৎ জান্নাত থেকে বিতাড়িত করে। সেই বিতাড়িত ইলবিশ মানুষকে ঈর্ষা করে এবং আল্লাহর ইবাদত করা থেকে বিমুখ করে।
অর্থাৎ, এক সংষ্কৃতির দেবতা অন্য সংষ্কৃতিতে গিয় শয়তান বা অপদেবতা হয়ে গেছে। ঈশ্বর তাকে পুরস্কৃত করেন, কারণ তার সেই অবাধ্যতা ছিল ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠতা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন