গত বুধবার, লাদাখের রাজধানী লেহ-তে হিংসার ঘটনায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুকে কাঠগড়ায় তুললো RAW.
তারপর গত শুক্রবার জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (NSA) অধীনে গ্রেফতার করা হয় সোনম ওয়াংচুককে। সোনম ওয়াংচুককে গ্রেফতার করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে রাজ্যের দাবী করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্ষোভ উস্কে দেওয়ায়।
যদিও ওয়াংচুককে জেলে নিয়ে যাওয়া হবে নাকি অন্য কোনও জায়গায় নেওয়া হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। আগে জেনে নিন, লাদাখের জন্য কি অবদান রেখেছেন সোনম ওয়াংচুক।
সোনম ওয়াংচুকের কয়েকটি উদ্ভাবন
- আইস স্তুপা – লাদাখে জলের সমস্যার সমাধানে এই আশ্চর্য উদ্ভাবন কার্যকরী।
- SECMOL ক্যাম্পাস –SECMOL (Students Educational and Cultural Movement of Ladakh) হলো সৌরশক্তি নির্ভর ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
- প্যাসিভ সোলার / মাটির বাড়ি – সূর্যের তাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উষ্ণ থাকে।
- সোলার তাঁবু – উঁচু পর্বতের শীতে ভারতীয় সেনাদের জন্য সৌরশক্তি চালিত মোবাইল তাঁবু।
- অপারেশন নিউ হোপ – লাদাখের সরকারি স্কুলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রয়োজন ভিত্তিক শিক্ষা সংস্কার প্রকল্প।
- প্যাডেল ও ব্যাটারি চালিত সাইকেল - পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ কার্যকরী।
তাঁর এই সকল কাজকে সমগ্র ভারতীয় কুর্নিশ জানায়, কিন্তু এমন সময়, যখন ভারতের প্রতিবেশী দেশ গুলোতে গৃহযুদ্ধ চলছে, সেই সময় প্রকাশ্যে ভারতের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদশ, বা পাকিস্থান এর মত করার আহ্বান নিন্দনীয়।
দেশের নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যিনি অরাজকতা সৃষ্টি করে, সে যতই উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হোক না কেন। তাঁর এই কাজকে ভারতীয়দের পক্ষে সমর্থন করা সম্ভব নয়।
যদি বলেন, ওয়াংচুক নির্দোষ, তবে এই অরাজকতার দায় কার?
ভারতের নাগরিক হয়ে আন্দোলন করে দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা তৈরী করার চেষ্টা। এক কথায় এটি দেশের সঙ্গে দেশদ্রোহীতা করা। এর বিচার কি দেশের ন্যায় করবে করবে না? ।
লাদাখ কেন কেন্দ্র শাসিত?
লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার কারণ ভারত সরকারের ২০১৯ সালের সিদ্ধান্ত বিশেষ ভাবে দায়ী। ৫ আগস্ট ২০১৯-এ, ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে।
২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়: কাশ্মীর এবং লাদাখ।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার কারণসমূহ:
ফলাফল:
- লাদাখ এখন একটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত, যেখানে কোনো বিধানসভা নেই এবং এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর দ্বারা পরিচালিত হয়।
- এই পদক্ষেপ লাদাখের স্থানীয় সংস্কৃতি, পরিবেশ, এবং জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ মনোযোগ ও নীতি প্রণয়নের সুযোগ তৈরি করেছে।
কেন বিরোধিতা করছে লাদাখের মানুষ?
প্রথমে UT (Union Territory )-কে "মুক্তি" হিসেবে দেখা হলেও, এখন বিরোধিতা বেড়েছে কারণ, সেখানকার মানুষের প্রত্যাশা বাড়ছে। তারা প্রত্যাশিত সুরক্ষা (যেমন Sixth Schedule) চায়। যা পূর্ণ করা আপাতত সম্ভব নয়, কারণ, চীনের সঙ্গে ভারতের সীমানা বিতর্ক অব্যাহত।
সোনাম ওয়াংসুখের বক্তব্য ও বাধা
ওয়াংসুখের বক্তব্য স্থানীয় অধিকার, পরিবেশ এবং গণতন্ত্রকেন্দ্রিক। কয়েকটি মূল উদ্ধৃতি (তাঁর সাম্প্রতিক স্টেটমেন্ট থেকে):
সুরক্ষা ও স্টেটহুড: "লাদাখকে Sixth Schedule-এর অধীনে রাখুন, যাতে জমি, চাকরি এবং সংস্কৃতি রক্ষা পায়। স্টেটহুড দরকার যাতে স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নেয়। J&K-এর অংশ থাকায় আমরা অসুরক্ষিত ছিলাম, কিন্তু UT-এও নেই।"
বাধা: লাদাখকে Sixth Schedule-এর অধীনে আনতে ভারত সরকারের কোনো অপত্তি নেই। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। কারণ দেশের সীমান্তে অবস্থিত এই রাজ্য চীনের সঙ্গে সুরক্ষার সংক্রান্ত দায় আছে। জাতীয় সুরক্ষার থেকে Sixth Schedule এর প্রাধান্য বেশি নয়।
পরিবেশ ও উন্নয়ন: "UT (Union Territory) স্ট্যাটাস ভালো, কিন্তু পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া উন্নয়ন ধ্বংস সাধন। বাইরের হোটেল ও শিল্প কেড়ে নেবে, গ্লেসিয়ার গলে যাবে।"
বাধা: লাদাখে উন্নয়ন বলতে, সেনাদের যাতায়াতের জন্য বিশাল পথ নির্মাণ হচ্ছে। যার জন্য পাহাড় ও গাছ কাটা পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে নদীতে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, পরিবেশ বাঁচাতে যদি দেশ হাতছাড়া হয়ে যায়, তখন কি হবে?
যুবকদের প্রতি: "যুবকরা বেকার এবং অধিকারহীন। চীন যদি লাদাখ দিয়ে আক্রমণ করে, আমরা বাধা দেব না, পথ দেখাব। কিন্তু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চাই।" (২০২৫-এর হিংসার পর তিনি হাঙ্গার স্ট্রাইক বন্ধ করেন, বলেন "আরও সমস্যা চাই না")।
সরকারের প্রতি: "প্রতিশ্রুতি কী হলো? অমিত শাহ বলেছেন 'প্রধানমন্ত্রী বললেও Sixth Schedule দেব না'। BJP শুধু নির্বাচন ভাবে, লোক ভুলে যায়।"
বাধা: এক দিকে ওয়াংচুক বলছেন “চীনকে পথ দেখাব”, আরেক দিকে গৃহ মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন, দুটোই সবিরোধী বক্তব্য।
ওয়াংসুখের নেতৃত্বে LAB-KDA সমন্বিত প্রতিবাদ চলছে, এবং ২০২৫-এ MHA-এর সাথে কথা চলছে। এটি লাদাখের জন্য একটি দীর্ঘ লড়াই, যা কৌশলগত গুরুত্বের কারণে জটিল।
এই ঘটনার পটকে ভূমি সুজিত দেবনাথ স্যার তাঁর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আরো সুন্দর হয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে দেখুন।
বিঃ দ্রঃ: আমরা কোনো তৃতীয় পক্ষ প্রমোশন করি না। বিষয় বস্তু তথ্য বহুল হওয়ায় Share করা হয়েছে। ব্যক্তির মতামত সম্পূর্ন তাঁর নিজস্ব। আমরা কোনোঅংশীদারি বা Copyright ক্লেম করি না। জনস্বার্থে প্রচারিত।
গ্রেফতার এবং NSA-এর প্রয়োগ
২৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ২:৩০-এ লাদাখ পুলিশের প্রধান এস. ডি. জামওয়ালের নেতৃত্বে ওয়াংচুককে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA) এর অধীনে অভিযুক্ত করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক আটকের অনুমতি দেয় এবং জামিনের সুযোগ কম।
লাদাখ প্রশাসনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওয়াংচুক “রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং শান্তি-স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর কাজ করছিলেন, তাই তাঁকে লেহ থেকে বহিষ্কৃত করে জোধপুরের সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়েছে। জেলে প্রবেশের পর তাঁর চিকিৎসা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং হাই-সিকিউরিটি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।”
সরকারের দাবি অনুসারে, এই গ্রেফতার শান্তি-স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। লেহে কারফিউ জারি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ওয়াংচুককে "প্রধান অভিযুক্ত" করা হয়েছে।
CIA যোগের অভিযোগ: প্রমাণ কতটা শক্ত?
CIA যোগের অভিযোগ করা হলেও, এর কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। তবে লাদাখ DGP এসডি জামওয়ালের অভিযোগ হলো পাকিস্তানের PIO-e এর সাথে যোগাযোগের। বিস্তারিত:
- পুলিশ সম্প্রতি একজন পাকিস্তান PIO (Persons of Indian Origin, কিন্তু প্রসঙ্গে intelligence operative বা গুপ্তচর হিসেবে উল্লেখিত) গ্রেফতার করেছে, যে ওয়াংচুকের সাথে "যোগাযোগে" ছিল এবং "প্রতিবেদন" পাঠাচ্ছিল।
- ওয়াংচুক পাকিস্তানে "Dawn" ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ সফর করেছেন, যা "Questionable" বলে দাবি করা হচ্ছে।
- এছাড়া, F.C.R.A লঙ্ঘনের তদন্তে বিদেশি তহবিলের উৎস (যেমন হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভস লাদাখ-এ ১.৫ কোটি টাকা) পরীক্ষা করা হচ্ছে, কিন্তু এতে CIA-এর কোনো উল্লেখ নেই।
এই অভিযোগগুলো এখনও তদন্তাধীন, এবং ওয়াংচুকের পক্ষ থেকে এগুলো অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী গিতাঞ্জলি অ্যাঙ্মো বলেছেন, এটি "অন্যায়ভাবে অপরাধী" করার চেষ্টা।
দেশের অধিকাংশ মানুষ সরকারের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। কারণ, দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টি করা ও দেশের সম্পদ নষ্ট করা দেশদ্রোহিতার পর্যায়েই পরে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন