Some changes have done due to Google Policy Violation, Some Post are Deleted. You May not Find them here. Sorry for Inconvenience.

হিন্দুরা নিজেরাই মুর্তি বানায় আবার নিজেরাই সেই মুর্তি পুজা করে। মূর্তি নিজের রক্ষা করতে পারেন না তোমার কিভাবে করবে?

ভূমিকা:

হিন্দুরা কেন, পৃথিবীর সব ধর্মই মুর্তি অর্থাৎ জড় উপাসক। তবে সমাজ ও সংস্কৃতি ভেদে পদ্ধতি আলাদা। কিভাবে? তবে শুনুন। আপনি বাজার থেকে একটি "বিশেষ বই" কিনে আনুন। এবার নিজের Facebok বা YouTube Online camera on করে ওই বইটি প্রকাশ্যে জ্বালিয়ে দিন। দেখবেন যারা বলেছে "হিন্দুরা মূর্তিপূজক" তারাও ওই বইয়ের অবমাননা সহ্য করতে পারবে না। ওই বিশেষ বইটির নাম নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। 


মুর্তি পূজার গুরুত্ব:

হিন্দুরা মূর্তির পুজা করে না। মূর্তিতে দেবতার অস্তিত্ব স্বীকার করে ইশ্বরের উপাসনা করে। ঠিক যেভাবে ওই বাজার থেকে কিনে আনা কাগজ কালিতে লেখা ওই বিশেষ বইটির মধ্যে তারা নিজের ইশ্বরের পবিত্র বাণী কল্পনা করে। 

হিন্দু ধর্ম অনুসারে দেবতারা পরম ইশ্বরের শক্তিকে আশ্রয় করে জগতের পরিচালনা করে। সেই পরম ইশ্বর দেবতা রূপে মানুষের জীবনের সুখ, সমৃদ্ধি, ধনসম্পদ, প্রভৃতির শ্রী বৃদ্ধি করে। হিন্দুদের ধর্ম শাস্ত্রও এক ও অভিন্ন ইশ্বরের কথা বলে। কিন্তু এক ইশ্বরের উপাসনার কথা বলে না। আমরা নিজ নিজ মনস্কামনা পূরনের জন্য দেবতার পুঁজা করি। কিন্তু 'ইশ্বর বা পরব্রহ্মের পুঁজা' কেউ করে না। 

হিন্দু ধর্মের ইশ্বর ছাড়াও কি অন্য ধর্মের ইশ্বর নিজের রক্ষা করে?

পরমইশ্বর বা পরব্রহ্ম পার্থিব নয়, মন, বুদ্ধির দ্বারা তাঁকে কল্পনা করা যায় না। কিন্তু তাঁকে যারা দর্শন করেছেন, তাঁকে যারা শ্রাবন করেছেন তাঁদের বর্ণনা বা ব্যাখ্যা কেই আমরা গ্রহন করে বিভিন্ন চিহ্ন, প্রতীক বা বানীর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের দিকে এগিয়ে দিয়েছি। 

ইসলামে মূর্তি পূজা নিষেধ :

হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদিও আল্লাহর ফিরিশতা জিব্রাইলের দর্শন করেছিলেন তিনি প্রথমে আল্লহ সরাসরি পাননি। জিব্রাইলের মাধ্যমে কুরআন হজরত মুহাম্মদের কাছে আসে, সেটাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গীদের বলতেন। তারাই আবার সেটা লিপিবদ্ধ করে আজকের কোরআন এসেছে। 

যীশুখ্রীষ্ট বলেছিলেন, "পিতা আমার মধ্যে আর আমি পিতার মধ্যে বাস করি। পিতার স্বর্গ রাজ্য তোমার ভেতরে।" তাই, কুরআন মুসলমানদের কাছে পূজনীয়। যীশু খ্রীষ্টের মুর্তি খ্রিষ্টানদের কাছে পূজনীয়।  প্রটিষ্টান খ্রিষ্টান যতোই মূর্তি পূজার বিরোধে করুক। যীশুর ছবিকে অপমান করলে, বা বাইবেলের অপমান করলে তারাও কষ্ট পাবে।

একটা কাগজের বই, যা কোনো প্রিন্টিং প্রেসে ছাপা হয়েছে। তারপর কাগজের সুন্দর মলাটে মুরে বাজারে বিক্রীর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেটাই মুসলিম ভাইরা সন্মানের সঙ্গে মাথার ওপর তুলে রাখেন। একই ভাবে, খ্রিষ্টানদের বাইবেল, হিন্দুর গীতা বা মুর্তি এই পার্থিব জগতের পার্থিব বস্তু। এরা নিজের রক্ষা করতে পারেন না।

হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে তো মাতা পিতা, অতিথি, নারী, গরু কেও দেবতা রূপে পূজা করা হয়। কারণ আমরা প্রকৃত অর্থে মূর্তি পূজক নই, আদর্শ ও মুল্যবোধের পূজারী।  আমরা তারই প্রতিরূপ যিনি জগতের মূল, এবং যিনি স্থূলের সৃজন, পালন ও সংহার করেন। ব্রহ্মবোধকে হারিয়ে আমরা শিব থেকে জীব রুপে বিচরণ করছি।

এই মূর্তি বা শাস্ত্রের উদ্দেশ্য হলো সেই ব্রহ্মবোধকে পুনঃপ্রকাশ করে অজ্ঞাণী ত্রি-তাপদগ্ধ জীবকে জীবন মরণের এই চক্র থেকে উদ্ধার করে মক্ষের দিকে অগ্রসর করা। গুরু বা ভগবান গোছের মহাপুরুষেরা আমাদের সেই পথে চালিত করেন। কারণ তারা দেহধারী পরব্রহ্ম পরম পদের আসনে প্রতিষ্ঠিত। এনারা সকলকে সেই আসনে বসিয়ে পূর্নব্রহ্মের মূল রূপ প্রকট করতে চান। এর কৌশল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, উদ্দেশ্য এক।

মূর্তি নিজের রক্ষা করতে পারেন না:

মূর্তি নিজের রক্ষা করতে পারেন না এমনটাও নয়। ভগবান, আল্লহ বা গড যে কোনো সম্প্রদয়ভুক্ত এই পরম ইশ্বরকে প্রকাশ্যে গালি দিলেও এরা সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রতিবাদ করেন না বা উত্তর দেননা। এর অর্থ কি ওই আল্লাহ, গড বা ঈশ্বর মিথ্যা? না, ব্যাপার টা কখনোই সেরকম  নয়। 

তিনি ভক্ত এবং অভক্ত এই দুই মানসিকতার মানুষের সৃজন কর্তা। উভয়ের মধ্যে তিনি কারণ রূপে আছেন। এবং প্রকৃতি ভেদে তিনিই সকল ক্রিয়া করেন কিন্তু কোনো কিছুতেই তিনি লিপ্ত নন। যে ব্যাক্তি কোরআন বা বাইবেল জ্বালায় বা দেবী দেবতাদের মূর্তি, যজ্ঞ স্থল বা উপাসনালয় গুলো নষ্ট করে, এসবের দায় ইশ্বরের নয়। এসব মানুষের প্রকৃতগত বিকৃতির ফল।

ইশ্বর ধর্ম সৃষ্টি করেছেন কর্ম, অকর্ম এবং অপকর্মের মধ্যে তফাৎ করে। তিনি বিবেক ও দয়া সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক মানুষের মধ্যে তিনি সেটা দিয়েছেন। সেটা ধারন করে আচরণ করা আমাদের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। আসুরিক প্রবৃতি সম্পন্ন লোকেরা অপরকে দুঃখ দিয়ে খুশী হয়, দিব্য ভাব সম্পন্ন লোকেরা সকলের মঙ্গল কামনা করে। এই কথাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে —

যং ভাবং দর্শয়েদস্য তং ভাবং স তু পশ্যতি। 
তং চাবতি স ভূত্বাহসৌ তদ্‌গ্রহঃ সমুপৈতি তম্॥

যাহার যার মধ্যে যে ভাব দেখা যায়, সে সেই ভাবের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সেই ভাবেরই পরিণত হয়। সেই ভাবের মধ্যেই মগ্ন হয়ে, তার রূপ ধরে তাতেই বিলীন হয়ে যায়।

অর্থাৎ মূল বক্তব্য হোলো ভাব বা চেতনা। আপনার কাছে মূর্তি পূজা নীরার্থক মনে হতে পারে, তার কাছে নিরাকার নিরার্থক হতে পারে। অন্য একজনের কাছে আপনাদের উভয় পক্ষের তর্ক বিতর্কই নিরর্থক। সে আপনাদের সাকার নিরাকার ঈশ্বর তো দূরে থাক। ইশ্বরের অস্তিত্বই স্বীকার করে না।

কিছু বছর আগে এক কম্পারেটিভ রিলিজিয়নের এক ছাত্র তার নিজের তৈরি পিস টিভি নামক চ্যানেলে বক্তব্য রাখেন, "ঈশ্বর এক এবং তাঁর নিরাকার ইশ্বর একমাত্র পূজনীয়"। সেই ইশ্বর একটি কিতাব রচনা করেছেন এবং সেটাই ওই ছাত্র বক্তার বক্তব্য বা সমালোচনার কেন্দ্র। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর নিজেস্ব ধর্মমতের প্রচার করেন এবং সব বিষয়কে ওই একটি বইয়ের মূল্যায়ন দ্বারা বিচার করে নিজের মতকেই প্রচার করেন। অথচ নিজেকে তিনি কম্পারেটিভ রিলিজিয়নের ছাত্র হিসাবে পরিচয় দেন। 

আমরা কি এমন ছাত্রকে কি বলবো? আমরা কি এমন ছাত্রের কাছে নিজের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান আরোহন করবো? নাকি নিজেদের পরম্পরা প্রাপ্ত গুরু বা শাস্ত্রের উক্তির অনুসরণ করবো?

যে সমস্ত মানুষ দাবী করেন ইশ্বর মূর্তিতে নেই। এই মূর্তি পূজা আর পুতুল খেলা বলে উপহাস করে। একই জিনিস যখন তাদের তৈরী,  নির্জীব কাগজের তৈরী এক পবিত্র পুস্তক অবমানাকারীকে হত্যার আদেশ দেন। এটা কেমন দ্বিচারিতা? যদি আল কুরআন আল্লাহর বাণী হতে পারে, তবে দেবতার মূর্তিতে ইশ্বরের অস্তিত্ব থাকবে না কেন?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Advertisement