আমাদের উদ্দেশ্য কি?

সম্পাদকীয়

বিভিন্ন সময়ে আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে নানা ধরণের বিতর্ক এবং আলোচনায় হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন রেফারেন্স আমাদের সকলেরই প্রয়োজন হয়। অনেক ঘটনা বিবাদ কেন্দ্র করে ভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। হিন্দু ধর্মের নানা তথ্য আমাদের মনে আছে কিন্তু তা কোন পুরান বা গ্রন্থে রয়েছে বা কোন খণ্ডে রয়েছে তা মনে নেই। বা কোনো ঘটনা কি কারণে ঘটেছে তার প্রমাণ দরকার হয়। অনেক সময় অপব্যাখ্যা, অপপ্রচার মোকাবেলা করার জন্য এই ওয়েবসাইটটি তথ্য সংগ্রহ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে।

এই ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ হিন্দু রেফারেন্স সাপেক্ষ প্রমাণ দিয়ে নির্মিত। কারণ শাস্ত্রের ভাব শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতেই দেখা  সম্ভব। তারপরেই নিরপেক্ষ বিচার করা সম্ভব। আমরা কোনো জাতি বা জাতিগত উৎস, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা, বয়স, জাতীয়তা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মীর স্ট্যাটাস, যৌন অভিমুখ, লিঙ্গ, লিঙ্গগত পরিচয় বা পদ্ধতিগত বৈষম্য ও ভেদাভেদের উপর নির্ভর করে এমন অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসা জাগিয়ে তোলে, বিভেদ সৃষ্টি করে বা তাকে অবমাননা করি না 

যেমন: কারও বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগিয়ে তোলে এমন গোষ্ঠী বা তার সাজ সরঞ্জাম প্রচার করে, কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অমানুষ, অধম বা ঘৃণার যোগ্য বলে বিশ্বাস করতে সকলকে উৎসাহিত করি না।

কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে নির্দিষ্ট করে হয়রান বা অপমান করা, কোনও দুঃখজনক ঘটনা হয়নি অথবা ঘটনার শিকার বা তার পরিবার অভিনয় করছেন বা ঘটনা চাপা দেওয়ার কাজে লিপ্ত রয়েছেন বলে ইঙ্গিত করছে বলে প্রচার করি না।

আপনাদের সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ  আমাদের করে রেফারেন্স নিজে মিলিয়ে দেখুন।  আমাদের তথ্য ভুল থাকলে যে আমদের চ্যালেঞ্জে করে তথ্য প্রদান করতে পারেন। আমাদের ভুল সংশোধন করে দিলে আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তাহা মেনে নেবো। গালাগালি নয়, বিনয়ের সাথে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন।

উল্লেখ্য, এই ওয়েবসাইটটি সমৃদ্ধ করবার জন্য নাস্তিক্য ডট কম এর কাছেও  আমরাও আমরা  কৃতজ্ঞ। কারণ  তাঁদের সমালোচনা ও সংগ্রহ না থাকলে হয়তো আমরা এই ঊদ্যোগ বা প্রচেষ্টাই করতাম না। আমরা সকল সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করে আমাদের বক্তব্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরি।

এই উদ্যোগকে সমৃদ্ধ করতে আপনাদের সহযোগিতা আমাদের কাম্য। আপনাদের কাছে হিন্দু ধর্মের নানা রেফারেন্স রয়েছে, তা নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে এই তথ্যভাণ্ডারটি আপনিও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারেন।

হিন্দু ধর্মের রেফারেন্সের গুরুত্ব: কেন এটি আমাদের সকলের প্রয়োজন?

হিন্দু ধর্মের বিশালতা এমন যে, এর গ্রন্থসমূহ – যেমন বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, মহাভারত, রামায়ণ – একটি জীবনকালে সম্পূর্ণরূপে বোঝা কঠিন। এই গ্রন্থগুলোতে লুকিয়ে আছে জীবনের সকল দিকের উপদেশ: নৈতিকতা, বিজ্ঞান, সমাজব্যবস্থা, আধ্যাত্মিকতা এবং এমনকি আধুনিক সমস্যার সমাধান। কিন্তু সমস্যা হলো, আজকের দ্রুতগতির জীবনে আমরা এই তথ্যগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, মহাভারতের কোনো ঘটনা যেমন ভীষ্মের শপথ বা কর্ণের জন্মকথা নিয়ে বিতর্ক উঠলে, সঠিক অধ্যায়-শ্লোক মনে করা কঠিন। এখানেই এই ওয়েবসাইটের ভূমিকা – একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি যা সহজে অনুসন্ধানযোগ্য, সূত্রসহ প্রমাণিত রেফারেন্স প্রদান করে।

আমরা বিশ্বাস করি, সত্যের অনুসন্ধানে নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রগুলোকে শুধুমাত্র আস্তিকের দৃষ্টিতে দেখলে তা একপেশে হয়ে যায়, আবার নাস্তিকের দৃষ্টিতে দেখলে অপপ্রচারের জন্ম নেয়। তাই আমরা শাস্ত্রীয় ভিত্তি থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ এবং আধুনিক গবেষণা যোগ করে একটি সুষম দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করি। উদাহরণ হিসেবে, বৈদিক যুগের আর্য সভ্যতা নিয়ে যে বিতর্ক চলে – আমরা শুধুমাত্র ঋগ্বেদের শ্লোক উদ্ধৃত করব না, বরং রাখিগড়ি খননের DNA প্রমাণ এবং আইটিআইজিএন গবেষণার রিপোর্টও যোগ করব। এতে পাঠক নিজে বিচার করতে পারবেন, কোনো একপেশে প্রচার ছাড়াই।

আমাদের কমিটমেন্ট: সত্যতা, নিরপেক্ষতা এবং অন্তর্ভুক্তি

এই প্ল্যাটফর্মের মূল স্তম্ভ তিনটি: সত্যতা, নিরপেক্ষতা এবং অন্তর্ভুক্তি। সত্যতা বলতে আমরা বুঝি প্রতিটি রেফারেন্সের পিছনে সঠিক গ্রন্থের অধ্যায়-শ্লোক, পৃষ্ঠা নম্বর এবং যাচাইকৃত অনুবাদ। আমরা কোনো গ্রন্থের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করব না যাতে প্রসঙ্গ হারিয়ে যায়; সবসময় সম্পূর্ণ কনটেক্সট প্রদান করব। নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে, আমরা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রচার করব না। যেমন, কোনো পৌরাণিক কাহিনী যদি সামাজিক বৈষম্যের প্রতিফলন করে (যেমন বর্ণব্যবস্থা), তাহলে আমরা তা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করব, কিন্তু কোনো গোষ্ঠীকে অপমান করব না। বরং, আধুনিক ব্যাখ্যা যোগ করে দেখাব যে হিন্দু ধর্মের মূলে সমতা এবং কর্মফলের নীতি রয়েছে।

অন্তর্ভুক্তির জন্য, আমরা সকলের অবদানকে স্বাগত জানাই। আপনি যদি একজন ছাত্র হন যিনি উপনিষদের কোনো শ্লোকের অজানা অর্থ জানেন, অথবা একজন গবেষক যিনি পুরাণের অসম্পাদিত খণ্ড থেকে নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন, তাহলে আপনার অবদান এখানে স্থান পাবে। আমরা কমেন্ট সেকশন ছাড়াও একটি সাবমিশন ফর্ম চালু করব, যেখানে আপনি নিজের রেফারেন্স জমা দিতে পারবেন। সব সাবমিশন যাচাই করে (যেমন: সোর্স লিঙ্ক সহ) আমরা তা প্রকাশ করব, এবং অবদানকারীর নাম উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানাব। এতে এই ভাণ্ডারটি সম্প্রদায়-চালিত হয়ে উঠবে, যা হিন্দু ধর্মের সামগ্রিকতার সাথে মিলে যায় – যেখানে জ্ঞান অর্জন সকলের জন্য উন্মুক্ত।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: আরও সমৃদ্ধ করার পথ

আমরা এই ওয়েবসাইটকে শুধুমাত্র টেক্সট-ভিত্তিক রাখব না; ভিডিও, অডিও এবং ইন্টারেক্টিভ টুলস যোগ করব। উদাহরণস্বরূপ, একটি সার্চ টুল যা শ্লোক দিয়ে গ্রন্থ অনুসন্ধান করবে, অথবা ভার্চুয়াল ট্যুর যা বৈদিক যজ্ঞের ধাপগুলো দেখাবে। আমরা বিজ্ঞান এবং ধর্মের সংযোগ নিয়েও বিশেষ অংশ তৈরি করব – যেমন, বেদে উল্লিখিত গণিতের ধারণা (যেমন অশ্বমেধ যজ্ঞের গণনা) এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে তার তুলনা। এতে যুবক-যুবতীরা ধর্মকে বিরক্তিকর না ভেবে আকর্ষণীয় পাবেন।

এছাড়া, আমরা ফ্যাক্ট-চেক সেকশনকে শক্তিশালী করব, যেখানে সামাজিক মিডিয়ায় ছড়ানো ভুল তথ্য (যেমন: কোনো পৌরাণিক চরিত্রের ভুল ব্যাখ্যা) নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন থাকবে। এটি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু কখনোই আক্রমণাত্মক হবে না। আমরা বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গিকেও স্থান দেব – উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিতর্কিত থিয়োরির পক্ষে এবং বিপক্ষে উভয় পক্ষের রেফারেন্স প্রদান করে।

আপনার ভূমিকা: একটি যৌথ উদ্যোগ

শেষ কথা হিসেবে, এই ওয়েবসাইট শুধু আমাদের নয় – এটি আপনাদের। হিন্দু ধর্মের এই অমূল্য জ্ঞানভাণ্ডারকে সংরক্ষণ এবং সমৃদ্ধ করতে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার। আজকের ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্যের অভাব নেই কিন্তু যাচাইকৃত সত্যের অভাব আছে, এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সত্যিই অপরিহার্য। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, প্রতিটি অবদানকে সম্মান করব এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখব। আসুন, মিলে এই যাত্রা শুরু করি – যেখানে জ্ঞানের আলো অন্ধকারকে দূর করবে, এবং বিতর্কগুলো সম্মানের সাথে সমাধান হবে।

যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা অবদান জানতে চান, তাহলে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ!

contact-form 

full-width

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Advertisement