Some changes have done due to Google Policy Violation, Some Post are Deleted. You May not Find them here. Sorry for Inconvenience.

হনুমান কিভাবে এত বড় সূর্যকে গ্রাস করেছিল

হনুমান, হিন্দু পুরাণে অন্যতম শক্তিশালী ও বিখ্যাত চরিত্র, যার জীবন বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার দ্বারা সমৃদ্ধ। তার শৈশবে সূর্যকে গ্রাস করার ঘটনা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে বিশেষভাবে উল্লেখিত। যদিও এটি একটি পৌরাণিক কাহিনী, তবে এর প্রতীকী দিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা মানবজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদনে আমরা কাহিনীর উৎস, হনুমানের অষ্টসিদ্ধি ও নবনিধি এবং সূর্য গ্রাসের প্রতীকী ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করব।



হনুমান ও সূর্য গ্রাসের ঘটনা: অলৌকিক শক্তি ও প্রতীকী ব্যাখ্যা

ঘটনার উৎস ও বিবরণ

হনুমানের সূর্য গ্রাসের ঘটনা মূলত বাল্মীকির রামায়ণ (বালকাণ্ড) এবং আনন্দ রামায়ণ-এ উল্লেখিত। পাশাপাশি ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, শিব পুরাণ, এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

কাহিনী অনুযায়ী, হনুমান ছিলেন শৈশব থেকেই অত্যন্ত কৌতূহলী এবং অসাধারণ শক্তিধর। একদিন সূর্যকে আকাশে উজ্জ্বল লাল বর্ণের একটি পাকা ফল ভেবে তিনি সেটি খাওয়ার জন্য লাফ দিয়ে সূর্যের দিকে রওনা হন। সূর্যকে মুখে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, যার ফলে সারা পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। পৃথিবীর এই বিপদ দেখে দেবতারা চিন্তিত হয়ে হনুমানকে থামানোর চেষ্টা করেন। দেবরাজ ইন্দ্র বজ্রপাতের মাধ্যমে হনুমানকে থামান, যা তার চোয়ালে আঘাত হানে। পরবর্তীতে দেবতারা তাকে শান্ত করেন এবং তার অসীম শক্তিকে স্বীকৃতি দেন।

হনুমানের অষ্টসিদ্ধি ও নবনিধি

হনুমান দেবতাদের আশীর্বাদে অষ্টসিদ্ধিনবনিধি দ্বারা সমৃদ্ধ ছিলেন। এই অলৌকিক শক্তিগুলো তাকে সূর্য গ্রাসের মতো অসাধারণ কার্য সম্পাদনে সক্ষম করে তোলে।

অষ্টসিদ্ধি:

হনুমানের অষ্টসিদ্ধি হলো আটটি বিশেষ ক্ষমতা, যা যোগসাধনার মাধ্যমে অর্জিত হয়।

  1. অনিমা: নিজের দেহকে অতি ক্ষুদ্র করার ক্ষমতা।
  2. মহিমা: নিজের দেহকে অতি বড় করার ক্ষমতা।
  3. গরিমা: নিজেকে অত্যন্ত ভারী করা।
  4. লঘিমা: নিজেকে অত্যন্ত হালকা করা।
  5. প্রাপ্তি: দূরবর্তী স্থানে সহজেই পৌঁছানোর ক্ষমতা।
  6. প্রাকাম্য: ইচ্ছামতো যা কিছু অর্জনের ক্ষমতা।
  7. ঈশিত্ব: সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
  8. বশিত্ব: অন্যকে বশ করার ক্ষমতা।

নবনিধি:

নবনিধি হলো নয়টি ঐশ্বরিক সম্পদ, যা হনুমান দেবতাদের আশীর্বাদে পেয়েছিলেন। এই ধন সম্পদের প্রতীক হল—মহাপদ্ম, পদ্ম, শঙ্খ, মকর, কচ্ছপ, মুক্তা, কুন্দ, নীল, এবং খর্ব।

কিভাবে সূর্যকে গ্রাস করলেন হনুমান?

সূর্য পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। এটি আক্ষরিক অর্থে সম্ভব নয়। তবে পৌরাণিক বর্ণনার দৃষ্টিতে হনুমান তার মহিমা, লঘিমা, এবং প্রাপ্তি ক্ষমতা ব্যবহার করে এই কাজ সম্পাদন করেন।

১. মহিমা এবং লঘিমা শক্তি:
হনুমান তার দেহকে সূর্যের সমান বড় করেছিলেন (মহিমা) এবং আকাশে সহজে ভেসে থাকার জন্য দেহকে হালকা করেছিলেন (লঘিমা)।

২. অনিমা শক্তি:
সূর্যকে পাকা ফলের আকারে ক্ষুদ্র করে নিজে তা গ্রহণ করেছিলেন।

৩. প্রাপ্তি শক্তি:

এই ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি সূর্যের কাছে পৌঁছেছিলেন।

প্রতীকী ব্যাখ্যা

এই ঘটনাটি বাস্তব বিজ্ঞানসম্মত নয়, তবে প্রতীকীভাবে এর গভীর অর্থ রয়েছে।

কৌতূহল ও জ্ঞানের প্রয়াস:

সূর্যকে ফল ভেবে গ্রাস করার প্রচেষ্টা প্রতীকীভাবে জ্ঞান অর্জনের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও কৌতূহলের ইঙ্গিত দেয়।

অহংকারের শিক্ষা:

নিজের শক্তির ওপর অহংকার এবং অপব্যবহার বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। দেবতাদের হস্তক্ষেপ এবং শাস্তি হনুমানের এই শিক্ষা দিয়েছিল।

প্রকৃতির ভারসাম্য:

সূর্য গ্রাসের ফলে পৃথিবীতে যে অন্ধকার নেমে এসেছিল, তা বোঝায় প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষমাশীলতার মহত্ত্ব:

দেবতারা হনুমানের ভুল ক্ষমা করে তাকে আশীর্বাদ দেন। এটি ক্ষমার গুণাবলীর গুরুত্ব তুলে ধরে।

উপসংহার

হনুমানের সূর্য গ্রাসের ঘটনা তার অসীম শক্তি, সাহস এবং কৌতূহলের পরিচায়ক। যদিও এটি আক্ষরিক অর্থে সম্ভব নয়, তবে কাহিনীটি প্রতীকীভাবে শক্তি, জ্ঞান, এবং দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব বোঝায়।

এই কাহিনী আমাদের শেখায় যে, শক্তি বা ক্ষমতা থাকলেও তা নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা এবং অহংকার থেকে দূরে থাকা জীবনকে উন্নত করে। হনুমানের এই ঘটনা শুধু পৌরাণিক নয়, বরং একটি দার্শনিক ও নৈতিক শিক্ষা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Advertisement